পূর্ণতা পর্ব ১০

পূর্ণতা পর্ব ১০
নন্দিনী নীলা

পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে প্রভাতের রুমের সামনে দরজায় নক করতে লজ্জাবোধ করছে। তখন তো খুব বলল ও কিছুই বুঝিনি এসব বলে চলে গেল আর এখন যেছে পরে আবার এসেছে। কিন্তু ও নিজের উত্তেজনা দমিয়ে রাখতে পারছে না। নক করতেই দরজা খুলে গেল ভেবেছিল প্রভাত হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু প্রভাত এখনো লাইট জ্বালিয়ে বসে ছিল।

“বারোটা বেজে গেছে ঘুমাননি?”
“এতো রাতে তুমি এখানে কি করছো? ঘুমাওনি কেন?”
পূর্ণতা মিন মিন করে বলল,,”আমি তো এতক্ষণ অংক করছিলাম!”
প্রভাত কপাল কুঁচকে বলল,,”তুমি এতো মনোযোগী দেখে তো মনে হয়নি।”
পূর্ণতা খাতা এগিয়ে দিয়ে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে আছে প্রভাতের দিকে তারপর আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,,”হয়নি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তখন যে বললে বোঝানি এখন পারলে কিভাবে?”
“কি জানি তখন মনে হচ্ছিল পারবোনা কিন্তু রুমে গিয়ে ট্রাই করার পর দেখি পেরে গেলাম। হয়েছে নাকি উত্তেজনা আর তর স‌ইছিল না তাই আপনাকে ডিস্টার্ব করতে চলে আসলাম।”
প্রভাত ভেরি গুড বলে রুমে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটা চকলেট এনে পূর্ণতার হাতে দিল।
” স্টুডেন্ট একদিনেই এতো মনোযোগী হয়েছে চকলেট না দিলে কি হয়?”

পূর্ণতার চকলেট হাতে নিয়ে প্রভাতের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ওর চকলেট অনেক পছন্দ কিন্তু প্রভাত কে ও অপছন্দ করে। অংক করতে পেরেছে বলে একটু সন্তুষ্ট হয়েছে তাই বলে তার দেওয়া চকলেটও খাবে অসম্ভব।
পূর্ণতা প্রভাতের হাতে চকলেট ফিরিয়ে দিয়ে বলল,,”আমি আপনার দেওয়া চকলেট নেব না।”
প্রভাত ভ্রু কুঁচকে বলল,,”না নেওয়ার কারণ?”
পূর্ণতা নিজের হাসোজ্জ্বল মুখটা নিমিষেই গম্ভীর করে কাটকাট গলায় জবাব দিল,,”কারণ আমি আপনাকে অপছন্দ করি।”

“অপছন্দ করার কারণ?” বিস্মিত কন্ঠে বলল প্রভাত।
পূর্ণতা বলল,,”অনেক কারণ আছে কিন্তু বলবো না।”
“তুমি আমাকে এতো অপছন্দ করো তাহলে আমার কাছে পড়তে এসেছিলে কেন?”

পূর্ণতা প্রভাতের দিকে চেয়ে বলল,,”আপনি আমাকে পড়াতে রাজি ছিলেন না সেটা আমার আত্মসম্মানে লেগেছিল। আমাকে কেউ কেন রিজেক্ট করবে তাও আবার আপনি আমাকে রিজেক্ট করেন? এতো বড় সাহস আপনার! এ জন্যই জেদ ধরে আপনার কাছে পড়তে এসেছিলাম। নাহলে আপনার কাছে পড়তে আমার বয়েই গেছে।”
“তাহলে পড়ার জন্য আসোনি নিজের জেদ রক্ষা করার জন্য এসেছ!”

” আপনার পড়ানো আমার পছন্দ হয়েছে কিন্তু আপনাকে আমার পছন্দ না। এজন্য আমি আপনার কাছে পড়ব কিন্তু পড়ার বাইরে আমি আপনাকে অপছন্দই করি।”
“যাই হোক আমি তোমার টিচার হয়েই চকলেট দিয়েছি এটা নিতে পারো। প্রভাত তোমাকে চকলেট দেবে না সেও তোমাকে অপছন্দ করে।”
পূর্ণতা চোখ বড়ো বড়ো করে প্রভাতের দিকে তাকালো মুখের ওপর ওকে অপছন্দ করে বলে দিল?
” আপনার আমাকে অপছন্দ কেন?”

