কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২১

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২১
নুজাইফা নূন

-“মাল টা কিন্তু হেব্বি দেখতে বস।ফিগার দেখেছিস মামা? একদম চিকনি চামেলি।মনে হচ্ছে টোকা দিলেই র’ক্ত বের হবে।আমার কিন্তু হেব্বি মনে ধরেছে মাল টা কে। চোখের সামনে এমন ঝাক্বাস জিনিস দেখতে পাবো কখনো ভাবতে পারিনি মামা।”

-” আমারো মনে ধরেছে মামা। কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল কর মামা।মেয়েটার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করা যাবে না।তাহলে আমরা ফেঁসে যাবো। আমাদের কাজ শুধু রাতের আঁধারে মেয়েটাকে চালান করে গোডাউনে পৌঁছে দেওয়া। সেখানে এর মতো আরো দশ থেকে পনেরো টা মেয়ে রয়েছে।সব কটা বিদেশে পাচার হবে।কোটি কোটি টাকা ইনকাম হবে আমাদের।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তুই ভুলে যাচ্ছিস মেয়েটা কে আমাদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।আমারা তার সাথে যা খুশি করতে পারি।”
-” না পারি না।ম্যাডামের নির্দেশ আছে তার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করা যাবে না।তাহলে আমাদের রক্ষে থাকবে না।বুঝলি মামা আমরা আজব দুনিয়ায় বাস করি।এখানে মেয়েরাই মেয়েদের বড়ো শত্রু।”
-” হ মামা।ম্যাডামের নিশ্চয় এই মেয়ের সাথে ঘোর শত্রুতা আছে।তাই তো আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে।”

-” সে যা খুশি হোক। আমাদের দেখে কোনো কাজ নেই। আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে।”
-” হ মামা ঠিক বলছিস।চল আমরা এখান থেকে চলে যাই। শুধু শুধু লোভ বাড়িয়ে লাভ নেই।”
-” যাবো তো বটেই।আগে মেয়েটার জ্ঞান ফিরিয়ে আনি বলেই লোকটা এক জগ পানি ছুঁড়ে মারে স্রোতের মুখে।৯ ডিগ্ৰি তাপমাত্রার মধ্যে ও ফুল স্পীডে ফ্যান চালিয়ে তার নিচে স্রোত কে একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে ।

রাস্তায় স্রোতের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করার পর স্রোত জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। এরপর তাকে গাড়িতে বসিয়ে একটা বদ্ধ রুমে আটকে রাখা হয়েছে। স্রোতের চোখে মুখে পানি ছিটা লাগতেই চোখ টিপটিপ করে চোখ খুলে তার হাত পায়ে ব্যাথা অনুভব করে। তৎক্ষণাৎ সে বুঝতে পারে তার হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে। স্রোত শীতে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো,

-” বাঁচাও ! কেউ আছো? শুনতে পারছো আমার কথা। আমার হাতের বাঁধন খুলে দাও।তোমরা কেন আমাকে এই বদ্ধ রুমে আটকে রেখেছো? আমি কি ক্ষতি করেছি তোমাদের ? তোমাদের কি একটু ও দয়া মায়া নেই? এই ঠান্ডার মধ্যে ও ফ্যান চালিয়ে রেখেছো।ফ্যান টা বন্ধ করো প্লিজ। অনেক শীত লাগছে আমার । প্লিজ ফ্যান টা বন্ধ করো।আমাকে যেতে দাও প্লিজ বলে স্রোত অঝোরে কান্না করতে লাগলো। কিন্তু তার কান্না, আকুতি মিনতি কারো কর্ণপাত হলো না। স্রোত অনেক চেষ্টা করলো নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়ে চেয়ারের সাথে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলবো,

-“আপনি কোথায় এটিটিউড এর দোকানদার?আপনাকে বড্ড মিস করছি আমি।আমি বুঝতে পারছি না আমি ঠিক কি করেছি? আমার অপরাধ কোথায়?তবে এটুকু বুঝতে পারছি সবটা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিলো।কেউ একজন ইচ্ছা করে আমি প্রথমে যে রিক্সায় উঠেছিলাম , তাকে ফেইক কল করে সরিয়ে নিয়ে যায় । আর তারপর তারা তাদের পরিকল্পনা মাফিক ঐ মাস্ক পরা রিকশাওয়ালা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।কারণ তারা জানতো আমি বাধ্য ছিলাম ঐ রিক্সায় উঠতে।কিন্তু কে করলো এসব ? আর কেনোই বা করলো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো স্রোত । কিন্তু কোনো উত্তর মিললো না।”

