কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৭

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৭
নুজাইফা নূন

-” আপনি পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন স্যার?‌সুড়সুড়ি লাগছে তো আমার।আমি তো বলছি আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নি।আপনি আমার পায়ে হাত দিবেন না স্যার।এটা ভালো দেখায় না।নিজেকে নিজের কাছে অনেক ছোট মনে হচ্ছে।স্রোতের কথা শুনে আবদ্ধ স্রোতের ঠোঁটের উপর একটা আঙ্গুল রেখে বললো,

-” নো মোর ওয়ার্ডস্।আমি জানি আমার কি করা উচিত।লেট মি ডু মাই জব।”
-” প্লিজ স্যার।মম যদি এই ব্যাপার টা জানতে পারে।আমাকে প্রচুর বকবে।”
-” আশ্চর্য! তুমি স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার কথা কেন তৃতীয় ব্যক্তিকে বলবে?”
-” মম আমার প্রথম বেস্ট ফ্রেন্ড আর বাবুই দ্বিতীয়।আমি মম আর বাবুইয়ের সাথে সব কথা শেয়ার করি।”
-“সব কথা শেয়ার করো ।সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এখন তুমি বিবাহিত স্রোত। আমাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি, যা কিছু হোক না কেন তুমি সে কথা আর কাউকে বলবে না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আচ্ছা বলবো না। কিন্তু আপনি আমার পায়ে হাত দিবেন না প্লিজ স্যার।”
-“তোমার হাত পা ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছে।আমি হাতে পায়ে তেল গরম করে মালিশ করে দিচ্ছি।এতে বেটার ফিল করবে তুমি । তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো ,আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারতাম না স্রোত।”

-” আমি ঠিক আছি স্যার।তবে সৈকত স্যারের কথাটা আমি চাইলেও ভুলতে পারছি না।যে মানুষ টা কে আমি সম্মান , শ্রদ্ধা করতাম, সেই মানুষটা আমার উপর অত্যাচার নির্যাতন করবে এটা আমি কখনোই ভাবতে পারি নি। আপনার মনে আছে স্যার আমি সবার সাথে ডেয়ার নিয়ে আপনাকে প্রেমপত্র দিয়েছিলাম।আপনি তার শাস্তি স্বরূপ আমাকে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলেন?”

-” হুম।”
-” এরপর আমি সেন্সলেস হয়ে যায়।তখন সৈকত স্যার আমাকে দেখতে এসেছিলো। আমি এখন বুঝতে পারছি সেদিন মূলত তার উদ্দেশ্যে আমাকে দেখতে আসা ছিলো না।তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো আমার মনে আপনার প্রতি খারাপ একটা মনোভাব তৈরি করে দেওয়া।আর হয়েছিলো ও তাই। সেদিনের সেই ঘটনার পর আমি আপনাকে আমার শত্রু মনে করতাম। ইচ্ছে হতো আপনাকে খু’ন করে দিতে।”

-” খু’ন তো আমি অনেক আগেই হয়ে গিয়েছি স্রোত।তোমার হাসিতে খু’ন হয়েছি।তোমাকে চাহনিতে খু’ন হয়েছি।তোমার পাগলামি তে খু’ন হয়েছি।এখন খুনের অপরাধে আমার মনের জেলখানায় সারাজীবন আটকে রাখবো তোমাকে। একদম আমৃত্যু আমার মনের জেলখানায় থাকবে তুমি।”

-“বিড়বিড় কি সব বলছেন স্যার?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
-” মানে টা যেদিন তুমি বুঝতে পারবে, সেদিন ই না হয় তুমি বুঝে নিও।যাই হোক আমরা আজ বাড়ি ফিরছি না। আপাতত আজকের রাত টা এখানেই মানে তোমার পুলিশ ভাইয়ার বাড়িতে কাটাতে হবে। তোমার সাথে যে এতো কিছু হয়ে গিয়েছে।এই ব্যাপারে কেউ কিছু জানে না।সবাই জানলে অনেক টেনশন করবে।তাই আমি কাউকে বলি নি। তোমার বাবা কে বলেছি আমরা আমার ফ্রেন্ড রকির বাড়িতে আছি। তুমি ও সেরকম টাই বলবে।বাবা বারবার কল করেছেন। তুমি একবার কথা বলে নাও।”

-” ঠিক আছে। কিন্তু আমার ফোন টা যে হারিয়ে গিয়েছে। ফোন টা বাবা আমাকে আমার জন্মদিনে গিফট করেছিলো।কতো শত ছবি ছিল আমার। আমার কতো শখের ফোন টা হারিয়ে গেলো।”
-” তোমার জীবনের থেকে একটা ফোনের মূল্য বেশি হতে পারে না স্রোত।সামন্য একটা ফোন ই তো।আমি আগামীকাল তোমাকে একটা নতুন ফোন কিনে দিবো।”

-” সত্যিই?”
-” হুম।”
-” হুম বলার সাথে সাথে স্রোত আবদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে বললো, থ্যাংক ইউ স্যার।আমি খুব খুশি হয়েছি।আবদ্ধ মুচকি হেসে স্রোত কে দুহাতে আগলে নিয়ে কপালে চুমু দিতে যাবে তার আগেই নিলয় রুমে প্রবেশ করে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

