কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৭

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৭
নুজাইফা নূন

-“আবদ্ধের কথায় স্রোতের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।স্রোত কি করবে বুঝতে না পেরে আবদ্ধের বক্ষে যেখানে স্রোত বাইট বসিয়েছিলে সেখানে গভীর ভাবে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে পরপর কয়েকটা চুমু দিয়ে বললো , সরি স্যার।আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি।আমি আমার অজান্তেই আপনাকে আঘাত গিয়ে ফেলেছি।

আমি কথা দিচ্ছি আর এখনো এমন হবে না।আপনি যদি না চান আমি আর আপনার সাথে এক‌ই বিছানায় থাকবো না।প্রয়োজনে বাবুই বা দাদুর সাথে থাকবো। তবু ও আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। আপনার রাগী বদমেজাজি চেহারা দেখতে একদম ই ভালো লাগে না। স্রোতের এহেন কার্যে আবদ্ধের রাগ যেন পানি হয়ে গেলো।সে স্রোত কে কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে ড্রয়ার থেকে মলম বের করে ক্ষতস্থানে লাগাতে গিয়ে লাগাতে পারলো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যা দেখে স্রোত বিছানা থেকে নেমে এসে গুটি গুটি পায়ে আবদ্ধের দিকে এগিয়ে এসে আবদ্ধের হাত থেকে মলম নিয়ে নিজের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের উপর ভর করে আবদ্ধের ক্ষতস্থানে মলম লাগিয়ে দিয়ে ফুঁ দিতে লাগলো।যাতে ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া না করে। মলম লাগানো শেষ হলে আবদ্ধ স্রোত কে কিছু না বলে পুনরায় বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। আবদ্ধের দেখাদেখি স্রোত ও তার থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।দুজনের নিরবতার মধ্যে দিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দুজনেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।”

-” ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল আবদ্ধের।আবদ্ধ চোখ খুলে বুঝতে পারলো গতকালের মতো আজ ও স্রোত তার বুকের উপর রয়েছে।আবদ্ধ স্রোত কে নামাজের জন্য ডেকে দিতে নিজেও ফ্রেশ হয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরে মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদে চলে গেল। আবদ্ধের যাওয়ার পানে তাকিয়ে স্রোত আবারো ব্লাংকেটের তলায় ঢুকে গেল।আর তখনি আরফা এসে স্রোত কে জোড় করে বিছানা থেকে উঠিয়ে স্রোতের দুই হাত ধরে নাচতে নাচতে গাইতে শুরু করলো ,

-” যত কথা রাখা ছিল এই বুকে জমা
যত কথা রাখা ছিল এই বুকে জমা
তোমাকে জানিয়ে দিলাম ও প্রিয়তমা
তোমাকে জানিয়ে দিলাম ও প্রিয়তমা।
আমার আকাশ নীলে তুমি যে নীলিমা
আমার আকাশ নীলে তুমি যে নীলিমা
তোমাকে জানিয়ে দিলাম ও প্রিয়তমা
তোমাকে জানিয়ে দিলাম ও প্রিয়তমা।
ও প্রিয়তমা ও প্রিয়তমা
ও প্রিয়তমা আমার প্রিয়তমা।
যতনে তোমাকে রেখে এই মনে লুকিয়ে
ভালোবেসে ভেসে যাবো সব পথ পেরিয়ে
যতনে তোমাকে রেখে এই মনে লুকিয়ে
ভালোবেসে ভেসে যাবো সব পথ পেরিয়ে
মনের ওজনে ভেসে যাবে পূর্ণিমা
মনের ওজনে ভেসে যাবে পূর্ণিমা
তোমাকে জানিয়ে দিলাম ও প্রিয়তমা
তোমাকে জানিয়ে দিলাম ও প্রিয়তমা।

-” আরফা কে এর আগে এতো খুশি কখনো হতে দেখে নি স্রোত।তাকে সকাল সকাল এতো খুশি দেখে স্রোতের মন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।স্রোত আরফা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” কাহিনী কি বাবুই? সকাল সকাল এতো খুশি লাগছে তোকে। স্বপ্নে রাজপুত্র এসেছিলো নাকি ?”
-” আজ আমি যে কতো খুশি হয়েছি,তোকে বলে বোঝাতে পারবো না বাবুই। রাতভর অপেক্ষা করেছি।কখন সকাল হবে ।আর কখন আমি আমার খুশি তোর সাথে ভাগ করে নিতে পারবো।টু ডে আ’ম সো হ্যাপি বাবুই।সো হ্যাপি।”
-” হেঁয়ালি না করে বল তো কি হয়েছে?”

