মেজর পর্ব ২৬

মেজর পর্ব ২৬
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

রাত গভীর।মুশফিকের চোখের তারায় ঘুম নেই।বুকের পাশটাতে জড়িয়ে থাকা মিতুর দিকে তাকায়,ভালোবাসার মৃদু ছন্দের পরে চঞ্চল হরিণের মতো মেয়েটা পরম ভরসায় তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।বিয়ে নামক বন্ধনের বোধহয় আলাদা এক শক্তি আছে তা না হলে দুজন অপরিচিত মানুষ এতোটা কাছে আসতে পারে, দুজন দুজনের সবথেকে বেশি আপন হতে পারে।এটা বুঝি বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের জন্যই।

মুশফিকের ঘুমানোর কথা থাকলেও তার চোখের তারায় ঘুম আসছে না,দুশ্চিন্তায় কপাল ঘেমে যাচ্ছে,বুকের ভেতর থাকা হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠছে।আগে এমন অনেক অ,পারেশন করেছে কিন্তু কখনো এমন হয়নি এবার এমন হচ্ছে কারণ মিতু নামক হৃদয়স্পর্শী নারী যে তা কাছে,শ,ত্রুদের প্রধান লক্ষ থাকে বলবান পুরুষের প্রিয় নারী।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুশফিক জানে কাজের ব্যাপারে নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা ঢোকানো যাবে না কিন্তু মিতু যে কিনা ইতোমধ্যেই তার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে তাকে নিয়ে চিন্তা আসতেই পারে।মুশফিক চোখ বন্ধ করে,মনে মনে নিজেকে সাহস দেয় এটা তাদের এরিয়া এখানে এসে মিতুকে ছুঁয়ে দেয়ার সাহস কারোরই নেই।মুশফিক মিতুর কপালে চুমু দেয়
,তারপর ঘুমিয়ে যায় কিন্তু কপাল কুঁচকে থাকে,হয়তো দুঃশ্চিন্তা,হয়তো ক্লান্তি।

আজকাল মিতুর দিনকাল এতো সুন্দর যাচ্ছে যে সে প্রকাশ করতে পারবে না।তার আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছে তার চঞ্চল কাজে,উচ্ছাসিত চেহারায়।এই যে ভোরের সকাল।ভোরের সকাল যে এতো সুন্দর হতে পারে তা কে জানতো?তার মনে হয় মুশফিক তার আশেপাশে আছে বলেই চারপাশ এতো সুন্দর।এটা বলছে এজন্যই যে আগে কখনো দিনরাত এতো সুন্দর,সুখময় মনে হয়নি এখন মনে হয় কারণ এখন তার কাছে মুশফিক আছে।

মিতু ঠান্ডা বাতাস মেখে বাহিরে এসে দাঁড়ায়।আশেপাশের পরিবেশ দেখছে।মুশফিক চা বানাচ্ছে,মিতু বানাতে চাইলেও মুশফিক নিজেই ছোটখাটো কাজগুলো করে দেয়ার চেষ্টা করে,আসলে মুশফিক কাজ করতে পছন্দ করে।হঠাৎ মিতুর মনে হলো তার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে।তার ভ্রু কুঁচকে যায়।

নয়না!এই বেয়াদব মেয়ে এখানে কি করছে?মিতুর ভ্রু কুঁচকানো উপেক্ষা করেই নয়না এগিয়ে আসে।মিতুকে দেখে মিষ্টি করে হাসে।মিতু সেদিনের সেই হিং,স্র মেয়েটার ছিটে ফোঁটাও এখন হাসোজ্জল মেয়েটার মাঝে পায়না।
নয়না হেসে বললো,

“ভালো আছেন আপু?”
মিতু কিছু বলার আগেই মুশফিক বেরিয়ে আসে।তার হাতে চায়ের কাপ।নয়নাকে দেখে তার ভ্রু যথারীতি কুঁচকে যায়।
“তুমি!তুমি এখানে কি করছো?”
নয়না বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো,
“ভাইয়া আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।”
মুশফিক গম্ভীর গলায়, কটকট করে বললো,

