কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৩

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৩
নুজাইফা নূন

-” স্রোত কে পাবার জন্য আমি পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করে যাবো। তবু ও স্রোত কে আমার চাই ই চাই।বিকজ আই লাভ স্রোত। তুমি খুব ভালো মেয়ে আরফা। তুমি আমার থেকে বেটার কাউকে পাবে। তখন তোমার মনে হবে আমি তোমাকে রিজেক্ট করে তোমার অনেক বড় উপকার করেছিলাম। আমি তোমাকে রিজেক্ট করেছিলাম বলেই তুমি আসল রত্ম পেয়েছো।

যাই হোক অনেক কিছু বলে ফেলেছি।সরি ফর এভরিথিং।ভালো থেকো বলে সৈকত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে শপিং মলে চলে গেল স্রোতের জন্য শপিং করতে। সৈকত রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আরফা ও চোখ মুছতে মুছতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে আরফা কখন যে মাঝ রাস্তায় চলে এসেছে নিজেও বুঝতে পারে নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হুট করে আরফা খেয়াল করলো তার দিকে একটা গাড়ি ধেয়ে আসছে।দেখে মনে হচ্ছে যেন গাড়িটা ড্রাইভারের কন্ট্রোলে নেই।গাড়ি ব্রেকফেল করেছে। আরফা এমনিতেই খুব দুর্বল ছিলো ।এরপর চোখের সামনে নিজের মৃ’ত্যু ঘনিয়ে আসতে দেখে যেনো তার হাত পা অবশ হয়ে গেলো।আরফা চাইলেও এক পা ও আগাতে পারলো না।আরফা অনেক টা অস্ফুট স্বরে বললো,

-” আপনাকে না পাবার যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে মৃ’ত্যু কে হাসি মুখে গ্ৰহন করে নেয়াই ভালো ‌।হয় হোক মৃ’ত্যু । মৃ’ত্যু’র জন্য প্রস্তুত আছি আমি বলে আরফা সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলো।তখনি কেউ একজন হ্যাচকা টান দিয়ে আরফা কে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে আরফার গালে ঠাস ঠাস করে থা’প্প’ড় মে’রে দিয়ে বললো,

-” কার জন্য ম’র’তে যাচ্ছিলি তুই?যে তোকে কোনোদিন ও ভালোবাসে নি।যার কখনো তোর প্রতি কোনো ফিলিংস তৈরি হয় নি ? তুই তার জন্য ম’রতে যাচ্ছিলি ?সৈকত ই তোর জীবনে সব কিছু আরু? তোর বাবা মা আবদ্ধ , স্রোত এদের ভালোবাসার কোনো মূল্যে নেই তোর কাছে?”

-” নিলয় ভাই আপনি কিভাবে জানলেন আমি সৈকত স্যার কে ভালোবাসি?আমি তো কখনো আপনাকে সৈকত স্যারের ব্যাপারে কিছু বলি নি। কিন্তু আপনি এসব জানলেন কিভাবে?”
-“নিলয় মনে মনে বললো, তুই যে আমার কলিজার ভেতর বসবাস করিস আরু। তোর ব্যাপারে সব খোঁজ খবর আমি রাখি আরু। তুই কখন কোথায় যাস?কী করিস ? সবটা মুখস্থ আমার।

শুনেছি মেয়েদের সিক্স সেন্স নাকি অনেক প্রখর থাকে‌।কোন ছেলে তার প্রেমে পড়লে চট করে বুঝে ফেলতে পারে। অথচ আমি এমন এক গাধার প্রেমে পড়েছি যে আমি যদি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলি , আমার বুকে বড্ড ব্যাথা হচ্ছে রে আরু ।প্রতিত্তরে সে বলবে,
-” আপনার হার্টের সমস্যা হয়েছে নিলয় ভাই।আপনি হার্টের ডক্টর দেখান। আমি যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।সেটা সে বোঝেনা। অথচ নিজে মরিচিকার পিছনে এতো গুলো বছর ছুটছে। মাথামোটা একটা।”

-” সৈকত স্রোতের জন্য শপিং করে নিজের কেবিনের দিকে আসে‌।হুট করে প্রকৃতির ম্যাডাম কে কারো সাথে ফোনে উঁচু আওয়াজে কথা বলতে দেখে সৈকত সেখানে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে ঠিক কি হয়েছে?সৈকত ভাবে প্রকৃতি ম্যাডামের কাছে জিজ্ঞেস করবে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা? ঠিক তখনি প্রকৃতি ম্যাডামের কথা শুনে থমকে যায় সৈকত। প্রকৃতি ম্যাম ফোনে কাউকে বলছেন,

-” স্রোত সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে মানে ? কি করেছো তোমরা স্রোতের সাথে?”
-” কিছু করি নি ম্যাম।এই মেয়ে এমনিতেই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।”
-” ভূগোল বুঝাচ্ছো আমাকে? একটা মানুষ এমনি এমনি কিভাবে সেন্সলেস হয়ে যায় ? তোমরা নিশ্চয় কিছু না কিছু একটা করেছো স্রোতের সাথে? স্রোত সেন্সলেস কেনো হয়েছে?”