“যে আমাকে অপছন্দ করে আমিও তাকে অপছন্দ করি। আর যে আমাকে ভালোবাসে আমিও তাকে ভালোবাসি।”
নিজে অপছন্দ করে সেটা যথেষ্ট গর্বের সাথে বলতে পারল পূর্ণতা কিন্তু ওকে অপছন্দ করে এটা মুখের উপর বলে দিল চ্যাটাং করে এইটা পূর্ণতার খুব অপমানে লাগল। রাগে পূর্ণতা গজগজ করে চলে আসতে লাগল।
ওর রাগী চেহারা দেখে পেছনে থেকে প্রভাত বলল,,”বলেছিলাম বয়স অল্প মাথা গরম দুটোই এক সূত্রে গাথা। প্রমাণ পেলে তো?”

পূর্ণতা পিছু ঘুরে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের রুমে চলে গেল। আর পিছু থেকে প্রভাত হাসতে লাগল।
নিজের জেদ রক্ষা করতে একদিন পড়তে গিয়ে এখন বিপদ হয়েছে পূর্ণতার। প্রভাত ওকে এখন জ্বালিয়ে মারছে পড়া নিয়ে। হ্যাঁ প্রথম দিন অংকটা পেরেছিল বিদায় অনেক সন্তুষ্ট হয়েছিল তারপরে এতো এতো কঠিন ম্যাথ প্রভাত ওকে করতে দেয় যে ওর মাথা নষ্ট হয়ে যায়।

একদিন একটা অংক মনোযোগ দিয়ে করেছিল এখন প্রতিদিন ওকে একটা করে অংক দেয় না। শেষ করা না পর্যন্ত ওকে ঘুমাতে দেয় না আর আম্মু হয়েছে এক প্রভাত এর কথায় ওর পাশে বসে থাকে ঘুম বাদ দিয়ে। ঐদিন তো একটা অংক নিয়ে ওকে দুই ঘন্টা বসিয়ে রাখল। ঘুমে ওর চোখ ঢুলু ঢুলু সাড়ে বারোটা বেজে গেছিল তাও অংকটা সলভ করতে পারেনি কিভাবে পারবে? চোখে ঘুম আর পড়ার প্রতি কোন মনোযোগ নেই। এমনিতেও অংকতে দুর্বল।
আম্মু আমার পাশে বসে থেকে আমার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ল।

আর এদিকে প্রভাত এসে জিজ্ঞেস করল,,”সলভ হয়েছে?”
“আজ যদি আমাকে সারারাত বসাই রাখেন তাও আমি করতে পারব না।”
“তাহলে সারা রাত বসে থাকো‌।”

“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। দেখুন আম্মু ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি একটা বাচ্চা মানুষ আমি কিভাবে এতক্ষণ জেগে থাকি? আপনার কি ঘুম পায় না? নিশাচরের মতো জেগে আছেন আর আমাকে জ্বালিয়ে মারছেন। কেন যে জেদ করে আপনার কাছে পড়তে গিয়েছিলাম এখন আমি হারে হারে টের পাচ্ছি কত বড় ভুল করেছি।”
প্রভাত বলল,,”ভুলের মাসুল ত তোমাকে দিতেই হবে পূর্ণতা‌। ওয়েট তোমার ঘুম তাড়ানোর ব্যবস্থা করতেছি।”
বলেই প্রভাত চলে গেল আর পূর্ণতা গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। একটু পরে প্রভাত পূর্ণতার সামনে একটা চায়ের কাপ রেখে বলল,,”চা খাও মাথা ঠান্ডা করো।”

পূর্ণতা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকালো প্রভাতের দিকে তারপর বলল,,”আপনি আমাকে ইচ্ছে করে শাস্তি দিচ্ছেন তাইনা? আমি আপনার শার্ট নষ্ট করেছি। প্যান্ট কেটেছি এজন্য আপনি এসব করছেন তাই না? আমি আপনাকে শার্ট কিনে দেবো প্যান্ট কিনে দেবো প্রমিজ। ঘুমাতে দিন।”
“আচ্ছা ঘুমিয়ে যাও আমি চলে যাই।”

