আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৩

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৩
Raiha Zubair Ripte

-“ ইম্পসিবল চাচা। নেক্সট উইকে আমার ফ্লাইট আর তুমি বলছো দু মাস পর বিয়ের ব্যাবস্থা করবে!
তামিম খাঁন হকচকিয়ে গেলেন। সামির খাঁনের সাথে কথা বললেন তামিম। সামির খাঁনের আপত্তি নেই তৃষ্ণা কে রাফির বউ হিসেবে মেনে নিতে। তাছাড়া বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই থাকছে। এর চেয়ে বড় আর কিই বা হতে পারে। তো তামিম খাঁন জানতেন না নেক্সট উইকে রাফি মালদ্বীপ যাবে। সেজন্য উনি অনুমান করে বলেন দু মাস পর ডেট ফিক্সড করে বিয়ে দিবেন। সেটা শুনেই রাফি সহসা বাঁধা দেয়।
তামিম খাঁন ভ্রু কুঁচকে বলেন-

-“ নেক্সট উইকে কোথায় যাচ্ছ?
-“ মালদ্বীপ প্রেজেক্টের জন্য।
-“ ওহ্ তাহলে সমস্যা কোথায়? একেবারের জন্য তো আর চলে যাচ্ছো না। ফিরে আসলে দিন তারিখ ফিক্সড করবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ তুমি বুঝতে পারছো না চাচা। আমি নেক্সট উইকে গেলে কবে ফিরবো শিউর নই। বিডি ফিরতে মাস চার থেকে পাঁচ লাগতে পারে।
-“ এতো সময় কেনো?
-“ প্রজেক্ট টা মালদ্বীপ হবে সেজন্য। আমি কাজি কে বলে রেখেছি আপাতত আমি ঘরোয়া ভাবে তৃষ্ণা কে বিয়ে করে তারপর মালদ্বীপ যেতে চাইছি। ফিরে আসার পর ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ো।
তুষার চুপচাপ বসে রাফির কথা গুলো শুনলো।

-“ এতো তাড়া কেনো তোর বিয়ে করার জন্য? ফিরে এসে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?
রাফি বিরক্তি নিয়ে শুধালো-
-“ তুমি তো বিয়ে করে ফেলছো তাই বুঝতে পারছো না আমার বিষয় টা। এখন তো আর সিঙ্গেল না তুমি। মিঙ্গেল হওয়ার জন্য তো তুমি ও তাড়া দিয়েছিলে বিয়ে করার জন্য। মীরজাফর গিরি না করে তোমার বোন কে আমার হাতে তুলে দাও ব্রো।

-“ না করেছি কখন যে দিব না?
-“ তাহলে কাজি কে ডাকি?
-“ যাবি নেক্সট উইকে তো আজ কেনো কাজি ডাকবি? চলে যাওয়ার দু একদিন আগে ডাকলেই তো হয়।
-“ তুমি কি আমার বিয়েতে বাগড়া দিতে চাইছো? এতো লজিক দেখাচ্ছো কেনো? জীবন নিয়ে ভরসা নেই যদি ম-রে যাই তখন? আফসোস থেকে যাবে না আমার?
তুষার চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিতে দিতে বলে-

-“ সমস্যা কি ফেসবুকে একটা ভিডিও তে শুনেছিলাম কোনো নারী বিয়ে করার তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে মা-রা গেলে তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দেওয়া হবে।
-“ আমি কি নারী?
ফসফস করে কথাটা বলে উঠলো রাফি। তুষার বিনিময়ে ঠোঁট কামড়ে চুপ রইলো। তারপর রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ তোর ও কি রাফির মতো বিয়ে করার জন্য তোড় সইছে না? আজই করে ফেলবি?
রাতুল থতমত খেয়ে গেলো। রোমিলা বেগম হাস্যমুখ করে বলে-
-“ না না আমরা তেমন প্রস্তুতি নিয়ে আসি নি রে। আমরা তো শুধু প্রস্তাব নিয়ে এসেছি৷ তোরা কি রাজি?
-“ রাজি না হওয়ার কি আছে? অধরা নিজের মুখেই তো বললো তার কোনো সমস্যা নেই।
-“ তা ঠিক তবে ধীরেই আগাতে চাই। সামনে তো অধরার পরীক্ষা শুনলাম। পরীক্ষা টা শেষ হোক তারপর ধুমধাম করে ছেলের বউ ঘরে নিয়ে যাব। রাফি আর তৃষ্ণার কাবিনের দিন না হয় আংটি পড়িয়ে রাখবো।
-“ হুমম বিষয় টা মন্দ না।