-” হয়তো ঠান্ডায় ম্যাম ।”
-” ঠান্ডায় মানে ?”
-” রুমে ফ্যান চালিয়ে দিয়েছিলাম ‌।যাতে করে মেয়েটা কষ্ট পায়।”
-” ড্যাম ইট! আমি তোমাদের কে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছি। শুধুমাত্র স্রোত কে এই দেশের বাইরে চালান করে দেওয়ার জন্য।এর পর স্রোতের সাথে যা হয় হোক।সেটা আমার দেখার বিষয় নয়‌। কিন্তু এই শহরে থাকতে স্রোতের কিছু একটা হয়ে গেলে আমি ফেঁসে যাবো।আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব স্রোত কে চালান করে দাও। স্রোত এই‌ শহরে থাকা মানে আমার বিপদ ।আমি কোনো ক্রাইমে জড়িয়ে যেতে চাই না‌।তাহলে আমার ক্যারিয়ার , আমার ভালোবাসা সব শেষ হয়ে যাবে।”

-” এতো বড়ো একটা ক্রাইম করেছেন ।আর বলছেন আপনি কোন ক্রাইমে জড়াতে চান না।এটা কি করে হয় বলুন তো প্রকৃতি ম্যাম।”
-” পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনে প্রকৃতি পেছনে তাকিয়ে দেখে সৈকত দাঁড়িয়ে রয়েছে। সৈকত কে দেখে অনেক টা ঘাবড়ে যায় প্রকৃতি। কপাল কুঁচকে আসে তার। প্রকৃতি ভয় পেয়ে খানিকটা আমতা আমতা করে বললো,

-” আপনি মহিলাদের মতো আড়ি পেতে আমার কথা শুনছিলেন স্যার ?”
-” স্রোতের সাথে কি করেছেন আপনি?”
-” ক‌ই কিছু না তো। স্রোতের সাথে কি করবো আমি।স্রোত আমার স্টুডেন্ট।আমি তার টিচার।ব্যাস এইটুকুই ।এর বাইরে স্রোতের সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।”

-” সম্পর্ক না থাকলে‌ ও শত্রুতা নিশ্চয় আছে? আপনি যা যা বলেছেন সবটা শুনেছি আমি।”
-” শুনেছেন যখন তখন আর আপনার থেকে লুকিয়ে রেখে কোনো লাভ নেই।স্রোত আমার আর আবদ্ধের মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।তাই তো আমার পথের কাঁটা উপ্রে ফেলে দিয়েছি। আজকের পর থেকে আবদ্ধের জীবনে স্রোত নামের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।স্রোত আজ রাতেই চালান হয়ে যাবে।”

-” সেটা আমি থাকতে কখনো সম্ভব হবে না।”
-” ও মাই গড! এ দেখছি এক ফুল দো মালি।মজনুর অভাব নেই মেয়েটার। কিন্তু কোনো মজনুই তাকে রক্ষা করতে পারবে না।”

-” আমি সবার সামনে আপনার মুখোশ খুলে দিবো ম্যাম।আপনার সমস্ত কথা আমার ফোনে ভিডিও করে রেখে দিয়েছি।আমি এক্ষুনি পুলিশ কে কল করছি বলে সৈকত ফোন বের করে পুলিশের নাম্বারে ডায়াল করতে যাওয়ার আগেই প্রকৃতি ফুলের টব দিয়ে সৈকতের মাথায় আঘাত করে।সৈকত তৎক্ষণাৎ ফ্লোরে পড়ে যায়। প্রকৃতি তাড়াহুড়ো করে এসে সৈকতের হাত থেকে ফোন নিয়ে গ্যালারি তে ভিডিও খুঁজতে থাকে।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২২

কিন্তু গ্যালারি ঘেঁটে কোনো ভিডিও না পেয়ে ফোন নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তার ভাড়া করা গুন্ডার নাম্বারে কল দিয়ে কথা বলতে বলতে জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। ঠিক তখনি সৈকত উঠে ভারী একটা ফুলের টব দিয়ে প্রকৃতির মাথায় খুব জোরে আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ প্রকৃতি মাথায় হাত দিয়ে নিচে পড়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যে র’ক্তে’র লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে যায় সাদা সাদা টাইলস।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৪