মেজর পর্ব ২৩

মেজর পর্ব ২৩
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মাগরিবের আজান হয়ে যাচ্ছে মিতু বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। সূর্য বিদায় নেয়ার পর্ব শেষ কিন্তু চারদিকে এখনো আলো বিদ্যমান।মিতুর পরনে ট্রাউজার আর গেঞ্জি।ঘন্টাখানেক ঘুমানো হয়েছে।মিতু হাতের মোবাইলটার গ্যালারি উপেন করে। সেখানে জমা হয়েছে নতুন কিছু ছবি।

মিতু একটা একটা করে ছবি দেখছে।ছবিতে মুশফিককে আরও বেশী সুন্দর লাগছে।বেশীরভাগ ছবিতেই হয় মুশফিক তার দিকে তাকিয়ে আছে না হয় সে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে আছে।ঝর্ণার কাছে গিয়ে উঠানো ছবিগুলো বেশী সুন্দর হয়েছে।একটা ছবিতে মুশফিক তাকে পেছন থেকে
জড়িয়ে রেখেছে;দুজনের মুখাবয়ব হাসোজ্জল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিতু ছবিটা তার লকস্কিনে দেয়।
তখনি টুংটাং করে মোবাইলে মুশফিকের কল আসে।মিতু খানিকটা সময় নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।দুটো দিন তার হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এই লোক কিনা তার সময়টা অফিসেই কাটিয়ে দিচ্ছে!ওপাশ থেকে মুশফিকের গলার স্বর শোনা যায়।

“মিতু!মিতু শুনতে পাচ্ছ?”
“জ্বি।”
“কি করছো?”
“বসে আছি।”
“কেউ এসেছিলো? ”
মিতু অবাক হয়ে বললো,
“কোথায়?”
“বাসায়।”

মিতু উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে।
“কেউ আসার কথা ছিলো নাকি?”
“মিতু;যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও।”
“কেউ বোধহয় আসেনি।এতোক্ষণ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আসলেও জানি না।”
“আচ্ছা।”

মিতু আস্তে করে বললো,
“কখন আসবেন?”
“একটু পরেই আসছি।”
মিতু ফিসফিস করে বললো,
“মিস করছি।”
“আসছি।”
“ওকে।”
মুশফিক ফোন রাখার আগে আবার বললো,

“মিতু তুমি ঠিক আছো তাই না?”
“হ্যাঁ। ”
“শোন।বাহিরে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।ভুল করেও এখন বাহিরে যাবে না।কেউ আসলে কোন শব্দ করবে তো দূর দরজার কাছেই যাবে না,বুঝেছো?”
“বুঝেছি। ”
মুশফিক ফোনটা রেখে সস্থির নিঃশ্বাস নেয়।।

এতোক্ষণ জেনারেল অফিসার আর সে গোপন এক অভিযান নিয়ে আলোচনা করছিলো।আজকে মুশফিক রিসাং ঝর্ণার কাছে অপরিচিত কিছু সন্দেহভাজন ছেলেকে লক্ষ করেছে।সে শতভাগ নিশ্চিত যে তারা পর্যটক না।কারণ পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য না দেখে কেনো সাধারণ মানুষকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখবে?

সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাকর্মীদের জানানো হলে তারা নিশ্চিত করে যে মা,দক পা,চারের যে দল আছে আজকে সে দলের কাউকেই নজরে আসেনি সুতরাং এই ছেলেগুলো নতুন,যেনো সন্দেহ না করা হয় আর খুব সহযেই সৈনিকদের আক্রমণ করা যায়।মুশফিকের তীক্ষ্ণ ভ্রু আরও কুঁচকে যায়,ছেলেগুলো মিতুর দিকে বেশী তাকাচ্ছিলো তাই তো আর কোথাও যায়নি এমনকি রিসোর্টেও থাকেনি বরং বাসায় চলে এসেছে।

এই কটেজ যেহেতু সেনানিবাসের আওতায় তাই এখানে সার্বক্ষণিক সৈনিকরা পাহারায় থাকে;ঝুকি নেই।মিতুকে নিয়েই তার যত চিন্তা, কিছু দিনেই যেনো মেয়েটা তার হৃদপিণ্ড হয়ে গিয়েছে ওর কিছু হয়ে যাওয়া মানে সে ভেঙে পরা।মিতুর সাথে কথা বলে তার কিছুটা ভালো লাগছে,যদিও এত সহযে কোন কালপ্রিট এই এরিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে না কিন্তু মিতুর ক্ষেত্রে সে কোন ঝুঁকি নিতে রাজী না।

জেনারেল অফিসারের সাথে কথা শেষ করে সে কটেজে ফিরে আসে।লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।
মিতু রান্না করছিলো দরজা খুলার শব্দ পেয়ে সে
পিছু না ফিরেই বললো,
“সাদা ভাত আর পাহাড়ি মুরগী রান্না করছি।পাহাড়ি মুরগী আপনার ফেভারিট না!”

