কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৯

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৯
নুজাইফা নূন

-” আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
-” তোমার সাথে রোমান্স করবো বলে ডার্লিং। রোমান্সের সময় কেউ নিশ্চয় দরজা খোলা রেখে রোমান্স করে না।
-“স্রোত আবদ্ধের এমন লাগামহীন কথা হজম করতে পারলো না। স্রোত চোখ বড়বড় করে বললো , কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছেন স্যার ?গাঞ্জা টাঞ্জা খাইছেন নাকি?”

-“তুমি নিজেই তো একটা আস্ত গাঁজার গাছ। তোমার দুচোখে গাঁজার চাষ করো। তাকালেই নেশা ধরে যায়। খাওয়া লাগে না‌ ডার্লিং।”
-“হায় আল্লাহ! কি সব আবোল তাবোল বকছেন আপনি। মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার?”
-” প্রতিত্তরে আবদ্ধ কিছু না বলে এক পা এক পা করে স্রোতের দিকে এগিয়ে গেল। স্রোত আবদ্ধ কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে এক পা এক পা করে পিছিয়ে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো, আপনি এইভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো?”
-“আপনি এগিয়ে আসছেন বলেই তো আমি পিছিয়ে যাচ্ছি বলতে বলতেই স্রোত ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে গেলেই আবদ্ধ দুহাতে স্রোতের কোমড় জড়িয়ে ধরে স্রোত কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আবদ্ধের স্পর্শ পেয়ে স্রোত যেনো জমে বরফ হয়ে গেল।তার হাত পা ক্রমশ অবশ হতে শুরু করলো।আবদ্ধ তখনো ঘোর লাগা দৃষ্টিতে স্রোতের কাঁপতে থাকা ওষ্টের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, নাউ আই ওয়ান্ট টু ড্রিঙ্ক দ্যা হানি অফ ইউর লিপস।”

-” মানে?”
-” আই ডোন্ট বিলিভ ইন ওয়ার্ডস ,আই বিলিভ ইন অ্যাকশন বলেই আবদ্ধ স্রোতের ওষ্টের সাথে নিজের ওষ্ট মিলিয়ে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় স্রোত।সে আবদ্ধের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেষ্টা করে। কিন্তু আবদ্ধের কাছে হার মেনে এক পর্যায়ে নিজেও আবদ্ধের ভালোবাসায় সিক্ত হয়। কিছুক্ষণ পর আবদ্ধ স্রোত কে ছেড়ে দেয়। স্রোত লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নেয়। ঠিক তখনি আবদ্ধ স্রোতের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

-” হে ইউ! সেই কখন থেকে ডেকে চলেছি।কথা কানে যাচ্ছে না তোমার।কি এতো ভাবছিলে তখন থেকে?”
-” আবদ্ধের কর্কশ কন্ঠস্বর শুনে ধ্যান ভাঙ্গে স্রোতের। কিছুক্ষণ আগে আঞ্জুম আরা বেগমের সাথে আবদ্ধ দুষ্টুমি করছিলো দেখে স্রোত সেখান থেকে সরে এসে মোবাইলে স্টার জলসার তোমাদের রানী সিরিয়াল দেখছিলো।সিরিয়ালে দুর্জয় আর রানীর রোমান্স দেখতে দেখতে কখন যে দুর্জয় রানীর জায়গায় নিজেকে আর আবদ্ধ কে কল্পনায় ভাবতে শুরু করেছে নিজেও বুঝতে পারে নি স্রোত। যখন বুঝতে পারে তখন স্রোত মনে মনে নিজেকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বললো,

-” ছিঃ ছিঃ ছিঃ! স্যারের সাথে এসব! ছিঃ ছিঃ। আল্লাহ আমার ম’র’ণ দাও।”
-” স্রোত কে বিড়বিড় করতে দেখে আবদ্ধ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।প্রায় বিশ মিনিট পর আবদ্ধ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখে স্রোত সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে।আবদ্ধ এক নজর ‌স্রোতের দিকে তাকিয়ে রেডি হতে শুরু করলো।যা দেখে স্রোত ফোঁড়ন কেটে বললো,

-” এই বলছিলেন আপনি আমাদের বাড়ি যাবেন না।এখন তো দেখছি শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য আপনার তর সইছে না।আমার আগেই রেডি হতে শুরু করছেন।”
-” আমি শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি না ওকে? প্রিন্সিপাল স্যার কল করেছিলো।আমাকে ভার্সিটি তে যেতে হবে।”

-” তাহলে কি আমার বাড়ি যাওয়া হবে না? কতোদিন হয়ে গেলো পাপা মম কে দেখি না।পাপা কে তো বলে দিয়েছি আজ আমরা ঐ বাড়িতে যাবো।এখন যদি আমরা না যাই।পাপা খুব কষ্ট পাবে।”
-” আমি কি একবারও বলেছি আমরা যাবো না?”
-” আপনি তো কলেজে যাচ্ছেন? তাহলে কি আমি একা যাবো?”
-” না। আমি যখন তোমার বাবা কে কথা দিয়েছি।তোমাকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো বলেছি।তখন আমরা দুজ‌ই যাবো। তুমি বাড়ি থাকো।আমি কাজ শেষ করে তোমাকে পিক করে নিবো।”

-” তাহলে তো আপনার ঝামেলা হবে স্যার। আমার জন্য আবার আপনাকে বাড়িতে আসতে হবে।তার চেয়ে বরং আমি ও আপনার সাথেই যাই। আপনার ভয় নেই।আপনি কলেজ থেকে বেশ খানিকটা দূরে আমাকে নামিয়ে দিবেন।আমি ঐ রাস্তা টুকু হেঁটে চলে যেতে পারবো।আপনি আপনার কাজ শেষ করবেন ।আর আমি ততক্ষণে নির্ঝর, ইশফা, বাবুইয়ের সাথে আড্ডা দিবো। তারপর আপনার কাজ শেষ হলে দুজনে একসাথে পাপার বাড়ি যাবো। আইডিয়া টা দারুন না স্যার?”

