প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১০

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১০
তানিশা সুলতানা

জরুরি বৈঠক বসানো হয়েছে। জমিদার বাড়ির সকল পুরুষটা মিলে বসেছে। সকলের মুখো ভঙ্গিমা গম্ভীর। অভি জমিদারের পাশের আসনে বসেছে। বরাবরই তার জন্য এই আসন খানা বরাদ্দ করে রাখা থাকে।
জমিদার বাড়ির পূর্ববর্তী জমিদার হবেন অভিরাজ। এটা গোটা শহর জানেন এবং সকলেই খুশি।

জমিদারদের রাজত্ব খুব বেশি দিন স্থায়ী হবেন না তার ইঙ্গিত পেয়ে গেছেন। কোনোনা পাশের এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন এবং তিনি দাবি করছেন জমিদার হওয়ার যৌগ্যতা তারা রাখেন। এটা নিয়ে অনেক কাহিনি হয়েছে। এক পর্যায়ে অভি গ্রামের সকল মানুষদের সম্মতি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভোট করা হবে। দুটো দল বিভক্ত হবেন। ভোটে দাঁড়াবেন অভিরাজ এবং ইফতিয়ার চৌধুরী (পাশের এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলে)
অভি খুব করেই জানে এই ভোটে জয় লাভ তারই হবে। এবং জমিদার সাহেবও এটা,জানে।
আজকের বৈঠকের মূল আলোচনা ভোট নয় পূর্ণতা।
সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন

“মায়ের কথা মনে আছে তোমার?
ভীষণ সাহসী মহিলা ছিলেন তোমার মা। এখন সে কোথায় গেলো?
কলিজা মোচর দিয়ে ওঠে অভির। স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে মায়ের হাস্যজ্বল মুখ খানা। এবং পরপরই ভেসে ওঠে রক্তমাখা দেহখানা মায়ের আত্নচিৎকার।
চোখ বন্ধ করে ফেলে অভি। সাহেব নরেচরে বসে

” তোমার বউয়ের মধ্যে তোমার মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি আমি। তোমার মায়ের মতোই তেজ তোমার বউয়ের।
আমরা জমিদার। এই শহরটা আমাদের। এখানে রাজ করবো আমরা। এটাই নিয়ম। বোঝাও তোমার বউকে।
অভি জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে ফেলে। মনোয়ার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“মেয়েটাকে তালাক দাও অভি। তাকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও। সারাজীবন ভরনপোষণের দায়িত্ব আমরাই নিবো।
এবারও অভি নিশ্চুপ। মনে মনে ইফাদ বেশ খুশি। তালাক হয়ে গেলে পূর্ণতাকে দেখে ছাড়বে সে।
অভি বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
“তোমরা তোমাদের ব্যবসা বন্ধ করো। নারী পাচার চলবে না আমার রাজ্যে। কোনো অসৎ ব্যবসায় আমি মেনে নিবো না।

সাহেব হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে। দাঁতে দাঁত বলে
” যেমনটা তুমি বলবে।
অভি দাঁড়িয়ে যায়। চলে যাবে তখন মনির বলে
“তোর মায়ের কথা চিন্তা কর। তোর বউয়ের পরিনতি যেনো আবার তেমন না হয়।
বাঁকা হাসি মনিরের ঠোঁটে। অভি আপাদমস্তক দেখে নেয় মনিরকে।
“মায়ের কথা মনে নেই। তবে পূর্ণতা মরে গেলেও আমার কিচ্ছু এসে যায় না। তাকে চোখে ধরেছে বিয়ে করেছি। গল্প এখানেই শেষ।

অভি রাজ আমি। গোটা শহরের রাজত্ব আমার হাতে। এক নারী কখনোই আমার দুর্বলতা হতে পারে না। পূর্ণতা আমার ভাবনাতে নেই। আমার একমাত্র লক্ষ গোটা রাজত্ব হাতের মুঠোয় পুরো এমপি পদটা আয়ত্ত করে নেওয়া।
বলেই অভি চলে যায়। মনোয়ারের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। থমথমে মুখ হয়ে যায় মনির মামুন সাহেব এবং ইফাদের।
তাদের পরিকল্পনা ছিলো পূর্ণতাকে হাত করে অভির থেকে ক্ষমতা নেওয়া। কিন্তু এবার?

