কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৮
নুজাইফা নূন
-” হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে আমার পার্সোনাল জিনিস পত্রে হাত দেওয়ার?”
-” বাহ্ ! যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর?”
-” আমি কি তোমাকে চুরি করতে বলেছি? কেনো আমার জিনিস পত্রে হাত দিয়েছো?”
-“আমি তো আপনার উপকার করছিলাম স্যার। আজকে তো আমাদের পাপার বাড়ি যাওয়ার কথা।পাপা বলেছে আমরা যেন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ি।তাই তো আমি আমার লাগেজ গুছিয়ে রেখে ভাবলাম আপনার টাও গুছিয়ে দেই।এতে আপনার একদিকে কষ্ট কম হবে।আবার আমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে পারবো। কিন্তু কে জানতো আপনি আপনার কাপড় চোপড়ের মধ্যে ঐসব আজেবাজে জিনিস রেখে দেন। ছিঃ ছিঃ ! আমি আপনাকে ভালো মনে করেছিলাম স্যার। কিন্তু না! আপনি ও অন্য সবার মতো খারাপ লোক।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আশ্চর্য! এতে ছিঃ ছিঃ করার কি আছে?একে তো তুমি শর্টস টা আমার মুখের উপর ছুড়ে ফেলে দিয়েছো।এখন আবার আমাকেই অপমান করছো?আমি খারাপের কি করেছি শুনি ? বলো কি করেছি?”
-” স্রোতের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবদ্ধ দুহাতে স্রোতের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে এনে হগ করে বললো, এভাবে হাগ করেছি?”
-” না!”
-” স্রোতের না শুনে আবদ্ধ তৎক্ষণাৎ স্রোতের অধরে নিজের অধর ছুঁয়ে দিয়ে বললো এভাবে কিস করেছি?”
-” না?”
-” আবদ্ধ স্রোতের মুখ দুহাতে উঁচু করে স্রোতের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে দিয়ে বললো,
-” এভাবে বাজে ইশারা করেছি?”
-“স্রোত তোতলাতে তোতলাতে বললো কি কি কিছু করেন নি স্যার।”
-” তাহলে কিসের ভিত্তিতে তুমি আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ তুললে?”
-” আমি কিছু করি নি স্যার।সব বাবুইয়ের দোষ। বাবুই সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে আমাকে এই বাজে আইডিয়া দিয়ে গিয়েছে।তাই আপনার যা ধমকানোর বাবুই কে গিয়ে ধমকান।”
-” যতো দোষ আরু ঘোষ। আমি মেনে নিলাম আরু বলেছে বলে তুমি এই ভুল টা করেছো। কিন্তু বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত তুমি যা যা ভুল করেছো,সব গুলোই কি তোমাকে আরু করতে বলেছিলো? আরু বলেছিলো তোমাকে ওয়াশরুমে ঘুমোতে, বেডরুমে চেঞ্জ করতে, আমাকে কা’ম’ড়ে র’ক্ত বের করে দিতে ? কি হলো? উত্তর দিচ্ছো না কেন? এমনি সময় তো তোমার মুখ রকেটের গতিতে ছুটে চলে।এখন কুলুপ এঁটেছে কেন মুখে? তুমি যদি ভেবে থাকো চুপ করে থেকে তুমি পার পেয়ে যাবে।তবে সেটা ভুল ভাবছো।আমার প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত তুমি এখান থেকে এক পা ও নড়তে পারবে না।”
-” স্রোত বুঝতে পারলো আজ তার রক্ষা নেই।স্রোত চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহকে বললো, হে আল্লাহ এ যাত্রায় বাঘের হাত থেকে আমার মতো বিড়াল কে বাঁচিয়ে দাও। বিশ্বাস করো আর জীবনে ও স্যারের মুখোমুখি হবো না।আমি সারাক্ষণ মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকবো। তবু ও আমাকে রক্ষা করো আল্লাহ।
স্রোত টিপটিপ করে এক চোখ খুলে দেখলো আবদ্ধ তার দিকে হিংস্র দানবের মতো তাকিয়ে রয়েছে।স্রোত আবদ্ধের সামনে থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজে বের করতে লাগলো। কিন্তু কোনো রাস্তা খুঁজে না পেয়ে সিনেমার মতো মা তুমি এখানে বলে দৌড়ে ছুটে পালাতে গেলেই দরজার সাথে আঘাত লেগে ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করতে শুরু করে দিলো।আবদ্ধ স্রোতের কান্না দেখে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে এসে স্রোত কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
-“তুমি কোন ধাতুর তৈরি বলো তো?আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আমার থেকে তোমাকে পালাতে হচ্ছিলো?হলো তো এখন।ব্যাথা কে পেলো শুনি?যাক ভালোই হয়েছে।আমি বাবা কে কল করে বলে দিচ্ছি , আপনার মেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।আমরা আজ আসতে পারছি না।”
-” একদম ই নয় স্যার।আমার কিছু হয় নি।আমি একদম সুস্থ্য আছি বলে স্রোত বিছানা থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে বললো, এই দেখুন আমি হেঁটে বেড়াচ্ছি।”
-“তাহলে একটু আগে যে কান্না করলে?”
-” এটা ঢং করে করেছিলাম স্যার।আপনি জানেন না মেয়েরা জন্মগত ঢঙ্গী হয়? মেয়ে হয়ে একটু আধটু ঢং না করলে হয় বলুন?”
-” আবদ্ধ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আঞ্জুম আরা বেগম এসে বললো, সুন্দরী বউ পেয়ে এই বুড়ির কথা ভুলে গিয়েছো দাদুভাই?সেই ৭ টা বাজে তোমাকে রুমে আসতে দেখেছি।আর এখন প্রায় ৯ টা বাজতে চললো।বউয়ের সাথে গল্প করার জন্য সারারাত সময় পেয়েছো। তবু ও দিনে এসেও এতো কিসের আলাপ করছো দাদুভাই?”
-” বলো কি? এতো বেলা হয়ে গিয়েছে আর আমি টের ও পেলাম না।”
-” নতুন নতুন বিয়ের পর এমন হয় দাদুভাই।তখন চারিপাশের সবকিছু রঙ্গিন হয়ে উঠে। মনে হয় ঘড়ির কাঁটা যদি কিছু সময়ের জন্য থেমে যেতো।তাহলে প্রিয় মানুষটার সাথে আরো কিছু মূহূর্ত স্বরণীয় হতো।যাই হোক নিচে আসো। তোমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।”
কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৭
-” আবদ্ধ আঞ্জুম আরা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বললো , তুমি যাও।আমি স্রোত কে নিয়ে আসছি।”
-” ঠিক আছে বলে আঞ্জুম আরা বেগম আবদ্ধের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তিনি যেতেই আবদ্ধ দরজা বন্ধ করে দিয়ে নেশা ভরা দৃষ্টিতে স্রোতের দিকে তাকিয়ে রইলো।
