মেজর পর্ব ২৭

মেজর পর্ব ২৭
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মিতু লক্ষ করেছে গত সাত আটদিন ধরে মুশফিক চুপচাপ হয়ে গিয়েছে,কেমন গম্ভীর হয়ে কিছু ভাবে,তবে ভাবনা চিন্তায় মিতুকে জড়ায় না,মিতুকে আগের মতোই সময় দিতে চায়,ভালোবাসে,দুষ্টুমি করে কিন্তু বলতে গেলে রাতদিন অফিসেই কাটিয়েছে।মিতুর ধারনা মুশফিক জটিল কোন অভিযানে যাবে যার জন্য এত তৎপরতা,মিতু জিজ্ঞেস করেছিলো কি হয়েছে,এতো চিন্তিত্ব লাগছে কেনো?

মুশফিক বলেছে অফিসের কাজ নিয়ে এই ব্যস্ততা।যদিও মিতু জানতে চায়নি কিসের কাজ,কারণ অফিসিয়াল কোনকিছু জানতে পারবে না এমনটাই কথা ছিলো দুজনের মাঝে।অফিসে গিয়ে মুশফিক অনেকবার মিতুকে ফোন দেয়,বারবার জিজ্ঞেস করবে।
“মিতু ঠিক আছো?কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?বাংলোয় কেউ এসেছিলো?”
মিতু হাসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি কি পাগল নাকি?বাংলোয় কেউ আসবে আর আমাকে নিয়ে যাবে এই ভয় পাচ্ছেন বুঝি?আমি মেজর মুশফিক আহসানের স্ত্রী আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া চাট্টি খানি কথা না,সেটার সাহস কারও নেই। ”
মিতুর কথায় মুশফিক হাসে না।সে যথেষ্ট গম্ভীর গলায় বললো,
“তারপরও মিতু সাবধান থেকো,যতক্ষন আমি কাছে নেই।”

মুশফিকের গম্ভীর কন্ঠস্বর মিতুকে ভাবায়।উনি হঠাৎ মিতুকে নিয়ে এতো উদগ্রীব কেনো?তাকে নিয়ে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?নিজেকে নিজেই আবার শাসায়,তাকে নিয়ে আবার কি সমস্যা হবে!সে সামান্য মিতু, অকে।
সকাল থেকে মিতুর ঘাড় ব্যথা করছে,মুশফিক অফিসে যাওয়ার আগে বারবার বলছিলো তাকে নাকি দেখতে অসুস্থ লাগছে,কি সমস্যা মিতু মাথা নেড়ে না করেছে,সে ভেবেছে এমনিই।

কিন্তু এখন সিএমএসে এসে ডাক্তার দেখিয়ে বুঝতে পারলো তার প্রেশার লো হয়ে গিয়েছে যার দরুন ঘাড় ব্যথা করছে, ঘাড়ের ব্যথাটা আস্তে আস্তে মাথা থেকে পিঠময় ছড়িয়ে যাচ্ছে।মিতু ওষুধ খেয়ে বাসার দিকে রওনা দেয়,পথে এক ভাবীর সাথে দেখা হয়।উনার বাসা মিতুদের কটেজের আগে।উনার দুইটা মেয়ে আছে যার কারণে প্রায়ই তাদের কটেজের সামনে দেখা হয়।আজকেও বাচ্চারা সাথে আছে। যদিও মিতুর শরীর খারাপ লাগছিলো কিন্তু সে স্বাভাবিকভাবে বললো,

“আসসালামু আলাইকুম আপু। কোথায় যাচ্ছেন?”
ফাহমিদা হেসে বললো,
“মিসেস আহসান!কোথায় গিয়েছিলেন?”
মিতু হাত বাড়িয়ে হাসপাতালে দিকে দেখিয়ে বললো,
“ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ”
ফাহমিদা ভ্রু কুঁচকে বললো,
“ডাক্তার!কেনো কি হয়েছে?”
“তেমন কিছু না, প্রেসার ডাউন।”
ফাহমিদা বললো,

“জানেন আমার হাজবেন্ড কি বলে,শরীর যদি খারাপ লাগে তাহলে খোলা আকাশের নিচে যাও,প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাসে হাঁটো তাহলে শরীর ভালো লাগবে।আমরা হাটছি,আপনিও আমাদের সাথে হাটুন,ভালো লাগবে।”
মিতুর মনে হলো একটু হাটলে আসলেই ভালো লাগবে,তাছাড়া সারাদিন একা একা থাকতে থাকতে তাকে কেমন অবসাদ আঁকড়ে ধরেছে।সে ফাহমিদার সাথে হাটতে থাকে।

“আপু,আপনি কতবছর ধরে এই ক্যান্টরমেন্টে আছেন?”
“এইতো কিছুদিন পরে পাঁচবছর শেষ হয়ে যাবে।”
“তাহলে তো অনেকদিন। ”
“হুম।আমার এই জায়গাটা বেশ ভালো লাগে,প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুব তাজা মনে হয়।”
“আমারও বেশ ভালো লেগেছে।”

