আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩২

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩২
Raiha Zubair Ripte

-“ নেক্সট উইকে তোমায় মালদ্বীপ যেতে হবে রাফি নতুন প্রজেক্ট টার জন্য। আই থিংক তোমার সমস্যা নেই। সো প্রিপেয়ার্ড হও যাওয়ার জন্য।
খাওয়ার টেবিলে খাবার খেতে খেতে কথাটা বলেন সামির খাঁন। চকিতে ঘাড় ঘুরায় রাফি। বিস্ময় হয়ে বলে-

-“ আগে তো বলো নি।
-“ কাল রাতেই মিস্টার জেইদ জানিয়েছেন। টাকা টা তারা ইনভেস্ট করছে তো তারা চাচ্ছে প্রজেক্ট টা তাদের ওখানেই কমপ্লিট করতে।
-“ কতদিন থাকতে হবে?
-“ সেটা তোমার প্রজেক্টের উপর নির্ভর করছে। মাস দুয়েক লাগতে পারে বা মাস তিনেক বা তার ও বেশি।
-“ অনেক দিনের ব্যাপার।
-“ হুম কোনো সমস্যা?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ হুমম সমস্যা ই তো। বিয়ের প্ল্যান করছি আর তুমি প্রজেক্টের কাজে পাঠাচ্ছো তাও আবার দু চার দিনের জন্য নয় মাস কয়েকের জন্য!
কথাটা বিরবির করে উচ্চারণ করে রাফি। সামির খাঁন প্লেটে হাত ধুতেধুতে বলে-
-“ কিছু বললে?
রাফি প্লেটে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে-
-“ না না কিছু বলি নি।
-“ তাহলে যাচ্ছ নেক্সট উইক। আমি ভিসা রেডি করে রাখবো।
-“ আচ্ছা।

সামির খাঁন চলে যায়। তানিয়া বেগম রাফি কে ভাবান্তর হয়ে থাকতে দেখে বলে-
-“ খাচ্ছিস না কেনো?
তুষার ঠোঁট কামড়ে কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে শুধালো-
-“ ভাবছি।
তানিয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি ভাবছিস?
রাফি এঁটো প্লেটে হাত ধুতেধুতে বলে-

-“ অনেক কিছু ভাবছি। ধীরে ধীরে প্রকাশিতব্য হবে।
রাফি চলে যায়। তানিয়া বেগম রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। কি বললো কিছুই বুঝলেন না তিনি।
চিত্রা আর তৃষ্ণা ভার্সিটির ক্লাস রুমে বসে আছে। গত কাল রাতে রাফির বলা সব কথা চিত্রা কে বলছে তৃষ্ণা। চিত্রা চুপচাপ শুনলো। তৃষ্ণার খুশির সীমানা নেই। তার আজ মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছে। ক্লাসে স্যার আসতেই দু’জনে ক্লাসে মনোযোগী হয়। তুষার আজ সংসদ ভবনে গেছে। প্রাইম মিনিস্টার সব এমপি কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তুষারের সাথে রাতুল আর তামিম খান সহ কয়েকজন গার্ড গিয়েছেন। আপাতত তারা বসে প্রাইম মিনিস্টারের বক্তব্য শুনছেন।

চিত্রা কে যাওয়ার আগে বলে দিয়ে গেছে চিত্রার ক্লাস শেষ হতে হতে তুষার এসে পড়বে। অপেক্ষা করতে বলেছে।
ক্লাস শেষে মাঠে বসে অপেক্ষা করছে তৃষ্ণা চিত্রা তুষারের। এরমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে রাফি এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। কাউকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে তারা মাথা উঁচু করে তাকায়। রাফিকে দেখে চিত্রা ভাবে হয়তো তুষার এসেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

-“ ভাবি তৃষ্ণা কে নিয়ে যাচ্ছি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আমাকে নিবেন না? আপনার ভাই কোথায়? আসে নি?
রাফি মাথা চুলকে জবাব দিলো-
-“ ব্রো জানালো তার আসতে আর একটু লেট হবে। আমি তৃষ্ণা কে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনি ব্রো এর সাথে ফিরবেন।
চিত্রা পুনরায় ঘাসের উপর বসে পড়লো। তৃষ্ণার হাত ধরে বলল-

