কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৪

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৪
নুজাইফা নূন

-” আমাকে ভালোবাসো স্রোত?”
-” আপনার মতো বদ লোক, এটিটিউড এর দোকানদার কে ভালোবাসতে ব‌য়েই গেছে আমার।আমি একটু ও ভালোবাসি না আপনাকে।”

-“ওহ্ আচ্ছা! আমাকে ভালোবাসো না তাই তো প্রকৃতি ম্যামের সাথে আমাকে দেখে তোমার এই অবস্থা। খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে কান্নাকাটি করে নিজের চেহারার ডিসপ্লে পাল্টে ফেলেছো।আর যদি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে হয়তো এতোক্ষণে তুমি হসপিটালের বেডে স্যালাইনরত অবস্থায় থাকতে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ভালোবাসি না তাই বলে অন্য মেয়েদের সাথে চুমাচাটি করবেন?”
-” আবদ্ধ স্রোতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো আরে বাবা বলছি তো তুমি ভুল ভেবেছো।প্রকৃতি ম্যামের ভাই পলাশ প্রথম বর্ষের ছাত্র।আগে সাইন্স এর স্টুডেন্ট ছিলো। অনার্সে এসে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এজন্যই ম্যাথে অনেক দূর্বল। ম্যাম পলাশ কে হিসাববিজ্ঞান আর ফিন্যান্স সাবজেক্ট দুইটা পড়ানোর কথা বলতে এসেছিলো। কিন্তু আমি কোনো ‌স্টুডেন্টদের প্রাইভেট পড়ায় না‌।সেই ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম আমরা।হুট করে পোকা জাতীয় কিছু একটা আমার চোখে ঢুকে ‌যায়। প্রকৃতি ম্যাম আমার দিকে ঝুঁকে সেটাই বের করছিলো।আর তুমি ভেবেছো আমাদের মধ্যে কিনা কি হয়েছে?”

-” স্রোত আবদ্ধের বুক থেকে মাথা তুলে আবদ্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই আবদ্ধের চোখে কিছুটা লালচে ভাব রয়েছে।স্রোত কিছু না বলে চুপচাপ আবদ্ধের থেকে সরে এসে বললো, আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।”

-” তুমি ও তো কখনো ফ্রেশ ‌হ‌ও নি।যাও তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে এসো। আবদ্ধের কথা শুনে স্রোত চুপচাপ একটা সুতি থ্রি পিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।প্রায় বিশ মিনিট পরে স্রোত ওয়াশরুম থেকে বের হলো। স্রোতের চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ে পিঠের দিকের জামা, সেলোয়ার এর নিচের দিক অনেক টা ভিজে গেছে। আবদ্ধ বিছানা থেকে উঠে এসে টাওয়াল নিয়ে স্রোতের চুল মুছে দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো স্রোত ভেজা কাপড় না ধুয়ে বালতিতে রেখে দিয়েছে।আবদ্ধ কিছু একটা ভেবে কাপড় গুলো ধুয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকনিতে কাপড়গুলো মেলে দিয়ে নিচে খাবার আনতে যাওয়ার আগেই সালমা বেগম খাবার দ্বারা পরিপূর্ণ প্লেট নিয়ে এসে বললো,

-” আমি দুপুরে লাঞ্চের জন্য স্রোত মা কে ডাকতে এসেছিলাম। কিন্তু স্রোত ঘুমিয়ে ছিলো দেখে আর ডাকি নি।”
-” আপনাকে কতো বার বলেছি আপনি আমার রুমে আসবেন না।”
-“দুপুর প্রায় গড়িয়ে যাচ্ছে।স্রোত‌ সেই সকালে অল্প কিছু খেয়ে ছিলো।তাই স্রোতের জন্য খাবার নিয়ে আসলাম।”
-” খাবার দেওয়ার জন্য আরফা ছিলো কাজের মেয়ে ছিলো।আপনাকে কেন ‌বারবার আমার রুমে আসতে হবে?”

-” ভুল হয়ে গেছে বাবা।আর কখনো‌ এমন হবে না বলে সালমা বেগম টি টেবিলের উপর খাবার রেখে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে স্রোত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
-” আপনি আসলেই খুব খারাপ লোক।মায়ের সাথে কেউ এমন খারাপ আচরণ করে?”
-” আবদ্ধ স্রোতের গালে খাবার তুলে দিয়ে রাগান্বিত হয়ে বললো, উনি আমার মা নন। তুমি যেটা জানো না সেই বিষয়ে কথা বলবে না স্রোত।”

-” আবদ্ধের রাগান্বিত চেহারা দেখে ঘাবড়ে গেলো স্রোত।স্রোত কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাবার শেষ করলো।আবদ্ধ স্রোত কে খাইয়ে প্লেট নিয়ে নিচে আসতে যাবে তখনি তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে বাবা ২ নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে আবদ্ধ ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো ,

-” কেমন আছেন বাবা?”
-” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনারা সবাই কেমন আছেন আব্বা।”
-” আমারা সবাই ভালো আছি।”
-” আগামীকাল আমাদের বাড়ি আসবেন তো আব্বা? আমি ,আপনার আম্মা আপনাদের জন্য অধির আগ্রহে বসে রয়েছি। আমাদের কে নিরাশ করবেন না আব্বা।”