চিত্রা রুমে বিছানায় বসে আছে। পাশেই তুষার উল্টো হয়ে শুয়ে আছে খালি গায়ে। চিত্রার হাত তুষারের চুলের ভাজে। তুষার চেয়ে আছে চিত্রার দিকে। সন্ধ্যার পরপরই রাতুলরা চলে গেছে। তিনদিন পর ফের আসবেন আংটি পড়াতে। সেদিন রাফি তৃষ্ণার ও ছোট্ট পরিসরে বিয়ে। আকস্মিক তুষার চিত্রার কামিজের ফাঁক দিয়ে উন্মুক্ত পেটে হাত দেয়। চিত্রা সরু চোখে তাকায়।

-“ আবার শুরু করলেন।
তুষার চোখ টিপে বলে-
-“ শুরু করতে চাইছি।
চিত্রা উঠে দাঁড়ালো। রুমের লাইট অফ করে চাদরের নিচে ঢুকে পড়লো। তুষারের মেলে রাখা হাতের উপর মাথা দিয়ে তুষার কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে বলল-
-“ ভালো লাগছে না আজ।
তুষার চিত্রার মাথার চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলে-

-“ মন খারাপ?
-“ না বিষন্ন।
-“ কেনো?
-“ তা জানি না। অস্থির অস্থির লাগছে ভীষণ। ভালো লাগছে না।
-“ ঘুমানোর চেষ্টা করো ভালো লাগবে।

চিত্রা হুমম বলে। তুষার চিত্রার কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
ব্রিজের পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছে অধরা আর রাতুল। পাশেই স্বর্ণকারের দোকান। আংটির মাপ নিয়ে আংটি কিনতে এসেছে তারা। স্বর্ণকারের দোকানে যাওয়ার পথেই হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায় আকবরের সাথে। আকবর এসেছিল বউয়ের রুলি নিতে। সামনে রাতুল কে দেখে ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠে। রাতুল অধরার হাত ধরে আকবর কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আকবর পেছন ফিরে বলে-

-“ শুনলাম বিয়ে করছো।
রাতুলের হাঁটার গতি থেমে গেল। তা দেখে আকবর ফের বলল-
-“ এটাই সেই মেয়ে যাকে বিয়ে করছো?
রাতুল ঘুরে আকবরের সোজাসুজি দাঁড়ালো।

-“ হুম।
-“ জানাও নি তো।
রাতুল ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আপনাকে কেনো জানাবো?
-“ আমাকে কেনো জানাবে সেটা তুমিই ভালো করে জানো।
-“ না জানি না। যাকে তাকে আমার বিয়ের খবর কেনো জানাবো?
-“ যাকে তাকে মানে? আমি কে ভুলে গেছো?
-“ উঁহু ভুলি নি আপনি কে। আপনি হচ্ছেন চাঁদাবাজ, অহরহ অন্যায় করা এক অপরাধী।
আকবর স্মিত হাসলো।

-“ তার উর্ধ্বে আমি তোমার….
-“ কেউ না।
-“ তুমি বললেই তো হবে না। রক্ত বলবে কথা।
রাতুল ঘৃণায় দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলে-
-“ যদি পারতাম এই রক্ত গুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করতে শরীরের ময়লার মতো তাহলে এই দূষিত রক্ত শরীরে ঠাই দিতাম না।

