প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫
তানিশা সুলতানা

কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠার স্বভাব পূর্ণতার। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। নরম তুলতুলে বিছানায় ঘুমানোর ফলে ঘুমটা বেশ ভালো হয়েছে পূর্ণতার। মাঘ মাসের মাঝামাঝি। শীত পড়েছে বেশ। কম্বলের ভেতর থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না পূর্ণতার। তবুও উঠতে হবে। শশুর বাড়িতে এসেছে সে। এতো বেলা ওবদি ঘুমানো যাবে না।

গায়ের কম্বল সরিয়ে বিছানা হতে নেমে পড়ে। সাদা বিছানা চাদরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। ভয়ে মুখখানা শুকিয়ে যায় পূর্ণতার। রক্ত লেগে গেলো? বরাবরই পূর্ণতা অসাবধানতায় থাকে৷ নিজের বিছানাও মাঝেমধ্যে মাখিয়ে ফেলে৷ এই বাড়িতে তো কেউ নেই যাকে বলবে বা যে সাহায্য করবে।
এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না পূর্ণ। গোলাপি শাড়ি খানাও মাখিয়ে গিয়েছে৷ রাগে দুঃখে চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। কেউ দেখে ফেললে এই মুখ কি করে দেখাবে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পূর্ণতার এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় খটখট আওয়াজ হয়। কেউ দরজা খুলছে৷ ভয় আরও বেড়ে যায় পূর্ণতার। টলমল করা চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে।
অভি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে৷ চোখ পড়ে তার পূর্ণতার ওপর। চোখে পানি দেখে আন্দাজ করে ফেলে অস্বস্তি।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“কাবাড দেখতে বলেছিলাম। দেখো নি?
পূর্ণতা মাথা নিচু করে ফেলে। সে তো বুঝতেই পারে নি অভির কথা। অভি বিরবির করে বকে পূর্ণতাকে। অতঃপর নরম গলায় বলে
” শাড়ি পাল্টে বাইরে যাও। আমি দেখছি।
পূর্ণতা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কান্না থেমেছে তার।

“কি হলো যাও।
নরেচরে দাঁড়ায় পূর্ণতা।
” সারা রাত কোথায় ছিলেন? আপনাকে বিধস্ত কেনো দেখাচ্ছে?
বিচক্ষণ দৃষ্টিতে অভিকে পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্ন ছুঁড়ে পূর্ণতা। ঘাবড়ায় বোধহয় অভি৷ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করে কিছু অতঃপর জবাব দেয়।

“তুমি শাড়ি পাল্টে বাইরে যাও৷ কোনো কথা বলবে না।
দমে যায় পূর্ণতা৷ নজর ফিরিয়ে আবারও কাবাডের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বের করে আনে আরও একখানা শাড়ি।
অভি কম্বল ভাজ করে বিছানা চাদর তুলে শুয়ে পড়ে। ঘুম প্রয়োজন তার।

জমিদাররা প্রভাবশালী। এটা পূর্ণতা জানে৷ তাই বলে এতোটা এটা ধারণা ছিলো না। জমিদার গিন্নি বসার ঘরে নরম আসন পেতে বসে আছে। তাকে পান বানিয়ে দিচ্ছে একটা মেয়ে৷ বয়স পূর্ণতার থেকে দুই এক বছরের বড় হবে হয়ত।

মমতা পূর্ণতাকে একদমই পছন্দ করছে না এটা জানে পূর্ণতা। তাই মমতার দিকে না গিয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়। সেখানেও ইলাহি কান্ড। পাঁচ-ছয়জন মেয়ে রান্না করছে। তাদের কাজ গুলো বিচক্ষণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে শিউলি বেগম। রেশমা বেগম খাচ্ছেন চুপিচুপি। শাশুড়ী দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে। সেই ভয়েই চুপিচুপি খাওয়া।
পূর্ণতার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। মাছ মাংস লুচি পায়েস ভাত বিভিন্ন ধরণের ভাজি। এতো খাবার পূর্ণতা জীবনে চোখেও দেখে নি। এরা এক বেলায় এতো খাবার খায়?