দুপুরের রান্না পূর্ণতাকে করতে বলেছে মমতা। পূর্ণতা চুপচাপ রান্না বসিয়েছে। আগে কখনো রান্না করা হয় নি। রিকশা চালক বাবা হলেও পূর্ণতাকে কখনো কাজ করতে হয় নি। তবে কাজ পারে না এমনটা নয়। মায়ের থেকে সব কাজ শিখেছে পূর্ণতা।
রান্না ঘরে ঘেসতে দেওয়া হয় নি শিউলিকে। সকলের জানা শিউলি আশেপাশে থাকলে ঠিক পূর্ণতাকে সাহায্য করবে।
মমতা নিজে রান্না ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিয়েছে।

দুপুর গড়াতেই পূর্ণতার রান্না শেষ হয়।
অভি বেরিয়েছে সকালে। পূর্ণতাকে বলেও যায় নি বেরুনোর সময়।
রেশমা পান চিবতে চিবাতে আসে পূর্ণতার কাছে। সাথে মমতাও আসে। চোখে চোখে দুজন কিছু একটা পরামর্শ করে।
মমতা খাবারের ঢাকনা সরাতে সরাতে বলে

” তোর স্বামী তো সকালে বেরিয়েছো। এখনো ফেরার নাম নেই। দেখ আবার বিয়ে টিয়ে করে ফেললো না কি?
পূর্ণতা হাসি মুখে তাকায় মমতার দিকে। অতঃপর জবাব দেয়
“আমার স্বামী কখনোই দ্বিতীয় বিয়ে করবে না।
মুখ বাঁকায় মমতা।

” যার ভরসায় এতো উড়ছিস। সে তোর হাত ছাড়লো বলে। তখন কি করবি?
“গোটা দুনিয়া আমার বিরুদ্ধে চলে গেলেও আমার স্বামী কখনোই আমার হাত ছাড়বে না।
মমতার হাসি মুখখানা চুপসে যায়। রেশমা রেগে বলে
” এতো তেজ আসে কই থেকে তোর?
“স্বামীর ভালোবাসা থেকে।

সরুন এখন। আমাকে যেতে হবে। রান্না শেষ করেছি। গাণ্ডেপিণ্ডে গিলুন এবার।
পূর্ণতা যেতে নেয়। তখনই মমতা আবার বলে ওঠে
” সতিনের ঘর যদি তোকে আমি না করিয়েছি না?
তাহলে আমার নামও মমতা না।
দাঁড়িয়ে যায় পূর্ণতা। পেছন ফিরে তাকায় মমতার দিকে।

“এই বুড়ো বয়সে আপনাকে সতিনের ঘর করাবো আমি। সেটাও দুই দিনের মধ্যে। পূর্ণতার লেজে পা দিতে আসবেন না। একদম জ্বালিয়ে পুরিয়ে দিবো।
এগিয়ে আসে মমতা। চোখে চোখ রেখে বলে
” নদীতে নেমে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করার পরিনাম জানিস তো?
পূর্ণতা জবাব দেয় না। বাঁকা হেসে বেরিয়ে যায় রান্না ঘর থেকে।

মিষ্টির থেকে দুটো বই নিয়েছে পূর্ণতা। বই পড়তে তার ভীষণ ভালো লাগে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। রোদের তেজ কমেছে। জমিদার বাড়ির ছাঁদটা বিশাল এবং বিলাসবহুল। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো। একটা দোলনাও পাতা আছে সেথায়।
পূর্ণতা তার লম্বা চুল গুলো মেলে দিয়ে দোলনায় বসে বই পড়ছে। মনোযোগ তার বইয়ের দিকে। একমনে পড়ে যাচ্ছে বাংলা বই।

তখনই জিপ গাড়ির শব্দ কানে আসে পূর্ণতার। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। অভি ফিরলো নিশ্চয়। বরের সাথে খাবে বলে খাবারটাও খায় নি পূর্ণ।
বই বন্ধ করে দৌড়ে যায় রেলিং এর কাছে। উঁকি দিয়ে দেখে সত্যিই অভি কি না?
হুমম অভিই এসেছে। ঘামে লেম্পে আছে সাদা শার্টখানা। ফর্সা মুখটা লালচে রং ধারণ করেছে। ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ইলেকশনের কাজে বরই ব্যস্ত সে।

পূর্ণতা দৌড় দেয় বই হাতে নিয়েই। এক দৌড়ে চলে যায় বাড়ির বাইরে।
অভি সবেই সদর দরজায় পা রাখছিলো। পূর্ণতা সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আঁচল তুলে ঘামে ভেজা মুখ খানা মুছিয়ে দিতে নেয়। তখন অভি গম্ভীর গলায় বলে ওঠে

“এখনে কেনো তুমি?
পূর্ণতা এক গাল হেসে বলে
“আপনাকে দেখে আসলাম।
” আমি তো রুমেই যাবো তাই না? এখানে আসার প্রয়োজন ছিলো না।
পূর্ণতার হাসি মুখটা চুপসে যায়। আশেপাশে আরও অনেক মানুষ ছিলো।
“জমিদার বাড়ির বউ তুমি। মাথায় ঘোমটা ছাড়া আর কখনো যেনো তোমায় না দেখি। এখানে তোমার লম্বা চুল দেখে আর্কষীত হওয়ার মতো কেউ নেই।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৯

পূর্ণতা মাথা নিচু করে সরে যায় অভির সামনে থেকে। আঁখি পল্লবে জমেছে অশ্রুকণা।
অভির পাশ থেকে একজন মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করে
” কে ও?
অভি জবাব দেয়
“আমার ভাইয়ের স্ত্রী।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১১