-“ এটা যখন পারবে না তাহলে বলে লাভ নেই। বিয়েতে তো থাকা আবশ্যক আমার তাই না? বিনা আমন্ত্রণে চলে যাব সে নিয়ে চিন্তা করো না। তা বউ কে নিয়ে একদিন নিজের বাড়ি এসো খুশি হবো।
-“ জীবিত থাকতে ঐ বাড়িতে পা রাখবো না।
-“ তাহলে মৃ’ত শরীরেই না হয় ঢুকো।
-“ আপনাকে দেখলে আমার জাস্ট ঘৃণা লাগে। আমি যে আপনার রক্তের কথাটা মনে পড়লেই শরীর ঘিনঘিন করে উঠে।

অধরা এতোক্ষণ হা হয়ে তাদের কথা শুনছিল। বুঝতে পারছিলো না এই লোকটা কে। আর রাতুলের সাথেই বা কেনো এভাবে কথা বলছে। মাঝের কিছু কথা আর রাতুলের বলা লাস্টের কথা শুনে বিষয় টা হালকার উপর ঝাপসা ক্লিয়ার হলো।
আকবর নৈঃশব্দ্যে হেসে স্থান ত্যাগ করলো। অধরা রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ উনি আপনার বাবা?
রাতুল তপ্ত শ্বাস ফেললো। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। অধরা আকবরের যাওয়ার পানে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে রইলো। কিছু একটা ভেবে বলল-

-“ আপনার বাবা আর আপনার মধ্যকার সম্পর্ক ভালো না?
-“ প্লিজ উনাকে আমার বাবা বলো না। কথাটা ভিষণ কানে বাজে।
-“ সত্যি বলতে গেলে উনিতো আপনার বাবাই। তাহলে আপনাদের বাবা ছেলের সম্পর্ক এমন কেনো?
-“ অনেক কাহিনি আছে সেসব না শুনলেও চলবে। কোনো একসময় সময় পেলে বলবো। এখন চলুন আংটি নিতে হবে।

চিত্রা দের বাসা থেকে চিত্রার মা বাবা এসেছে। সিমি আর রিয়াদ চলে গেছে বাসায়। আজ তৃষ্ণা রাফির ছোট্ট পরিসরে বিয়ে। তৃষ্ণা পেঁয়াজ কালারের একটা কাতান শাড়ি পড়েছে। সিম্পল সাজ। রাফি নিজেও পেঁয়াজ কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে। চিত্রা ব্লু কালারের শাড়ি পড়েছে আর অধরা ব্লাক কালারে। রাতুল আর রোমিলা বেগম এখনও আসে নি।
সামির খাঁন ফোন করে কাজিকে আসতে বলেছেন। ঘন্টা একের মধ্যে কাজিও চলে আসে। রাফি আর তৃষ্ণা কে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসানো হয়। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। কাজি কবুল বলতে বললে রাফি ফট করে বলে বসে-

-“ কে বলবে?
কাজি সাহেব বলেন মেয়ে বলবে। রাফি ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে। তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তাড়াতাড়ি বলো।
তৃষ্ণা সময় নিয়ে কবুল বলে। কাজি এবার রাফিকে বলতে বললেই রাফি সময় না নিয়েই কবুল বলে উঠে।
বিয়ে পড়ানোর শেষে কাজি চলে যেতেই রাতুল আর রোমিলা বেগম আসেন। অধরা তখন তৃষ্ণার পাশে বসে ছিল। রাতুল কে দেখে তুষার এগিয়ে যায়।

-“ সব ঠিকঠাক আছে?
রাতুল সময় নিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। রোমিলা বেগম গিয়ে সোফায় বসেন। তানিয়া বেগম মিষ্টির প্লেট নিয়ে আসেন। তামিম খাঁন অধরার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমির আসবে না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩২

অধরা তপ্ত শ্বাস ফেলে। এমন একটা দিনে অধরা চেয়েছিল তার বাবা নামক ঐ মানুষ টা খনিকের জন্য হলেও যেনো আসে। কিন্তু না লোকটা আসবে না। রাতুল এসে অধরার বরাবর বসে। রোমিলা বেগম ব্যাগ থেকে আংটি বের করে রাতুলের হাতে দেয়। রাতুল আংটি টা হাতে নিয়ে অধরার হতে পড়িয়ে দেয়।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৪