কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৬

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৬
নুজাইফা নূন

-” স্রোত আবদ্ধ দুজনে হানিমুনে কক্সবাজারে এসেছে।তারা সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ কক্সবাজারের ইনানী বিচ সংলগ্ন ইনানী বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পা নামের একটা হোটেলে উঠে। তাদের কে কাপল বেডের বেশ পরিপাটি একটা রুম দেওয়া হয়।স্রোত রুমে প্রবেশ করেই এতো সুন্দর ডেকোরেশন করা পরিপাটি রুম দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।

হোটেলের ‌মালিক আবদ্ধের বাল্যকালের বন্ধু ।তিনি জানতো স্রোত আবদ্ধ সদ্য বিবাহিত কাপল।স্রোত আবদ্ধের বিয়েটা যেহেতু লোক জানাজানি হয় নি ।তাই তাকে বিয়েতে ইনভাইট করতে পারে নি। হুট করে সাইফুল ভূঁইয়া আবদ্ধের হাতে কক্সবাজারের টিকিট ধরিয়ে দেয়।আবদ্ধ সাইফুল ভুঁইয়ার কথা অমান্য করতে পারে না।তাই আবদ্ধ তার বাল্যকালের বন্ধু কে ইনফর্ম করে দেয় তার হোটেলে উঠবে বলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এতে বাইরের লোক জানতে পারবে না।আবার তাদের হানিমুন সাকসেসফুল হবে। হোটেল কর্তৃপক্ষ স্রোত আবদ্ধ কে সারপ্রাইজ দিতে রুমের মধ্যে ক্যান্ডেল লাইট জ্বালিয়ে , ফুল , বেলুন দিয়ে ডেকোরেশন করেছে। বাথটাবে ও গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিছানায় বড় করে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে লাভ সেইভ করে তার মধ্যে স্রোত + আবদ্ধ লিখে রেখেছে। সব মিলিয়ে মোহনীয় , রোমান্টিক একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। স্রোত এতো আয়োজন দেখে খুশিতে আবদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে বললো,

-” আমার কাছে সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগছে স্যার। থ্যাংক ইউ । থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার।লাভ ইউ বলে স্রোত আবদ্ধের দুই গালে দুইটা চুমু দেয়।”
-” থাক এতো আদর ভালোবাসা দেখাতে হবে না।আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। অনেক ঘোরার , অনেক কিছু দেখার বাকি আছে ডার্লিং। তুমি দেখবে আমাদের এই কক্সবাজার হানিমুনের প্রত্যেক টা মূহুর্ত স্বরণীয় হয়ে থাকবে।”
-” আমরা কোথায় কোথায় ঘুরবো স্যার ।”

-“সব জায়গায়। আপাতত আজকে কোথাও যাচ্ছি না।তিন থেকে চার ঘণ্টা জার্নি করে এসে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আগামীকাল আমরা সব জায়গায় ঘুরে দেখবো। অনেক ইনজয় করবো।”
-” ঠিক আছে স্যার।আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি।”
-” হ্যাঁ যাও। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসলে আমি ও ফ্রেশ ‌হবো।”

-” স্রোত আবদ্ধ দুজনে ফ্রেশ হয়ে দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বারবিকিউ ডিনারের আয়োজন করেছে।একটার পর একটা চমক দেখে স্রোত আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।এমনকি তাদের হানিমুন যাতে আরো রোমাঞ্চকর হয়ে উঠে সেজন্য তারা যে টেবিলে বসে ডিনার করবে সেই টেবিলে ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে।আবদ্ধ টেবিলের উপর থেকে একটা ফুল নিয়ে রিসোর্টে থাকা কাপলদের সামনে স্রোত কে প্রপোজ করে।স্রোত আবদ্ধের হাত থেকে ফুল নিয়ে লজ্জায় আবদ্ধের বুকে মুখ লুকায়। রিসোর্টে থাকা কাপলদের করতালি তে মুখরিত হয়ে উঠে চারিপাশ।আর তখনি আবদ্ধের বাল্যকালের ফ্রেন্ড অর্নব এসে আবদ্ধ কে হাগ করে বললো,

-” ব্রো‌ তুই তো অনেক ভালো গান গাইতিস আজকের এই মুহূর্ত কে আরো রঙ্গিন করে তুলতে একটা গান হয়ে যাক।প্লিজ না করবি না কিন্তু।”
-” ঠিক আছে ব্রো। তুই আমাদের জন্য এতো কিছু করলি।আর আমি তোর এই সামান্য রিকোয়েস্ট রাখবো না।এটা হয় বল?”
-” ইয়াহু।মিয়া বিবি রাজি তো কিয়া কারে গা কাজি।এই ল গিটার । শুরু কর গান।”

-” আবদ্ধ গিটারে সুর তুলে গাইতে শুরু করলো,
-“দিল ইবাদাত কার রাহা-হে
ধারকানে মেরি ছুন
তুঝ-কো মে কার-লু হাছিল
লাগি-হে এহি ধুন।
জিন্দেগী-কি শাখ-ছে লু
কুছ হাছি পাল লে চুন
তুঝ-কো মে কার-লু হাছিল
লাগি-হে এহি ধুন… ((২)))

জো-ভি জিতনে পাল জিয়্যু
উনহে তেরে ছাং জিয়্যু
জো-ভি কাল হো আব মেরা
উছে তেরে ছাং জিয়্যু।
জো-ভি ছাছে মে ভারু
উনহে তেরে ছাং ভারু
চাহে জো হো রাছতা
উছে তেরে ছাং চালু ।

