আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৭

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৭
Raiha Zubair Ripte

-“ মিস অধরা আপনি কাঁদছেন কেনো?
অধরা ছাঁদে দাঁড়িয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছিলো। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে আগামী মাসের ১০ তারিখে বিয়ে। আজ থেকে ঠিক ১২ দিন পর। কথাটা শোনামাত্র অধরার বুক ফেটে কান্নাগুলো বেরিয়ে আসছিলো। তৃষ্ণা কে তাড়া দিয়ে ফোন কেটে ছাঁদে চলে আসে। বাড়িতে কেউ নেই এখন মন খুলে চিৎকার করে কাঁদতে পারবে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হঠাৎ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অধরা। আকাশের পানে তাকিয়ে বলে উঠল-

-“ বিধাতার তরে আপনাকে চাওয়া তো কোনো কমতি আমি রাখি নি তুষার ভাই তবুও কেনো বিধাতা এমন নিষ্ঠুরতম কাজ করলো আমার সাথে? একই শহরে,একই বাড়িতে থাকছি অথচ আপনার শহরে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধকরণ করা হলো। কেনো বলতে পারেন? ভালবাসলে এতো কষ্ট পেতে হয় কেনো বলুন না?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হৃদপিণ্ডটা ক্রমাগত কেউ ধারালো ছু’রি দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলছে, আপনাকে অন্যের পাশে দেখলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে টাও ম-রে যাচ্ছে। আপনাকে পাবো না জানলে কখনই আপনাকে ভালোবাসার মতো দুঃসাহস আমি দেখাতাম না। চোখ দুটো অনেক অবাধ্য জানেন তো আপনার কথা মনে আসলেই কারনে অকারণে পানি গড়িয়ে পড়ে। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি বলবো এই আপনাকে আমি প্রচন্ড রকমের ভালোবেসেছিলাম আর এখনও বাসি।

অধরা তড়িঘড়ি করে পাগলের ন্যায় উঠে বসলো। অবস্থা তার বিধ্বস্ত। ওড়নার শেষ অংশ টুকু দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো। পেছন ঘুরে দেখলো রাতুল ছাঁদের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল কে এই সময় বাসায় দেখে ভীষণ অবাক হয় অধরা। অধরা কে কিছু বলতে না দেখে রাতুল আবার বলে উঠে –

-“ আপনি কাঁদছিলেন কেনো মিস অধরা?
অধরা কিছুটা ভয় পেলো। কান্না করার সময় কি রেখে কি বলে ফেলছে সেটা যদি রাতুল শুনে থাকে আর তুষার কে যদি বলে দেয় তখন তো আরেক বিপত্তি।
-“ আ আমি কান্না করি নি।
রাতুল স্পষ্টতার সাথে বলল-

-“ আমি কান্নার শব্দ শুনেছি। আর ছাঁদে এসে কান্না করতেও দেখলাম তবুও মিথ্যা কেনো বলছেন? আপনার আম্মাকে খুব মনে পড়ছে?
অধরা মাথা উপর নিচু করে জানালো হ্যাঁ। রাতুল স্মিত হেঁসে বলে-
-“ আম্মার কথা মনে পড়লে এভাবে কাঁদবেন না মিস। আপনার আম্মা উপর থেকে দেখে কষ্ট পাবে। নামাজ পড়ে দোয়া করবেন,মনে থাকবে?
অধরা মাথা নিচু করে জবাব দেয়-

-“ হুমম।
-“ আচ্ছা এই প্যাকেট টা নিন। তুষার আসলে দিয়ে দিবেন। এটা দিতেই এসেছিলাম আপনাকে।
অধরা অবাক হয়ে বলে-
-“ আমাকে?
-“ হুমম। তুষার বললো আপনি বাসায় আছেন। তাদের সাথে যান নি,আপনার কাছে যেনো দিয়ে যাই।
-“ আচ্ছা ভাইয়া আসলে দিয়ে দিব।
-“ আজ আসি তাহলে।
-“ জ্বি।

রাতুল উল্টো ঘুরে ফের কিছু একটা মনে পড়তেই আবার সামনে ঘুরে।
-“ মিস অধরা আপনাকে একটা কথা বলি?
-“ জ্বি বলুন।
-“ কখনও ঐ চোখ জোড়া থেকে খুব সহজে জল গড়িয়ে পড়তে দিবেন না। ওটা অনেক মূল্যবান।
রাতুল চলে গেলো। অধরা রাতুলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। রাতুল দৃষ্টি সীমার বাহিরে যেতেই হাতে থাকা প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে আসে।

তৃষ্ণা গাড়ির ভেতর বসে মা দাদির সাথে বকবক করে চলছে। তুষারের বিয়েতে কি করবে কিভাবে সাজবে সব। রাফি ড্রাইভ করছে আর লুকিং গ্লাসে তৃষ্ণা কে দেখে চলছে। অন্য গাড়িতে তুষার তার বাবা চাচা আর দাদা। তৃষ্ণা কথা বলার সময় লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতেই দেখে রাফি তাকিয়ে আছে।
-“ রাফি ভাই সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালান লুকিং গ্লাসে না তাকিয়ে।

রাফি দৃষ্টি সরালো। গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলো। তৃষ্ণা তাকে ভালোবাসে কথাটা জানার পর থেকেই রাফির ইচ্ছে করছে তৃষ্ণা কে সামনে বসিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে। উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে- কবে কবে কেঁদেছ আমার জন্য। কিন্তু পারছে না। তুষারের বিয়ে টা হলেই নিজের মনের কথা তৃষ্ণা কে জানাবে। তারপর? তারপর একদম নিজের করে নিবে।