“আম্মুর কাছে কিন্তু আবার সকালে বিচার দেবেন না‌ কেবল মাত্র আব্বুকে ফেইলের কথাটা বলবে বলে আমি এতো কিছু সহ্য করছি না হলে আমাকে দিয়ে আপনি এসব করাতে পারতেন না মরে গেলেও আমি করতাম না।”
“আচ্ছা আজকের জন্য মাফ করলাম। আর কথাটা সত্যি বলেছ তুমি আমার শার্ট প্যান্ট নষ্ট করার জন্যই আমি তোমাকে এই শাস্তি টা দিলাম। আজকে না হলে একটা অংক তুমি একদিন কেন তিন দিনে করলেও আমার কোন সমস্যা ছিল না। আমার ফেভারিট শার্টটা যখন রঙে রঙে রাঙিয়ে দিয়েছো তখন মন চাইছিল তোমাকে ওই ছাদে থেকে টুক করে নিচে ফেলে দেই। আর যখন দেখলাম আমার ব্যান্ডের প্যান্টটা তুমি কুচি কুচি করে কেটেছো মন চাচ্ছিল তোমাকেও এমন কুচি কুচি করে কাটি।”

পূর্ণতা নাক ঘুচিয়ে বলল,,”কি ডেঞ্জারাস চিন্তাভাবনা মাই গড। শুনে কেমন গা ছমছম করছে।”
“তোমার ফেভারিট হিজাব টা আমার কাছে আছে পূর্নতা ওটা তুমি আর পাবে না। এবার চা খেয়ে মাথা ব্যথা কমিয়ে ঘুমাই যাও।”

প্রভাত চলে গেল। পূর্ণতা আর চা খেলো না এটা খেলে আর ঘুম আসবে না। কিন্তু মাথা ব্যথা করছে খাওয়া দরকার ছিল। ও চা টেবিলের উপর রেখে নিদ্রায় ডুবে গেল
পরদিন পূর্ণতা কলেজ থেকে ফেরার পথে কফি হাউজে দেখল প্রভাত একটা মেয়ে নিয়ে বসে কফি খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। পূর্ণতা রিকশা থেকে নেমে গেল আর প্রভাতের গার্লফ্রেন্ড ভেবে টিচ করতে গেল।
কি বলে সম্বোধন করবে ভাবতে ভাবতে ভাবল স্যার বলে সম্বোধন করবে।
প্রভাত পূর্ণতাকে দেখে চমকে উঠল।

পূর্ণতা দাঁতের পাট্টা বের করে হেসে বলল,,”স্যার কেমন আছেন?”
” পূর্ণতা তুমি এখানে কি করছ?” প্রভাত অবাক কন্ঠে বলল।
পূর্ণতা ওর স্কুলের দিকে হাতের ইশারা করে বলল,,” স্যার আপনি হয়তো ভুলে গেছেন ওইটা আমার স্কুল আর এখন ছুটির সময়।”

” সেতো বুঝলাম এখানে এসেছ কেন?”
পূর্ণতা প্রভাতের পাশে বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,,” স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড দেখতে এসেছি।”
পূর্ণতা মেয়েটিকে বলল,,” হাই আমি প্রভাত স্যারের স্টুডেন্ট।”
প্রভাত পূর্ণতার কথা শুনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরেছে‌। পাশে মেয়েটা লাজুক হাসছে। প্রভাত চোখ মুখ কঠিন করে পূর্ণতাকে রেখে কফি হাউজ থেকে বেরিয়ে এলো।

এদিকে পূর্ণতা মেয়েটার নাম কি বাসা কই সবকিছু তদন্ত করবে ভাবছিল তখনই দেখল প্রভাত গটগট করে বেরিয়ে যাচ্ছে। পূর্ণতা অবাক হয়ে দৌড়ে প্রভাতের পিছু নিল। এদিকে বসে থাকা মেয়েটা মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে প্রভাতে যাওয়ার দিকে। কয়েকদিন ধরে প্রভাত এইখানে কফি খেতে আসে আর মেয়েটা প্রতিদিনই ওকে ফলো করে। আজকে সাহস করে প্রভাতের সাথে এসে কথা বলে একটু ভাব জমাতে চাইছিল। কিন্তু পূর্ণতার জন্য সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেল।

