মেজর পর্ব ২৪

মেজর পর্ব ২৪
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মুশফিক উঠে পরেছে এখনো ফজরের আজান দেয়নি।সে ফ্রেশ হয়ে মিতুকে ডাকে।মিতু কোন নড়চড় করে না।মুশফিক আবার মিতুর সাথে শুয়ে পরে।মিতু বিড়ালের মতো সরে আসে,জড়িয়ে ধরে তার হীমশীতল ঠান্ডা শরীরটা।মুশফিক হাসে,মিতুকে শ্রুতিমধুর করে ডাকে,কয়েকবার ডাকার পরে মিতু চোখ খুলে তাকায়।লাইটের আলোয় মুশফিকের মায়াবী মুখটা দৃশ্যমান।মিতু আরও গভীরভাবে মুশফিকের বুকে ঝাপটে আসে।বুকে নাক ঘষে চুপ করে থাকে।মুশফিক এলোমেলো খোলা চুলে হাত ভুলিয়ে বললো,

“উঠো।ফ্রেশ হও।আমরা দুজন একসাথে নামায পড়বো।”
মিতু মাথা নাড়ে।পিটপিট চোখ খুলে তাকায়।এই মূহুর্তে তার খুবই লজ্জা পাওয়ার কথা ছিলো,লজ্জায় মুখ লুকানোর দরকার ছিলো কিন্তু তার শুধুমাত্র একটুখানি লজ্জা লাগছে,মুশফিককে এখন আরও আপন লাগছে,এক রাতের ব্যবধানে একটা মানুষকে এত আপন লাগবে কেন?মিতুর লাল ঠোঁটের ভাজে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে।তা দেখে মুশফিক বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হাসছো!কেনো?”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“এমনি।”
মুশফিক মিতুকে পুতুলের মতো উঁচু করে নেয়।
“এমনি তো নিশ্চয়ই না।কেনো বলো শুনি?”
“আপনাকে খুব আপন লাগছে।”
“এটা তো হবারই ছিলো। ”
“কেনো?”

“আমাকে আপন লাগাই তো স্বাভাবিক।”
মুশফিকের মুখের মুচকি হাসি দেখে মিতু যেনো না বলা কথা বুঝে যায়,তার লজ্জা যেনো তরতরিয়ে বাড়ে।সে মুখ লুকিয়ে নেয়।

মুশফিক আর মিতু একসাথে ফজরের নামায আদায় করে।মুশফিক মিতুর কোলে শুয়ে কোরআন তেলোয়াত করে।মিতু মুগ্ধ হয়,মুশফিকের গলার স্বর যে এতো সুন্দর তা আগে খেয়াল করা হয়নি।ভোরের আলো এখনো ফুটেনি, মুশফিক আর মিতু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।মিতু ঝটপট চা করে এনেছে।দুজনে ভোরের মিষ্টি হাওয়া গায়ে মেখে চা খায়।মুশফিক মিতুকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।

“মিতু।”
মিতু দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো মুশফিকের ডাকে তার দিকে তাকায়।মুশফিক আস্তে করে বললো,
“আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া তোমার মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি।”
মিতু মুশফিকের উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এটা আমার বলার কথা ছিলো,আমি আপনাকে পেয়ে সত্যিই খুব দামী কিছু পেয়েছি।”
মুশফিক মুগ্ধতা-ভরা চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে একটু পরে মিতুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“মিতু!মিতু!মিতু।”

মিতুর মুখে সুখের হাসি ফুঁটে উঠে।নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পেরে কেমন পাখির মতো উড়তে ইচ্ছে করছে।মুশফিকের আদুরে স্পর্শ এখনো যেনো তাজা।তার লাজুক হাসির দিকে তাকিয়ে মুশফিক বললো,
“তুমি আসলেই তুলতুলে।”

মিতু মুশফিকের পুরু ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।মুশফিক হেসে প্রতিউত্তর দেয়।মুশফিক বললো,
“আমার পার্সোনাল লাইফ আর প্রফেশনাল লাইফ আলাদা।আমি তোমাকে যেইটুকু জানাবো তুমি সেইটুকুই জানবে,এর বেশী না জানালে বুঝে নেবে এটা জানানো যাবে না।ঠিক আছে?”
“আচ্ছা।”

“তুমি একজন মেজরের স্ত্রী।যে কোনো পরিস্থিতিই আসুক না কেনো সবসময় নিজেকে শক্ত রাখবে।আস্থা হারাবে না।”
মিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি পরিস্থিতি? ”
“অনেক রকম হতে পারে।”
মিতুর বুকটা কেমন করে উঠে।
মুশফিক বললো,

“ঘাবড়ানোর কিছু নেই,এখনি কিছু হচ্ছে না আমি প্রস্তুত থাকতে বলেছি মাত্র।আমার স্ত্রী নিশ্চয়ই সাহসী হবে।”
মিতু মাথা ঝাকায়।
“জ্বী।”