-” সরি সরি।আমি কিছুই দেখি নি।আর দেখলেও কিছু মনে করতাম না।আমার বোন দুলাভাই , শা’লাই তো। কিন্তু ভুল টা আমারি হয়েছে।আমারি বোঝা উচিত ছিলো এই রুমে সদ্য বিবাহিত কাপল রয়েছে।”
-” নিলয়ের কথা শুনে স্রোত আবদ্ধ দুজনে দু দিকে সরে গেল। স্রোতের তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। স্রোতের এমন অবস্থা দেখে নিলয় বললো,

-” লজ্জা পেলে তোমাকে একদম ক্রিম আপার মতো দেখতে লাগে‌ স্রোত।”
-” স্রোতের তৎক্ষণাৎ সব লজ্জা গায়েব হয়ে গেলো।স্রোত নিলয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললো,ভাইয়া আপনি ও ক্রিম আপার ভিডিও দেখেন?আমি তো ক্রিম আপার অনেক বড় ফ্যান।তার সব ভিডিও দেখি আমি।”
-” ক্রিম আপার ফ্যান আর ক্রিম আপার ফ্যানের বর । আপনাদের দুজনকেই আম্মা খেতে ডাকছে।দয়া করে চলুন।”
-” চলুন ভাইয়া। আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে। মনে হচ্ছে কতো বছর আমি না খেয়ে রয়েছি।”

-” আবদ্ধ স্রোত কে নিয়ে নিচে এসে দেখে‌ নিলয়ের মা হালিমা বেগম তাদের জন্য হরেক রকমের রান্না করেছেন।হালিমা বেগম খুব‌ই নরম মনের মানুষ।স্রোত নিচে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি স্রোত কে চেয়ারে বসিয়ে নিজে হাতে খাবার খাইয়ে দেন।স্রোত ও তৃপ্তি সহকারে খাবার শেষ করে রুমে এসে আবদ্ধের ফোন নিয়ে লক খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু খুলতে ব্যর্থ হয়ে ফোন বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দেয়। ঠিক তখনি আবদ্ধ‌ রুমে প্রবেশ করে।আবদ্ধ কে দেখে স্রোত ফোন নিয়ে এসে বললো,

-” ফোনের লক টা খুলে দিন না প্লিজ।”
-“আবদ্ধ স্রোতের হাত থেকে ফোন নিয়ে পকেটে রেখে বললো,কেন কি করবে?সবার সাথেই তো কথা বললে।তাহলে এখন আবার ফোন দিয়ে কি করবে?”
-” দিন না স্যার।গল্প পড়বো।আজ সারাদিন আমি গল্প পড়তে পারি নি।গল্প না পড়লে আমি রাতে শান্তি করে ঘুমোতে পারবো না।প্লিজ স্যার দিন না।”

-” লাইক সিরিয়াসলি? তুমি এখন গল্প পড়বে ? আজ সারাদিন তোমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। কোথায় এখন তুমি রেস্ট নিবে।তা নয় তো তুমি এখন গল্প পড়বে? তুমি কোন ধাতুর তৈরি বলো তো স্রোত? কোনো গল্প পড়তে হবে না। তুমি এখন ঘুমোবে ।এটাই ফাইনাল।”

-” গল্প পড়া একটা নেশা স্যার।এই নেশায় যারা আসক্ত ‌। শুধু মাত্র তারাই বুঝতে পারে গল্প পড়ার মজা।আপনার কাছে ফোন চেয়েছি।দিলে দিন ।না দিলে আমি পুলিশ ভাইয়ার থেকে ফোন নিয়ে এসে গল্প পড়বো বলে স্রোত রুমের বাইরে পা রাখার আগেই আবদ্ধ স্রোতের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,

-” সব সময় পুলিশ ভাইয়া পুলিশ ভাইয়া করবে না তো স্রোত।”
-” কেন স্যার ? আপনার কি জ্বলে?”
-” এসব কি ধরণের কথা বার্তা স্রোত?”
-” আপনি ফোন দিবেন কি না?”

-” আবদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে লক খুলে দিয়ে স্রোতের হাতে দিয়ে বললো,
-” যতোটা সময় গল্প পড়ে সময় নষ্ট করো , ততোটা সময় যদি পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করতে।তাহলে তোমার প্রতি বছরে বছরে ইমপ্রুভমেন্ট দিতে হতো না।একটা ভালো রেজাল্ট আসতো তোমার।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৬

-” স্রোত আবদ্ধের হাত থেকে ফোন নিয়ে সুর করে গাইতে শুরু করলো,
-” যদি বারে বারে ম্যাথ সাবজেক্টের ইমপ্রুভমেন্ট দিতে না হয় তবে পরীক্ষার মজা কোথায়? আর অনার্সে পড়ার মজাই বা কোথায়?যদি পরীক্ষার হলে ইশারাতে বান্ধবী পেছনে ফিরে না তাকায়, তবে মানবতা কোথায়? আর বন্ধুত্ব কোথায়??
লাললালালা লালা লালা….

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৮