কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৯

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৯
নুজাইফা নূন

-” কি দেখছেন স্যার ?”
-” চাঁদ।”
-” আশ্চর্য জনক ঘটনা! ভোর বেলা আপনি চাঁদ দেখছেন? সেটাও আবার বিছানায় শুয়ে শুয়ে?”
-” হুম।এই চাঁদ দেখার সাধ্য সবার নেই।”

-” সকাল সকাল কি সব আবোল তাবোল বকছেন আপনি। আমার ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছিলো কেউ যেন গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমি চোখ মেলেই দেখি আপনি ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অথচ বলছেন আপনি চাঁদ দেখছেন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” এসব তুমি বুঝবে না মেয়ে।”
-” বুঝিয়ে বলুন স্যার।তাহলে ঠিক বুঝতে পারবো।”
-” অনেকক্ষণ হলো ফজরের আযান দিয়েছে।এখন উঠো তো।ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নাও।আমিও যাই নিলয়ের সাথে গিয়ে মসজিদ থেকে জামাতে নামাজ পড়ে আসি বলে আবদ্ধ উঠতে গেলেই স্রোত আবদ্ধ কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো,

-” আর একটু থাকেন না স্যার প্লিজ। আপনার বুকে এভাবে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে বড্ড ভালো লাগছে আমার।”
-” জেদ করো না স্রোত। আমাদের সকাল সকাল বাড়ি ফিরতে হবে।সবাই অনেক টেনশন করছে।একটা সত্য ঢাকতে গিয়ে কতগুলো মিথ্যা বলতে হয়েছে।আমি আর কোনো মিথ্যা বলতে চাইছি না তাদের।তাছাড়া আমি তো আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাচ্ছি না ‌।আমার বুক তোমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে দিলাম আমি। আমৃত্যু আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকবে ।এখন থেকে আমাদের বিছানায় একটা বালিশ থাকবে।সেই বালিশে আমি মাথা রাখবো।আর তুমি মাথা রাখবে আমার বুক নামক বালিশে।এই বালিশ তোমার স্রোত। একান্তই তোমার।”

-” ধনেপাতা স্যার।আপনাকে যতটা খারাপ মনে করেছিলাম আপনি ততোটাও খারাপ নন স্যার।”
-” ধনেপাতা মিন ?”
-” ধন্যবাদ।আমি গল্পে..
-” থাক স্রোত! কথায় কথায় তোমার গল্পের কথা টেনে আনতে হবে না।এখন থেকে গল্প পড়া বাদ দিয়ে একটু পড়াশোনায় মনোযোগী হ‌ও। তুমি একজন প্রফেসরের ওয়াইফ স্রোত। পড়াশোনায় এমন ফাঁকি বাজি মানায় না তোমার।”

-” আমি আর ফাঁকি বাজি করবো না স্যার। নিয়মিত ক্লাস করবো । বাসায় পড়বো।আপনি দেখবেন আমার ফার্স্ট ক্লাস হবে।তখন আপনি সবার সামনে বলবেন‌‌ , স্রোত ভূঁইয়া আমার বিবাহিত স্ত্রী।আমার অর্ধাঙ্গী ।ও সাধারণ মেয়ে নয়।ও মিসেস মুনফাসিল আবদ্ধ।”
-” সেই দিনটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম স্রোত।”
-” আমি আমার সবটুকু দিয়ে আপনার যোগ্য স্ত্রী হবার চেষ্টা করবো স্যার।আমার জন্য আপনাকে আমি ছোট হতে দিবো না।”

-” বাব্বা ! আমার অবুঝ ব‌উ হুট করে এতো বুঝদার হয়ে গেল কিভাবে?”
-” পরিস্থিতি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে স্যার।কে আপন কে পর বুঝিয়ে দিয়েছে।”
-“আবদ্ধ স্রোতের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
দ্যাটস গুড মাই লেডি।এবার কিন্তু উঠতে হবে।”

-” এইতো উঠে পড়ছি বলে স্রোত আবদ্ধের বুক সরে আসে।আবদ্ধ‌ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে মসজিদে চলে যায়।আবদ্ধ যাওয়ার পর পরই স্রোত আবারো বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।”
-” নিলয় আবদ্ধ দুজনেই নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে সোজা নিলয়দের জমিতে চলে যায়।সেখানে ঘাসের উপর শিরির জমে থাকতে দেখে আবদ্ধ পা থেকে জুতা খুলে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

