মেজর পর্ব ২৮

মেজর পর্ব ২৮
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মুশফিক জেনারেল অফিসারকে বিষয়টা জানায়।হন্যে হয়ে চারিপাশে খুঁজে,কিন্তু কেউ বলতে পারেনা মিতু কোথায়।গেটের কাছে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চ্যাক করে দেখে মিতু সামনের রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছে,হাটা দেখেই মনে হচ্ছে সে অসুস্থ।মুশফিক সাথে কিছু সৈনিক অঝোর বৃষ্টিতেই সেদিকের রাস্তার দিকে ছুটে যায়।মুশফিকের পাথরকঠিন বুকটাও যেনো কাদার মতো নরম হয়ে গিয়েছে,মিতুকে পাচ্ছে না এর চেয়ে বড়ো কষ্ট বুঝি আর নেই,বুকে ব্যথা হচ্ছে,এমন তার আগে কখনোই অনুভূত হয়নি।সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে বৃষ্টির ঝুম শব্দের সাথে তার বুক থেকেও বোবা কান্নার শব্দ হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসছে।মিতুকে এই ভ,য়াবহ বি,পদে না জড়ালেও হতো,কি দরকার ছিলো ঢাকা থেকে এখানে আনার।

কিছুদূর যাওয়ার পরে দূরের একটা কুড়েঘরে কিছু মানুষের ভীড় দেখে মুশফিক সেদিকে ছুটে যায়।এই মূহুর্তে মিতুকে জীবিত দেখাই তার একমাত্র আশা।যদিও মতিন নামক বর্বর বলেছে মিতুর লা,শ খুঁজতে কিন্তু তার মন বলছে কিছু হয়নি,মিতু ভালো আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর্মি দেখে পর্যটকরা ভীড় কমায়,তাদের আসার রাস্তা করে দেয়।মুশফিক সামনে এগিয়ে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।
কাঁচা মাটিতে মিতু পড়ে আছে।তার মাথাটা একটা মহিলার কোলে,একটা ছেলে মিতুর মাথায় হাত দিয়ে চেপে রেখেছে,সেখান দিয়ে ফিনকি দিয়ে র,ক্ত আসছে তা বোধগম্য হতে মুশফিকের সময় লাগলো না।সে উদগ্রীব হয়ে মিতুকে কাছে টেনে নেয়।মিতু জীবিত, তার মিতুর কিছু হয়নি,এর চেয়ে বড়ো পাওয়া আর কি হতে পারে!
সুদর্শন আর্মি অফিসারের কর্মকাণ্ড দেখে সবাই হতবাক,নিজেদের মধ্যে ফিসফাস শুরু করে দেয়,কিন্তু আর্মি বলে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।মুশফিক মিতুর কাটা জায়গায় চেপে ধরে আগন্তুক ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,

“এমন হলো কি করে?”
ছেলেটা আর্মি দেখে আসলেই ভরকে গিয়েছে।সে কি বলবে তা বুঝতে পারছে না।
“উনি বোধহয় আমাদের দিকেই আসছিলো,হঠাৎ একটা গাড়ি আসলো আর রাস্তা ছেড়ে প্রায় উনাকে পিষে দিচ্ছিলো কিন্তু ভাগ্যক্রমে উনি ছিটকে পড়ে,তারপর আমি উনাকে এখানে নিয়ে আসি,একটা ছেলে গাড়ি আনতে গিয়েছে,গাড়ি আসলেই আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো।”
মুশফিক গলা উচিয়ে সৈনিকদের দিকে তাকিয়ে কমান্ডের গলায় বললো,

“এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করো।জলদি। ”
মুশফিক আরেক হাতে মিতুর গালদুটো মুছে দেয়।
“আপনি গাড়ির নাম্বারটা দেখেছেন?”
“না স্যার,প্রচুর বৃষ্টি ছিলো গাড়ি দেখেছি কিন্তু নাম্বার দেখিনি।”
“কি গাড়ি?”
“কালো কার ছিলো।”

মুশফিক ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার সুরে বললো,
“ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ।আজকে আপনি আমার খুব উপকার করেছেন।”
ছেলেটা বোধহয় লজ্জা পেলো।মাথা ঝাকিয়ে বললো,
“মানুষ হিসেবে এটাতো আমার কর্তব্য।”
“মানুষই কিন্তু ওকে মে,রে ফেলতে চেয়েছিলো।”
মুশফিক মিতুকে পাজকোলা করে কোলে নেয়।ছেলেটা আমতাআমতা করে বললো,

“আপনি….?”
মুশফিক বললো,
“আমি মেজর মুশফিক আহসান,আর ও আমার মিসেস মিতু আহসান।”
ছেলেটা প্রসন্ন হেসে বললো,
“আচ্ছা,আচ্ছা।”
“ভালো থাকবেন।”

মুশফিক মিতুকে নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়ায়।সাইরেন বাজিয়ে এম্বুলেন্স আসছে।মুশফিক এম্বুলেন্সে বসে মিতুর কপালে চুমু দেয়,আজকে সে কোন রকম খারাপ সংবাদ শুনতে চায় না।কয়েক মিনিট পরেই হাসপাতালে পৌছে যায়।
মেজরের স্ত্রী,সব ডাক্তার নার্স দৌড়াদৌড়ি করে মিতুকে নিয়ে যায়।মুশফিক জেনারেল অফিসারের সাথে কথা বলছে,ইদানীং মতিন বেশ বেড়েছে।

