মেজর পর্ব ২৯

মেজর পর্ব ২৯
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

ভোর সকালে মিতু আর মুশফিক বাসায় এসে পৌছায়।মুশফিক আগেই তার ভাইকে বাসা পাল্টানোর কথা বলেছিলো। তার কথামতো বাসা পালটানো হয়েছে।নতুন বাসায়ও আগের মতোই মুশফিকের রুমটা সাজানো।মুশফিক রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে,শরীর এত ক্লান্ত লাগছে মনে হচ্ছে এখনি ভেঙ্গে পড়বে।মিতুকে পেয়ে তার শাশুড়ী মহা খুশী।দুজনের একজনও ওখানের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলে না।মুশফিক ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।মিতু কিছু বলার সুযোগ পায় না অথবা মুশফিক ইচ্ছে করেই সুযোগ দেয় না।সে বেরিয়ে নাস্তা করে।নাস্তা করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আম্মু, এখন তাহলে বেরিয়ে পরি।”
“এখনি?”
“হ্যাঁ। জরুরী কাজ আছে।মিতুর পরিক্ষা তাই দিতে এসেছি।এখন না বের হলে দেরী হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা। ”
মুশফিকের আম্মা জানে মুশফিক কেমন কাজ পা,গল।যেহেতু একবার বলেছে যেতে হবে তাহলে কোনো কিছুতেই আর আটকানো যাবে না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুশফিক মিতুর দিকে তাকায়।মিতু তার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে চুপচাপ রুমে চলে যায়।মুশফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার অগোচরে খুবই গোপনে তারপর উঠে রুমে যায়।
প্রসস্ত জানালার সামনে মিতু দাঁড়িয়ে আছে।কান্নার ধমকে গা কাঁপছে।মুশফিক পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
“মিতু এমন করা ঠিক না।প্রথম দিনই বলেছিলাম আমার স্ত্রী আমার মতো কঠিন হতে হবে, সব পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা তার মাঝে বিদ্যমান থাকা চাই।ভুলে গিয়েছো?”

মিতু মাথা নাড়ে সে ভুলেনি।মুশফিকের কোন কথাই সে ভুলে না।সব কথা খুবই মনোযোগ দিয়ে মনে রাখে।মুশফিক মিতুর দুই কাঁধ ধরে বললো,
“তাহলে,ছোটদের মতো অবুজপনা করছো কেনো?তুমি তো মিসেস আহসান।”
মিতু ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে।মুশফিক আস্তে করে মিতুকে বুকে নেয়,মিতু ফুপিয়ে উঠে,মুশফিক এবার শক্ত করে মিতুকে বুকে আঁকড়ে নেয়।

“কয়েকদিনের ব্যাপার আমি ফিরে আসবো।তারপর দুজনে একসাথে আমাদের বাংলোয় ফিরে যাবো,প্রমিস।”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“হুম।”
মুশফিক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মিতুর কপালে চুমু দেয়।
“ভালো থেকো মিতু।”
“আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দেবেন।”
“অবশ্যই।”

মুশফিক চলে যায়।মিতু চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।মুশফিক বলেছে তার মি,শন যতোদিন শেষ না হয় ততদিন সবাই একটু সাবধানে থাকতে।এবারের মি,শনটা একটু বেশীই ঝু,কিপূর্ণ।গতকাল মিতুকে কেউ ইচ্ছেকৃতভাবেই গাড়িচা,পা দিতে চেয়েছিলো,তা না হলে রাস্তার একদম কিনারে কেনো গাড়ি আসবে?মুশফিক আর তাদের স্যারও এই নিয়ে কথা বলছিলো, হয়তো এই কারণেই তাকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে যাতে কোন বি,পদ তাকে না ছুঁয়।আর যদি এই বি,পদ মুশফিককে ছুঁয়ে দেয় তাহলে?মিতুর গাল বেয়ে আবারও পানির সরু রেখা দ্রুতগতিতে ছুটে যায়।
গাড়ি ছুটে যাচ্ছে তার নিজস্ব গতীতে।রাতের চেয়ে দিনের বেলা খাগড়াছড়ি যেতে বেশী সময় লাগে,কারণ দিনের বেলা জ্যাম থাকে যা রাতে এতোটাও থাকে না।

