কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২০

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২০
নুজাইফা নূন

-” আই লাভ ইউ আবদ্ধ স্যার।আই লাভ ইউ সো মাচ। বিশ্বাস করুন আবদ্ধ আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।আপনাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। শুধু মাত্র আপনার জন্য আমি হাজার হাজার ছেলে কে রিজেক্ট করেছি।৩০+ বয়সেও অবিবাহিত হয়ে জীবন পার করছি।। আপনাকে মনে প্রাণে আমি আমার স্বামী হিসেবে গ্ৰহণ করে নিয়েছি।উইল ইউ ম্যারি মি আবদ্ধ? প্লিজ আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না আবদ্ধ।”

-” আর ইউ ক্রেজি? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ডিড ইউ সে?”
-” হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি আবদ্ধ।আপনার চোখের দিকে তাকালে আমি ঠিক থাকতে পারি না।আপনি যদি আজ আমাকে রিজেক্ট করেন , তাহলে আগামীকাল আমার বাড়িতে গিয়ে আপনাকে আমার জানাজায় শরিক হতে হবে।আর তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনি আবদ্ধ, আপনি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” দেখুন ম্যাম! আপনি এলার্ট একজন মেয়ে।আপনার সাথে এমন পাগলামি মানায় না। তাছাড়া আমি আপনাকে সবসময় আমার কলিগের নজরে দেখে এসেছি।আপনাকে ভালোবাসা বা বিয়ে করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার কাছে সময়ের মূল্য অনেক বেশি। আপনার সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা বা সময় কোনটাই আমার নেই।আই হ্যাভ টু গো বলে আবদ্ধ ক্যাফে থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই প্রকৃতি আবদ্ধের পা জড়িয়ে ধরলো।”

-” আবদ্ধ ভার্সিটি এসে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা শেষ করে স্রোতের নাম্বারে কল করতে যাবে ঠিক তখনি প্রকৃতি ম্যাম আবদ্ধ কে এই ক্যাফে তে জরুরি কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে আসে।আবদ্ধ ক্যাফে এসে দেখে পুরো ক্যাফে তাদের জন্য বুক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়।ক্যাফে তে সুন্দর করে বেলুন দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে।আবদ্ধ বিরক্তি নিয়ে ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথেই প্রকৃতি আবদ্ধের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আবদ্ধ কে তার মন কথা জানায়। কিন্তু আবদ্ধ যখন প্রকৃতি কে রিজেক্ট করে দিয়ে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসতে যায়, তখনি প্রকৃতি আবদ্ধের পা জড়িয়ে ধরলো।যা দেখে আবদ্ধ বিরক্তি নিয়ে বললো,

-“আপনি এমন নাটক করবেন বলে আমাকে এখানে ডেকেছিলেন?”
-” আমার ভালোবাসা আপনার কাছে নাটক মনে হচ্ছে আবদ্ধ? আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই আপনার কাছে?”
-“আপনাকে আগেও বলছি আর এখনো বলছি আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমাকে যেতে হবে। পা ছাড়ুন ম্যাম।”

-” কিন্তু কেন আবদ্ধ? কেন আপনি আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না। কিসের কমতি আছে আমার মধ্যে? আপনি যতোক্ষণ না পর্যন্ত আমাকে ভালোবাসতে না পারার কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারছেন। ততোক্ষণ আমি আপনার পা ছাড়বো না আবদ্ধ।”

-” ছেলে মানুষী করবেন না ম্যাম। আমি আবারো বলছি আমার পা ছাড়ুন।”
-” না ছাড়বো না। আপনি আগে বলুন কেন আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না?”
-“বিকজ আ’ম ম্যারিড।আই হ্যাভ এ ওয়াইফ, এন্ড আই লাভ মাই ওয়াইফ ভেরি মাচ।আই ওয়ান্ট টু স্পেন্ড দ্যা রেস্ট অফ মাই লাইফ হোল্ডিং হিজ হ্যান্ড।হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?”

-” আবদ্ধ স্যার বিবাহিত কথাটা শুনে আপনা আপনি হাত আলগা হয়ে গেল প্রকৃতির। প্রকৃতি মনে মনে বললো তার মানে আমি যেটা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই ঠিক। অবশ্য ঠিক হবারি কথা। প্রকৃতির সিক্স সেন্স যেটা ডাউট করে সেটাই হয়।তবে আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপনি শুধু মাত্র স্রোত কে পছন্দ করেন। কিন্তু এখন তো দেখছি জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ছে।আপনি অনেক ফার্স্ট আবদ্ধ।

আপনার একমাত্র বিবাহিত ব‌উ টা যে স্রোত, সে বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনি অনেক দেরি করে ফেলেছেন আবদ্ধ। এতোক্ষণে পাখি খাঁচায় বন্দী হয়ে গিয়েছে‌।আপনি চাইলেও আর কিছু করতে পারবেন না।আপনি শুধু আমার ছিলেন।এখন আছেন আর ভবিষ্যতেও আমারি থাকবেন আবদ্ধ। শুধু মাত্র আমারি। আপনাকে আমি আমার কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো।আপনি চাইলেও আমার থেকে দূরে সরে যেতে পারবেন না‌।

