কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২২

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২২
নুজাইফা নূন

-” আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।”
-” এসব কি বলছেন বাবা? কেউ না জানুক আপনি তো জানেন আমি স্রোত কে কতোটা ভালোবাসি?।আপনি তো সবটা জানেন। তারপরও ডিভোর্স এর কথা বলছেন বাবা? হ্যাঁ মানছি ভুলটা আমারি হয়েছে।তাই বলে ডিভোর্স কোনো সমাধান নয় বাবা।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি স্রোতের কিছু হবে না।আমি হতে দিবো না।আমার সামান্য ভুলের জন্য আপনি আমাকে যে শাস্তি দিবেন, আমি মাথা পেতে নিবো। তবু ও ডিভোর্স এর কথা বলবেন না বাবা।আমি স্রোত কে ছাড়া অসম্পূর্ণ বাবা।”

-” মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজবে না তো আব্বা‌।আপনি আপনার কথা রাখতে পারেন নি। আপনাদের সকাল সকাল আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিলো।এখনো আসেন নি কেনো? এজন্য আমি খুব রাগ করেছি আপনার উপর।”
-” সাইফুল ভূঁইয়ার কথা শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো আবদ্ধ।আবদ্ধ মনে মনে বললো,ও মাই গড! বাবা তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার মানে বাবা এতোক্ষণ আমার সাথে মজা করছিলো।বাবা স্রোতের মিসিং হবার ব্যাপারে কিছু জানে না।বাবা যেহেতু কিছু জানে‌ন না।তাকে জানতে দেওয়া টা ঠিক হবে না।মেয়েকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসেন তিনি। স্রোতের মিসিং হবার কথা শুনলে তিনি টেনশনে অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন।সরি বাবা এই প্রথম বার আপনাকে‌ মিথ্যা বলতে হবে।এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বাবা। আবদ্ধের থেকে রেসপন্স না পেয়ে সাইফুল ভূঁইয়া আবারো বললো,

-” কথা দিয়ে কথা রাখেন নি কেন আব্বা?”
-” সরি বাবা।আসলে কি হয়েছে জানেন? আমি আর স্রোত আপনাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম।হুট করে পথে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রকির সাথে দেখা হয়ে যায়।ওরা সপরিবারে কানাডা থাকে। কিছু দিনের জন্য দেশে এসেছিলো।আবার দু একদিনের মধ্যে ফিরে যাবে।আমার সাথে দেখা হবার পর রকি যখন জানতে পারলো আমি বিয়ে করেছি।আর স্রোত এখন আমার সাথে রয়েছে।

তখন রকি আমাকে আর স্রোত কে এক প্রকার জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে ওর বাসায় চলে এসেছে।প্রায় দশ বছর পর রকির পরিবারের সাথে আমার দেখা হয়েছে।আন্টি তো আমাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে নিয়ে সে কি কান্না।আন্টি কিছুতেই আমাকে আর স্রোত কে যেতে দিচ্ছে না।তাই ভাবলাম শ্বশুর বাড়ি তো দু দিন পরেও যেতে পারবো। কিন্তু আন্টিরা তো দু এক দিনের মধ্যে চলে যাবে‌।তাই আর আন্টির রিকোয়েস্ট ফেলতে পারি নি। আপনিই বলুন বাবা আমি কি ভুল করেছি?”

-” আচ্ছা ঠিক আছে আব্বা। আমাদের এইখানে না হয় একদিন পরেই আসেন।সমস্যা নেই।আপনারা ইনজয় করেন।”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ বাবা।”
-” ওয়েলকাম ।”
-” তাহলে এখন‌ রাখছি বাবা।”
-” এক মিনিট আব্বা। আম্মার কাছে একটু ফোন টা দিবেন? আসলে সকাল থেকে আম্মা কে ফোনে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে কতো বছর তার কণ্ঠস্বর শুনি না।আম্মার ফোন বন্ধ কেন আব্বা?”

-” একচুয়ালি বাবা স্রোতের ফোনের ব্যাটারি ডাউন হয়ে গিয়েছে।আমি রকির সাথে একটু বাইরে এসেছি।আমি বাসায় গিয়ে স্রোতের সাথে আপনার কথা বলিয়ে দিবো বাবা।”
-” ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।আম্মার খেয়াল রাখবেন বলে ফোন রেখে দেন সাইফুল ভূঁইয়া।”
-” সাইফুল ভূঁইয়ার সাথে কথা বলা শেষ করে আবদ্ধ ফোন রাখতেই নিলয় আবদ্ধের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-” তোকে আমি যতো দেখছি ততো অবাক হয়ে যাচ্ছি আবদ্ধ। ভালোবাসা মানুষকে কতো পাল্টে দিতে পারে ,সেটা হয়তো তোকে না দেখলো কখনো বুঝতে পারতাম না। ভালোবেসে মিথ্যা কথা বলতেও শিখে গিয়েছিস ।”

-” পরিস্থিতি আমাদের কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।সেটা কেউ বলতে পারে না।মিথ্যা বলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না।বাবা কে যদি বলতাম স্রোত কিডন্যাপ হয়েছে।আমি নিশ্চিত বাবা হার্ট অ্যাটাক করতেন।স্রোত তার বেঁচে থাকার ‌কারণ। আমি বুঝতে পেরেছি স্রোত কে কিডন্যাপ কে করিয়েছে ? কেনো করিয়েছে?”

