কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৩১

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৩১
নুজাইফা নূন

-” আই লাভ ইউ সো মাচ মাই ডেয়ার এটিটিউড এর দোকানদার।”
-” কথাটা বলা মাত্রই আবদ্ধ স্রোতের হাতে স্কেল দিয়ে মেরে বললো, আমি তোমার মুখ থেকে আই লাভ ইউ শুনতে চাই নি স্রোত।আমি জানতে চেয়েছি কার্যকরী মূলধন কাকে বলে?”
-” আমার এখন পড়তে ইচ্ছে করছে না স্যার।আমার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে স্যার বলে স্রোত আবদ্ধের কোলের উপর থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে নিজে আবদ্ধের কোলের উপর বসে দুহাতে আবদ্ধের গলা জড়িয়ে ধরে সুরে সুরে গাইতে শুরু করলো,

-” প্রেম জেগেছে আমার মনে।বলছি আমি তাই।তোমায় আমি ভালোবাসি।তোমায় আমি চাই।”
-” স্রোতের গান শুনে আবদ্ধ ও সুরে সুরে বললো,
ওয়েবসাইটে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত হয়েছে।বলছি আমি তাই।এসব দুষ্টুমি বাদ দিয়ে পড়তে বসুন।আপনার ভালো রেজাল্ট আমি চাই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ধূর বা’ল। আপনি দিলেন তো আমার রোমান্টিক মুড টা নষ্ট করে‌।আপনি আসলেই একটা আনরোমান্টিক, রসহীন , পুরুষ মানুষ। এজন্যই আপনাকে বলি আপনি গল্প পড়ুন।আপনি গল্প পড়ে জানতে পারবেন কিভাবে ব‌উয়ের সাথে রোমান্স করতে হয়? কিভাবে রোমান্টিক হতে হয়?”
-” সংসার জীবনের ৪ টা বছর আমার সাথে কাটালে।এখনো বুঝতে পারো নি আমি রোমান্টিক কিনা?”

-” সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়।তাই না স্যার।এইতো কিছুদিন আগে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না বলে কতো বাহানা করলাম। কিন্তু বিয়ের পর কিভাবে যে ৪ টা বছর কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।আমার কিডন্যাপের ঘটনার পর থেকে আপনি আমার মনে একটু একটু করে জায়গা নিতে শুরু করলেন।

আর আশ্চর্যজনক ভাবে আপনার সাথে থাকতে ,আপনার কথা শুনতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগতো।সেই ভালো লাগা টা আরো বেড়ে গেল ।যখন আমি জানতে পারলাম আপনিই আমার দাদুর স‌ইয়ের নাতি।আমার সেই অদেখা রাজপুত্র যাকে আমি আমার কলিজার ভেতর গেঁথে রেখেছিলাম।যাকে না দেখে না ছুঁয়ে এতোটা ভালোবেসে ছিলাম যতোটা ভালো আমি আমার নিজেকেও বাসি নি। সেদিন আমি কতোটা সুখ অনুভব করেছিলাম, আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না।আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি স্যার।সারাটা জীবন আপনার সাথে কাটাতে‌ চাই।”

-” স্রোত আবেগী হয়ে পড়েছে দেখে আবদ্ধ স্রোত‌ কে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে মিশিয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো, আমি ও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি স্রোত। ভালোবাসি বলেই‌ আজ থেকে ৪ বছর আগে তোমার পাপার হাতে‌ পায়ে ধরে তোমাকে ভিক্ষে চেয়েছিলাম। তোমার পাপা সৈকতের সাথে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।আমি অনেক কষ্টে তোমার পাপা কে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পছন্দ করো না দেখে আমি কখনো বলিনি আমি তোমাকে ভালোবেসে করেছিলাম।আমি চেয়েছিলাম তুমি একটু একটু করে আমাকে বুঝো‌।আমাকে তুমি ফিল করো।আমাকে ভালোবাসো।আর আমার সেই পূরন হয়েছে।আমার বাচ্চা ব‌উ টা আমাকে ভালোবাসতে শিখেছে।আমাকে ফিল করতে শিখেছে।এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারো বলো?”

