প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৪

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা

বরাবরই পূর্ণতা মায়ের মুখে শুনে এসেছে “স্বামীর বা পাঁজরের হাড় দিয়ে স্ত্রীকে তৈরি করা হয়েছে। স্বামীকে কখনো অসম্মান করতে নেই। স্বামীর কথার অবাধ্য হতে নেই। বাবার পড়ে স্বামীই মেয়েদের শেষ আশ্রয়”
কয়েক প্রহর হয়েছে অভি নামক মানুষটির সাথে আবদ্ধ হয়েছে পূর্ণতা। মানুষটিকে দেখে এবং কলমা পড়ে তিন কবুল বলে মানুষটির বা পাঁজরের হাড়ের অংশ হয়ে উঠেছে।

কবুল শব্দটার মধ্যে অদ্ভুত একটা শক্তি আছে। এই যে এই একটা শব্দ পূর্ণতার মনে অভি নামটাকে গভীর ভাবে সেঁটে দিয়েছে। মানুষটিকে ভরসা করতে শুরু করেছে পূর্ণতা।
পরিধেয় পোশাক পাল্টে অভি বাড়িতে পড়ার সাধারণ পোশাকপরিধান করেছে। কাঁধ ওবদি ঝাঁকড়া চুল গুলো মুছে চলেছে তোয়ালে দ্বারা। পূর্ণতা গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে মানুষটিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ধবধবে ফর্সা নয় লোকটার গায়ের রং। খানিকটা শ্যামলা বর্ণের। কুচকুচে কালো দাঁড়িতে ভাড়ি সুন্দর নকশা আঁকা। উঁচু নাকটা। ছোট ছোট বিলাই চোখ জোড়া। বা চোখের পাশে রয়েছে কুচকুচে কালো এক খানা তিল। জোড় ভ্রু। ওষ্ঠদ্বয় হালকা কালচে বর্ণের।
পূর্ণতা বুঝতে পারে সিগারেটে পোড়া ওষ্ঠদ্বয়।
হঠাৎ অভির নজর পড়ে পূর্ণতার দিকে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জোড় ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেলে।
“শাড়ি পাল্টে এসো

গম্ভীর গলায় বলে ওঠে অভি। চমকায় পূর্ণতা। চোখের পলক ফেলে। মাথা নুয়িয়ে ফেলে। অভি বড়বড় পা ফেলে৷ কাবাডের দিকে এগোয়। বের করে আনে একখানা কাপড়। হালকা গোলাপি রংয়ের বোধহয়। পূর্ণতা ঠিক আঁচ করে উঠতে পারে না।
পূর্ণতার সামনে শাড়ি খানা এগিয়ে দেয় অভি।
” এটা পড়ে এসো।

পূর্ণতা শাড়ি খানা হাতে নেয় না। তাকায় অভির মুখ পানে। চোখে চোখ রাখে। প্রশ্ন ছুঁড়ে
“এটা পেলেন কোথায়? আপনি কি আগে একবার বিয়ে করেছিলেন?
প্রশ্নটা বোধহয় আশা করে নি অভি। তাই তার মুখখানায় অদ্ভুত এক রাগের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। পূর্ণতা পাত্তা দেয় না। শাড়ি খানা ধরে। এবং আবারও বলে
” বিয়ে করলে আমাকে বলিয়েন না দয়া করে। আমি না খুব হিংসুটে। আপনার বিয়ের কথা সয্য হবে না। আমার থেকে লুকিয়ে রাখিয়েন কেমন?

এমনও ভাবতে পারেন পুচকু মেয়েটার থেকে লুকানোর কি আছে?
এই পুচকু মেয়েটা আপনার বড়। স্বামীর বা পাঁজরের হাড় দিয়ে স্ত্রী তৈরি। তাই আপনার উচিত পুচকু বলে অবহেলা না করে একটু সম্মান করা।

বলতে বলতে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে পূর্ণতার। অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি। অভি বোধহয় মুগ্ধ হলো?
পাতলা সুতি শাড়ি খানা ভালো ভাবেই পড়তে পেরেছে পূর্ণতা। শাড়ি পড়ার অভ্যাস না থাকলেও মাকে বার কয়েকবার পড়তে দেখেছে। সেভাবেই চেষ্টা করে সফল হয়েছে।

পূর্ণতার ধারণা ছিলো অভি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু পূর্ণতা ভুল প্রমানিত হয়। কেনোনা অভি ফুল সাজানো খাটের এক কোণায় বসে ছিলো ঝাঁকড়া চুল গুলো মুঠো করে ধরে। কি যে সুন্দর লাগছে শ্যামলা বর্ণের পুরুষটিকে। দুই হাতের পেশিবহু ফুলে উঠেছে৷ ছোট হাতার টিশার্ট হওয়াতে পেশি বহুল স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে পূর্ণতা।
“আপনি ঘুমাবেন না?
প্রশ্ন করে পূর্ণতা। ভাড়ি শাড়ি গহনা রেখে দেয় ড্রেসিং টেবিলের ওপরে।

