কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৫

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৫
নুজাইফা নূন

-” আরু রুম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে বুঝি?”
-” তাড়িয়ে দিবে কেন?”
-” দেখলাম তুমি আরুর রুমের দিকে যাচ্ছো।আবার ফিরে এলে তাই বললাম আরকি!”
-” বুঝলেন স্যার। আমার অনেক দয়ার শরীর। আপনি যদি একা একা থাকতে ভয় পান।তাই আমি বাবুইয়ের রুম থেকে চলে এসেছি।ভালো করেছি না স্যার?”

-“কি বললে তুমি? আমি একা থাকতে ভয় পাই? লাইক সিরিয়াসলি? ”
-” বলা তো যায় না স্যার।পেতেও পারেন।”
-” আবদ্ধ স্রোতের মাথাটা নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো, যাও তুমি আরুর সাথে গিয়ে থাকো।”
-” না না স্যার।আমি বাবুইয়ের রুমে যাবো না। বাবুই বললো ওর রুমে ও নাকি ভূত আছে। ও দেখেছে।আপনাকে বললাম আপনি তো বিশ্বাস করলেন না।আমি না হয় ভুল দেখেছি। কিন্তু বাবুই তো আর ভুল দেখেনি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আরু বলেছে?”
-” হ্যাঁ।আমি আরুর সাথে থাকতে গিয়েছিলাম তখন আরু বললো আপনার সাথে থাকলে ভূত আমার কিছু করতে পারবে না।”
-” আবদ্ধ মুচকি হেসে স্রোতের মাথাটা নিজের বুকের উপর রেখে মনে মনে বললো, ওহ্ তাহলে এই ব্যাপার? গতকাল তাহলে স্বয়ং আরু নিজেই স্রোত কে ভয় দেখিয়েছিলো।যাতে করে স্রোত আমার সাথে থাকে।আমার বোন টা কতো বড়ো হয়ে গিয়েছে। লাইফে এমন একটা বোন পেলে আর কিবা লাগে?”

-” ছিঁড়ে যাক প্লাজু, খুলে যাক লুঙ্গি’
তুমি কি হবে আমার জীবনসঙ্গী” মেসেজ টা সৈকতের নাম্বারে সেন্ড করে আরফা লজ্জায় দু হাতে মুখ ঢেকে নিয়ে বললো, ছিঃ ছিঃ এ আমি কি করলাম? মেসেজ টা সেন্ড করার সময় আমার আবেগ কাজ করেছে । বিবেক কাজ করে নি।এখন যদি সৈকত স্যার বুঝতে পারে এটা আমার কাজ ।তাহলে স্যার তো ভাইয়ার কাছে বিচার দিবে।তখন কি হবে আমার? ভাইয়া তো খুব রাগ করবে।যা হয় হোক।

আমি সৈকত স্যার কে ভালোবাসি।সৈকত স্যারের জন্য ‌আমি সব করতে পারবো ।সব।স্যারের সাথে পরিচয় হবার সেই মূহূর্ত টা আজো ভুলতে পারি না আমি।কতো মধুর ছিলো সেই মূহূর্ত টা। সেদিন বাবুইয়ের বার্থডে ছিলো। কিন্তু আমি অসুস্থ্য ছিলাম। নড়তে চড়তে পারছিলাম না। তবু ও বাড়ি থেকে লুকিয়ে শপিং মলে গিয়েছিলাম বাবুইয়ের জন্য গিফট কিনতে। একে তো শরীর দূর্বল ছিলো। তারপর আবার মলে‌ অনেকক্ষণ যাবত ঘোরাঘুরি করে গিফট কিনে আরো খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।

আমি মল থেকে বেরিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার আগেই একটা পুরুষালী হাত এসে আমার কোমড় আঁকড়ে ধরে। জীবনের প্রথম গাত্রে কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়ে লজ্জাবতী পাতার ন্যায় নুইয়ে পড়েছিলাম। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। বুকের ভেতর অস্থিরতা, অজানা এক অনুভূতি, ভয় আর এক রাশ লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম।লোকটার গা থেকে কড়া পারফিউম এর গন্ধ ভেসে আসছিলো। কিন্তু চোখ খুলে মানুষ টাকে দেখার সাহস হচ্ছিলো না। ঠিক তখনি পুরুষালী মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে আসে,

-” আর ইউ ওকে মিস?”
-” আমার বুকের কম্পন বাড়িয়ে দিতে তার বলা মাত্র চার টা শব্দ‌ই যথেষ্ট ছিলো।আমি টিপটিপ করে চোখ মেলে দেখি একজন সুদর্শন পুরুষ আমাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।চোখ খুলতেই তার সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় আমার। জানি না তার চোখে কি ছিলো।তবে তখন আমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলা সেই ” প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস ,তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।” লাইনটার কথা মনে পড়ছিলো। আমি যেন কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার থেকে রেসপন্স না পেয়ে লোকটা আবারো বললো,

