প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৬

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৬
তানিশা সুলতানা

“পাপের রাজ্যের রাজা আমি
পাপ করাই আমার কার্য
তুমি আমায় আগলে রেখো
নাহলে ধ্বংস অনিবার্য”
ডাইরির প্রথম পাতায় লেখা ছিলো কথা টুকু। পূর্ণতা ভ্রু কুচকে দ্বিতীয় পাতা উল্টায়। কিন্তু নাহহ আর কোনো লেখা নেই। কার ডাইরি এটা?

কমলাকে অন্দরমহলে রেখে পূর্ণতা এসেছিলো অভিকে ডাকতে। অভি ছাড়া পূর্ণতা কথা বলার সাহস পাবে না। মাত্র একটা দিনেই পূর্ণতা বুঝে গিয়েছে অভিই তার সাহস। অভি সামনে থাকলে পূর্ণতা অনায়াসে যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারবে। কিন্তু অভি আশেপাশে না থাকলে সে যেনো দুর্বল হয়ে পড়ে।
কামরায় ঢুকতেই ধবধবে সাদা বিছানায় কালো রংয়ের ডাইরি খানা পায় পূর্ণতা। অভি নেই কোথাও৷ কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ডাইরি খানা তুলে নেয় এবং পৃষ্ঠা উল্টায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পূর্ণতা ডাইরি খানা বন্ধ করে রেখে ভাবতে থাকে।
“কে লিখেছে কথা গুলো? অভি? কিন্তু কেনো? অভি তো পবিত্র। উনি কখনোই পাপ করতে পারে না।
অন্য কারো হবে হয়ত ডাইরি খানা। ভুল করে রেখে গিয়েছে।”
ডাইরির চিন্তা বাদ দিয়ে পূর্ণতা বাতরুমের দরজা টোকা দেয়। অভি ভেতরে আছে কি না জানার জন্য। কিন্তু দরজায় টোকা,দিতেই খুলে যায়। মানে অভি নেই এখানে। তাহলে কোথায় গেলো?

অভি না থাকলে পূর্ণতা নালিশ দিবে কার কাছে? কে বুঝবে পূর্ণতাকে?
অন্দরমহলে সবাই চলে এসেছে৷ পূর্ণতা তো এখন আর পিছিয়ে আসতে পারে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথার ঘোমটা ঠিক করে বেরিয়ে পড়ে পূর্ণতা।

অন্দরমহলে সকলেই বসে আছে। রাজকীয় আসনে বসে আছে সাহেব। তার পাশেই মমতা। রেশমা এবং রিমা শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মনোয়ার মামুন এবং মনির তিন ভাই সিনা টানটান করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে বেশ ক্ষুব্ধ তারা পূর্ণতার ওপর। দুই দিন হলো না এই বাড়িতে এসেছে আর ইতোমধ্যেই দোষ গুণ বিচার করছে?
ইফাদ, ইফতি, ইশান ইমন এবং মিষ্টি পাঁচ ভাই বোন বসে আছে খানিকটা দূরে। ইফাদ মনে মনে বেশ বিরক্ত। খালি একবার পূর্ণতাকে হাতে পাওয়ার অপেক্ষা। মুহুর্তেই ইফাদের মনে পড়ে পূর্ণতার আরও একটা বোন রয়েছে পাখি। বয়স কতো? তেরো কি চোদ্দ। দেখতে বেশ। তার দিকে নজর দিলে কেমন হয়?

মুহুর্তেই নরেচরে বসে ইফাদ। মনের মধ্যে তার খুশির পুলকি ফুটেছে।
পূর্ণতা আসে। দাঁড়ায় গিয়ে সাহেবের মুখোমুখি। কমলা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। শিউলির মুখখানা শুকিয়ে গিয়েছে।
পূর্ণতা তিনজন শশুড়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে তারপর তাকায় দাদা শশুড়ের দিকে।
মমতা দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে দেখছে পূর্ণতাকে।
“তোমার কি মনে হচ্ছে না? তুমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো?
জমিদারের ছোট ছেলে মনির বলে।

” আমি বাড়াবাড়ি করছি না ছোট আব্বা। আমি শুধু একটা সত্যি কথা সবাইকে জানাতে চাচ্ছি। দাদাভাই কমলার সাথে অন্যায় করতে যাচ্ছিলো। এটা জানাতে চাই আমি।
সাহেব ঠান্ডা গলায় কমলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে
“আমি তোকে কিছু বলেছি বা করেছি?
কমলা শুকনো ঢোক গিলে অনবরত মাথা নারায়। পূর্ণতা অবাক হয়ে তাকায় কমলার দিকে।
মামুন শক্ত গলায় বলে

” মুখে বল
কমলা কান্না করে বলে ওঠে
“জমিদার বাবু খুব ভালো মানুষ। সে কিছুই বলে নি আমাকে। ছুঁয়ও নি।
স্তব্ধ হয়ে যায় পূর্ণতা।
” ও ভয় পেয়ে এমন বলছে। দাদাভাই অন্যায় করেছে। কমলাকে ছুঁয়েছে। বাজে বাজেকথা বলেছে। আমি শুনেছি।
গর্জে ওঠে মমতা। তেড়ে আসে পূর্ণতার দিকে৷ মুঠো করে ধরে পূর্ণতার চুলের খোঁপা। ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে পূর্ণতা। কেউ এগিয়ে আসছে না।

