আমার তুমি পর্ব ২০

আমার তুমি পর্ব ২০
জান্নাত সুলতানা

তিন্নি সিটে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সারা রাত ঘুমুতে পারে নি হয়তো তাই।সারা মুখ জুড়ে ক্লান্ত ছাপ স্পষ্ট। আর কবির সে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এতোক্ষণ গাড়ি চালাচ্ছিল।কিন্তু তিন্নি ঘুমিয়ে পরেছে বিধায় কবির গাড়ি থামিয়ে তিন্নির ক্লান্ত ভরা মুখ টা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে।

কিন্তু হঠাৎ করে কোথাও মনের ভেতর হতে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে।
আচ্ছা এই মেয়ে টা আরও কয়েক বছর আগে ওর জীবনে কেন এলো না?
বেশি না আর দুই বছর আগে এলেও তো ওর প্রিয়তার প্রতি কোনো অনূভুতি হতো না।
এখনো তাহলে বুকের ভেতর সব টা জায়গায় জুড়ে ওর নিজের বসবাস হতো।
কিন্তু এখন তো কোথাও একটা প্রিয়তার জন্য সুপ্ত অনুভূতি থেকে গেলো।
হয়তো এটা সারা জীবন থাকবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কারণ প্রথম ভালোবাসা সবার মনে কোথাও না কোথাও থেকে যায়। যেটা চাইলেও মুছা সম্ভব হয় না।
কবির কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তিন্নির মাথা টা সিট হতে খুব সাবধানের সহিতে আলগোছে নিজের কাঁধের উপর রেখে দেয়।
তিন্নি হাল্কা নড়েচড়ে উঠে তবে সম্পূর্ণ তন্দ্রা ছুটে না।

বরং কবিরের বাহু টা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
কবির সারা শরীর কেমন একটা অনুভূতি হলো।হয়তো এই প্রথম কোনো মেয়ের এতো সন্নিকটে এসছে তাই।
কবির বেশি কিছু না ভেবেই আবারও গাড়ী স্টার্ট দেয়।
এক হাতে ড্রাইভ করছে আর এক হাতে তিন্নির মাথা টা কাঁধে একটু পর পর হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে।
এই রাস্তা টা বেশ নির্জন গাড়ি খুব কম চলে।

পৌঁছাতে হয়তো আর মিনিট দশ এক সময় লাগবে।
যদিও এটুকু জায়গায় পৌঁছাতে মোটেও এতো সময় লাগে না।
তবে কবির খুব আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে।
ওরা বিকেলে রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে শপিং মলে গিয়েছে সেখানে গিয়ে অনেক গুলো থ্রি পিস আর দুই টা শাড়ী কিনে দিয়েছে কবির তিন্নি কে।
তিন্নি শুধু সব দেখছিল

ও যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। তিন্নি বুঝতে পারছিল না এসব কি হচ্ছে।
কবির শপিং মলে থেকে বেড়িয়ে তিন্নি কে নিয়ে পাশে একটা পার্কে গিয়ে ছিল।
আর সারা টা সময় তিন্নির হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের হাতের মুঠো নিয়ে রেখে ছিল।
তিন্নির তখন কেন জানি খুব করে কান্না পাচ্ছিল।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছিল ও বুঝতে পারছিল না হয়তো এভাবে কেউ কখনো এতো টা যত্ন করে আগলে আগলে রাখে নি, এতো টা ভালোবেসে যত্ন করে নি।
কবির তখন হটাৎ করেই তিন্নির হাত টা ছেড়ে দিয়ে নিজের পকেট হতে একটা রিং বেড় করে নিচে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলে ছিল সে সারা জীবন এভাবে তিন্নি কে আগলে রাখতে চায়।
পার্কে থাকা প্রতি টা কাঁপল আর পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা অনেকেই তিন্নি কে কবির এর প্রপোজে রাজি হয়ে যেতে বলছিল।

তিন্নি তখন কান্না ভুলে লজ্জা নুইয়ে পরে ছিল।
অতঃপর নিজের কাঁপতে থাকা বাম হাত টা কবির এর সামনে ধরে কবির সেটার অনামিকা আঙ্গুল রিং টা পড়িয়ে দিয়ে নিজের ঠোঁট জোড়া তিন্নির হাতের পিঠে ছুঁয়ে দেয়।
আর সবাই চার দিক হতে করতালি দেয়।
কবির এসব ভাবনার মাঝেই তিন্নি জোরে ডেকে উঠে

-“স্যার? ”
-“হ্যাঁ বলো।
কি হয়েছে?”
কবির তিন্নির হঠাৎ এতো জোরে ডাকা গাড়ি ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করে তিন্নি অসহায় কণ্ঠে উত্তর দেয়
-“স্যার আমার অনেক টা পথ এগিয়ে এসছি।
হোস্টেল তো পেছনে।”