-” কে ?”
-” চল আমার সাথে। আমার স্রোত কে যে কষ্ট দিয়েছে,আমি তাকে ছাড়বো না নিলয় । তাকে প্রাণে মেরে দিবো।”
-” তুই শান্ত হ আবদ্ধ। তুই একজন শিক্ষক হয়ে আইন নিজে হাতে তুলে নিতে পারিস না।আমি তো আছি।আমি দেখছি ব্যাপার টা।চল আমার সাথে।”
-” হুম চল।”

-” উইল ইউ ম্যারি মি সৈকত ?”
-” আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?”
-” এসব কি বলছো সৈকত?”
-” হাউ ডেয়ার ইউ?তোমার সাহস হয় কি করে একজন টিচার এর নাম ধরে ডাকার?আবদ্ধ তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি বুঝি?”

-“আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না স্যার। আপনিই তো আমাকে এখানে ডেকেছিলেন? আপনিই তো আমাকে বলেছিলেন আমি যেনো আপনাকে তুমি করে আপনার নাম ধরে ডাকি। আপনিই তো বলেছিলেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন।তাহলে এখন এমন কেন করছেন স্যার?”
-” এসব কথা তুমি কিভাবে জানলে?”
-” সৈকতের কথা শুনে আরফা তৎক্ষণাৎ নিজের ফোন বের করে হোয়াটসঅ্যাপে সৈকতের সাথে আরফার কথোপকথন দেখিয়ে বললো,

-” এই দেখুন স্যার।আপনি নিজে চোখে দেখুন।আমাদের কতো কথা হয়েছে।আপনি কতোবার আমাকে আই লাভ ইউ বলেছেন।আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছেন।”
-“ও শিট ! আমি তোমাকে সবসময় আমার ছোট বোনের নজরে দেখেছি। তোমাকে ভালোবাসা তো দূরের কথা, তোমার জন্য আমার মনে কখনো কোনো প্রকার অনুভূতি তৈরি হয় নি।‌আমি তোমাকে নয়।স্রোত কে ভালোবাসি আরফা।আর এসব কথা আমি স্রোত কে বলেছি।তোমাকে নয় আরফা।”

-” আমি তোমাকে নয় , স্রোত কে ভালোবাসি ।কথাটা শুনে দু কদম পিছিয়ে গেল আরফা।তার হাত থেকে ফুলের তোড়া টা নিচে পড়ে যায় ।গত রাতে সৈকত যখন বলেছিলো ভালোবাসি ,তখন আরফার খুশি তে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছিলো।সৈকত আরফা কে বলেছিলো দেখা করার জন্য।সেই খুশিতে আরফা সারা রাত ঘুমোতে পারে নি। বিছানায় শুধু ছটফট করছে।আর সকাল হবার অপেক্ষা করছে।সকাল সকাল মেয়েটা সাজগোজ করে কতো আশা নিয়ে এসেছিলো।প্রিয় মানুষ টার হাতে হাত রেখে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু কে জানতো সে অযথা মরীচিকার পিছনে ছুটেছে? আরফা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

-“কিন্তু আমার আপনার সাথে চ্যাটিং হয়েছে। স্রোতের সাথে নয়।”
-“তারমানে এটা তোমার নাম্বার?”
-“জ্বি স্যার।”
-” ও শিট! হাউ কুড আই মেইক সাচ এ বিগ মিস্টেক?সরি আরফা।ভুল টা আমারি হয়েছে। কিছু দিন আগে স্রোত এই নাম্বার থেকে কল করে পড়া জানতে চেয়েছিলো।আমি সেই নাম্বার টা তখনি স্রোত দিয়ে সেইভ করে রেখেছিলাম।আমি স্রোত ভেবেই তোমাকে এসব কথা বলেছি।সরি আরফা।”

-” সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যায় না স্যার।আপনি কতো সহজে আপনার ভুলের কথা টা বলে দিলেন। কিন্তু আমার ভালোবাসায় কোনো ভুল ছিলো না স্যার ।আমার কিশোরী বয়স থেকে আপনার প্রতি একটু একটু করে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।আপনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাতে আমার দু চোখের পাতা এক হয়েছে।আবার সকালে সেই আপনাকেই ভেবে আমার চোখের পাতা খুলেছে। আমি সত্যিই আপনাকে অনেক ভালোবাসি স্যার।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২১

-” কিন্তু তোমাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।তুমি যেমন আমাকে ভালোবাসো।আমাকে পেতে চাও।আমি ও তেমনি স্রোত কে ভালোবাসি। স্রোত কে নিজের করে পেতে চাই। এট এনি কস্ট। প্রয়োজনে স্রোত কে পাবার জন্য আমি পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করে যাবো। তবু ও স্রোত কে আমার চাই ই চাই।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৩