কখনোই না। আবদ্ধ ক্যাফে থেকে বেরিয়ে স্রোতের নাম্বারে কল করে। কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে দেখে আবদ্ধ আরফার নাম্বারে কল করে।আরফা তখন ইশফা আর নির্ঝরের সাথে মাঠে আড্ডা দিচ্ছিলো। কিন্তু তাদের আড্ডার মধ্যমণি স্রোত না থাকায় তাদের আড্ডা ঠিক জমে উঠছিলো না।সবাই মিলে স্রোত কে নিয়ে কথা বলছিলো।তখনি আরফার ফোন বেজে উঠে।আরফা ফোনের স্ক্রিনে ভাইয়া নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে এক মুহূর্ত দেরি না করে কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমরা পৌঁছে গিয়েছো ভাইয়া? বাবুই কোথায়? বাবুই কে ফোনে পাচ্ছি না কেনো?”

-” স্রোত তোর সাথে নেই?”
-” না ভাইয়া।ইনফ্যাক্ট বাবুই তো ভার্সিটি তে আসেই নি।”
-” কি বলছিস তুই আরু? স্রোতের তো ভার্সিটি তে আসার কথা ছিলো। ঠিক আছে আরু আমি এখন রাখছি বলে আবদ্ধ কল কেটে দিয়ে বাড়িতে সালমা বেগমের ফোনে কল দিলো।সালমা বেগম আবদ্ধের কল পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।তার চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে আবদ্ধ বললো,

-” স্রোত কি বাড়িতে রয়েছে?”
-” না তো।স্রোত মা আপনি ভার্সিটি তে যাওয়ার পর পরই তো বেরিয়ে গিয়েছে।আমি বারবার বলেছিলাম আপনার বাবা স্রোত কে পৌঁছে দিবে। কিন্তু স্রোত মা আমার কোনো কথা শোনে নি।সে একাই চলে গিয়েছে।”
-” কিন্তু স্রোত তো ভার্সিটি তে আসে নি।”

-” হায় আল্লাহ! কি বলছেন আপনি? স্রোত মায়ের কোনো বিপদ হলো না তো? স্রোত মা যাওয়ার পর থেকেই আমার ভেতর টা কেমন যেন কুঁ ডাক ছিলো। স্রোতের যেন কিছু না হয়।”
-” প্রতিত্তরে আবদ্ধ কিছু না বলে কল কেটে দিয়ে সাইফুল ভুঁইয়ার নাম্বারে কল দেয়। সাইফুল ভূঁইয়া ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করার পর বললো,

-” আপনারা কখন আসবেন আব্বা‌।সেই সকাল থেকে আমরা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনাদের তো সকাল সকাল আসার কথা ছিলো।এখনো আসেন নি কেন আব্বা?”
-” কথাটা শোনা মাত্রই আবদ্ধ শীতের মধ্যে ও ঘামতে শুরু করলো।আবদ্ধ মনে মনে বললো,

তার মানে স্রোত ঐ বাড়িতে ও যায় নি। বাড়িতে নেই, ভার্সিটি তে আসে নি।তাহলে মেয়েটা গেলো কোথায়? এদিকে আবার ফোন টাও বন্ধ রয়েছে।তাহলে কি সত্যিই স্রোতের কোনো বিপদ হলো? না না এটা কিছুতেই হতে পারে না।আমি বেঁচে থাকতে আমার স্রোতের কিছু হতে পারে না।আবদ্ধ সাইফুল ভুঁইয়ার কাছে স্রোত মিসিং হবার কথা হাইড করে কথা বলা শেষ করে তার পুলিশ ফ্রেন্ড নিলয় কে কল করে সবটা খুলে বললো।নিলয় তৎক্ষণাৎ গাড়ি নিয়ে আবদ্ধের কাছে ছুটে এসে আবদ্ধ কে হাগ করে বললো,

-” ডোন্ট টেক এ টেনশন। এভরিথিং উইল বি ফাইন।আমি স্রোতের নাম্বার ট্র্যাক করেছি। স্রোতের লাস্ট লোকেশন একটা নিরিবিলি রাস্তায় দেখাচ্ছে।আমার মনে হয় আমাদের সেখানে যাওয়া উচিত।সেখান থেকে আমরা নিশ্চয় স্রোতের ব্যাপারে কিছু একটা জানতে পারবো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৯

-” জানতে পারবো বলে হবে না নিলয়।আই ওয়ান্ট স্রোত।অ্যাট এনি কস্ট।”
-” আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট বলে আবদ্ধ নিলয় দুজনেই স্রোতের লাস্ট লোকেশনে চলে আসে ‌।নিলয় , আবদ্ধ দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে স্রোতের ছবি দেখিয়ে সবাইকে স্রোতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কেউ স্রোতের ব্যাপারে কিছু বলতে পারে না দেখে আবদ্ধের অবস্থা যেন পাগল প্রায় হয়ে যায়।আবদ্ধ হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়ে।আর তখনি আবদ্ধের চোখ যায় রাস্তায় পড়ে থাকা র’ক্ত মাখা একটা ওড়নার দিকে।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২১