” আমার পাশে এসে বসো
বলে অভি। পূর্ণতা দেরি করে না। অভির পাশে গিয়ে বসে।
“আমার থেকে তোমার কিছু চাওয়ার আছে?
পূর্ণতা গালে হাত দিয়ে একটু ভাবে।
” যা চাইবো দিবেন?
“হুমমম

” উমমমম তাহলে আমাকে পড়তে দিবেন? আমি অনেকক পড়তে চাই। শিক্ষিত হতে চাই।
অভি একটু চিন্তায় পড়ে যায়। কয়েক মিনিট চুপচাপ কিছু চিন্তা করে বলে।
“ঠিক আছে।
আর কিছু?
পূর্ণতা মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে

” আপনাদের বাড়িতে সকল পুরুষই তো দুটো তিনটে বিয়ে করে। আমি না মরা পর্যন্ত আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন না। আমাকে কথা দিবেন?
পূর্ণতার চোখ দুটো চিকচিক করছে। দৃষ্টি তার অভির মুখ পানে। হাত বাড়িয়ে আছে অভির দিকে। চাইছে অভি হাত ছুঁয়ে কথা দিক।
অভি কথা বলে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে পূর্ণতার দিকে।
“দিবেন না কথা?

নরেচরে বসে অভি। নিজের পুরুষালি শক্ত হাত খানা পূর্ণতার নরম তুলতুলে হাতের ওপর রাখে। ভেজা নয়নে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে পূর্ণতার।
” হাত ছুঁয়ে কথা দেওয়া মানে হচ্ছে জীবন বাজি রাখা। আপনি যদি কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাহলে সেইদিনই আমার মরন হবে।
অভি পূর্ণতার হাত খানা শক্ত করে ধরে।

“১৫ বছর বয়স তোমার। কয়েক পহরের পরিচয়। স্বামী সংসার নিয়ে ধারণা নেই। এখনই চোখে পানি?
কথা বলে না পূর্ণতা। মনে পড়ে অভির মা শিউলি বেগমের কথা। তিনিই মূলত শিখিয়েছে পূর্ণতাকে।
শিউলি অভির সৎ মা। মনোয়ার খানের তৃতীয় বউ হচ্ছে শিউলি। প্রথম বউয়ের সন্তান অভি। দ্বিতীয় বউয়ের সন্তান মিষ্টি। শিউলিকে বিয়েই করেছিলো দুই সন্তানকে মানুষ করার জন্য। বিয়ের আগেই শর্ত দেওয়া হয়েছিলো সে কখনো মা হতে পারবে না। নারীর পূর্ণতা হচ্ছে সন্তান। শিউলি সারাজীবন অপূর্ণই রয়ে গেলো।
তবে তিনি মিষ্টি এবং অভিকে ভীষণ ভালোবাসে। অভি তাকে কখনো মা বলে ডাকে নি৷ তবে মিষ্টি তাকে ভীষণ ভালোবাসে।

” ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে
বলতে বলতে দাঁড়িয়ে যায় অভি৷ জুতো জোড়া পায়ে চাপিয়ে মাফলার বেঁধে নেয় গলায়।
“আপনি ঘুমাবেন না? কোথায় যাবেন?
অভি দাঁড়িয়ে যায়।
” আমার সাথে ঘুমানোর বয়স হয় নি তোমার। আগে বড় হও। তারপর এক সাথে থাকবো।

বলেই ধপধপ পা ফেলে দরজা ওবদি গিয়ে থেমে যায়। পেছন ফিরে তাকায়। পূর্ণতা তারই দিকে তাকিয়ে ছিলো
“পুরুষ মানুষ আমি৷ হালাল বড় নিস্তব্ধ নিঝুম রাতে পাশে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা দায়। শরীর ভালো না তোমার। কাবাডে তোমার প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। সেটা নিয়ে ওয়াশরুম ঘুরে আসো।
বলেই দরজা বন্ধ করে দেয়। এবং ওপাশ থেকে তালাবন্ধ করে। বিচক্ষণ চোখে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় ইফাদের পা। পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩

এই সময়ে অভি থাকবে না এটা জানা ইফাদের। তাই বুঝি সুযোগ নিতে এসেছে?
হাত মুষ্টিবন্ধ করে ফেলে অভি।
“তোর হাত পায়ের সাথে গোপন অঙ্গ কে টে দিলে কেমন হবে বল তো? মাথা না থাকলে তো আর ব্যাথা করবে না।
অভির ঠান্ডা গলার হুমকিতে গলা শুকিয়ে যায় ইফাদের। এভাবে ধরা পড়ে যাবে ভাবতেই পারে নি৷

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