-“আবদ্ধ রাস্তা থেকে র’ক্ত মাখা ওড়না তুলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
-” এটা তো স্রোতের ওড়না। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি যখন রুম থেকে বের হয়েছিলাম তখন স্রোত এই ড্রেস টা বের করে বিছানার উপর রেখেছিলো। তাছাড়া স্রোতের গায়ের ঘ্রাণ আমার অনেক পরিচিত।এই ওড়নায় আমি স্রোতের গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি।

তার মানে সত্যিই আমার স্রোতের সাথে খারাপ কিছু হয়েছে।সব আমার দোষ।আমি যদি স্রোত কে সাথে করে নিয়ে আসতাম।তাহলে এরকম টা কিছুই হতো না। এই ভুল আর কখনো করবো না আমি। একবার স্রোতের দেখা পাই‌। এরপর স্রোত কে আর কখনো আমার থেকে আলাদা হতে দিবো না। একদম আমার কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো বলতে বলতে চোখ ভিজে গেলো আবদ্ধের।আবদ্ধ কে এই অবস্থায় দেখে নিলয় আবদ্ধের কাঁধে হাত রেখে বললো,

-” মুনফাসিল আবদ্ধের চোখে পানি ? হাউ স্ট্রেঞ্জ? আমি জানতাম তোর মন পাথরে পরিণত হয়েছে। আন্টির মৃত্যুর সময় তোকে শেষ চোখের পানি ফেলতে দেখেছি।এতো গুলো বছর পরে আবার তোর চোখে পানি দেখতে পেলাম। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা বোদহয় এমনি হয় দোস্ত।স্রোত কে যে এতোটা ভালোবাসিস স্রোত কে বলেছিস কখনো?”

-” বলার আর সুযোগ পেলাম ক‌ই?তার আগেই…
-” ডোন্ট ওয়ারি।আমি বলছি স্রোতের কিছু হবে না।আমি প্রতিটা থানায় স্রোতের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি।স্রোত কে জোর কদমে খোঁজা হচ্ছে। এটুকু তো শিওর যা হয়েছে এখানেই হয়েছে।সামনেই একটা সিসি ক্যামেরা রয়েছে। চল দোস্ত এই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা হয়তো স্রোতের ব্যাপারে কিছু জানতে পারবো।”

-” সিসি ক্যামেরায় স্রোতের মুখ স্পষ্ট বোঝা গেলে ও অন্যদের চেনা যাচ্ছে না।সবাই এমন ভাবে মুখ ঢেকে রয়েছে যে তাদের চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ কিছু একটা দেখে আবদ্ধের চোখ আটকে যায়।আবদ্ধ নিলয় কে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই আবদ্ধের ফোন বেজে উঠে।আবদ্ধ ফোনের স্ক্রিনে বাবা ২ নামটা দেখে ভড়কে যায়।সে তাকে কি জবাব দিবে বুঝতে পারে না।

আবদ্ধ কল রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতেই কল কেটে যায়।আবদ্ধ এটাই চাচ্ছিলো যেন সাইফুল ভুঁইয়ার সাথে তার কথা বলতে না হয়।আবদ্ধ খুব ভালো করে জানে তিনি স্রোতের ব্যাপারে জানতে চাইবে।আবদ্ধ তাকে মিথ্যা বলতে পারবে না।আর সত্যি টা বললে তারা খুব টেনশন করবেন। কিন্তু আবদ্ধের ভাবনার মাঝে আবারো কল বেজে উঠে।আবদ্ধ ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে সাইফুল ভূঁইয়া বললো,

-“আপনাকে আমি বিশ্বাস করে আমার আম্মাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন নি।আপনার সাথে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।আমি আমার আম্মাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২০

-” মানে কি বলছেন বাবা?”
-” আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২২