মুশফিক সিভিল ড্রেসেই বেরিয়েছিলো।সে হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে মিতুর কাছে এগিয়ে আসে।রান্না এখনো শুরু হয়নি।মিতু মশলা দিয়ে মাংসটা মাখাচ্ছে।যদিও কড়াইয়ে প্রথমে তেল মশলা দিয়ে ঝোল কষিয়ে মাংস দিয়ে রান্না করা যায় কিন্তু মিতুর মায়ের ধারনা মাংস এমন হাতে মশলা মাখিয়ে তারপর কষিয়ে রান্না করলে বেশী মজা হয় এভাবেই আগের মানুষেরা রান্না করতো তাই মিতু আজকে তার মায়ের কথামতোই হাত দিয়ে মাখিয়ে নিচ্ছে।মুশফিক খুব মনোযোগ সহকারে মিতুর মাখানো দেখছে।ফ্রিজে পাহাড়ি মুরগী ছিলো যা সে মিতুকে বলেছিলো সেটাই মিতু আজকে রান্না করছে। হাত বাড়িয়ে মিতুর কপাল ছুঁয়ে বললো,

“হ্যাঁ খুব পছন্দ।”
“জানতাম।তাইতো এটাই রান্না করছি।”
“আজ সারাদিন খুব ফ্যাটি খাবার খেয়েছি ভেবেছিলাম রাতে শুধু সালাদ খাব কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আরেকটু ফ্যাট খেয়ে আগামীকাল অতিরিক্ত তিন ঘন্টা ওয়ার্ক আউট করে এর মাশুল গুনতে হবে।”
মিতু ঝরঝরে হেসে বললো,

“বউ থাকলে এমন হাজারও মাশুল গুনতে হবে মেজর সাহেব। ”
“তাই তো মনে হচ্ছে।”
”হুম।”
“হঠাৎ মুরগী রান্না কেনো?”
“সিস্টেম রেস্তোরাঁয় পাহাড়ি মুরগী খেয়ে এতো মজা লেগেছে যে আমার আবার খেতে ইচ্ছে করেছে।ভাবলাম যেহেতু ফ্রিজে মুরগী আছে তাহলে আর দেরী না করি।কে কখন মা,রা যায় তা তো বলা যায় না,ইচ্ছে অপূর্ণ রাখার প্রশ্নই আসে না। ”

মুশফিক হেসে বলল,
” পাগল। ”
মিতু চুলায় মাংস বসিয়ে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
“শোনেন,রুমে গিয়ে কাপড় পালটে এখানে আসুন।স্ত্রী-দের কাজে সাহায্য করা সুন্নত।”
মুশফিক মিতুর গা ঘেঁষে আসে।খোলা ঘাড়ে নাক ছুঁয়িয়ে বললো,
“তুমি কি চাইছো আমি তোমাকে সাহায্য করি?”

“হ্যাঁ।কারণ আপনি আশেপাশে থাকলে আমার শান্তি লাগে,মন ফুরফুরা থাকে ।”
মুশফিক মুচকি হাসে।মিতু সব কথা খুব সহযে বলতে পারে এই ব্যাপারটা তার বেশ লাগে।
মুশফিকের এই আলতো ছোঁয়ায় মিতুর পা কেঁপে উঠে।হাতের কাঠি রেখে কোমড়ে হাত দিয়ে মুশফিকের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,

“কি হচ্ছে?”
“বউকে আদর করছি এটাও সুন্নত।”
মিতু হেসে ফেলে।
“প্লিজ কাপড় পালটে আসুন।”
মুশফিক যেতে যেতে আবার পিছু ফিরে তাকায়।
“মিতু;দরজা যদি আমি না খুলে অন্য কেউ খুলতো?তুমি তো পেছনে ফিরে তাকাওনি কিভাবে বুঝতে?”
মিতু হাসিমাখা মুখে বললো,

