পূর্ণতা পর্ব ৯

পূর্ণতা পর্ব ৯
নন্দিনী নীলা

প্রভাত সাথে সাথে পূর্ণতা আর খেলতে পারে নি।প্রভাত মুখের উপর ওকে মানা করে দিয়েছে। তাই পূর্ণতা ফের প্রভাতের উপর রেগে বোম হয়ে গেছে। কীভাবে এই অহংকারের ন্যায্য শাস্তি দিতে পারে ভাবতেই ওর হাতে প্রভাতের একটা শার্ট চলে আসে। ছাদে প্রভাত নিজের সাদা একটা শার্ট শুকাতে দিয়েছিল পূর্ণতা সেই শার্ট রঙ দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।

কাজটা করার পর থেকে পূর্ণতার কি পরিমাণ ভালো লাগছিল ও বোঝাতে পারবে না। ও ভেবেছিল রাতেই মায়ের কাছে বিচার চলে আসবে, সেই নিয়ে চিন্তিত ছিল বকা খাওয়ার জন্য কিন্তু ওর কপাল ভালো প্রভাত কোন বিচার ওর মায়ের কাছে আসেনি। তাহলে মনে হয় প্রভাতের খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না শার্ট। পরদিন ও ফের বিকেলে ছাদে যায় আর দেখে কালো গেঞ্জিও একটা প্যান্ট শুকাতে দিয়েছে প্রভাত।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ও ফের সেই প্যান্ট কেচি দিয়ে কেটে নষ্ট করে ফেলে। এবার নিশ্চিত উনি কষ্ট পাবে দুইটা জিনিস নষ্ট করলাম। আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মজা উনি বুঝবে। কিন্তু দুইদিন চলে যায় এবারও কোন অভিযোগ আসে না কি ব্যাপার উনার দুই দুইটা জিনিস নষ্ট করে ফেললাম আর উনি কোন প্রকার অভিযোগ নিয়ে আসলো না! পূর্ণতা এমন নীরবতা দেখে নিজেই থতমত খেয়ে যায় প্লান ক্যান্সেল করে ফেলে কিভাবে লোকটাকে শায়েস্তা করা যায়!
প্রভাত কে কি শায়েস্তা করবে পরের দিন ও নিজেই শায়েস্তা হয়ে যায়। দুইভাবে এক ওর সবচাইতে পছন্দের হিজাবটা হারিয়ে যায় ছাদ থেকে।

আর ওই দিতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট দেয় ও গণিতে ফেইল করেছে।
পূর্ণতা রুমে থেকে বেরিয়ে দেখল সোফায় মায়ের সাথে বসে আছ প্রভাত। মা ওকে নিয়ে কথা বলছে প্রভাত এর সাথে। প্রভাত হু হ্যাঁ করছে আর মা আমার পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আমার গণিতে ফেইল নিয়ে সব খোলাখুলি ভাবে বিশ্লেষণ করছে। পূর্ণতা সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে রাগী অগ্নি মুর্তি হয়ে। ওর নামে এভাবে বদনাম করছে! সর্বশেষ কথাটা শুনে পূর্ণতার এখানেই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

ওর মা প্রভাত কে ওকে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করছে বিনিময় এ টাকা দিবে। প্রভাত টাকা তো নিবেই না পড়াবে না বলছে। তার নাকি সময় নেই। রোজিনা বেগম ও নাছোড়বান্দা। রাজি না করানো পর্যন্ত রোজিনা বেগম থামবে না। পূর্ণতা নিজেই তো পড়বে না আবার ভাব দেখিয়ে মানা করছে প্রভাত। প্রভাত এর এভাবে ওকে পড়ানো রিজেক্ট শুনে ওর কেন জানি আত্মসম্মানে লাগল।

ও সবাইকে রিজেক্ট করে ওকে কেন কেউ রিজেক্ট করবে এতক্ষণ ও নিজে পড়তে চাইছিল না কিন্তু এখন প্রভাতের বারবার মানা করা আর মায়ের এতো অনুরোধ দেখে ওর মনে জেদ চেপে গেল প্রভাতের কাছে পড়ার। ও উনার কাছেই পড়বে দেখি লোকটা নিজের ভাব নিয়ে কতক্ষন থাকে। ও নিজেই তো পড়তো না কিন্তু মায়ের এতো অনুরোধ কীভাবে মানা করে দিচ্ছে। একটু ভালো স্টুডেন্ট তাই বেশি ভাব নিচ্ছে উনার কাছে পড়ে দেখতে হবে উনি কেমন ভালো স্টুডেন্ট। পূর্ণতা মায়ের সাপোর্টার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল এদিকে শেষবারের মতো মানা করে প্রভাত ওঠে দাঁড়াল। পূর্ণতা কোন কিছু বলার আগেই ওর সামনে দিয়ে চলে গেল প্রভাত।