-” আপনি ঠিক আছেন মিস? আপনাকে দেখে অনেক দূর্বল মনে হচ্ছে।”
-” আমি মনে মনে বললাম, দূর্বল এতোক্ষণ ছিলাম। কিন্তু আপনাকে দেখে আমার দূর্বলতা কে’টে গিয়েছে।তাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো , আপনি ম্যাজিক জানেন নাকি? কিন্তু বলতে পারি নি।তার আগেই লোকটার ফোন বেজে উঠে।লোকটা আমাকে রেখে চলে যায়। কিন্তু রেখে যায় তার গায়ের ঘ্রাণ। প্রকৃতির নিয়মে দিন যায় , রাত আসে।কেটে যায় কয়েক টা দিন।

আমি বুঝতে পারি আমার কিশোরী ‌বয়সে প্রেমের বাতাস বইতে শুরু করেছে।এক নজরে দেখা মানুষ টা আমার মস্তিষ্ক জুড়ে বসবাস করতে শুরু করেছে। আমার চারপাশের সবকিছু যেন আপনা আপনি রঙ্গিন হয়ে উঠে।তার কথা ভাবলে মুখে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু তাকে দেখার তৃষ্ণা মিটতে চায় না।বক্ষ পিঞ্জরে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। কিন্তু সেই ব্যাথা কমানোর ঔষধ হিসেবে মানুষ টার দেখা মিলছিলো না। সারাক্ষণ একা একা তার সাথে কথা বলতাম। কেমন যেন পাগল প্রায় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।

পরে যখন বুঝতে পারলাম আমি কখনো আর দেখা পাবো না।তখন থেকে তাকে ভুলে যাওয়ার করলাম। অনেক চেষ্টার পর তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।হুট করে একদিন কলেজ থেকে ফিরে আমাদের বাসায় তাকে দেখে আমার পুরোনো ব্যাথা জাগ্ৰত হয়। সেদিন জানতে পারি মানুষ টার নাম সৈকত।আমার ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।তারা এক‌ই ভার্সিটির টিচার‌। অবশ্য ভাইয়া অনেক বার তার ফেন্ডের কথা বলেছিলো । কিন্তু কখনো তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন নি।

মানুষ টা ভাইয়ার ফ্রেন্ড জেনে আমার মনটা পেখম মেলে নাচতে শুরু করে।আমি দৌড়ে রুমে এসে নতুন জামা কাপড় পরে সেজেগুজে তার সামনে ঘুরঘুর করি।যদি আমাকে তার নজরে পড়ে এই আশায়।আমি তখন মহিলা কলেজে পড়তাম।রোজ কলেজ শেষ করে এক নজর তাকে দেখতে তার ডিপার্টমেন্টে যেতাম। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে আমার সেই কষ্ট লাঘব হয়।আমি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হ‌ওয়াই তাকে সবসময় দেখতে পারছি।তার কণ্ঠস্বর শুনতে পারছি। কিন্তু আর লুকোচুরি নয়‌।এবারে আমি আমার কিশোরী বয়স থেকে তৈরি হ‌ওয়া অনুভূতির প্রকাশ করবো।সৈকত স্যার কে বলবো আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি।তাকে কতোটা নিজের করে চাই।”

-” সৈকত স্টাডি রুম থেকে নিজের রুমে এসে বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে দেখে স্রোত নামে সেভ করা নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এসেছে।সৈকত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে মেসেজ ওপেন করে দেখে মেসেজে লেখা,-
” ছিঁড়ে যাক প্লাজু, খুলে যাক লুঙ্গি’
তুমি কি হবে আমার জীবনসঙ্গী।”

-” মেসেজ টা দেখে খুশিতে সৈকতের চোখ ছলছল করে উঠে। স্রোত তার ওয়াল পেপারে থাকা স্রোতের ছবিতে কয়েক টা চুমু দিয়ে বললো, ও মাই গড! তার মানে স্রোত তুমি ও আমাকে ভালোবাসো?এই দিনটার জন্য আমি এতো দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম।তোমাকে মনের কথা বলবো বলবো করেও বলে উঠতে পারছিলাম না।যতোবার তোমাকে আমার মনের কথা বলতে গিয়েছি ততো বার আমি নার্ভাস হয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু তুমি তো দেখছি আমার থেকে এক কাঠি উপরে।

আমার কাজ টা কতো সহজ করে দিয়েছো। সোজা বিয়ের প্রপোজাল। ইশ্ আমার তো খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে। এতো দিন তোমাকে নিয়ে আমার মনে একটু দ্বিধা ছিলো।যদি তুমি আমাকে রিজেক্ট করো। কিন্তু না।আমার ধারণা ভুল ছিলো। তুমি আমাকে ভালোবাসো।আমি তোমাকে ভালোবাসি।এখন তোমার আর আমার মাঝে কাউকে এলাও করবো না আমি।যে আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়াবে।তাকেই শেষ করে দিবো। সেটা যদি আবদ্ধ ও হয় তবুও তাকে শেষ করতে আমার হাত কাঁপবে না। তুমি শুধু আমার। শুধুই আমার বলে সৈকত ফোন নিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে রিপ্লাই করলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৪

-” আরফা সবে মাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।তখনি টুং করে মেসেজের শব্দ হয়।আরফা মেসেজ ওপেন করে দেখে সৈকত স্যার মেসেজ পাঠিয়েছে।
-” ওগো কাজল চোখের মেয়ে, হৃদয় হরিনী ,
যদি তুমি থাকো রাজি,
আমি তোমার বাড়ি নিয়ে আসবো কাজি।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৬