“ক্ষমা!বাসায় চলে যাও।”
মুহূর্তই নয়নার দু’চোখ ছলছল হয়ে যায়।
“ভাইয়া প্লিজ।আমাকে ক্ষমা করুন।আমি জানি আমি যা করেছি তা অন্যায়।কিন্তু ক্ষমা তো মহৎ গুন,আপনারা দুজন প্লিজ আমাকে ক্ষমা করুন।ভাইয়া আপনি ক্ষমা করলে আপুও আমাকে ক্ষমা করবে।”
মুশফিক ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে।সে নয়নার কাজকর্মে বিরক্ত।তাছাড়া নয়না আজকে তাকে প্রফেশনালভাবে স্যার ডাকছে না বরং ভাইয়া ডাকছে।

মুশফিককে চুপ থাকতে দেখে নয়না মিতুর দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আপু আমাকে ক্ষমা করুন।আমি জানি আমি ভুল করেছি।তাছাড়া আমার পরিস্থিতি তখন ভিন্ন ছিলো।”
মুশফিক বললো,
“তুমি বেয়াদবি করেছো।আমার কটেজে নিশ্চয়ই কোন পতি,তা থাকবে না,যে থাকবে সে আমার স্ত্রী।বেশী উড়াউড়ি করা ভালো না, আমি চাই তুমি এখনি চলে যাও,যা করেছো তা ক্ষমার অযোগ্য।”
নয়না মাথা নিচু করে বললো,

“আমি জানি।”
“এমন কাজ করার পরে আবার আমাদের সামনে আসার স্পর্ধা কি করে হয়?”
নয়না বলে,
“আপনারা চাইলে আমি পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো।”
“তুমি যাই কর না কেন মিতুকে যে অপমান করেছো তার কাছে এসব কিছুই না।চলে যাও।”
মিতু বিষ্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে।নয়না বললো,

“সত্যি বলতে আমি প্রেমে পরেছিলাম কিন্তু আমি জানতাম না ভাইয়া বিয়ে করেছে আর আপনি বর্তমানে কটেজে আছেন। এসব জানলে আমি কখনোই এমন বোকার মতো আচরণ করতাম না।আপু আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
মিতু ভেবে পায় না সে কি বলবে,সে মুশফিকের দিকে তাকায়।মুশফিক নয়নার দিকে ভ্রু কুঁচকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে।

নয়না এর মাঝে আরও কয়েকবার ক্ষমা চায়,ক্ষমা চাওয়ার এক পর্যায়ে মিতুর হাত আকুল গলায় নিজের ভ স্বীকার করে।মিতু বলে,
“আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো।পরেরবার কাউকে কিছু বলার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে বলবেন।”

নয়না মাথা নাড়ে।কৃতজ্ঞতায় সে আপ্লুত।
“আমি এমন ভুল আর কখনো করব না। ”
মুশফিক দরাজ গলায় বললো,
“মনে থাকলেই হয়।এখন আসতে পারো। ”
“ভাইয়া।”

“চুপ।তোমাকে দেখে আমার ইচ্ছে করছে থা,প্পড় দিয়ে দিতে।”
নয়না পিটপিট করে কয়েকবার মিতুর দিকে তাকিয়ে চলে যায়।মিতু সেদিকে তাকিয়ে আছে।মুশফিক বললো,
“এতো সহযে নয়নাকে ক্ষমা করে দিলে কেন?”
মিতু হাসে।