মায়ের কাছে বলে পূর্ণতা বই খাতা নিয়ে ছুটল প্রভাতের রুমে। প্রভাত তখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ এ কি যেন করছিল। রোজিনা বেগমের সাথে এসেছে প্রভাতকে বলার জন্য। রোজিনা বেগমকে দেখে প্রভাত শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসল। খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখে ওর দুষ্টুমি খেলা করছে।

“আন্টি আপনি এখানে?”
“পূর্ণ কে তোমার কাছে নিয়ে আসলাম একটু দেখো না গাধাটাকে পড়াতে পারো নাকি।”
পূর্ণতা মায়ের দিকে তাকিয়ে শাসানো কণ্ঠে বলল,,”আম্মুউউ”
রোজিনা বেগম বললেন,,”রেগে যাচ্ছিস কেন? চুপ করে দাঁড়া। প্রভাত একটু পড়াও না পরীক্ষায় ফেইল করলে আমার মান-সম্মান ডুববে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।”

এবার পূর্ণতা বলে উঠল,,”আম্মু আমাদের কি বাসা ভাড়া দেওয়ার কোন দরকার ছিল? আমরা উনার এতো উপকার করলাম আর উনি কেমন অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছে! তুমি একটা বড়ো মানুষ এতো বার করে অনুরোধ করছো বারবার তোমাকে মানা করে দিচ্ছে।”

পূর্ণতা প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,,” উপকারের উপকার করতে হয় আপনি জানেন না?”
প্রভাত কিছু বলবে পূর্ণতা ফের বলতে লাগল,,”আমি নাকি বেয়াদব। এখন তোমার উনাকে বেয়াদপ মনে হচ্ছে না? শুধু নিজের মেয়ের বেলায় বলতে পারো।”
প্রভাত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,” আমি পড়াতে রাজি।”
রোজিনা বেগম খুশি হয়ে চলে গেল। পূর্ণতা কে বেয়াদবি করতে মানা করে গেল আর প্রভাতের কথা শুনতে বলল।

দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলছে পূর্ণতা,, প্রধানমন্ত্রী কেউ মনে হয় এতো অনুরোধ করতে হয় না উনাকে যত করতে হলো অ্যাটিটিউট এর মাটিতে পা পড়ে না।
পূর্ণতাকে প্রভাত বই বের করতে বলল কোনটা সমস্যা দেখাতে বলল। পূর্ণতা তো বলতে পারেনা পুরো বইটা ওর জন্য একটা সমস্যা।
ওদের ব‌ইয়ের মধ্যে সবচাইতে কঠিন অধ্যায় বের করল পূর্ণতা। ওতো সহজ গুলোই পারে না এটা তো আরো পারেনা।

প্রভাত পূর্ণতার বই নিয়ে বলল,,”আর বাকি চ্যাপ্টারের সব পারো?”
পূর্ণতা ঢোক গিলে মিথ্যা করে বলল,,”হ্যাঁ পারি।”
“বাহ তাহলে তো তোমার ফেইল করার কথা নয়। আমার জানামতে এই অধ্যায় থেকে এক দুইটার উপরে অংক আসে না। পুরো বই পারা শর্তেও তুমি ফেইল করলে কিভাবে?”

পূর্ণতা আমতা আমতা করতে লাগল। লোকটা তো ভারি সেয়ানা। কেমন পুলিশের মতো জেরা করছে ওকে।
“এতো প্রশ্ন করছেন কেন? আপনি কি এই অংক গুলো পারেন না?”
“পারি কি পারি না সেটা তোমার বোঝার দরকার নাই‌। তোমার অংক শেখা দরকার তুমি সেটা শিখবে। নাকি আমি কি পারি না পারি সেটা দেখতে এসেছ?”

পূর্ণতা থতমত খেয়ে তাকাল প্রভাতের দিকে লোকটা আন্দাজে ঢিল মারছে তাও ঠিক ঠিক জায়গায় মারছে অদ্ভুত। কোনভাবে বুঝতে দেওয়া যাবে না ও পড়ার উদ্দেশ্য নয় প্রভাতকে যাচাই করার উদ্দেশ্যে এসেছে।
“আমাদের ক্লাস ম্যাম এখন এই অংক গুলো করাচ্ছে না পারলে মাইর দেয়। এজন্য আমি এটা বের করছি শিখিয়ে দিন না! আমিতো গণিতে কাঁচা এর জন্য বেশি অংক পারিনা আমাকে প্রায় মাইর খেতে হয় ক্লাসে সবার সামনে অপদস্ত হতে হয়। না হলে বলুন আমি কি আপনাকে পছন্দ করি? আপনার কাছে পড়তে আসছি কতটা বিপদে পড়ে। আপনি আমাকে নিয়মগুলো শিখিয়ে দিন যেকোন ভাবে আমি কালকে ক্লাসে গিয়ে এইগুলো ম্যামকে করে দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবো।”