কবির তিন্নির কথা শুনে চার পাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে চাইলো।
সত্যি ওরা অনেক টা দূরে চলে এসছে হোস্টেল হতে।
আসলে কবির ভাবনার মাঝে এতোটাই বিভোর ছিল যে ও খেয়ালই করে নি। তবে
কবির নিজে কে ধাতস্থ করে বলে উঠে

-“খেয়াল করি নি।”
কথা শেষ কবির গাড়ি ঘুরিয়ে হোস্টেল এর দিকে আসে।
গাড়ি টা এসে হোস্টেল এর সামনে থামতেই তিন্নি নেমে এক সাইডে দাঁড়ায় কবিরও নেমে পেছন দরজা খুলে সেখান থেকে দুই টা প্যাকেট তিন্নির হাতে দিয়ে বলল

-“এখন এগুলো রাখো।
বাকি গুলো আমি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
বাবা এসে এই সাপ্তাহের মধ্যে তোমাকে নিয়ে যাব।”
তিন্নি প্যাকেট গুলো হাতে নিলো।
কিন্তু ও কিছু বলতে চাইছে তবে বলতে পারছে না হয়তো।
কবির বুঝতে পারলো আর এটাও বুঝলো তিন্নি কি বলতে চায়।
তাই তিন্নি কিছু বলার আগেই কবির বলে উঠে

-“এসব নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
বিয়ের সব ব্যবস্থা করেই বাবা তোমাকে বাড়ি নিবে।
আর সেটা এক সাপ্তাহের মধ্যে হবে।”
তিন্নি কিছু বলে না।
কবির আবারও বলল

-“সাবধানে থাকবে।”
তিন্নি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে
-“আচ্ছা।
আপনিও সাবধানে যাবেন।”
কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে বেশ লাগছে দেখতে রাস্তার পাশে নিয়ন বাতি জ্বালিয়ে রাখার সেই কৃত্রিম আলোয়ে। তিন্নি ফিরে চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু কবির পেছন থেকে আবারও ডেকে উঠে

-“শুনো।
কাল থেকে আর টিউশন যাবে না।
সবাই কে না করে দেবে।
মনে থাকবে?”
-“আচ্ছা।”
তিন্নি সেভাবে থেকেই মিনমিন করে উত্তর দেয়।

অতঃপর তিন্নি চলে যায় আর কবির সে দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে যতক্ষণ পর্যন্ত তিন্নি গেইট অতিক্রম করে হোস্টেল এর ভেতর না যায়।
তিন্নি ভেতরে চলে গেলেই কবির গাড়িতে বসে পড়ে।
তার পর চার তলা বিল্ডিং এর দোতলার তিন নাম্বার রুমের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে থাকে।

এই রুম টায় তিন্নি থাকে কবির জানে আর কবির এটাও শিওর তিন্নি এখন রুমে গিয়ে একবার ব্যালকনিতে আসবে।
আর হলোও তাই কবিরের ভাবনার মাঝেই আবছা আলোর মাঝে তিন্নি কে ব্যালকনিতে এসে দুই হাত রেলিং এর উপর রেখে কবির এর গাড়ি টার দিকে তাকালো।
কবির সে দিকে তাকিয়ে নিজের ডান হাত টা বাহির করে ইশারা করে রুমে যাওয়ার জন্য।
তিন্নি রুমে চলে যায়।কিন্তু পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ঠিক তাকিয়ে রয় কবির এর গাড়ি টা যতক্ষণ না দৃষ্টির আড়াল হয়।

প্রিয়তা সাদনান এর দেওয়া কাপড় গুলো পড়ে পা গুটিয়ে বসে আছে বিছানায়। ঘুম থেকে উঠছে মাত্র।
ওর কেমন লাগছে। যদিও এখানে তেমন লাগার কথা নয়।
স্বামী হয় ওর কিন্তু তবুও কেমন কেমন লাগছে। হয়তো এসব পড়ে অবস্তু নয় তাই।সব সময় তো লং ফ্রক বা কুর্তি এসব পড়ে।

সাদনান নেই ফ্রেশ হয় খাবার খেয়ে কোথাও গিয়েছে।
প্রিয়তা দেখছে রুম টাকে।
এই রুম টাও সাদা রঙের।বিশাল বড় একটা রুম সাথে ছোট একটা ব্যালকনিও আছে।
সেখানে বিভিন্ন রকমের ফুলের টব আর বড় বড় সবুজ পাতার টবও আছে।
কিন্তু ফুলের গাছ গুলো শুকিয়ে আছে।
যত্নের অভাব।

প্রিয়তা সে গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলো। সন্ধ্যা সাত টার বেশি সময় বাজে এখন।দুপুর খাবার খেয়েছে কিন্তু এখন আবার ওর পেটে ভীষণ ক্ষুধা অনুভব করলো।
কিন্তু ও খাবে কি আর এই বাড়িতে তো প্রথম ও তো জানেও এখানে কিছু আছে কি না। আর দুপুরেতো সাদনান রুমে এনে খাইয়ে দিয়েছে।