“আপনি আশেপাশে থাকলে আমি বুঝি।শুনতে হাস্যকর হলেও এটাই সত্যি যে আমি আপনার গায়ের একটা স্মেল পাই,অন্যরকম একটা মিষ্টি ঘ্রাণ।”
মিতুর কথায় মুশফিক হাসে।ভালোবাসা পূর্ণ চোখে তাকিয়ে উপরে চলে যায় তার মিনিট পাঁচেক পরেই মিতুর কাছে এসে উপস্থিত হয়।মুশফিককে দেখে মিতু খুশীই হয়।চুলাটা দেখিয়ে বললো,

“হুম।মেজর সাহেব থেকে এবার শেফ হয়ে যান।”
মুশফিক মাথা নাড়ে তারপর চুলার কাছে যায়।
মিতু চুলে হাতখোপা করতে করতে উপরে যাওয়ার রাস্তা ধরে।মুশফিক অবাক হয়ে বললো,
“এই!আমাকে এখানে একা রেখে তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
মিতু হাসে।

“উপরে যাচ্ছি।”
মুশফিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
“তাহলে আমি কি করবো?”
মিতু সাবলীল ভাষায় বললো,
“রান্না করবেন।”
“আর তুমি?”
“কাজ আছে।”
মিতু প্রজাপতির মতো উড়েউড়ে রুমে চলে যায়।
মুশফিক হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,মুখ দিয়ে বললো,

“আশ্চর্য!”
তারপর নিজেই হেসে ফেলে।সে মেয়েটাকে এতোই চায় যে একটু দূরত্বও সহ্য হচ্ছে না।সে রান্নায় মন দেয়।পাহাড়ি মুরগী বলে সেদ্ধ হতে সময় লাগছে।মুশফিক উপরে উঠে আসে।মিতু উপরে গিয়েছে আধাঘন্টা হতে চললো কিন্তু এখনো একটাও টু শব্দ নেই।মুশফিক রুমে এসে মিতুকে পায় না।বাথরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বললো,

“মিতু!”
মিতু তখন মুখে সাবান দিচ্ছিলো।সে বললো,
“হ্যাঁ।”
“বাথরুমে কি করছো?”
“বাথরুমে মানুষ কি করে?”

মিতুর কথায় মুশফিক হাসে।সে কি বোকার মতো প্রশ্ন করছে?আসলেই।
কিছুক্ষণ পরে মিতু নিচে আসে।চুল ভেজা, ভেজা চুল বেয়ে টুপটাপ পানি পরে গায়ের জামা ভিজে একাকার।তার হাতে হেয়ার ড্রায়ার।মিতুকে এমন অবস্থায় দেখে মুশফিক চুপচাপ তাকিয়ে থাকে,বুকে বুঝি টিপটাপ কিরে উঠে।মিতু কাছে আসার পরে বললো,

“চুল ভেজা সে খেয়াল আছে?জ্বর চলে আসবে তো।”
মিতু ড্রায়ার দেখিয়ে বললো,
“সেটাই তো বুঝাচ্ছি।”
“আমাকে?”
“হ্যাঁ।”
“কি?”
মিতু মুশফিকের কাছে আসে।
“আপনি শুকিয়ে দেন।”

মুশফিক ড্রায়ার হাতে নিয়ে বিদুৎ সংযোগ করে বললো,
“ও এই কথা?আমি সবসময় তোমার যত্নে নিবেদিত।”
“ইশ কি রোমান্টিক! ”
“হুহ।”

“একটা সত্যি কথা বলি?”
“কি?”
“থাক পরে বলবো।”
“বলো।”
“না পরে৷ প্লিজ।”
“অকে।”

মুশফিক খুব যত্ন করে মিতুর চুল শুকিয়ে দেয়।
“এতো রাতে গোসল কেনো?”
“কেমন লাগছিলো তাই ফ্রেশ হলাম।”
“এখন ভালো লাগছে?”
“হ্যাঁ।”