“মা** তুই আমার স্বামীকে ন্যায় অন্যায় শিখাবি? আমার সংসারে তোকে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে? খু* ন করে ফেলবো তোকে আজকে আমি।
এলোপাতাড়ি মারতে থাকে পূর্ণতাকে। মাথার কাপড় পড়ে যায় পূর্ণতার। বুকের ওপর থেকেও আঁচল সরে যায়। মনির ইফাদ এবং সাহেব চোখ দিয়ে গিলতে থাকে পূর্ণতাকে।

কেউ এগিয়ে আসে না। পূর্ণতা চিৎকার করে কাঁদছে, মারতে বারণ করছে মমতা শুনে না৷
অবশেষে ইফতি সয্য করতে না পেরে নিজ আসন হতে উঠে আসে। দাদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পূর্ণতার শাড়ি ঠিক করে দেয়। ইফতির হাত জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে পূর্ণতা।
মমতা বেগমের রাগ কমে নি। সে ফুঁস ফুঁস করছে এখনো।

“দরদ উতলে উঠছে তোর? মজে গেছিস এর রূপে? ভোগ করে একে আপ্যায়ন ঘরে দিয়ে আয়। নতুন খদ্দের আসবে কয়েকদিন পরে। তাদের হাতে তুলে দিবো একে।
অকপটে বলে মমতা। ইফতি কথা বলে না।
” চলো পূর্ণতা। এখানে বিচার হয় না।
বলে পূর্ণতার হাত ধরে নিয়ে যায় অভির কক্ষে। পেছনে পেছন যায় মিষ্টি, ইমন এবং ইশান।

মাঝরাতে বাড়ি ফিরে অভি। পূর্ণতা হাঁটু মুরে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো। দরজা খেলার শব্দে চোখ তুলে তাকায়। অভিকে দেখে এতোখন জমে থাকা অভিমান ভুলে দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। অভি দুই হাতে আগলে নেয় পূর্ণতাকে। হাত বুলিয়ে দিতে থাকে মাথায়।

“আ…মি মি..থ্যে বলছি না৷ ক…মলাকে দাদাভাই বা….জে ভাবে ছুঁচ্ছিলো। কম….লাকে উনি পতি…..তালয়ে দিয়ে আ….সবে বলছিলো। আমি মি…থ্যে বলছি না। কেউ শু…….নলো না আমার কথা।
কান্নার ফলে কথা গুলে ঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারে না পূর্ণতা। তবুও অভি বুঝে যায়।
“আমার সাথে দূরে কোথাও চলে যাবে পূর্ণতা? যেখানে বিলাসবহুল আসবাবপত্র থাকবে না। দুবেলা দু মুঠো খাবারও থাকবে না। থাকবে শুধু আকাশসম পরিমাণ সুখ এবং ভালোবাসা।

কান্না থেমে যায় পূর্ণতার। মাথা উঁচু করে তাকায় অভির মুখপানে। দীর্ঘ খন কান্না করার ফলে ধবধবে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে। বড়বড় পাপড়ি গুলে ভিজে জবুথবু হয়ে গিয়েছে। মায়াবী লাগছে পূর্ণতাকে। আদূরে লাগছে।
“আপনি বিশ্বাস করেছেন আমার কথা?

অভি জবাব দেয় না। পূর্ণতাকে ছেড়ে দেয়। ঝাঁকড়া চুল গুলো হাতের সাহায্যে পেছনে ঠেলে এগিয়ে যায় কামড়ার মধ্য ভাগের দিকে।
“পাকামি করিও না পূর্ণ। বয়স কম তোমার। বুদ্ধি কম। নিজেকে নিয়ে ভাবো।
অভিমান হয় পূর্ণতার। এই তো নরম গলায় প্রস্তাব দিলো দূরে কোথাও যাওয়ার। এরই মধ্যে সুর বদলে গেলো?
” নিজেকে নিয়ে ভাববো?

সবাইকে নিয়ে নয় কেনো? ওরা মানুষ না? আল্লাহ ওদের সৃষ্টি করে নি?
শক্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় পূর্ণতা।
অভির থেকে জবাব আসে দীর্ঘ খন পরে
“কাল তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে ঘুরতে নিয়ে যাবো। তৈরি থেকো সকাল সকাল।
পূর্ণতার খুশি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সে খুশি হয় না। গোমড়া মুখে হাসি ফুটে ওঠে না। বরং মাথা নিচু করে ফেলে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫

“তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারী আমার জীবনে আসবে না। কথা দিলাম তোমায়।
দ্বিতীয় নারীকে জীবনে আনার কথা কখনো চিন্তা করলেও যেনো আমার মরণ হয়।
তুমি শুধু আমাকে নিয়ে ভাবো। আমাদের সংসার সাজানোর স্বপ্ন দেখো। বাকিরা কি করছে এড়িয়ে চলো পূর্ণতা।
পূর্ণতা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে অভির দিকে। অভি আদুরে জড়িয়ে নেয় পূর্ণতাকে।
” খাবার নিয়ে আসছি। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কেমন?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৭