-” বলবো বলবো। সময় হলে সব বললো।তবে একটু জেনে রাখ যার আশায় আমি এতো গুলো বছর পথ চেয়ে বসে ছিলাম।সেই মানুষটা আমার হতে যাচ্ছে।আমি এতো সুখ কোথায় রাখবো বল তো?”
-” তোকে খুশি দেখে বড্ড ভালো লাগছে আমার। সারাজীবন যেন তুই এভাবেই হাসিখুশি থাকতে পারিস‌।তোকে যেন কোনো দুঃখ না ছুঁতে পারে।”

-” তুই ও অনেক সুখী হবি বাবুই।ভাইয়া টিচার হিসেবে যতোটা কড়া হাজবেন্ড হিসেবে ততটাই সফট, কেয়ারিং।ভাইয়া তোকে কখনো অবহেলা করবে না।তোকে অনেক ভালোবাসবে।”
-” আরফার কথা শুনে স্রোতের লজ্জা লাগতে শুরু করলো।স্রোত আরফার কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
আজ তো আমি বাড়িতে যাবো। তোকে খুব মিস করবো বাবুই। তুই চল না আমার সাথে। খুব মজা হবে।”

-” আরফা মনে মনে বললো তোর সাথে যেতে পারলে আমারো ভালো লাগতো। কিন্তু আমি তোদের সাথে গেলে তুই সবসময় আমার সাথে থাকবি। আমাকে সময় দিবে।এতে তোদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হবে।আমি চাই না আমার জন্য তোদের দূরত্ব সৃষ্টি হোক।তোরা দুজনে যতো নিজেদের কে সময় দিবি ,ততো একে অপর কে চিনতে পারবি , জানতে পারবি।একে অপরের কে ফিল করতে পারবি।আমি তোদের সাথে থাকলে এটা সম্ভব হবে না।তাই আমার ইচ্ছা থাকলেও আমি যেতে পারছি না।সরি বাবুই।আমাকে ক্ষমা করে দিস।আরফা কে চুপ থাকতে দেখে স্রোত আবারো বললো, কিছু বলছিস না কেন বাবুই? যাবি আমাদের সাথে?”

-” না রে বাবুই।আমার শরীর টা ঠিক লাগছে না। সারারাত ঘুম হয়নি তো।মাথা ব্যথা করছে। তুই আর ভাইয়া গিয়ে ঘুরে আয়। আত্মীয়তা যখন হয়েছে তখন কোন না কোন একদিন তোর ননদিনী হিসেবে তোর বাপের বাড়ি যাবো। তারপর সবাই মিলে খুব আনন্দ করবো।”
-” ঠিক আছে।মনে থাকে যেন।”
-” খুব করে মনে থাকবে বাবুই। তোরা তো ব্রেকফাস্ট করেই র‌ওনা হবি তাই না?”
-” হ্যাঁ।”

-” তাহলে তুই বরং এক্ষুনি তোর কাপড় চোপড় গোছগাছ করে রেখে দে।ভাইয়ার কাছে সময়ের মূল্য অনেক বেশি।দেখা গেল দেরি হলে তোর কাপড় চোপড় রেখেই চলে গেলো।”
-” হ্যাঁ ঠিক বলছিস।আমি এক্ষুনি আমার কাপড় চোপড় গুছিয়ে রাখছি।”

-” আচ্ছা তাহলে তুই তোর কাজ কর।আমি মাকে গিয়ে রান্নার কাজে সাহায্য করি বলে আরফা নিচে চলে এলো।আরফা বেরিয়ে আসতেই স্রোত ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে লাগেজ নিয়ে নিজের কাপড় চোপড় গুছিয়ে রেখে বললো আমার কাপড় চোপড় গোছগাছ করা তো শেষ হয়ে গেলো।আমি বরং স্যারের কাপড় চোপড় ও গুছিয়ে রেখে দেই।তাহলে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারবো।পাপা মম কে দেখতে পারবো।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৬

মাত্র দুই টা দিন তাদের দেখি না। অথচ মনে হচ্ছে কতো বছর তাদের দেখা নেই।যাই আমি কার্বাড থেকে স্যারের কাপড় গুলো নিয়ে আসি বলে স্রোত কার্বাড খুলে অনেক গুলো প্যান্ট শার্ট নিয়ে এসে বিছানার উপর রেখে লাগেজে একটা একটা করে ভাঁজ করে রেখে দিলো।শার্ট প্যান্ট ভাঁজ করার এক পর্যায়ে কাপড়ের ভাঁজ থেকে একটা শর্টস বেরিয়ে আসে। স্রোত সেটাকে হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে ছিঃ ছিঃ বলে ছুড়ে ফেলে দিতেই সেটা গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আবদ্ধের মুখে পড়ে।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৮