মিতু আবার উপরে চলে যায়।মুশফিক আরও কিছুক্ষণ পরে রান্না শেষ করে উপরে যায়।উপরে গিয়ে যেই না বলতে যাবে,মিতু তোমার খাবার রেডি কিন্তু কথাটা আর বলা হলো না কথা মুখেই আটকে থাকে।তার চোখ বিছানার উপর আটকে যায়,বুকের স্পন্দন বাড়ে দ্বিগুণ।সাদা বিছানায় লাল পরী বসে আছে।মুশফিক ধীর পায়ে এগিয়ে আসে,গা ঝিমঝিম করছে।মিতু তার দিকে তাকিয়ে হাসে কিন্তু হাসিটার মাঝে নার্ভাসের আভাস স্পষ্ট ফুটে আছে।রুমের সবগুলো লাইট জ্বালানো।উজ্জ্বল রুমে মুশফিক মিতুর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।মিতুর নার্ভাস হাসি নজর এড়ায় না।সে বললো,

“কি ব্যাপার?”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“কোন ব্যাপার নেই।”
মুশফিক বিছানার কিনারায় এসে দাঁড়ায়।
“মিতু।”
মুশফিকের ঘনস্বরের ডাকে মিতুর বুকের কাঁপন বাড়ে।নিঃশ্বাস আটকে যায়।
“হুম।”
“কি হয়েছে?”

“আমার ইচ্ছে করছিলো আপনার দেয়া প্রথম শাড়িটা পরি।তাই পরলাম।”
মুশফিক মিতুর দিকে মুগ্ধতাভরা চোখে তাকিয়ে বললো,
“খুবই সুন্দর লাগছে।দূর পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছুটে চলা দুরন্ত ঝর্ণার মতো স্নিগ্ধ,শীতল,মায়াবী আর আর…”
মুশফিকের দেয়া উপমা শুনে মিতুর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।সে বলে,
“আর কি?”

“আকর্ষনীয়,এতোটাই আকর্ষণীয় যে চুম্বকের মতো কাছে টানার ক্ষমতা লক্ষনীয়,আমাকে……।”
মিতু লজ্জা পেলো।আর সে লক্ষ করলো লজ্জায় তার কান দিয়ে কেমন গরম বাতাস বের হচ্ছে।নার্ভাসনেসে পেট ব্যাথা শুরু হয়ে যাচ্ছে।অথচ মুশফিককে আগেই কাছে টানার দরকার ছিলো।উনি সময় দিয়েছে সেটা মুখে বললেও অন্তরে নিশ্চয়ই মিতুকে খুব কাছে চাইতো সেটা না বললেও মিতু বুঝে।তাছাড়া সে আর মুশফিক দুজনেই ম্যাচিউর।গতোকালই সব হতে পারতো কিন্তু…. মিতু আর ভাবতে চায় না।তার কেমন লাগছে।
মিতুর লজ্জামাখা চেহারা দেখে মুশফিক তাকে স্বাভাবিক করতে বললো,

“আমার জন্যই সেজেছো?”
“হুম।”
“তাহলে প্লিজ লজ্জা পেও না আমার জন্য যেহেতু সেজেছো তাহলে আমাকে দেখতে দাও।দেখি।”
মিতু এবার সত্যি সত্যি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,
“ইশ।তাকাবেন না।”
“কি করবো?”

মিতু বিছানার একপাশে রাখা আলতার কৌটা’টা
দেখিয়ে দেয়।মুশফিক আলতা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে বললো,
“এটা সেই আলতাটা না যেটা আমি বিয়ের আগে দিয়েছিলাম?”
“হ্যাঁ। ”
“তুমি এটা এখনো রেখেছো?”

“রাখবোনা!আপনার দেয়া কিছু আমার কাছে খুবই স্পেশাল।”
মুশফিক ততক্ষণে হাটুমুড়ে ফ্লোরে বসে পরেছে।মিতুর নিটোল,নরম,ফর্সা পায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা আসলেই সুন্দর, এই যে পা গুলো কি সুন্দর,মোলায়েম।মুশফিক খুব যত্ন করে আলতা দিতে থাকে।যদিও ঠিকঠাক দিতে পারছে না,জীবনের প্রথম কাউকে আলতা দিয়ে দিচ্ছে,আলতা গড়িয়ে গড়িয়ে তার ট্রাউজার ভিজিয়ে দিচ্ছে।

আলতার ঠান্ডা স্পর্শ,মুশফিকের হাতের ছোঁয়া সবমিলিয়ে মিতু দম বন্ধ করে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে যখন আলতা দেয়া শেষ হয় তখন মুশফিকের মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠে।সাদা পায়ে লাল আলতা যেনো হিরাখচিত কোন মুকুটের মত জ্বলজ্বল করছে।মুশফিক তার মোবাইল দিয়ে মিতুর আলতারাঙ্গা পায়ের ছবি তুলে।তারপর মিতুর দিকে তাকায়।দুজনের চোখের মিলন হয়।মুশফিক তার মাথার চুল খামচে ধরে কিছু ভাবে তারপর বললো,