-“ ভাবি আসছি। ব্রো এসে পড়লো বলে।
চিত্রা প্রতিত্তোরে স্মিত হেঁসে মাথা নাড়ালো। রাফি তৃষ্ণা চলে যাওয়া পর খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় নি চিত্রা কে তার এমপি মশাই এর জন্য। ক্লান্ত শরীর নিয়ে এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসেছিল তার সামনে। সাদা শার্ট ঘামে ভিজে শরীরে লেপ্টে ছিলো। লোকটা আজকাল কালো রঙের বাহিরে ভিন্ন রঙের শার্ট পড়ে। ভালোই লাগে চিত্রার।
তুষার কে দেখা মাত্রই উঠে দাঁড়ালো চিত্রা।

-“ ওখান থেকে সোজা এখানে চলে এসেছেন?
তুষার চুল গুলোকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ।
চিত্রা বিরক্ত হলো। নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে-
-“ মাস্ক খুলুন। আমি দেখবো আপনাকে।
তুষার চিত্রার হাত চেপে ধরলো। চিত্রা কে নিয়ে হেঁটে গাড়ির সামনে আসলো। ইশারায় চিত্রা কে গাড়িতে উঠতে বলে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে। তারপর মুখে মাস্ক টা খুলে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ নাও মন ভরে দেখো।
চিত্রা তাকালে ঐ মুখ টার দিকে। ওড়নার এক প্রান্ত দিয়ে মুখে গলায় লেগে থাকা ঘাম যত্নসহকারে মুছে দেয়।
-“ আপনার কিন্তু না আসলেও চলতো। রাফি ভাইয়া এসেছিল আমি তার সাথেই বাসায় চলে যেতে পারতাম।
তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-

-“ আমার বউ অন্য কারো সাথে কেনো যাবে আমি থাকতে?
-“ আপনি এখানে না এসে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলে এই ক্লান্ত ভাব টা এখন থাকতো না।
-“ তোমাকে দেখলেই আমার সব ক্লান্তি এক নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
-“ হয়েছে হয়েছে। শুনুন একটা কথা বলবো।
-“ হুমম বলো শুনছি।
-“ আমাদের বিয়ের ক মাস হলো?
-“ উমম সেদিন না বিয়ে করলাম? মাস তো হয় নি।
চিত্রা সরু চোখে তাকালো।

-“ আড়াই মাস হয়েছে।
-“ সিরিয়াসলি আড়াই মাস!
-“ ফাজলামি বন্ধ করবেন? আমার কথাটা শুনুন।
-“ আচ্ছা বলো।
-“ দাদি কি বলছে জানেন?
-“ কি বলছে?
-“ আজ সকালে আপনি চলে যাওয়ার পর খাবার টেবিলে দাদি ফট করে বাচ্চার কথা তুলেছে।
তুষার গাড়ি চালানোর মাঝে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বলে-

-“ কার বাচ্চার কথা বললো?
চিত্রা তুষারের দিকে তাকালো।
-“ বুঝেন নি কার বাচ্চা হতে পারে?
-“ না। আমাদের রিলেটিভ দের মধ্যে তো বাচ্চা নেই। সবাই যথেষ্ট বড়।
-“ থাক আর বুঝে কাজ নেই। তাড়াতাড়ি বাসায় চলেন ভীষণ টায়ার্ড ফিল হচ্ছে।
-“ সারাদিন ছোটাছুটি করি আমি আর টায়ার্ড ফিল হয় তোমার!
-“ হ্যাঁ হয়।
-“ চাচা তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে।

তামিম খাঁন বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলেন। দরজার পানে তাকিয়ে দেখলেন রাফি তৃষ্ণার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তামিম খাঁন উঠে বসলেন। তানিয়া বেগম গেছেন ওয়াশরুমে।
-“ ভেতরে আসো।
রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ততক্ষণে তানিয়া বেগম ও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলেন। রাফি সোজা তামিম খাঁনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল-

-“ চাচা আমি পাত্র হিসেবে কেমন?
আকস্মিক রাফির মুখ থেকে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে যায় তামিম খাঁন। একবার স্ত্রীর পানে তাকায়। রাফি তামিম খাঁন কে চুপ থাকতে দেখে বলে-
-“ কি হলো চাচা বলো আমি পাত্র হিসেবে কেমন?
তামিম খাঁন রাফির দিকে তাকালো। মুচকি হেঁসে বলল-

-“ সুপার ডুপার।
রাফি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তারমানে বলছো পাত্র হিসেবে আমি ঠিকঠাক।
তামিম খাঁন হ্যাঁ জানালো।
-“ আমি কোনো মেয়ের বাবার কাছে গিয়ে তার মেয়েকে চাইলে সে না করতে পারবে না তাই তো?
-“ হঠাৎ এসব বলছিস কেনো?