দিল ইবাদাত কার রাহা-হে
ধারকানে মেরি ছুন
তুঝ-কো মে কার-লু হাছিল
লাগি-হে এহি ধুন।

মুঝকো দে তু মিট জানে
আব খুদ-ছে দিল মিল জানে
কিউ হে এ ইতনা ফাছলা?
লামহে এ ফির না আনে
ইনকো তু না দে জানে
তু মুঝপে খুদকো দে লুটা
তুঝে তুঝছে তোড়-লু
কাহি খুদ-ছে জোর লু
মেরে জিছম-ও-জান মে আ
তেরি খুছবু ওড় লু
জো-ভি ছাছে মে ভারু
উনহে তেরে ছাঙ ভারু
চাহে জো হো রাছতা
উছে তেরে ছাঙ চালু ।
দিল ইবাদাত কার রাহা-হে
ধারকানে মেরি ছুন
তুঝ-কো মে কার-লু হাছিল
লাগি-হে এহি ধুন….”

-” আবারো করতালি তে মুখরিত হয়ে উঠলো চারিপাশ। আবদ্ধের গান শুনে স্রোত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।সে ভাবতেও পারে নি আবদ্ধ এতো ভালো গান গাইতে পারে। আবদ্ধ যখন গাইছিলো স্রোত পুরোটা সময় আবদ্ধের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কয়েক বার চোখাচোখি ও হয়েছে তাদের। আবদ্ধের সাথে স্রোতের চোখাচোখি হতেই লজ্জা পায় স্রোত।তার লজ্জা আরো বাড়িয়ে দিতে আবদ্ধ চোখ টিপ মেরে দেয়।

আবদ্ধের গান শেষ হলে কাপলরা যার যার মতো চলে যায়।আর তখনি স্রোত আবদ্ধের দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে আবদ্ধের গালে চুমু দেয়। আবদ্ধ ও দুহাতে স্রোত কে আঁকড়ে ধরে।এর‌ই মধ্যে তাদের ডিনার রেডি হয়ে যায়।ওয়েটার এসে তাদের টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়ে যায়। স্রোতের প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছিলো।তার উপর আবার তার ফেভারিট বারবিকিউ দেখে স্রোত আর লোভ সামলাতে পারে না। স্রোত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে প্লেট থেকে চিকেন বারবিকিউ নিয়ে সবে মাত্র একটা বাইট দিয়েছে আর তখনি আবদ্ধ ও মাগো বলে চিৎকার করে উঠে। আবদ্ধের চিৎকার শুনে স্রোত তড়িঘড়ি করে উঠে বেড সুইচ অন করে দিয়ে বললো,

-” আরে আমি এখানে কেন? আমি তো কক্সবাজার ইনানী বিচ রিসোর্টে ছিলাম।আপনি কতো সুন্দর গান করছিলেন।কতো রোমান্টিক সিন হচ্ছিলো। ঠিক সিনেমায় যেমন টা দেখতাম। আমি সবে মাত্র একটা চিকেন বারবিকিউ নিয়ে তাতে বাইট দিয়েছে । আর তখনি আপনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন।আমার তো রিসোর্টে ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা বেডে থাকার কথা। কিন্তু এ আমি কোথায় রয়েছি? আর চিকেন বারবিকিউ ক‌ই গেলো?”
-” আবদ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে তার বক্ষের দিকে ইশারা করে বললো , এই দেখো চিকেন বারবিকিউ এখানে।যেখানে তুমি বাইট বসিয়েছিলে।”

-” স্রোত লক্ষ্য করলো আবদ্ধের বক্ষ থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে। স্রোত দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কা’ম’ড়ে বললো , ও মাই গড! তার মানে সবটা আমার স্বপ্ন ছিলো।আমি স্বপ্নে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম। ছিঃ ছিঃ আমি চিকেন বারবিকিউ মনে করে স্যারের বক্ষে বাইট বসিয়েছি। ইশ্ ব্লিডিং হচ্ছে। মানুষ টা আমার জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে।তার কষ্টের কথা ভাবতেই চোখ ভিজে উঠলো স্রোতের।যা দেখে আবদ্ধ বললো,
-” কি হলো? চিকেন বারবিকিউ খেতে পারো নি বলে মন খারাপ হয়েছে বুঝি?কা’ম’ড়ে তো মাংস প্রায় উঠিয়ে নিয়েছো।”

-” সরি স্যার।আমি বুঝতে পারি নি।আমি ভেবেছিলাম আমি সত্যি সত্যি চিকেন বারবিকিউ খাচ্ছি।কে জানতো আমি চিকেন বারবিকিউ ভেবে আপনার বক্ষে বাইট বসিয়ে দিয়েছি।আমি এক্ষুনি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি স্যার বলে স্রোত বিছানা থেকে নামতে গেলেই আবদ্ধ স্রোতের হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বললো ,
-” থাক হয়েছে।জুতা মে’রে গরু দান করার কোনো প্রয়োজন নেই।আমার মলম আমি লাগিয়ে নিতে পারবো ‌। তুমি চুপচাপ ঘুমাও।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৫

-” আবদ্ধের কথায় স্রোতের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।স্রোত কি করবে বুঝতে না পেরে আবদ্ধের বক্ষে যেখানে স্রোত বাইট বসিয়েছিলে সেখানে গভীর ভাবে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৭