নরম সরে বলল পূর্ণতা যাতে ওর মিথ্যা কথা বিশ্বাস করে প্রভাত। এমন ভাবে কথাগুলো বলল পূর্ণতা প্রভাত আর অবিশ্বাস করতে পারল না।
মনে মনে নিজেই প্রাউট ফিল করল কিভাবে লোকটাকে গাধা বানালাম। এবার বের হবে লোকটা পারে নাকি অংক পারলে কেউ এতো কথা শোনায়? মনে হয় লোকটা পারেনা এজন্য এতো কথা শোনাচ্ছিল। পূর্ণতা ভেতরে ভেতরে শয়তানি হাসি দিচ্ছে কারণ প্রভাত না পারলেও তাকে পচানো শুরু করবে।

এদিকে প্রভাত ওর সমস্ত প্ল্যান জলাঞ্জলি দিয়ে খাতা কলম নিয়ে অংক করা শুরু করে দিল। পূর্ণতা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ও কল্পনা করেনি পারবে। রাগে ও ফুসফুস করছে প্রভাত বলে বলে বোঝাচ্ছে কিন্তুও কিছুই বুঝছে না। বুঝার চেষ্টাই করছে না।
“দেখতো অংকটা কোথায় বুঝো না?”
পূর্ণতা মুখ কালো করে বলল,,”আমি তো কিছুই বুঝি নি। এতো বড় অংক কেন আমাকে ছোট করে দিন।”
“খুবই ইজি তো দেখো ভালো করে শুধু সূত্র এড করতে হবে আর নিয়মমাফিক পরপর করে যেতে হবে তাহলেই হয়ে যাবে।”

“এটা আমি বুঝি না আমাকে অন্য নিয়মে করে দেন।”
ম্যাম বলেছিল একটা অংক বিভিন্ন দুই তিনটা নিয়মে করা যায়। দেখি উনি কয়টা নিয়মে করতে পারে। প্রভাত পূর্ণতার দিকে দুই মিনিট তাকিয়ে থেকে ফের খাতা কলম নিয়ে আরেক নিয়মে করতে লাগল আর পূর্ণতা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। এবারও পূর্ণতা বলল এটাও বুঝিনি আরেক নিয়মে করে দিতে।
“তুমি কি বোঝার চেষ্টা করেছ যে বুঝবে?”

পূর্ণতা অসহায় মুখ করে বলল,,”আপনি এই অংকটা আর কয় নিয়মে পারেন?”
“যত নিয়ম আছে আমি সব নিয়ম। আচ্ছা দাঁড়াও সব চাইতে সহজ নিয়ম যেটা সেটা করে দিচ্ছি এবার মনোযোগ দিবে আর এবার যদি না পারো আমি তোমাকে আর পড়াবো না।”

এতোক্ষণ বিস্মিত হয়ে পূর্ণতা কোনো মনোযোগ দিচ্ছিল না এবার একটু মনোযোগী হওয়া ট্রাই করল দেখেই সবচেয়ে সহজ নিয়মে আমি পারি নাকি আমি যদি শিখতে পারি তাহলে বুঝবো এটা সবচাইতে সহজ নিয়ম। ওর মতো গাধা তো দুটো নাই। পূর্ণতা গালে হাত দিয়ে বুঝার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। প্রভাত এতো সুন্দর করছে বুঝিয়ে দিল ওর কাছে মনে হলো ও পারবে। কিন্তু ও স্বীকার করল না প্রভাত এর সামনে বুঝেনি বলল। প্রভাত এক‌‌ই নিয়মের বানিয়ে একটা অংক ওকে করতে দিল ও বলল,,” ধুর আপনার পড়ানো সুন্দর না আমি এতো সময় ও একটা অংক পারলাম না। যাই আমার ঘুম পাচ্ছে।”

পূর্ণতা মিথ্যা বলেই চলে আসলো। রুমে এসে পূর্ণতা ঘুমাতে পারল না। অংকটা ওর কাছে অনেক সহজ লেগেছে করতে ইচ্ছে করছে। ও খাতা কলম নিয়ে করত বসল। অংক করা শেষ করে ও বসে আছে দুইবার কাটা কাটি করে অংকটা করেছে। ওর এখনি জানতে ইচ্ছে করছে অংকটা হয়েছে নাকি এটা ব‌ইয়ের নয় এজন্য এ্যান্সার ব‌ই এ নেই। ওর এখন আবার প্রভাতের আছে যেতে ইচ্ছে করছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল একটা বাজে।

পূর্ণতা পর্ব ৮

ও সব গুছিয়ে শুয়ে পড়ল ঘুম আসছে না। ও যখন রুমে আসছিল ওকে দেখে রোজিনা বেগম ঘুমাতে চলে গেছে। পূর্ণতা প্রথম কোন অংক করতে পেরেছে অনেক খুশি লাগছে হয়েছে নাকি জানতে মনটা ছটফট করছে। শুয়ে থাকতে পারলো না উঠে বসল তারপর খাতা কলম নিয়ে পা টিপে প্রভাতের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

পূর্ণতা পর্ব ১০