তামিম খাঁনের সন্দেহান দৃষ্টি দেখে রাফি ফের বলল-
-“ আহা বলোই না। না করবে মেয়ের বাবা?
-“ না করার সম্ভাবনা কম।
-“ উমম তাহলে পজিটিভ টাই কাউন্ট করছি। তোমার মেয়ের তো বয়স হচ্ছে বিয়ের জন্য পাত্র লাগবে না?
-“ তা তো লাগবেই। কিন্তু এসব কেনো বলছিস?

তানিয়া বেগমের কথা শুনে রাফি তানিয়া বেগমের দিকে তাকায়।
-“ তোমার মেয়ের জন্য আমার চাইতে কি ভালো ছেলে পাবে?
তানিয়া বেগম তামিম খাঁন একে ওপরের দিকে তাকালো। তানিয়া বেগম একবার তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে ফের রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ মানে?
-“ কোনো মানে টানে নেই। চাচা নিজের মুখেই স্বীকার করেছে পাত্র হিসেবে আমি ভালো। তোমাদের কাছে প্রস্তাব রাখছি তোমরা কি তোমাদের মেয়েকে আমায় দিবে? ভীষণ ভালোবাসবো তাকে। একদম আগলে রাখবো। কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। দিবে আমায় তোমাদের মেয়ে?
তৃষ্ণার হৃদপিণ্ড ধুরুধুরু করছে। ভয়ে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। রাফির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইছে। সেজন্য রাফি শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে।
তামিম খাঁন মেয়ের দিকে তাকালো। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বলল-

-” ভালোবাসো দু’জন দু’জনকে?
-“ ভালোবাসা না থাকলে কি বিয়ে করা যায় না চাচা? ধরে নাও এটা এরেঞ্জ ম্যারেজ।
-“ সামির জানে এসব?
-“ না বাবা ফিরলে জানাবো। বাবার মনে হয় না আপত্তি থাকবে।
-“ সামির আসুক তারপর এ বিষয় নিয়ে কথা হবে। এখন রুমে যাও।
রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে তামিম খাঁন বলেন-

-“ তৃষ্ণা কে রেখে যাও। কথা আছে আমার ওর সাথে।
রাফি পেছন ফিরে একবার তাকায়।
-“ কি কথা চাচা? এখনই বলো আমার সামনে। আমি তৃষ্ণা কে একা রেখে যাচ্ছি না।
তামিম খাঁন বালিশের নিচ থেকে ফোন টা বের করে। সামির কে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সি বাসায় আসতে বলে।
তুষার আর চিত্রা বাসায় ফিরেছে। ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে সোফায় থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে পরিবারের সবাই। সাথে আছে রাতুল ও তার মা।
চিত্রা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। তামিম খাঁন ছেলেকে দেখে বললেন-

-“ ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো।
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি হয়েছে?
তানিয়া বেগম তুষারের বাহু ধরে টেনে বলে-
-“ আগে ফ্রেশ হয়ে আয়।
তুষার চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

তৃষ্ণা অধরা রুম জুড়ে পায়চারি করছে। আজকের দিনেই সব হতে হলো? এক রাফি বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিল আর এখন রাতুল আর রাতুলের মা এসেছে অধরার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। একই দিনে পরিবারের দু মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব। রাতুল তাকে জানায় নি যে আজ প্রস্তাব নিয়ে আসবে। সে নিয়ে ভীষণ রেগে আছে অধরা। চিত্রা ফ্রেশ হয়ে তৃষ্ণা দের রুমে আসে। দু’জন কে পায়চারি করতে দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে গো বাসায়? নিচে ওমন থমথমে পরিবেশ আর এখানে তোমরা এমন পায়চারি করছো যে?
তৃষ্ণা চিত্রার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-

-“ নিচে গিয়ে দেখ তোর দেওর কি করেছে আজ।
-“ কি করেছে?
-“ আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে বাবার কাছে।
চিত্রা স্মিত হেঁসে বলল-
-“ এটা তো ভালো কথা। তুই তো এটাই চাইতি। তো খুশি না হয়ে এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো?
তৃষ্ণা তখনকার ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল। চিত্রা সব শুনে জাস্ট হা হয়ে গেলো। তৃষ্ণার বাহু তে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলে-

-“ দেবর আমার সেই লেভেলের চিজ তো। সোজা কাপ নিয়ে নিবে না খেলেই।
-“ আর জানিস রাতুল ভাই কি করছে।
-“ কি করছে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩১

-“ তার মা কে নিয়ে এসেছে অধরা আপুকে বিয়ে করবে বলে।
চিত্রা অধরার পানে তাকালো। অধরা মাথা চেপে বসে আছে।
-“ বাই এনি চান্স আজ কি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দিবস নাকি?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৩