আগেরবার মতিনের কোটি টাকার লস করার ফলেই এমন করছে,মতিনের ধারনা তাদেরকে এভাবে অন্যদিকে ব্যস্ত রেখে সে তার ব্যবসা পুরোদস্তুর চালাবে কিন্তু সে হয়তো জানে না আর্মিদের ফাঁকি দেওয়া এতো সহয না,আর্মিরা যেমন নিজেদের দিকেও নজর রাখতে পারে তেমনি চোখ কান অন্যদিকেও রাখতে পারে।মুশফিকের মোবাইল দিয়ে জেনারেল অফিসার কাইয়ুম মতিনের নাম্বারে ফোন দেয়।সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হয়।ওরা বোধহয় মুশফিকের ফোনের অপেক্ষায় ছিলো।
মতিন বেশ আয়েশ করে বললো,

“হ্যালো মেজরসাব।”
কাইয়ুম হাসান বললো,
“তোমার এতবড় সাহস কি করে হয়?”
কন্ঠস্বর বদলানোতে মতিন বুঝলো এটা মেজর না।
“আফনে কে?”
“এতো কথা উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করছিনা।তবে শুনে রাখো আগেরবার তোমার ডালপালা কেটেছিলাম এবার তোমার গাছের মূলসহ উলটে ফেলে দেবো।”
“বাপরে।ভয় পাইছি।”

“তোমার সাহস হয় কি করে একজন মেজরের স্ত্রীকে হ, ত্যার প্রচেষ্টা করার?”
মতিন কোন কথা না বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
মতিন চোখ পাকিয়ে তার ছেলের দিকে তাকায়।
“একটা মাইয়া তুইলা আনতে পারলি না?”
“আব্বা,তুইলা আনার লাইগাই আস্তে ধাক্কা দিছিলাম কিন্তু আশেপাশে মানুষ আছিলো আমি নামার আগেই সবাই দৌড় দিছে।”

“কোন কামই ঠিকঠাক করতে পারিস না।”
ছেলেটা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মতিন বালিশে হেলান দিয়ে নতুন অংক মিলায়।
মিতুর জ্ঞান ফিরেছে।পাশের টুলে মুশফিক বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মিতু মুশফিককে দেখে বললো,
“সরি।”
মুশফিক মিতুর চোখ বেয়ে গড়ানো পানিটা হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুছিয়ে বললো,
“সরি কেনো?”
“আমার উচিত হয়নি গেটের বাহিরে যাওয়া।”
মুশফিক গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“হুম।”

মিতু কিছুক্ষণ মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
“একটা কথা বলি?”
“বলো।”
“আমার মনে হচ্ছে,কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।এটা কি আপনার কোন শ,ত্রু ছিলো?”
মুশফিক উঠে মিতুর কপালে ভালোবাসাময় ছোঁয়া আঁকে।
“আমি আছি।তোমার এতো ভাবার দরকার নেই।তুমি শুধু আমার কথামতো চলবে,আজকে খুব ভয় পেয়েছিলাম,তোমার কিঁছু হলে আমি কি করবো সেটাই ভাবতে পারি না।”

মিতু মাথা নাড়ে।মুশফিক তার শান্তির নাম,এই মানুষটা কাছে থাকলেই আলাদা এক শান্তি অনুভূত হয়।
রাত নয়টা মুশফিক আর মিতু ঢাকার বাসে বসে আছে।মিতুর মুখ ভার,চোখে পানি টলমল করছে।
তার এক কথা সে কোনভাবেই ঢাকা যাবে না কিন্তু মুশফিক তাকে ঢাকা নেবেই।অসুস্থ শরীর তাছাড়া ঝু,কিপূর্ণ সময়ে এখানে না থাকাই ভালো,ঢাকা থাকাই নিরাপদ।মুশফিকের এই যুক্তি মিতু মানতে নারাজ।ঝু,কিপূর্ণ এলাকা!তাহলে মুশফিক থাকবে কেনো?যদি মুশফিক থাকে তাহলে মিতুও থাকবে।মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।

“আমি এখানে থাকাটাই স্বাভাবিক মিতু।”
“তাহলে আমিও আপনার সাথে থাকতে চাই।”
“তোমাকে রাখবো না।”
“আমি থাকবো।আপনাকে এই বি,পদে রেখে আমি যাবো না।”
“জেদ করোনা।”

মিতু জেদ করেছিলো কিন্তু এই জেদে কোন লাভ হয়নি বরং মুশফিক তাকে বুকে জড়িয়ে আ গুন জ্বলা লা,ভায় বরফ ছিটিয়ে দিয়েছে।সে এখনো কাঁদছে।মুশফিক মিতুকে টেনে বুকে নেয়।আস্তে করে বললো,
“এতো কাঁদার কি আছে?কয়েক মাসের ব্যপারই তো,কথা দিচ্ছি এই মি,শনটা শেষ করার পরে আবার আমার কাছে নিয়ে আসবো।”

“আমি আপনাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারবো না।”
মুশফিক কাতর আকুতিভরা টলটলে মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে।সে অসহায়,চাইলেও মিতুকে আর কাছে রাখা যাবে না,মিতু টার্গেট হয়ে গিয়েছে।সে নিজেও মিতুকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে,তাও বললো,
“কয়েকদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে।”

মেজর পর্ব ২৭

মিতু বুঝতে পারে কোনভাবেও কাজ হবেনা।তাই বাকিটা সময় মিতু মুশফিকের বুকে শুয়ে থাকে।মুশফিক আর সে নিশ্চুপে নিজেদের না বলা কথাগুলো শুনে নেয়,আহ কি হাহাকার।মুশফিক পরম যত্নে মিতুর হাতের উল্টোপিঠে চুমু দেয়।আদুরে কথায় মিতুর মন ভালো করতে চায়।অথচ তার বুকেও একি জ্বালা, একি র,ক্তক্ষরণ।

মেজর পর্ব ২৯

3 COMMENTS

  1. আপু আপনি কি আর পর্ব দিবেন না তাড়াতাড়ি দেন না…

Comments are closed.