-” ইশ্! কতো বছর পরে গ্ৰামীন পরিবেশের ঘ্রাণ নিতে পারছি। স্রোত কে সাথে নিয়ে আসলে ভালো হতো।আমরা দুজন দুজনের হাত ধরে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটতে পারতাম।এই সরিষা ফুল , এই শিশির ভেজা ঘাস আমাদের সেই সুন্দর মূহুর্তের সাক্ষী হয়ে থাকতো।”

-” ইদানিং তুই অনেক রোমান্টিক হয়ে যচ্ছিস আবদ্ধ। সিঙ্গেল মানুষের অন্যের রোমান্টিকতা দেখলে জ্বলে দোস্ত।”
-” তুই ও বিয়ে করে নে।ব্যাস প্রবলেম সলভ।”
-” নিলয় আবদ্ধের কথার উত্তর না দিয়ে বললো,আমি তোকে কিছু বলতে চাই আবদ্ধ।”
-” আমার ও আরুর ব্যাপারে তোকে কিছু বলার আছে।”
-” একটু সামনেই নুরুল কাকার চায়ের দোকান আছে।কাকা অনেক সুন্দর দুধ চা বানায়।একবার খেলে মুখে লেগে থাকে।চল নুরুল কাকার চায়ের দোকানে বসে চায়ের সাথে পাউরুটি খেতে খেতে গল্প করা যাবে।”

-” ঠিক আছে চল।”
-” নিলয় আবদ্ধ কে নিয়ে নুরুল ইসলামের চায়ের দোকানে আসতেই নুরুল ইসলাম বললেন,
-“আরে নিলয় বাবা যে।এবার অনেক দিন পরে গ্ৰামে আসলে মনে হয়।”
-” হ্যাঁ কাকা।”

-” আমি ও মনে মনে ভাবছিলাম নিলয় বোধহয় আসে নি।নিলয় আসলেই আমার বানানো চা খেতে চলে আসে।”
-“তোমার বানানো চায়ের স্বাদ মুখে লেগে থাকে কাকা।তাই তো এবার আমি একা আসি নি।আমার বন্ধু কেও নিয়ে এসেছি তোমার চা খাওয়াতে। ঝটপট দুই কাপ চা আর দুটো পাউরুটি দাও কাকা।”
-” দিচ্ছি বাবা।তোমরা বেঞ্চিতে একটু বসো।”
-” আবদ্ধ নিলয় দুজনেই বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসলো।এর‌ই মধ্যে নুরুল ইসলাম চা পাউরুটি দিয়ে গেলো।আবদ্ধ চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,

-” আসলেই তো! চমৎকার চা ।”
-” হুম। এজন্যই আমি গ্ৰামে আসলে যতো কাজ থাকুক না কেন নুরুল কাকার হাতের বানানো চা পাউরুটি খেতে মিস করি না।বাই দ্যা ওয়ে আরুর ব্যাপারে কিছু একটা বলবি বলছিলি ? ”

-” আরুর জন্য বড্ড চিন্তা হচ্ছে রে।আরুটা আবেগের বশে নিজের অনেক বড়ো ক্ষতি করে ফেলেছে।ও সৈকত কে ভালোবাসতো। কিন্তু সৈকত ওকে ভালোবাসে নি।এতে মেয়েটা যতোটা না কষ্ট পেয়েছে।তার থেকে বেশি কষ্ট পাবে সৈকতের এমন অমানুষের গল্প শুনে।আর যাই হোক।কেউ তার ভালোবাসার মানুষের বদনাম শুনতে পারে না।”

-” আমি জানি আরু সৈকত কে ভালোবাসতো।আর এখনো বাসে।”
-” হোয়াট ? তুই এতো বড়ো একটা কথা আমার থেকে লুকিয়ে গিয়েছিস নিলয় ?”
-” হুম আমি যদি তোকে এই ব্যাপারে বলতাম ।তাহলে তুই আরুকে নানান কথা শুনিয়ে দিতি।এতে আরু কষ্ট পেতো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৮

-” কষ্ট তো আরু এমনিতেই পাচ্ছে।ভাবছি খুব শ্রীঘ্রই ভালো ছেলে দেখে আরুকে বিয়ে দিবো।”
-” আমি ও তো ভালো ছেলে।আমাকে তোর চোখে পড়ে না আবদ্ধ।আমি কি আরুর অযোগ্য ? ”
-” মজার ছলে হলে এমন কথা আর কখনো বলবি না নিলয়‌।তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমার বোন মানে তোর ও বোন।”
-” তোর বোন মানে আমার বোন।তোর বাবা মা মানে আমার ও বাবা মা‌।তাহলে তোর ব‌উ মানে আমারো তো ব‌উ।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৩০