প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৯

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৯
তানিশা সুলতানা

“প্রেমিকা তুমি ভালো থেকো
আমার অপেক্ষার মৃত্যু হোক”
চোখের কোণে জমে থাকা এক ফোঁটা পানি বা হাতের বুড়ো আঙুলে মুছে নিয়ে বিরবির করে বলে ইশান। দীর্ঘ দুই বছর যাবত সে মিতুকে ভালোবাসে। সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিলো তাদের। অপেক্ষায় দিন কাটছিলো মিতুকে বিয়ে করার।

কিছু মুহুর্তের ব্যবধানে আজকে মিতু তার সৎ মা। বাবার চতুর্থ স্ত্রী। ইশান জানে মিতু ইচ্ছে করে বিয়ে করে নি। চাপে পড়ে বিয়ে করেছে। তারপরও কোথাও একটা রাগ হচ্ছে। কিন্তু রাগ দেখানোর মানুষ নেই।
মিষ্টি থামাতে পারে না পূর্ণতাকে। সে মিষ্টিকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যায়। সাহেব এর চোখে চোখ রেখে বলে
“আপনার ছেলে পাপ করেছে। বাবা হিসেবে আপনার উচিত পায়ের চপ্পল খুলে পেটানো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজে ভালো মানুষ হতে পারেন নি৷ সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিতে পারেন নি৷ নাতিদের শিক্ষিত করতে পারেন নি। জমিদার সাহেব আপনি তো ব্যর্থ জমিদার।
সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় পূর্ণতার দিকে। মনির তেড়ে আসে। আঙুল তুলে বলে
” এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো।
পূর্ণতাও আঙুল তুলে বলে

“আপনার কথা বলতে লজ্জা করছে না? ছেলের প্রেমিকাকে বিয়ে করে এনে নিজেকে বীর পুরুষ মনে করছেন?
আমি পূর্ণতা গলা তুলে বলছি এই জমিদার বাড়িতে আমার স্বামী ছাড়া একটা পুরুষ ও পুরুষ না। সব গুলো কাপুরুষ।
মনির হাত তুলে পূর্ণতাকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য। মনোয়ার এগিয়ে এসে থামায় মনিরকে। কিন্তু মমতা থেমে নেই। সে পূর্ণতার চুল গুলো মুঠো করে ধরে।
শিউলি দৌড়ে আসে। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে বলে

” মা ওকে ছেড়ে দিন। ও ক্ষমা চেয়ে নিবে।
পূর্ণতা রক্তচক্ষে মমতার দিকে তাকিয়ে বলে
“পূর্ণতা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। এই মানুষ রূপি অমানুষদের কাছে কখনোই ক্ষমা চাইবো না আমি।
পূর্ণতার কথা শেষ হতেই মমতা পূর্ণতার মাথা দেয়ালে বারি দিতে যায়। অভি এগিয়ে আসে। জাপ্টে জড়িয়ে ধরে পূর্ণতাকে। মমতাকে ধাক্কা দেয়। পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয় মমতা। রক্তচক্ষে তাকায় অভির দিকে। মনিরের রাগও বাড়ে।

দুই হাতে অভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পূর্ণতা।
মনোয়ার মাথা নত করে বলে
” অভি তোমার বউকে সামলাও। কোথায় কি বলতে হয় জানে না সে।
তাল মেলায় সাহেব
“এটা জমিদার বাড়ি। এখানে মেয়েরা গলা তুলে কথা বলে না। আজকে যে কথা গুলো তোমার বউ বলেছে। তার পরিনাম কতোটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা তোমার বউকে বুঝিয়ে দিও।