পূর্ণতা প্রভাতের কিছু দৌড়ে এসে ওর পাশাপাশি হেঁটে হাঁপানো গলায় বলল,,,”ভয়ে পালিয়ে আসলেন তাই না? আপনিও আমাকে ভয় পান বা
পূর্ণতা তুই তো অনেক মানুষের ভয়ের কারণ হয়ে যাচ্ছিস।”
প্রভাত দাঁতের দাঁত চেপে ওর দিকে চেয়ে বলল,,” বেয়াদবের মতো ওইখানে গিয়ে বললে কেন গার্লফ্রেন্ড দেখতে এসেছি তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড কোথায় পেলে?”

পূর্ণতা চমকানো গলায় বলল,,” আপনার পাশে বসে ছিল ওই সুন্দরী মেয়েটা? সুন্দরী বলা চলে না আমার থেকে তো কম সুন্দর। যাইহোক ওই মেয়েটা আপনার গার্লফ্রেন্ড না?”
“রাস্তা ঘাটে যাকে দেখবে সেই কি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাবে?”
পূর্ণতা মুখ কালো করে বলল,,”সবাইকে কোথায় বললাম? উনি তো আপনার পাশে বসে ছিল বাপরে যেভাবে বসে কথা বলছিলেন যে কেউ দেখলে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড মনে করবে।”
“এইটুকু মেয়ে তুমি গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডের কি বুঝ?”

“তো আপনার আমাকে কচি খুকি মনে হয়? আমি কিছুই বুঝবো না! বুঝি বুঝি সবই বুঝি বুঝেছেন। আমাকে এতোটা বোকা ভাববেন না। ছোট হতে পারি কিন্তু বুদ্ধিতে বড়দের কে ছাড়িয়ে যায়।”
প্রভাত পূর্ণতা মাথায় গাট্টা মেরে বলল,,”হ্যাঁ দেখলাম তো কত বুদ্ধি হাঁটুর নিচে বুদ্ধি তোমার। চিনি না জানি না এক মেয়ে কথা বলতে আসলো তাকে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড বানাই দিলে।”
“তো আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই?” অবাক বিস্মিত সুরে বলল পূর্ণতা‌।
“না।”

প্রভাতের না শুনে পূর্ণতা আকাশ থেকে পরা কন্ঠে বলল,, “হায় হায় বলেন কি এতো বড় ছেলে আপনি আর আপনার কিনা গার্লফ্রেন্ড নেই? তাও পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনার তো চার-পাঁচটা গার্লফ্রেন্ড থাকা দরকার। দেখতেও তো মাশাল্লাহ ভালোই আছেন। আচ্ছা আপনি কি মেয়েদের পাত্তা পান না সত্যি করে বলবেন আমাকে।”
পূর্ণতার মুখের এক্সপ্রেশন আর উত্তেজনা দেখে প্রভাতের মনে হলো যেন গার্লফ্রেন্ড না থাকাটা কোনো বড়ো অন্যায়। এই অন্যায় পূর্ণতা মানতে পারছে না কোন ভাবেই।

প্রভাত বলল,,”তোমার কথায় শুনে মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড না থাকায় খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে।”
“অবশ্যই হয়েছে। এখন কত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড আছে আর আপনি এতো বড় আপনার কিনা গার্লফ্রেন্ড নাই এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?”
“পাত্তা পায় না তো এখন পাত্তা পাওয়া একটা মেয়ে খুঁজে দাও।”

পূর্ণতা পর্ব ৯

“আচ্ছা দেবনি যদি না পাই আমি আছি তো। চিন্তা ক‌ইরেন না আপনার গার্লফ্রেন্ডের একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
প্রভাত রাগে চোখ মুখ লাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতা প্রভাতের রাগের আভাস পেতেই সামনে তাকিয়ে দেখল বাসায় চলে এসেছে। ও এক দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেল প্রভাত কে ফেলে।

পূর্ণতা পর্ব ১১