মিতুর জন্য খারাপ লাগছে।মেয়েদের বিয়ের পরে একটাই কামনা থাকে তা হলো সে তার স্বামীর সাথে থাকতে চায়।মিতুরও এমনি আশা কিন্তু মুশফিক অসহায়।পরিবার, প্রিয়জন,সবার আগে তার দেশ।দেশ তার কাছে সবসময় ফাস্ট প্রায়োরিটি পাবে,দেশের চেয়ে মূল্যবান তো নিজের জীবনও না কিন্তু এই মেয়েটার জন্য বুকটা জ্বলে কেনো?সে চোখ বন্ধ করে।না কোনভাবেই বুকটা শান্ত হচ্ছে না, ব্যথাটা ক্রমশ তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে।মুশফিক সব ভুলার চেষ্টা করে মন দিয়ে মি,শনটার কথা ভাবে আজকে রাতেই যেতে হবে।মনে মনে প্রস্তুতি নেয়।

রাত চারটা মুশফিকের সব সৈনিক আ,ক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।আততায়ীদের কিছুক্ষণ আগেও দেখা গিয়েছে,এখন হয়তো ঘুমাচ্ছে।ধারণা করা হচ্ছে এবার ওদের কাছে প্রায় দেড়কোটি টাকার হি,রোইন,ই,য়াবা আছে।নেতৃত্বে আছে মেজর মুশফিক আহসান,সাথে আরও অফিসার আছে।ভোরের আলো ফোটার আগেই আ,ক্রমণ করা হবে।

হঠাৎ মুশফিক বুঝতে পারলো শ,ত্রুরা ঘুমায়নি বরং পালটা আ,ক্রমণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।মুশফিকসহ দলের বাকিরা অবাক হয় যে তাদের মিশনের কথা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ জানার কথা না তাহলে এত গোপন খবর বাহিরে চলে এলো কি করে?মুশফিক তার দলকে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলার আগেই শ,ত্রুরা আ,ক্রমণ করে।মুশফিক ফা,য়ার বলে চিৎকার করে উঠে।

দুই দলের সং,ঘর্ষ আ,ক্রমণ হয়।যতোই সে কড়া স,ন্ত্রাস হোক না কেনো আর্মিদের দক্ষতার কাছে তা হার মানতেই হবে।একে একে শ,ত্রুপক্ষের সবাই নিহত হলো একজন ব্যতীত সে দলনেতা মতিন।মুশফিক তার দলকে অক্ষত দেখে নিশ্চিত হলো।মতিন এখনো গু,লি ছুড়ছে আর পিছু হটছে।হঠাৎ করে আর মতিনের চিহ্ন পাওয়া গেলো না।সৈনিকরা পোড়াবাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখে ধারনার চেয়েও বেশী নে,শাদ্রব্য আছে।কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মুশফিক ছিটকে পড়ে।

পরপর দুটো গু,লি কাধে লেগেছে।কাধ বেয়ে র,ক্ত গলগল করে পরছে।সৈনিকরা মতিনকে ধরার জন্য ছুটে,সে তার টার্গেটে নিশানা লাগিয়েছে,সে পালায়।কেউ মতিনকে ধরতে পারে না।মুশফিক চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।চোখের তারায় মিতুর হাস্যোজ্জ্বল চেহারাটা ভেসে উঠছে।ইশ!মেয়েটাকে আরও ভালোবাসা বাকি ছিলো।ঢাকা থেকে আসার সময় আরও খানিকটা বুকে জড়িয়ে ধরে রাখা উচিত ছিলো কে জানতো এটাই শেষ দেখা,শেষ স্পর্শ।তার করা প্রমিসটা বুঝি আর রাখা হলো না।মুশফিকের বন্ধ চোখের কোন বেয়ে ফোটা ফোটা পানি গড়িয়ে পরছে।
এক সৈনিক চেচিয়ে উঠে,

“জলদি কন্ট্রোলরুমে বার্তা পাঠাও,স্যারের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।ওদিকের অফিসারকে আসতে বলো।স্যার! স্যার!স্যার চোখ খুলুন,আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি, স্যার!”

মেজর পর্ব ২৮

সবাই ছুটোছুটি করে সামনে মুশফিকের নি,থর দেহ পরে আছে।কে বলবে এই ছেলের দাপটে ক্যাম্পটা কাঁপতো!
মিতু আজকে ঘুমাচ্ছে, পা,গল মিতু টেরও পেলো না তার মেজর তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।মানুষ বিপদের সময় নাকি ম,রা ঘুম ঘুমায়,মিতুও ঘুমাচ্ছে।পরম শান্তিতে আরেকজন পরম য,ন্ত্রনায়।

মেজর শেষ পর্ব 

3 COMMENTS

  1. আমি কিন্তু আগেই বলেছি মেজর কে মারলে খুব খারাপ হবে তাই যেনো মেজর সুস্থ হয়ে যেনো মিতুর কাছে ফিরে যায়

Comments are closed.