পূর্ণতা অভির বুক থেকে মুখ তুলে। দূরে দাঁড়ানো ইফাদের দিকে এক নজর তাকায়। তারপর তাকায় মনিরের দিকে। অতঃপর মনোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে
“আপনাদের পাপের রাজ্য ধ্বংস করবো আমি। মেয়েদের সুস্থ একটা জীবন দেবো। সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার একটা সমাজ দিবো।
আজকের পর থেকে জমিদার বাড়ির পুরুষ দ্বারা দ্বিতীয় কোনো নারীকে অপমানিত হতে আমি পূর্ণতা দিবো না।
মনির হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” কি করবে তুমি?
“দরকার পড়লে পা ভেঙে পঙ্গু করে রেখে দিবো।
থমথমে খেয়ে যায় মনির।
অভি গম্ভীর গলায় এতখনে বলে ওঠে
“আমি এই বাড়ি ছাড়তে চাই। এখানে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আগামী কাল আমি এবং পূর্ণ চলে যাবো।
চমকায় সাহেব। মমতাও ভয় পেয়ে যায়। জমিদার বাড়ির মাথা অভি। এলাকায় জমিদার এবং তার ছেলেদের মানুষ সম্মান দেয় না মন থেকে তবে ভয় পায়। কিন্তু অভিকে সবাই সম্মান করে ভালোবাসে। অভি বাড়ি ছাড়লে এই স্রারাজ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সাহেব বলতে যায়

” অভি তুম
কথা শেষ হতে দেয় না অভি। হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় সাহেবকে।
“সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। মতামত নয়।
আমি কাল যাচ্ছি।
বলেই সে পূর্ণতার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। মিষ্টি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু তার। মিতু তার সাথেই পড়াশোনা করে। শখী তার। ইশানের সাথে মিতুর সম্পর্ক আছে এটাও জানা।
নিজের চাচার ওপর ভীষণ রাগ মিষ্টির।
সাহেব নিজের রাজকীয় আসনে বসে। মনিরের দিকে তাকিয়ে বলে

“অভিকে আটকাও।
মেয়েটাকে দুই দিনের মধ্যে সরাবে অভির জীবন থেকে।
মনির মাথা নারায়।
পরপর জমিদারের হুকুম
“যে যার কক্ষে যাও শুধু মিষ্টি আমার কক্ষে এসো।
সকলেই চলে যায়। মিতু ইশানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।

“আমি কোথাও যাবো না।
পূর্ণতা কাঠকাঠ গলায় বলে।
অভি নিজের পরনের শার্ট খুলতে খুলতে বলে
” যাবে।
“যাবো না আমি। স্বার্থ পরের মতো শুধু নিজেদের কথা ভাববো? আমি অপবিত্র জমিদার বাড়ি পবিত্র করতে চাই। সবাইকে নিয়ে রাজত্ব করতে চাই। সুন্দর একটা সংসার সাজাতে চাই।
পালিয়ে যেতে চাই না আমি।
অভি পূর্ণতার সামনে দাঁড়ায়। হাত রাখে পূর্ণতার গালে।

” জীবনটা খুব ছোট পূর্ণতা। তুমি সবার কথা ভাবতে গিয়ে জীবন ফুরিয়ে ফেললে আমার সাথে বাঁচবে কবে? কবে আমাদের সংসার হবে?
পূর্ণতা অভির হাত সরিয়ে মোড়া নিয়ে আসে এবং তাতে দাঁড়িয়ে অভির মুখোমুখি হয়। অভির দুই গালে হাত রাখে চুমু খায় কপালে।
তারপর চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে বলে

“আমার বর বীর পুরুষ। সে পালাবে না। সকলের মোকাবেলা করে সংসার করবো। কথা দিলাম আপনাকে। পূর্ণতা কখনো আপনার হাত ছাড়বে না। আপনার সাথে বাঁচবে এবং সুন্দর সংসার গড়ে তুলবে।
গোলগাল গম্ভীর মুখ খানা আরও একটু গম্ভীর হয়ে ওঠে অভির।
দু পা পিছিয়ে গিয়ে বিরবির করে বলে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৮

“পাপের রাজ্য ধ্বংস হবে না। ধ্বংস হবে তুমি।
বাঁচার একটা পথ দেখালাম তবুও বুঝলে না। এবার যা হবে তার জন্য প্রস্তুত থাকো প্রিয় পূর্ণতা।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১০