মেজর পর্ব ২৫

মেজর পর্ব ২৫
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

জেনারেল কাইয়ুম হাসান মুশফিকের কথা মন দিয়ে শুনলেন।মুশফিকের কাছে বিস্তারিত শুনে প্রসস্ত কপালে ভাজ পরে।চিন্তিত্ব গলায় বললো,
“তোমার কি মনে হচ্ছে মুশফিক? ”
মুশফিক কাইয়ুম হাসানের দিকে গম্ভীর দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে থাকে,কিছুক্ষণ পরে বললো,

“ওরা আমাদের পরিকল্পনা ধরে ফেলেছে।আমি এই পরিকল্পনায় প্রধান সেটাও খুব সুক্ষ্মভাবে জেনেছে।আমার কটেজ অবদি চলে এসেছে এতে করে বোঝা যাচ্ছে তারা একদম নিশ্চিত।”
“হুম।কিন্তু এই এরিয়ায় প্রবেশ করলো কিভাবে?”
“এতোকিছু জানার প্রশ্নই আসে না যদি……”
মুশফিক এটুকু বলে থামে।কাইয়ুম হাসান তার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“তাহলে কি….!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিতু বুঝতে পারছেনা বন্ধের দিন মুশফিক এতোক্ষণ অফিসে কি করে।চঞ্চল মন যে সারাক্ষণ মুশফিকের সঙ্গ চাইছে,মিতুর কেমন ছটফট লাগে।দুপুরের রান্না শেষ করে বাংলোর বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায়।রোদে চারপাশ খা খা করছে।নাম না জানা বন্য পাখি সাই সাই করে উঁড়ে যায়।মিতু মুগ্ধ হয়ে পাখিটাকে দেখে।কি সুন্দর পাখির গায়ের রঙ।বাংলোর সামনে দিয়ে সৈনিকদের ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে বাসায় যাচ্ছে।মিতুর হাতের ফোনটা কেঁপে উঠে।সে কানে দিয়ে বললো,

“হ্যালো।”
মুশফিক কানে ফোন ধরে সটান দাঁড়িয়ে আছে।
“মিতু।আমি দুপুরে এক জায়গায় যাচ্ছি।তুমি খেয়ে,দরজা জানালা আটকে ঘুমিয়ে যাও,শরীরটা ভালো লাগবে।”
মিতুর বিষন্ন মন আরও ঘনকালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়।শান্ত কন্ঠে বললো,

“আচ্ছা। ”
মুশফিক দূর থেকেও শান্ত কন্ঠে বিষন্নতার রেশ খুঁজে পেলো।
“নিজের খেয়াল রেখো।সন্ধ্যায় আসবো।”

ফোনটা হাতে নিয়ে মিতু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।বর ডিফেন্সে জব করে, প্রথমেই জানা ছিলো সে একটু কম সময় পাবে,স্ত্রীর আগে দেশ উনার কাছে প্রথম।মিতুর মনে পরে মুশফিকের বলা কথাটা, মিতুকে ধৈর্যশীল হতে হবে।মিতু ব্যথাতুর মন নিয়ে ভেতরে যায়।একা একা ভাত খায় তারপর উপরে গিয়ে শুয়ে পরে।কিন্তু ঘুমাতে পারে না।ছটফট করেই সারা বিকেল কাটিয়ে দেয়।কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিলো সেটা মনে নেই।

মাগরিবের আজান হয়ে গিয়েছে।মুশফিক অন্ধকাল বাংলোটার দিকে তাকায়।মিতু ঘুমাচ্ছে, তাই কোন বাতি জ্বালানো নেই।সে নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করে।শাওয়ার নেয় তারপর মিতুর কাছে আসে।ঘুমন্ত চেহারায় মায়ায় লেপ্টানো।সে হাত বাড়িয়ে গাল ছুঁয়ে দেয়, মিতু ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কপাল কুঁচকে নেয়।মুশফিক ডাকে।
মিতু চোখ খুলে মুশফিককে দেখে হাসে।ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,

“এতোক্ষণে এসেছেন?”
“হুম।”
“আমি সারাদিন মিস করেছি।”
“আমিও। ”
“তাহলে এতোক্ষণে আসলেন কেনো?আগে কেনো আসা গেলো না?”
“কাজ ছিলো।”
মিতু মুশফিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।মুশফিক মিতুর গালে হাত রেখে বললো,

“এখন চলে এসেছি আর মিস করে মন খারাপ করতে হবে না।”
মিতু উঠে বসে।সুদর্শন পুরুষ অজানা এক মায়ামাখা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মিতু সেদিকে তাকিয়ে বললো,
“চা খাবেন?”