চিত্রা নিজের রুমে বসে লজ্জায় লাল নিল হচ্ছে। কয়েকদিন পর তার বিয়ে কথাটা মনে পড়তেই লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে। চয়নিকা বেগম মেয়ের রুমে এসে মেয়েকে এমন লজ্জা পেতে দেখে বলে-
-“ কয়েক দিন আগেই না বলছিলি বিয়ে করবি না এ ছেলে কে তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো?
চিত্রা মুখটাকে স্বাভাবিক করলো।

-“ আগে ছিলাম না রাজি তাতে কি এখন তো আমি রাজি।
-“ সেজন্য ই তো জানতে চাইছি হঠাৎ কি এমন হলো।
-“ ম্যাজিক হয়েছে মা ম্যাজিক।
-“ কিসের ম্যাজিক?
-“ ব্লাক ম্যাজিক। তুষার খাঁন আমায় ব্লাক ম্যাজিক করেছে।
-“ সেটা কি?
-“ উফ মা কালো যাদু।
-“ সত্যি?

-“ আমি কি মিথ্যা বলি বলো? তুষার খাঁন এমন যাদু টোনা করলো যে আমি নাই করতে পারলাম না।
-“ যাক যাই করে হোক রাজি তো হলি এটাই অনেক।
-“ হুমম আমি ভদ্র মেয়ে তোমাদের, তাই চুপচাপ মেনে নিয়েছি।
-“ হুম আমার লক্ষী মেয়ে, আমাদের জ্বালিয়েছো এবার ও বাড়ি গিয়ে জ্বালাবে। কাপড় পাল্টে খেতে আয়।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে খাঁন বাড়ির সবাই। তানিয়া বেগম চা বানিয়ে সবার হাতে হাতে দিলো। তরিকুল খাঁন চায়ে চুমুক দিয়ে বলল-

-“ তুষারের বিয়ের পর অধরা দিদি ভাই এর বিয়ের সিরিয়াল তারপর….
-“ তারপর না দাদু তার আগেই আমার বিয়ের সিরিয়াল, ব্রো এর পর।
রাফির কথা শুনে সামির খাঁন কেশে উঠে। তরিকুল খাঁন হেঁসে বলে-
-“ আর একটু বড় হও। বছর দু এক যাক।
রাফি ভ্রু কুঁচকালো।

-“ আমি কি বড় হই নি? আজ বিয়ে দিলে কাল বাচ্চার বাপ হবো।
-“ পছন্দের কেউ আছে নাকি?
রাফি তৃষ্ণার দিকে তাকালো। তৃষ্ণা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে জবাব দিলো-
-“ হ্যাঁ আছে। ব্রো এর বিয়ের জন্য বলতে পারছি না।
-“ কোন বংশের মেয়ে?

-“ উচ্চ বংশের ই মেয়ে প্যারা নিয়ো না পছন্দ হবে তোমাদের।
তৃষ্ণার মনটা আবার ছোট হয়ে গেলো। লোকটা আবার কাকে পছন্দ করে?
-“ বয়স তো কম হচ্ছে না তোর, তুষারের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অথচ তুই বিয়ে নিয়ে কিছু বলছিস না,কিন্তু কেনো? বিয়ে কি করবি না? নাতিনাতনির মুখ দেখবো না আমি?
রাতুল বাসায় আসতে না আসতেই তার মা রোমিলা বেগম কথাটা বলে উঠে। রাতুল তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-
-“ আহ মা রোজ রোজ এই বিয়ে নিয়ে কথা শুনতে শুনতে কান টা পঁচে গেলো। মনমতো মেয়ে পাই নি পেলে জানাবো।

-“ কেমন মেয়ে পছন্দ বল আমি খুঁজছি।
-“ সাদাসিধে সাংসারিক মেয়ে। খুঁজে পেলে জানিয়ো। এবার খেতে দাও ক্ষিদে পেয়েছে।
রোমিলা বেগম খাবার বেড়ে দিলো। রাতুল চুপচাপ খাবার খেলো। রোমিলা রহমান ঘটককে ফোন দিয়ে বলে দিলো এমন মেয়ে খোঁজার জন্য।
-“ ভাইয়া আসবো?
তুষার ল্যাপটপে কাজ করছিলো। অধরার কথা শুনে দরজার পানে চেয়ে বলে-
-“ হুমম আয়।

-“ রাতুল ভাই প্যাকেট টা দিয়ে গেছে। আপনায় দিতে বলেছে।
-“ ওহ্ হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম এটার কথা। ধন্যবাদ এনে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
অধরা একপলক তুষারের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তুষারের ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করে লেখা চিত্রা সাথে ব্লাক লাভ ইমোজি।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৬

দুমড়ে মুচড়ে উঠলো অধরার বুক। মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না আর,অন্যের দখলদারি সে। তার সবটা জুড়ে বিস্তার থাকবে চিত্রা নামক রমণীর। তার সুখ দুঃখ ভালোবাসা সবটার অংশীদারি অন্য কেউ। তুষার ফোন টা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। অধরা সেদিকটায় একবার চেয়ে বিরবির করে বলে-
-❝ অতঃপর শখের পুরুষ আপনি আমার হৃদয়ে থাকবেন আর অন্য কারো ভাগ্যে। ❞

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৮