“মিতু….”
মিতু জানে মুশফিক কি বলবে।সে ঘোরলাগা চোখে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।মুশফিক আবার বললো,
“খুব সুন্দর লাগছে,এই সুন্দর পা কে উপহারস্বরূপ কিছু না দিলে খুবই অন্যায় হয়ে যাবে, মিতু;মিতু আমি এই মূহুর্তে কোনপ্রকার অন্যায় করতে রাজী না।”

উপহারস্বরূপ তার পুরুষালী ঠোঁট আলতো করে মিতুর আলতারাঙ্গা পা ছুঁয়ে দেয়।মিতু আদরে, আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।মিতুর দিকে তাকিয়ে মুশফিক পরপর আরও কয়েকটা চুমু দিয়ে দেয়।মিতু চোখ খুলে তাকায়। মুশফিক হাত দিয়ে পা আলতো করে ছুঁয়ে দেয়,মিতুর গা অবশ হয়ে যাচ্ছে।মুশফিক উঠে দাঁড়ায়।মিতু আর মুশফিক একে অপরের দিকে তাকায়।

মিতু উঠে দাঁড়ায় তার লক্ষ সে ছুটে বারান্দায় চলে যাবে কিন্তু পা বাড়ানোর সাথে সাথে মুশফিক মিতুর হাত ধরে তাকে আটকে দেয়।মিতুর পিঠে বুক ঠেকিয়ে দাঁড়ায়।রেশমী চুল ঘাড় থেকে সরিয়ে আদরে ভাসিয়ে দিতে চায় মিতু নামক নারীটাকে।ফিসফিস করে বললো,
“আমার থেকে পালাতে চাইছো?”
মিতু তার দিকে ফিরে।মুশফিক বলিষ্ঠ হাত দিয়ে মিতুকে জড়িয়ে ধরে।
“সরি।আজকে পালাতে দিচ্ছি না।”

মিতু চোখ বন্ধ করে মুশফিকের বুকে মাথা ঠেকায়।মুশফিকের হাত আস্তে করে মিতুর চেহারা তার দিকে ফেরায়।তারপর শুকনো মরুভূমি যেমন একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার করে সামান্য জল পেলেই তা নিজের করে নিতে মরিয়া হয় তেমনি মুশফিক মিতুর নরম,পেলব ঠোঁটজোড়া তার নিজের আয়ত্বে নেয়।আঁকড়ে নিল বাহুদ্বয়।বলিষ্ঠ বুকে পিষ্ট করে ফেলার অদম্য ইচ্ছা জাগছে।খানিক পরেই প্রবল উতাল-পাতাল বাতাস দুজনকে ছুঁয়ে যায়।নরম তুলতুলে বালিশে মিতুর স্থান হয়।মুশফিক হাত বাড়িয়ে তার ফোন সুইচ অফ করে নেয়,আজকে সে কোনরকম ফোন এলাউড করবে না,হোক শতো জরুরী।আজকের রাত একান্ত ব্যক্তিগত,দুজনার।
মুশফিক মিতুর কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়িয়ে বললো,

“আজকে কারও ফোন আসবে না।”
মিতু মুশফিককে জড়িয়ে ধরে।পরম ভালোবাসায় ছুঁয়ে যায় দুজনের মন।মুশফিকের বলিষ্ট দেহের গড়ন মিতুকে লজ্জা দেয় সে চোখ বন্ধ করে।মুশফিক মুহূর্তেই উন্মাদ হয়ে যায়,আদরে আদরে ভরিয়ে তুলে মিতুর সারাদেহ।মিতুর শ্বাস ভারী হয়।এলোপাথাড়ি চুমু আঁকে মুশফিকের মুখে।

মেজর পর্ব ২২

উন্মাদনায় ভারী হয় রুম।ঝর্ণার মতো নিজস্ব ছন্দে ছুটে যায় দুজনে।এক অনবদ্য সুখের সূচনা হয়।
শখ করে রান্না করা পাহাড়ি মুরগী খাবার বদলে নিচেই পরে থাকে দুজনে তখন ভালোবাসার স্বর্গ উন্মোচনে মরিয়া হয়ে আছে।

মেজর পর্ব ২৪