“এতবড় মেয়ে বারবার ক্ষমা চাইছে, ব্যাপারটা আমার কাছেই খারাপ লাগছে,থাক,যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।”
“এত ভালো হওয়া এই দুনিয়ার জন্য ভালো না। আজকাল কেউ ভালো মানুষের কদর করতে যানে না।”
“থাকুক।নয়নার চ্যাপ্টার বাদ।আমি আজকাল আপনার ভাবনার মাঝেই বিভোর থাকতে চাই।অন্যকারও ভাবনা মাথায় আনতে ইচ্ছে করে না।”

মিতু হাত দিয়ে মুশফিককে ধরে।মুশফিক বললো,
“এতো ভালো হওয়া উচিত না।ভালো মানুষ বিপদে পরে বেশী।”
মিতু হাসে।

“আপনি আছেন না আপনি থাকতে আমার কোন বিপদ আসবে না। ”
“আমার উপর এত নির্ভর করোনা মিতু।আমি না থাকলে চলতে কষ্ট হবে।”
“নির্ভর করতে চাই না কিন্তু আপনি মানুষটাই এমন চোখ বন্ধ করে যেনো নির্ভর করতে পারি।”
“আমি না থাকলে কাকে বিশ্বাস করবে?”
মিতু থমকে যায়।শ্বাসরুদ্ধকর গলায় বললো,

“আপনি কোথায় যাবেন?”
মুশফিক মিতুর ফ্যাকাসে চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবলো বেশী কিছু না বলাই সমীচীন।সে বলে,
“আমি কোথাও যাচ্ছি না,তুমি আমাকে তোমার মাঝেই আটকে রেখেছো।”
“মাঝে মাঝে এভাবে বলেন যে কলিজা কেঁপে উঠে।”
মুশফিক হাসে।মিতুকে নিয়ে কটেজের ভেতরে প্রবেশ করে।
“এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

নয়না বালিশে মাথা রেখে শুয়ে থাকে।মিতু মানুষটা নরম মনের,তা না হলে এতকিছুর পরে সহযে ক্ষমা করে দেয় কেউ অথচ মেয়েটা দিয়েছে।মিতু ভালো এটা মানতেও কষ্ট হয় শুধুমাত্র একটা কারণেই মুশফিক মিতুকে ভালোবাসে।।তখন মুশফিকের হাতে ধোঁয়া উঠা গরম চা ছিলো যা তাকে দেখে একপাশে রেখে দিয়েছে।আচ্ছা মুশফিক কি মিতুর জন্য চা বানিয়ে এনেছে? এত যত্ন করে!নয়নার বুকটা কেমন কতে উঠে,কাউকে না পাওয়ার মাঝে এত কষ্ট লুকিয়ে থাকে!

রাত তিনটা।মুশফিকের ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠে।তার ঘুম পাতলা।অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।সে ভ্রু কুঁচকে ভাবে,এটা কে হতে পারে।
“হ্যালো।”
“সেলামালাইকুম মেজর সাব।”
কথার ধরন আর কন্ঠের চাটুলতায় মুশফিক উঠে বসে।

“কে বলছেন?”
ওপাশের ব্যক্তি হো হো করে হেসে উঠে।
“মতিন কইতাছি।আমারে চিনেন না?”
মুশফিকের চেহারার গঠন শক্ত হয়ে যায়।
“আমাকে ফোন দেয়ার কারণ কি?”

“শুনলাম আপনার বাংলোয় নাকি পরী নামছে?পরীর রুপ দেহনের লাইগা একদিন দাওয়াত দেন,মেজরসাব। ”
মিতুর প্রসঙ্গ আসায় মুশফিকের রাগ বেড়ে যায় কিন্তু নিজেকে যথারীতি শান্ত রেখে বললো,
“আজেবাজে কথা বন্ধ করুন।”

মেজর পর্ব ২৫

“আজেবাজে কতা না,আইচ্ছা পরীরে আদর মোহাব্বত করতে কেমন লাগে?আমগো বউয়েত্তে বেশী মজা লাগে?তাইলে একদিন নিজেই আপনার পরিডারে টেস করি,কি কন মেজরসাব।”

মেজর পর্ব ২৭