ভোরের লাল আলো আস্তেধীরে ফুটে উঠে।মিতু এই প্রথমবারের মতো পাহাড়ের কোলে সূর্য উঠতে দেখলো।লাল সূর্য পাহাড়ের সবুজ রঙের মাঝে ঝিকমিক করে উঁকি দিলো।মিতু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।মুশফিক পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার সাথে এটা আমার প্রথম ভোর দেখা,ইনশাআল্লাহ এভাবেই দুজন হাতে হাত রেখে জীবনের শেষ ভোর দেখবো।”

মিতু আদরে আপ্লুত হয়ে বললো,
“ইনশাআল্লাহ।”
“তুমি আসো আমি নিচে যাচ্ছি।”
মিতু আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভোরের শীতল বাতাস গায়ে মাখলো।কিছুক্ষণ পরে কিচেনে যায়।মুশফিক রাতের তরকারি ফ্রিজ থেকে নামিয়ে গরম করছে।মিতু অবাক হয়ে বললো,

“এগুলো আবার ফ্রিজে রাখলেন কখন?”
মুশফিক ব্যস্ত হাতে কাজ করতে করতে বললো,
“রাতেই রেখেছি।একজন নারীর সবদিক দিয়েই দক্ষ হতে হয়।ঘরের প্রতিটা কোনার দিকে সুক্ষ্ম নজর রাখতে হয়।তোমার তো সবে সংসার হলো তাই একটু লেট হবে এসবে দক্ষ হতে।”
মিতু মাথা নাড়ে।

“আপনি তো খুব মনোযোগী।”
মুশফিক বললো,
“একা থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”
মিতু খাবারগুলো টেবিলে নেয়।মুশফিক যদিও সকালে কোন ভারী খাবার খায় না কিন্তু মিতু রাতে বলেছিলো মুরগী খাবে তাই মূলত সে মিতুকে সঙ্গ দিতে খাবে।দুজনে একসাথে বসে খাবার খায়।খাবার খেয়ে একসাথে বাহিরে হাটতে যায়।মিতু উৎফুল্ল গলায় বললো,

“আহা!এতো সুন্দর বাতাস।”
“সকালের বাতাস গায়ে লাগলে তা শরীরের জন্য ভালো।”
মিতু আর মুশফিক কটেজের বাহিরের খানিকটা হেটে গিয়ে দাঁড়ায়।হঠাৎ মিতু বললো,
“ছিহ।এই যায়গাটা কাদাভরা জুতা দিয়ে কি করেছে।”

মুশফিক লক্ষ কটেজের বাহিরে জুতার ছাপ।সে ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকায়,জুতার ছাপ তার জুতার না।দাগগুলো তার কটেজের গেইটের সামনে অব্দি।মুশফিক মিতুকে কটেজে পাঠিয়ে মেইন গেটের কাছে যায়।কটেজের পানির টাংকি পরিষ্কার করা হয়েছিলো,সেই পানিই নিচে পরে কাদার সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই কাদায় কেউ পা দিয়ে হেটেছে তাই এমন অবস্থা। কিন্তু তার কটেজে কে প্রবেশ করবে?সাধারণ সে যখন কটেজে থাকে ওই অবস্থায় যদি জরুরীভাবে কোনো সৈনিক আসে তাহলে ফোন করে জানায়।কিন্তু গতকাল কেউ ফোন করেনি তাছাড়া জুতার ছাপগুলো আর্মিদের জুতার ছাপ না।

মুশফিক মেইন গেটের কাছে যায়।অফিসারের কটেজের সামনে মূলত পাহারাদার থাকে।মুশফিক গেইটের দারোয়ানকে বললো,
“শামসু কাকা।গতকাল কি অপরিচিত কেউ এই এরিয়ায় এসেছিলো?”
উনি মাথা নেড়ে বললো,

“জ্বী।”
“কে?”
“স্যার আমি চিনি না।”
“তাহলে ঢুকতে দিলেন কেনো?”
“ছেলেটা বললো আপনি উনার পরিচিত।আপনার স্ত্রী নাকি ছেলেটার মামাতো বোন।আমি ভাবলাম সত্যিই হয়তো।”
“উনি বললেই আপনি বিশ্বাস করবেন?”

“স্যার উনি কি আপনার পরিচিত না?”
“আপনার উচিত ছিলো আমাকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়া।”
মুশফিক রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শামসু ভয় পায়।
“স্যার উনি যেই আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলেছেন আর সাথে আপনার পুরো নামও বলেছেন।আমি বুঝতে পারিনি।”
মুশফিক ততক্ষনাৎ সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে।একটা ছেলে খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে এসেছে।তার মাথায় ক্যাপ পড়া যার কারণে পুরো চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।মুশফিক দেখলো ছেলেটা অকপটে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।যদিও কথা শোনা যাচ্ছে না কিন্তু দেখে মনে হলো ছেলেটা সবকিছু জানে।

মেজর পর্ব ২৩

মুশফিক আর কোন কথা না বলে জেনারেল অফিসারের কাছে ছুটে।
ছেলেটার উদ্দেশ্য কি? কেনোই-বা তার কটেজের সামনে এলো?বিপদ কি এতো সন্নিকটে চলে আসবে?তার মতো মেজরের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসা এতো সহয! তাদের টার্গেট কি???

মেজর পর্ব ২৫