-“আবদ্ধের কথায় স্রোত নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। স্রোতের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।আবদ্ধ শার্টে ভেজা ভেজা অনুভব করতেই বুঝতে পারলো স্রোত কান্না করছে।আবদ্ধ স্রোত কে কান্না করতে দেখে বুক থেকে তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে নাকের ডগায় চুমু দিয়ে বললো,
-” পাগলি মেয়ে কান্না করছো কেন?”

-” আমার খুব ভয় হচ্ছে স্যার ।আপনাকে হারানোর ভয়।আপনি যদি আমার ব্যাপারে সব যেনে আমাকে দূরে ঠেলে দেন।আমি বাঁচতে পারবো না‌ স্যার।আমি সত্যিই মারা যাবো।”
-” কোন‌ সত্যির কথা বলছো তুমি?”
-” আমি আপনাকে কখনো‌ বাবা হবার আনন্দ দিতে পারবো না স্যার।”
-” কথাটা শোনা মাত্রই আবদ্ধের যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো। আবদ্ধ দুহাতে স্রোতের মুখ ধরে বললো,
-” এসব কি বলছো তুমি? সব মিথ্যা কথা? তুমি পারবে মা হতে।”

-” পারবো না স্যার ।পারবো না।আমি মম কে পাপার সাথে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুনেছি। ছোটবেলায় আমি অন্যদের মতো স্বাভাবিক ছিলাম না।আমার জন্য পাপার অনেক অনেক টাকা খরচা হয়েছে।এখন আমি সুস্থ্য থাকলেও শারীরিক দিক থেকে অক্ষম।আমি কখনো কনসিভ করতে পারবো না।আর কনসিভ করলে সেটা আমার জন্য অনেক রিষ্ক হয়ে যাবে।

আমার উচিত ছিলো ব্যাপার টা আরো অনেক আগেই আপনার সাথে শেয়ার করার। কিন্তু আমি অনেক লোভী স্যার।আপনার ভালোবাসা পাবার লোভ আমাকে স্বার্থপর করে দিয়েছে।আমি আমার অক্ষমতার কথা আপনাকে বলতে গিয়েও বলতে পারি নি।যদি আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন?যদি আপনার পথ আর আমার পথ আলাদা হয়ে যায়।এই ভয়ে আমি আমার সত্যি টা আপনাকে বলতে পারি নি স্যার। কিন্তু কথাটা আপনাকে না বলতে‌ পেরে মনে হচ্ছিলো আমি আপনাকে ঠকাচ্ছি।”

-” তুমি আমাকে ঠকাও নি স্রোত। তুমি মা হতে গেলে তোমার অনেক রিষ্ক থাকবে।এটা আমি আগে থেকেই জানতাম।আমি সবটা জেনেই তোমাকে বিয়ে করেছি। বিশ্বাস করো স্রোত আমার দরকার নেই বাবা ডাক শোনার।হ্যাঁ মানছি যে সন্তান ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয় না।বাবা ডাক শোনার মধ্যে আলাদা রকম ভালোলাগা থাকে।তাই বলে এমনটা নয় যে তোমার জীবনের বিনিময়ে আমাকে বাবা ডাক শোনার আনন্দ দিতে হবে। প্রয়োজনে আমরা বাচ্চা এডোপ্ট নিবো।”

-” আবদ্ধের কথায় স্রোত মনে মনে বললো আপনি যতোই মুখে বলুন আপনার বাচ্চা চায় না। কিন্তু আমি জানি আপনি বাচ্চা কতো পছন্দ করেন। আমি নিজে চোখে দেখেছি আপনি বাবুই আর নিলয় ভাইয়ের বাচ্চাকে কতো ভালোবাসেন।কতো আদর করেন। আমাদের বিয়ের কয়েক মাস পরে বাবুই আর নিলয় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। বাবুই এখন এক বাচ্চার মা।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৩০

অথচ আমাদের বিয়ের চার বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমি আপনাকে বাবা হবার আনন্দ দিতে পারলাম না।আমার কাছে আমার জীবনের থেকে আপনার আনন্দ বেশি মূল্যবান। প্রয়োজনে আমি আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আপনাকে বাবা হবার অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো স্যার।যদি ও এতে আমার মৃত্যু অনিবার্য হতে পারে।তবুও আপনার অপূর্ণ চাওয়া আমি পূর্ণ করবো।।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে শেষ পর্ব