শিউলি চায়ের কাপে চা ডেলে ব্যস্ত গলায় বলে
” কমলা তোর জমিদার বাবুকে চা দিয়ে আয়।
কমলা তরকারি কাটতেছিলো। শিউলির কথাতে যেনো যে চমকালো এবং ভয়ও পেলো। পূর্ণতা যখন ভয় পায় তখন তার মুখটাও এমন হয়ে যায়।
কিন্তু ভয়টা কেনো পেলো?
“কমলা জলদি।

তোর জমিদার বাবু তোকেই নিয়ে যেতে বলেছে। কোনো অজুহাত নয়।
কমলা দীর্ঘ শ্বাস ফলে আঁচলে হাত মুছে নেয়। মাথার ঘোমটা ফেলে চায়ের কাপ হতে নেয় এবং গুটিগুটি পায়ে চলে যায়।
কমলা যেতেই শিউলি বলে ওঠে
” বিস্কুট নিলো না মেয়েটা। কি যে করে না।
পূর্ণতা চঞ্চল গলায় বলে

“শাশুড়ী আমি দিয়ে আসি বিস্কুট?
এতখনে শিউলির নজর পড়ে পূর্ণতার দিকে। মুখটা শুকিয়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে
” না না তোমার যেতে হবে না।
পূর্ণতা নাছর বান্দা। সে বিস্কুটের বয়াম হাতে তুলে নেয়।
“যাই না শাশুড়ী। একটুখানি। দিয়েই চলে আসবো।
শিউলির চোখ মুখে অন্ধকার নেমে আসে। জোর দিয়ে নাও করতে পারছে না।

” যাচ্ছি শাশুড়ী হ্যাঁ
” ঠিক আছে যাও।
পূর্ণতা বিস্কুটের ডিব্বা নিয়ে ছোটে কমলার পেছনে।
রেশমা মুখ বাঁকিয়ে বলে
“আদিক্ষেতা।
জমিদারের কক্ষের সামনে থেমে যায় পূর্ণতা। ইচ্ছে করে থামে নি। তার সামনে পড়েছে ইফাদ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে পূর্ণতাকে বাজে দৃষ্টিতে।

“এক রাতেই বড় হয়ে গিয়েছো দেখছি। ভাই আমার দারুণ খে…ল
বাকিটা শেষ করার আগেই পূর্ণতা বলে ওঠে
“বেয়াদব।
সামনে থেকে সরুন।
দাঁতে দাঁত চেপে ইফাদ।

” শা লি একবার হাতের নাগালে পাই৷ তোর কতো তেজ তা দেখে দিবো৷
“আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা লাগে।
পূর্ণতা পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইফাদ হাত মুষ্ঠিবন্ধ করে পূর্ণতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে
” তোকে তো আমি দেখেই ছাড়বো।

অনুমতি ব্যতিত দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দেয় পূর্ণতা। আর চোখের সামনে এমন একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে যেটা দেখে পূর্ণতার হাতের বিস্কুটের বয়াম পড়ে যায়। হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে।
কমলা চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকায় পূর্ণতার দিকে। শাড়ির আঁচল ঠিক করে কাচুমাচু হয়ে বসে। সাহেব থমথমে মুখে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

“কমলা আপা আপনার নাতনির বয়সী দাদাভাই। তাকে সুরক্ষা করা আপনার দায়িত্ব। আর আপনিই কি না
থেমে যায় পূর্ণতা।
” এই জন্যই কমলা আপা এই ঘরে আসতে ভয় পাচ্ছিলো।
সাহেব বলে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৪

“তুমি এখানে কেনো এসেছো?
পূর্ণতা তার কথার জবাব না দিয়ে বলে
” আপনি ঠিক করছেন না।আমি সবাইকে এখুনি বলে দিবো।
বলেই পূর্ণতা কমলার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে যায়। সাহেব পূর্ণতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
“এই মেয়েটাকে আমি খু ন করে ফেলবো।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৬