-” আইডিয়া ভালো।বাট তোমার রেডি হতে অনেক টা সময় লেগে যাবে। তাছাড়া সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে তোমার মেডিসিন নিতে হবে। সবমিলিয়ে আমার লেইট হয়ে যাবে।”
-” হ্যাঁ।এটা অবশ্য ‌ঠিক বলেছেন স্যার।তাহলে আপনি যান।আমি রেডি হয়ে আরুর সাথে আসছি।”
-” ঠিক আছে।আমি তাহলে আসছি। তুমি সাবধানে এসো বলে আবদ্ধ বেরিয়ে পড়ে। আবদ্ধের যাওয়ার পানে তাকিয়ে স্রোত বললো, ইশ্ মানুষ টা কতো ভাবে আমাকে নিয়ে।যতো দিন যাচ্ছে আমি মানুষ টার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। তবে কি আমার জীবনেও প্রেম আসতে চলেছে?”

-” স্রোত আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে আরফার রুমে গিয়ে দেখলো আরফা নেই।আরফা কে না পেয়ে স্রোত সালমা বেগমের কাছে এসে আরফার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন,
-” আরু তো কলেজে চলে গিয়েছে।তোমরা আজ ঐ বাড়িতে যাবে বলে আরু আর তোমাদের ডিস্টার্ব করে নি।”
-” সব‌ই তো ঠিকঠাক ছিলো মা।এখন আবার স্যারের ডাক এসেছে।স্যার কলেজে চলে গেলেন। স্যার কলেজ থেকে আবার কষ্ট করে আমাকে নিতে বাড়িতে আসবে।তাই আমি ভাবলাম আমি ও কলেজ যাই।তাহলে স্যারের আর কষ্ট করে আমাকে নিতে আসতে হবে না।”

-” দুজন‌ই তো চলে গেলো। তোমার একা একা যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি রেডি হয়ে এসো।আমি তোমার শ্বশুর কে কল করছি।তিনি তোমাকে ড্রপ করে দিবেন।”
-” না না।মা।তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি একা যেতে পারবো। তাছাড়া অনেক সময় আমি বাড়ি থেকে ও একা একা কলেজে গিয়েছি। কোনো সমস্যা হয় নি।আজ ও কোনো সমস্যা হবে না। একদিনের ই তো ব্যাপার।”

-” ঠিক আছে মা। সাবধানে যেও।”
-” ওকে মা বলে স্রোত উপরে এসে রেডি হয়ে সালমা বেগম, আঞ্জুম আরা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।আর ভাগ্যক্রমে তাড়াতাড়ি রিকশা ও পেয়ে যায় ।স্রোত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে রিকশায় বসে পড়ে‌। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর রিক্সাওয়ালার ফোন বেজে উঠে। তার স্ত্রীর লেবার পেইন উঠেছে শুনে তিনি আর স্থির থাকতে পারেন না।

স্রোত কে সেখানেই নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে গেলেই স্রোত তার হাতে এক হাজার টাকার পাঁচ টা চকচকে নোট গুজে দেয়।টাকা টা পেয়ে রিক্সা ওয়ালার চোখ খুশিতে ছলছল করে উঠে।তিনি প্রাণ ভরে স্রোতের জন্য দোয়া করে যান। মানুষ টার চোখে খুশির ঝিলিক দেখে স্রোতের ও চোখ ভিজে যায়।স্রোত চোখের পানি মুছে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই একজন মাস্ক পরা রিক্সাওয়ালা স্রোতের সামনে এসে দাঁড়ায়।

স্রোত ও কোনো কিছু না ভেবে রিক্সায় বসে পড়ে। কিন্তু কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্রোত লক্ষ্য করে রিক্সা অন্য কোন নির্জন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।যা দেখে তৎক্ষণাৎ স্রোতের মধ্যে ভয় জেঁকে বসে।স্রোত রিক্সা ওয়ালা কে বারবার রিক্সা থামাতে বলে। কিন্তু তার মধ্যে রিক্সা থামানোর কোনো হেলদোল দেখতে না পেয়ে স্রোত চলন্ত রিক্সা থেকে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।যার ফলস্বরূপ বেশ আঘাত লাগে স্রোতের।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৮

স্রোত ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে। স্রোত কি করবে বুঝতে পারে না। হুট করে স্রোতের ফোনের কথা মনে পড়ে।স্রোত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল লিস্টে গিয়ে এটিটিউড এর দোকানদার নামে সেভ করা নাম্বারে কল দিতে যাবে ,তার আগেই কেউ একজন পেছন থেকে স্রোতের মাথায় আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ স্রোতের হাত থেকে ফোন রাস্তায় পড়ে যাওয়ার সাথে স্রোত ও রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২০