আচ্ছা যা-ই হোক একবার রান্না ঘরে যাওয়া যাক আর সেখানে কিছু আছে কি না সেটাও দেখা যাবে।
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে থম মেরে দাঁড়িয়ে রয়। এটাও সম্ভব? সাদনান রান্না ঘরে?
সাদনান রান্না ঘরে কিছু করছে।
প্রিয়তা সে দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো।
সাদনান টের পেয়েছে বউ তার পেছনে।
তাই কেবিনেট খুলে সেখানে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বললল

-“আসার দরকার ছিল না।
দুই মিনিট এর মধ্যে আসছি।
তুমি রুমে যাও।”
প্রিয়তা শুনে না এগিয়ে গিয়ে ওভেন খোলে সেখান দেখা মিলে খাবার দিয়ে রাখা।
প্রিয়তা সেগুলো বের করে সাদনান ততক্ষণে প্লেট নামি ওভেন এর পাশে রাখে।
অতঃপর প্রিয়তার হাত থেকে খাবার প্লেট এ রাখে।
সাদনান প্লেট আর একটা পানির বোতল হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে সাথে আসার জন্য ইশারা করে।
প্রিয়তা সাদনানের পেছনে পেছন যেতে যেতে জিজ্ঞেস করে

-“খাবার কোথায় পেলেন?”
-“দারোয়ান দিয়ে আনিয়েছি।
কিন্তু সে গুলো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে তাই গরম করতে লেইট হয়ে গেলো।”
-“আমাকে বলতে পারতেন।”
-“হা করো।”
সাদনান প্রিয়তার মুখের সামনে খাবার ধরে হুকুম জারি করে।
প্রিয়তা মুখ খোলে ঝটপট খাবার খেয়ে নেয়।

সাদনান নিজেও খায়।
খাবার শেষ সাদনান প্লেট রেখে আসে রান্না ঘরে।
প্রিয়তা তখন রুমে বড় দেওয়ালের সাথে বসানো আয়নাটায় নিজে কে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। সাদা টি-শার্ট সাথে ছাই কালার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।
খারাপ লাগছে না ভালোই লাগছে।
বলা যেতে পারে নাইকার মতোই লাগছে।

প্রিয়তা নিচের দিকে তাকিয়ে গায়ের গেঞ্জি টা হালকা উঁচু করে কোমড়ের কাছে প্যান্টা ঠিক করে মাথা তুলে আয়নায় তাকাতেই দেখা মিলে সাদনান বুকে হাত গুঁজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
প্রিয়তা সেটা দেখে তড়িঘড়ি করে গেঞ্জি টা টেনেটুনে ঠিক করে পেছন ফিরে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে

-“কখন এসছেন?”
-“এই তো যখন প,,,,
সাদনান আর কিছু বলতে পারে না।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে সাদনান এর মুখ চেপে ধরে নিজের ছোট হাতের সাহায্য।

আর সাদনান আস্তে আস্তে নিজের হাত জোড়া প্রিয়তার উন্মুক্ত কোমড়ে রাখে।
আসলে প্রিয়তা উঁচু হওয়ার কারণে ওর গায়ের গেঞ্জি টাও অনেক টা উপরে উঠে যায় তবে শরীর ঢেকে আছে।
কিন্তু সাদনান গেঞ্জি নিচ দিয়ে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে প্রিয়তার পেট।
আর এভাবে থেকেই সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে হেঁটে পাশের রুমে চলে আসে।
প্রিয়তা ততক্ষণে সাদনান এর গলা জড়িয়ে ধরে নেয়।
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে এসে লাইট টা অন করতেই প্রিয়তার চোখ ছানাবড়া।
পুরো রুম সুন্দর করে সাজানো।
শুধু সাদা গোলাপ ফুল দিয়ে।

প্রিয়তা অবাক হয়ে সাদনানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে
-“এসব কখন করেছেন?”
-“রাহান এসছিল সন্ধ্যা।
ওই করে দিয়েছে।”
সাদনান কথা শেষ করে প্রিয়তার গলায় মুখ গুঁজে অধর ছুঁয়ে দেয়।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
কিন্তু প্রিয়তা হঠাৎ ধরে আসা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“কাল বোম ছিল মিটিং এর জায়গায়?”
সাদনান শোনল অবাক হলো না।
বরং খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রিয়তার ঘাড়ে নাক ঘঁষে বলল
-“হুম।
রাহান বলেছে?”
-“না কাল রাতে আমি দাদু কে বলতে শুনেছি।”

আমার তুমি পর্ব ১৯

সাদনান আর কিছু বলে না বউ কে ভালোবাসায় আর নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শে পাগল করে।
আর আরও একটা মধুচন্দ্রিমা রাত পাড় করে।
যার সাক্ষী হয়ে থাকে দূর আকাশের চাঁদ যার আলো কাচের জানালা দিয়ে আসছে যেটা এই অন্ধকার এর মাঝেও তাদের রুম টা কে আলো দিয়ে আলোকিত করছে।

আমার তুমি পর্ব ২১