তারা গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।ফাহমিদা তার বাচ্চাদের নিয়ে চলে যায় মিতু বাহিরের তাকিয়ে রাস্তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।তারপর বেরিয়ে যায়।আশেপাশে সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে।মিতু হাটতে থাকে।
হাটতে হাটতে মিতু খেয়াল করে তার কান্না পাচ্ছে।আশ্চর্য!অকারণেই তার কেনো কান্না পাবে?সে সুখেই আছে,কোনরকম দুঃখ তাকে ছুঁয়ে নেই তাহলে কান্না কেনো পাচ্ছে?মিতু পেছনে ফিরে দেখে আর্মিসমেত গেইটটা আর চক্ষুগোচর হচ্ছে না।

মিতুর চোখবেয়ে টপটপ পানি পড়ছে,বুকটা ব্যথায় ছিন্নবিন্ন হয়ে যাচ্ছে।মুশফিক তাকে খুব ভালোবাসে,এতোটাই ভালোবাসে যে একজন স্ত্রীর জন্য সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।মিতুর শরীরটা খারাপ লাগছে,কিন্তু সে আরও কিছুক্ষণ হাটে।আকাশটা কেমন অন্ধকার হয়ে আছে,এই বুঝি আকাশ ফেড়ে অজস্র জলরাশি জমিনে পতিত হবে।কিছুক্ষণ পরে আকাশ গর্জন করে উঠে।বড় বড় ফোঁটা মাটিতে পরছে।দূরে কিছু পর্যটক একটা কুড়েঘরের দিকে ছুটে যায়, যার সামনে ছাউনি দেয়া বারান্দা আছে।

মিতু সেদিকে তাকায়,বৃষ্টি তার খুব পছন্দ,বৃষ্টি হলে তার ভিজতে ভালো লাগে কিন্তু আজকে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে না,শরীরের অসুস্থতার জন্যই হয়তো এমন লাগছে।মিতু কুড়েঘরের দিকে পা বাড়ায় কিন্তু এর আগেই সে ছিটকে পরে।কোনোকিছুর সাথে ধাক্কা লেগে মিতু মাটিতে পরে যায়।চোখ মেলে কপালে হাত রেখে দেখে হাতটা র,ক্তে লাল হয়ে গিয়েছে।মিতু আস্তে করে চোখ বন্ধ করে, তার মনে হচ্ছে তার তার গায়ের সব শক্তি ফুরিয়ে গিয়েছে।কিছুক্ষণ পরে তার মনে হলো সে শূন্যে ভাসছে,আচ্ছা তাকে কি কেউ কোলে নিয়ে যাচ্ছে?কোথায় যাচ্ছে?মিতুর বলতে ইচ্ছে হলো’আমাকে নেবেন না,আমার মেজর রেগে যাবে কিন্তু গলায় যেনো কথা আসছে না।’

বাহিরে বিদুৎ চমকাচ্ছে,এইতো কিছুক্ষন আগেও তো বৃষ্টি আসার কোন লক্ষন ছিলো না হঠাৎ করে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে।পাহাড়ি অঞ্চলে এমনি এই রোদ এই বৃষ্টি।মুশফিক টেবিল ছেড়ে উঠে বারান্দায় আসে।এতো জোড়ে গর্জন হচ্ছে, সে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ভাবে মিতু একা কটেজে ভয় পাচ্ছে না তো?সে মিতুকে ফোন দেয়।কিন্তু ফোনটা বন্ধ।তার ভ্রু কুচকে যায়।মিতুর ফোন বন্ধ হওয়ার কথা না।মুশফিক লক্ষ করেছে মিতুর ফোনের চার্জ পঞ্চাশ পার্সেন্টের নিচে আসতে পারে না এর আগেই মিতু ফোন চার্জে বসিয়ে দেয়।তাহলে আজকে কি হলো।মুশফিকের ভ্রু ভাজ হয়,ছাতা নিয়ে কটেজের দিকে ছুটে যায়।বুকটা এতো ধুকপুক করছে।মুশফিকের মনে হলো মিতু বিপদে আছে।কিন্তু পরক্ষনেই নিজে নিজেকে বললো,

“মিতু কটেজে আছে,সে গেলেই আদুরে বিড়ালের মতো বুকে এসে বলবে,মেজর সাহেব আপনি খুব পঁচা,আমি ভয় পাচ্ছিলাম,আপনার আরও আগে আসা উচিত ছিলো।”
মুশফিক কটেজে গিয়ে তন্নতন্ন করে সারা বাসায় খুঁজে কিন্তু মিতুকে কোথাও পায় না।মুশফিক ছুটে বেরিয়ে আসে।হঠাৎ তার ফোনে একটা কল আসে।মুশফিকের ঠোঁটজোড়া শুকিয়ে যায়।ফোনটা কানে ঠেকালেই কারো বিদগুটে হাসির শব্দ কর্ণগোচর হয়।

মেজর পর্ব ২৬

“মেজর সাব।আপনার বউয়ের লা,শ খুইজ্জা বাইর হরেন।”
মুশফিক শক্ত কন্ঠে বললো,
“মিতুর সাথে কি করেছো? ”
উপাশ থেকে উত্তর আসে না আসে অট্টহাসি।

মেজর পর্ব ২৮