-” সরি বাবা।আমি যেতে পারবো না।তবে আপনি চিন্তা করবেন না। আমি স্রোত কে পাঠিয়ে দিবো।”
-“আপনি আসবেন ‌না। এইটা কোনো কথা বললেন আব্বা?আপনি না আসলে আম্মা কে পাঠানোর দরকার নেই আব্বা।আম্মা কতো আশা করে বসে ছিলো। ঠিক আছে সমস্যা নেই।আমি আম্মা কে বুঝিয়ে বলবো।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা আসবো বাবা”
-” সত্যিই আসবেন আব্বা?”
-” হ্যাঁ আসবো।”
-” আচ্ছা আব্বা।এখন রাখছি তাহলে ।আপনার আম্মা কে খবর টা দিতে হবে তো।”
-” ঠিক আছে বাবা।ভালো থাকবেন।”

-” সাইফুল ভূঁইয়া ফোন রেখে শারমিন ভূঁইয়ার কাছে গিয়ে বললো, আগামীকাল আব্বা আম্মা আসছে।রহিমা খালা কে জলদি খবর দাও।ঘর দোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে তো।বিয়ের পর আব্বা প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি আসছে।তার আদর আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি যেন না হয়।এ বাড়ি সম্পর্কে কোনো খারাপ মন্তব্য যেন আব্বা না করতে পারে।”
-” আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমাদের মেয়েকে উপযুক্ত ছেলের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। কোনো ত্রুটি হলেও আব্বা কখনো খারাপ মন্তব্য করবেন না।”

-” হ্যাঁ । ঠিক বলেছো।আমি প্রথমে আব্বা কে চিনতে ভুল করেছিলাম। কিন্তু আব্বার মতো ছেলে লাখে একটা পাওয়া যায়।আব্বা একদম খাঁটি সোনা। তুমি দেখো আমার আম্মা খুব সুখী হবে।আব্বা আম্মাকে একদম কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবে।”

-” রাতে ডিনার শেষ করে স্রোত‌ চিন্তায় পড়ে গিয়েছে ।সে কোথায় ঘুমোতে বুঝতে না পেরে আরফার রুমে উঁকি দেয়।আরফা তখন ম্যাথ করছিলো।স্রোত কে দরজায় উঁকি দিতে দেখে আরফা বললো , কি রে বাবুই? বাইরে উঁকি দিচ্ছিস কেন? ভেতরে আয়।”

-” স্রোত নিঃশব্দে আরফার পাশে বসে হাত কচলাতে লাগলো।যা দেখে আরফা বললো,
-” কিছু বলবি বাবুই?”
-” না মানে আমি তোর সাথে থাকি?”
-” কেন বাবুই? ভাইয়ার সাথে থাকতে তোর কি সমস্যা? শীতের সিজন হেলায় হারাস না বাবুই।আমি বুঝতে পারছি শীতকালে সিঙ্গেল থাকার মজা।লেপের নিচে পা গরম হয় না।মনে হয় বিছানায় কেউ পানি‌ ঢেলে রেখেছে।বাবা গো কি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কুল কুল। কিন্তু তোর জন্য তো ভাইয়া আছে। ভাইয়া কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকবি।দেখবি এক ঘুমে রাত শেষ।যা যা দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়।”

-” না না বাবুই।গত রাতে যে অঘটন ঘটেছে আমি আজ তার সাথে এক বিছানায় থাকতে পারবো না। লজ্জায় ম’রে যাবো আমি।আমি তোর কাছে ঘুমোবো ব্যাস।”
-” আরফা মনে মনে বললো যার জন্য গতরাতে এতো কষ্ট করে মাঝরাত অব্দি জেগে বসে থেকে কালো কাপড় পরে অন্ধকারে রুমের মধ্যে হাঁটতে হলো।ভারী ভারী সোফা টেনে সরাতে হলো।এই শীতের মধ্যে ও ওয়াশরুমে বালতি তে পানি ভরে হাত ডুবিয়ে রাখতে হলো। শুধু মাত্র তাকে ভাইয়ার কাছেকাছি রাখবো বলে এতো কিছু করেছি। অথচ সেই গাধী মেয়েটা এসেছে বর ছেড়ে ননদের সাথে রাত্রি যাপন করতে। দুজনে এমন আলাদা আলাদা থাকলে আমি তো জীবনেও ফুপি ডাক শুনতে পাবো না। বাবুই কে যে করেই হোক ভাইয়ার রুমে পাঠিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কি বলে পাঠাবো?”

-” আরফা কে চুপ থাকতে দেখে স্রোত বললো, কি এতো ভাবছিস বাবুই?”
-” জানিস বাবুই আমার মাঝে মাঝে মনে হয় রাতে রুমের মধ্যে কোনো কালো ছায়া হেঁটে বেড়াই। কিন্তু আমাদের বাড়ির কেউ ভূতে বিশ্বাস করে না।তাই তো আমি এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে পারি না।শুনেছি ভূতেরা নাকি সুন্দরী মেয়েদের হাড্ডি মটমট করে চিবিয়ে খেতে পছন্দ করে।তোর গায়ে তো হাড্ডি ছাড়া কিছুই নেই।আমার সাথে থাকলে ভূতেরা এসে যদি তোর হাড্ডি চিবিয়ে খেয়ে নেয়?

-” তুই ঠিক বলেছিস বাবুই।এই বাড়িতে ভূত আছে।সেটা আমিও দেখেছি।”
-” এজন্যই বলছি তুই ভাইয়ার রুমে গিয়ে ভাইয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়।তাহলে ভূত তোর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৩

-” ঠিক আছে বাবুই।আমি বরং স্যারের কাছে যাই বলে স্রোত পা টিপে টিপে এসে আবদ্ধের পাশে শুয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৫