মুশফিক মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
মিতু ফ্রেশ হয়ে কড়া লিকারে এক মগ চা বানিয়ে আনে।মুশফিক মগ দেখে বললো,
“মগে কেনো মিতু?এত চা কে খাবে?”
মিতু মুচকি হাসে।মুশফিকের পাশে বসে মগে আগে নিজে ছোট এক চুমুক দেয়।মুশফিক নারীর মনোবাসবা বুঝতে পারে।স্ত্রীর পাগলামিতে আশকারা দেয়।
“আচ্ছা।”

মুশফিক বেশ সাবলীলভাবে মিতুর স্পর্শ করা জায়গায়ই ঠোঁট ছোঁয়ায়।মিতু হাসে,মুশফিকও হাসে।মিতু বললো,
“বিয়ের পর যদি কোন স্বামী-স্ত্রী চা খায় তাহলে একসাথে এক মগে চা খাওয়া উচিত। তাহলে ভালোবাসা বাড়ে। ”
মুশফিক যত্ন করে চা খেতে খেতে বললো,

“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ। ”
মুশফিক মিতুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ওহ!আপনি আমাদের ভালোবাসা বাড়াতে চাচ্ছেন?”
মিতু হাসে।
“হুম।”

“আমাদের ভালোবাসা এমনিই খুব বেশী তুমি চাইলে আরও বাড়াতে পারি,এখনই।”
মুশফিক আঁড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসে।মিতু সেই হাসির দিকে তাকিয়ে শিহরিত হয়।
মুশফিক মিতুর লাজুক মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি লজ্জা পেলে এতো সুন্দর লাগে কেনো?”
মিতু হেসে বললো,

“ফ্লাটিং করছেন?আপনিও এসব করতে পারেন নাকি?”
“সব পুরুষই এসব পারে,কেউ জানায় কেউ জানায় না।”
“তাই নাকি?আর কয় জনের সাথে এই পারা জিনিস করা হয়েছে?”
“কারও সাথে এসব করার সুযোগ পাইনি।ছোটবেলায় পড়ালেখা নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিলাম যে আমার পাশে কোন মেয়ে বসলেও আমার অসস্তি হতো,ভাবতাম পড়ায় সমস্যা হবে।পড়ালেখার পোকা মাথায় এতো গভীরে চলে গিয়েছিলো যে আশে পাশে তাকানোর সুযোগ পাইনি।চাকরিতে জয়েন করার পরে দায়িত্ব, কর্তব্য এমন করে ঝাপটে ধরলাম যে এসবে মন দেইনি,আসলে ইচ্ছে করেই প্রেম করিনি।”
মিতু অবাক হয়ে বললো,

” তাই!সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
“এত সুদর্শন যুবক প্রেমহীন এতবছর কাটিয়ে দিয়েছে?”
“দিলো তো।তবে এখন মনে হচ্ছে প্রেম সাগরে পড়েছি,শুধু পড়েই ক্ষান্ত হইনি হাবুডুবু খাচ্ছি।”
মিতুর কেমন সুখের অনুভূতি হলো।পুরুষের প্রথম ভালোবাসার মানুষ হওয়া নিঃসন্দেহে ভাগ্যের কথা কিন্তু এই ভালোবাসা ম,রণ অব্দি থাকলেই তবেই সে ভাগ্যবতী।সে মুশফিকের কড়াপড়া শক্ত হাতের তালুতে নিজের কোমল নরম হাত সপে দিয়ে বললো,

“কোন মেয়ে আপনাকে পছন্দ করেনি?”
মুশফিক হেসে বললো,
“পছন্দ করতো,এত সুন্দর ছেলেকে অপছন্দ করার কারন নেই কিন্তু যখন দেখতো আমি পড়ায় জমে আছি তখন আর কাছে আসতো না।কয়েকজন তো আমাকে বলেছে আমি নাকি খুবই আনরোমান্টিক।”
“এটা বলেছে নাকি?”

মুশফিক ঠোঁট চেপে হাসে।
“হ্যাঁ।”
“ইশ!এই কথাটা মোটেই ঠিক কথা না।আমার বর খুব রোমান্টিক।”
মুশফিক মিতুর খোলা চুল হাতে ধরে নাড়াচাড়া করে বললো,
“তাই?”
“হ্যাঁ।আমার যায়গায় থাকলে টের পেতো।”
“ওরা মিস করলো। ”

“মিস করার জন্য ধন্যবাদ না করলে আমি আপনার প্রথম নারী হতাম কি করে?প্রথম স্পর্শ পেতাম কি করে!”
মুশফিক আদরে মিতুর কপালে চুমু খায়।ভিষণ আবদার ভরা গলায় বললো,
“আমার খুব খিদে পেয়েছে মিতু।কি রান্না করেছো?”
মিতু ঝটপট খাবার গরম করতে মিতু উঠে যায়।সে যাওয়ার পরেই হাসোজ্জল মুশফিকের চেহারা গম্ভীর হয়,চিন্তায় কপালে ভাজ পরে।কপালে দু হাতের আঙ্গুল চেপে ধরে ভাবে,
“মেয়েটাকে আমার কাছে এনে কি ভুল করলাম?বউ তো; এত দূরে সরিয়ে রাখি কি করে? ”

মতিন তার ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতোদূর গেলি উপরে উঠে দেখতে পারলি না কি অবস্থা?উঠা যায় কিনা।”
রাজু মাথা নাড়িয়ে বললো,

মেজর পর্ব ২৪

“না আব্বা চেষ্টা করছি কিন্তু ওই বেডা বহুত চালু উডনের কোন রাস্তা নাই।খুব রিস্ক নিয়া গেছি আর আমি শিউর মাইয়াডারে নিয়ে ওই ঘরই থাকে।”
মতিন গালে দুইটা পান গুজে দেয়।
“মেজইরা বেশী উড়তাছে,এইবার পাখনা কাইট্টা দেমো।সা,লায় আমার লাখ টেহার লস দিছে,এহন ওর কলিজায় আমি ফুডা কইরাম।মজা বুঝুক।”

মেজর পর্ব ২৬