কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৪

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৪
নুজাইফা নূন

-” প্রকৃতি ম্যাম কি মা’রা গিয়েছে?ও মাই গড! ম্যামের তো শ্বাস চলছে না।তার মানে আমার ধারণাই ঠিক। রাগের মাথায় এ আমি কি করলাম? আমি খু’ন করে দিলাম প্রকৃতি ম্যাম কে?আমি একজন খু’নী।না না আমি খু’ন করলেও আমি মনে মনে কোন খু’ন করি নি। সুতরাং আমি খুনি না।

তাছাড়া আমি যে খু’ন করেছি তার কোনো প্রমাণ নেই।এখানে যে সিসি ক্যামেরা টা রয়েছে সেটাও নষ্ট।কেউ জানতে পারবে না যে প্রকৃতি ম্যামের খু’ন আমিই করিয়েছি।কেউ কিছু জানার আগে আমি স্রোত কে খুঁজে বের করে স্রোত কে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।যেখানে কেউ থাকবে না। শুধু আমি আর আমার ভালোবাসা থাকবো। মানুষ ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে।সেখানে নায়ক ভিলেন কে খু’ন করেছে।ইট ডাজেন্ট ম্যাটার।বিকজ এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আবদ্ধ সিসি ক্যামেরায় গাড়ির মধ্যে প্রকৃতির অবয়ব দেখতে পেয়েছিলো।তখনি আবদ্ধের প্রকৃতি কে নিয়ে সন্দেহ হয়।আবদ্ধ সেই কথাটা নিলয় কে বলতে যায়। কিন্তু তার আগেই আবদ্ধের কল আসে দেখে আবদ্ধ নিলয় কে কথাটা বলতে পারে না।আবদ্ধ নিলয় কে সাথে করে সোজা ভার্সিটি তে চলে আসে। ততক্ষণে ভার্সিটি প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।সব স্টুডেন্ট যার যার গন্তব্যে রওনা রয়েছে। শুধুমাত্র পিয়ন আর দু একজন স্টুডেন্ট আছে।আবদ্ধ পিয়ন কে দেখা মাত্রই প্রকৃতি ম্যাম এর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,

-” সব ক্লাস তো শেষ। সব স্টুডেন্ট যার যার মতো চলে গিয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যারের একটা জরুরী কল আসছিলো।তাই তিনি আপনি যাওয়ার পর পরই বেরিয়ে গিয়েছেন ।সৈকত স্যার কে কিছুক্ষণ আগে যেতে দেখলাম । কিন্তু প্রকৃতি ম্যাম কে যেতে দেখি নি।হয়তো তার কেবিনেই আছে। কিন্তু প্রকৃতি ম্যাম কে আজ যেন অন্যরকম লাগছিলো।হয়তো কোন বিষয় নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলেন।ক্লাসে ও মনোযোগ দিতে পারেন নি। বারবার তার ফোনে কারো কল আসছিলো।মনে হচ্ছিলো তিনি কোনো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। পিয়নের কথা শুনে আবদ্ধ আর
এক মুহূর্ত দেরি না করে প্রকৃতি ম্যামের কেবিনের দিকে এগিয়ে যেতেই র’ক্ত দেখতে পায়। র’ক্ত দেখে আবদ্ধ অনেক টা অবাক হয়ে বললো,

-” এখানে র’ক্ত এলো কোথা দেখে? র’ক্ত দেখে তো মনে হচ্ছে কারো অনেক বেশি আঘাত লেগেছে।ক্ষত অনেক গভীর মনে হচ্ছে।”
-” হুম। তাড়াতাড়ি চল দোস্ত।হয়তো এখানে কোন ক্রাইম হয়েছে।”
-” নিলয় , আবদ্ধ দুজনেই ‌দৌড়ে এসে দেখে প্রকৃতি ম্যাম র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে রয়েছে।নিলয় এসে প্রকৃতির নাকের নিচে হাত দিয়ে চেইক করে দেখে বললো,

-” আমরা আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছি।সি ইজ ডেথ। ”
-” কি বলছিস তুই?”
-” ঠিকই বলছি দোস্ত।এই দেখ এইখানে দুইটা টবে ‌র’ক্ত লেগে রয়েছে।একটা ভারী টব ।আর একটা হালকা। অর্থাৎ এইখানে প্রকৃতি ম্যাম বাদে আরো একজন ছিলো।তার সাথে নিশ্চয় ম্যামের হাতাহাতি হয়েছে।ম্যাম হয়তো তাকে এই হালকা টব টা দিয়ে আঘাত করেছিলো। কিন্তু অপরাধী তাকে এই ভারী টব দিয়ে আঘাত করে।আঘাত টা খুব জোরে করা হয়।যার কারণে তৎক্ষণাৎ ম্যামের মৃত্যু হয়।”

-” কিন্তু আমি তো প্রকৃতি ম্যাম কে অপরাধী মনে করেছিলাম।আমি শিওর স্রোতের মিসিং হবার পেছনে প্রকৃতি ম্যামের হাত ছিলো।আমি চেয়েছিলাম আসল অপরাধী শাস্তি পাক। আমি সত্যিই প্রকৃতি ম্যাম কে এখানে এই অবস্থায় দেখতে চাই নি।আমি কখনো ভাবিনি যাকে ধরতে এসেছিলাম , তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে হবে।কিন্তু ম্যামের খু’ন করলো কে? আর কেনোই বা করলো ?”
-” কে খু’ন করেছে সেটা প্রমাণ ছাড়া এই মুহূর্তে বলতে পারবো না। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি প্রকৃতি ম্যামের খু’ন কোনো পুরুষ মানুষে করেছে।”

-” এতো শিওর হয়ে কিভাবে বলছিস ?”
-” এই টব টা দেখেছিস কতো ভারী? কোনো মহিলার পক্ষে এতো ভারী টব তুলে কাউকে আঘাত করা পসিবল না।সে যতোই স্বাস্থ্যবান বা শক্তিশালী হোক না কেনো? খু’নী নিশ্চয় ম্যামের পরিচিত কেউ।এই টব থেকে খু’নি’র ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাবো, র’ক্ত থেকে ডিএন‌এ টেস্ট করে খুব সহজেই খু’নি কে ধরতে পারবো।”

-” দেখ ভাই এই মুহূর্তে স্রোত ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না।তোকে আমি স্রোত কে খুঁজতে বলেছি।আর তুই এখন খু’নি নিয়ে পড়ে আছিস। তুই যদি আমাকে হেল্প করতে না পারিস।দ্যাটস ফাইন।আমি নিজেই আমার স্রোত কে খুঁজে বের করবো। কিছু হবে না আমার স্রোতের।”

-” তুই আমাকে ভুল বুঝছিস আবদ্ধ।স্রোত কে আমি ও ভালোবাসি।”
-” স্রোত কে আমিও ভালোবাসি কথাটা শুনে চোখ বড়বড় হয়ে গেল আবদ্ধের। আবদ্ধের দিকে তাকিয়ে নিলয় মুচকি হেসে বললো, আই মিন বোনের মতো ভালোবাসি।আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি স্রোত কে খুঁজে বের করার। কিন্তু স্রোতের মিসিং আর প্রকৃতি ম্যামের খু’ন হ‌ওয়া , দুটো কেস একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।স্রোত কে পেতে হলে এই খু’নি কেও খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।”

-” আবদ্ধ কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রকৃতি ম্যামের ফোন বেজে উঠে।নিলয় গিয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
-” ম্যাম আপনার কথা মতো আর ত্রিশ মিনিট পরে মেয়েটা কে গাড়ি তে তুলে দেওয়া হবে।এরপর মেয়েটা খালাশ হয়ে যাবে‌। পৃথিবীর বুকে আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না তার। আমাদের বকশিস টা পাঠিয়ে দিবেন ম্যাম।”

-” নিলয় কিছু না বলে ফোন রেখে দিয়ে প্রকৃতি ম্যামের কল লিস্ট চেইক করে দেখলো এই নাম্বারে বারবার কথা বলা হয়েছে।নিলয় তৎক্ষণাৎ নাম্বার টা ট্র্যাক করে আবদ্ধ কে নিয়ে একটা পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু বাড়ির বাইরে দেখে গুন্ডারা আহত অবস্থায় নিচে পড়ে রয়েছে।আবদ্ধ এক মুহূর্ত দেরি না করে ভাঙ্গা বাড়িতে প্রবেশ করে প্রতিটা রুমের কোনায় কোনায় খুঁজে দেখে। কিন্তু কোথাও স্রোত কে খুঁজে না পেয়ে আবদ্ধ হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসতে গেলেই একটা গুপ্ত রাস্তা খুঁজে পায়।আবদ্ধ সেই রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখে রুমের মধ্যে একটা চেয়ার আর নিচে দড়ি পড়ে রয়েছে। আবদ্ধ নিচে থেকে দড়ি তুলে নিয়ে চেয়ারে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

-“আমি বুঝতে পারছি এই চেয়ারে এই দড়ি দিয়ে তোমাকে বেঁধে রাখা হয়েছিলো। আমি এই রুমে ঢোকা মাত্রই তোমাকে ফিল করতে পেরেছি।বড্ড ভালোবাসি তোমাকে। কিন্তু আমার লাইফে হয়তো ভালোবাসা নামক জিনিস টা সহ্য হয় না।যাদের কে ভালোবাসি তারাই আমাকে ঠকিয়ে দূরে চলে যায়। আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা ছিলো আমার মা।সে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৩

দ্বিতীয় বার কোনো নারী কে ভালোবাসলাম। কিন্তু হারানোর ভয়ে তাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারলাম না। তবু ও তাকে হারিয়ে ফেললাম।না না আমি প্রথম ভালোবাসা হারিয়েছি। কিন্তু দ্বিতীয় ভালোবাসা কিছুতেই হারিয়ে যেতে দিবো না। তোমাকে আমি ঠিকই খুঁজে বের করবো স্রোত।আর যে বা যারা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। প্রয়োজনে আমি আইন নিজে হাতে তুলে নিবো। তবু ও তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি ছাড়বো না। কিছুতেই না।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৫