প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩
তানিশা সুলতানা

কিছু মানুষের সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও বা অনেক দিনের চেনাজানা না থাকলেও তারা হুট করে আপন হয়ে যায়। ঠিক তেমনই মিষ্টি। কয়েক মিনিটেই পূর্ণতার আপন হয়ে উঠেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে কথা বলছে, হেসে গড়িয়ে পড়ছে। এতোখন পূর্ণতার মধ্যে একটু ভয় বা সংশয় কাজ করলেও এখন মনটা ফুরফুরে তার। নিজের সমবয়সী কাউকে পেয়েছে বলেই বোধহয়।

মিষ্টির বাকি ভাইয়েরা বাসর সাজাচ্ছে। বাগান থেকে তুলে এনেছে টকটকে লাল গোলাপ এবং হলুদ গাঁদা ফুল। বিশাল রাজকীয় রুম খানায় ফুলের ছড়াছড়ি। মিষ্টি পূর্ণতাকে নিয়ে বসিয়েছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। বিশাল বড় একটা আয়না। আয়নার চারপাশে সুন্দর নকশা আঁকা। প্রথমবার দেখলো পূর্ণতা এতো সুন্দর আয়না। আয়নায় নিজেকে দেখে একটু লজ্জাও পেলো বোধহয় পূর্ণতা। নিজেকে কখনো এভাবে দেখা হয় নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আয়নার সামনেও রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ছোট ছোট বোতল। পূর্ণতা ধারণা করে উঠতে পারে না এসব কিসের বোতল। তবে শুঘ্রাণ আসছে খুব ভালো।
মিষ্টি একটা ডিব্বা তুলে নেয়।ডিব্বার মুখটা খুলে নিজের শরীরে ফুসফুস করে মাখিয়ে পূর্ণতাকেও মাখিয়ে দেয়। কি সুন্দর ঘ্রাণ নাকে লাগছে পূর্ণতার। চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ শুকে নেয়।

“আমার দাভাইয়ের পারফিউম। মোম্বাই থেকে এনেছে। আমি রোজ চুরি করে মেখে স্কুলে যাই
বলেই কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে মিষ্টি। পূর্ণতাও একটু হাসে। ইমন ভ্রু কুচকে এসে দাঁড়ায় মিষ্টির পাশে।
” আমাকে একটুখানি দে না। একটুখানি মাখবো।
হাতের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে ইমন।
মিষ্টি মুখ বাঁকায়৷

“বড়লোকী পারফিউম ছোটলোকদের গায়ে শুট করে না। ফোঁসকা পড়বে৷
ইমন মিষ্টির মাথায় চাটি মেরে নিজেই তুলে নেয় একটা পারফিউম। এবং চলে যায় খাটের পাশে। তিন ভাই ইচ্ছে মতো পারফিউম মেখে নেয়। পূর্ণতা বুঝতে পারে এই বাড়ির রাগী ছেলেটাই হচ্ছে অভিরাজ। তাকে সবাই ভালোবাসে কিন্তু তার আশেপাশে ঘেসতে পারে না। তার সাথে মিশতে পারে না।

ইফতি ক্ষণে ক্ষণে তাকাচ্ছে পূর্ণতার পাণে। পূর্ণতা এবং মিষ্টির হাসিতে পুরো রুমটাতে ঝংকার তুলছে। সেই হাসি গভীর দাগ কাটছে ইফতির মনে। মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে এবং নিজ মনে আওড়াচ্ছে কিছু কথা।
পূর্ণতার হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কেনোনা জমিদার গিন্নি এসে দাঁড়ায় কক্ষের সামনে৷ চোখ মুখ তার ভয়ংকর।
” কি হচ্ছে এসব?

থেমে যায় পূর্ণতার হাসি। মিষ্টিও থমকে দাঁড়ায়। তিন ভাইয়ের হাত থেমে যায়। ইমন খাটের উল্টো পাশে লুকিয়ে পড়ে। জমিদার গিন্নির পাশে ছিলো রেশমা। তার চোখে মুখেও রাগের আভাস।
রেশমা বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় পূর্ণতার কাছে।
“লাজ লজ্জা নাই তোমার? হা হা করে হাসতে লজ্জা করছে না? নির্লজ্জ মেয়ে৷ জমিদার বাড়ির বউ হতে পেরে খুশি ধরে রাখতে পারছো না? এবার বাপ মা নিয়ে জমিদার বাড়িতে গেরে বসে ভালো মন্দ খেতে পারবে। বেয়াদব বেহায়া মেয়ে।

অপমানে চোখে পানি চলে আসে পূর্ণতার। জমিদার গিন্নি এগিয়ে এসে আকপটে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় পূর্ণতার ডান গালে। স্তব্ধ হয়ে যায় সকলে। মিষ্টি জাপ্টে ধরে পূর্ণতাকে।
“তোর সাহস হলো কি করে? তোর বাড়ির ওই সস্তার খাবার আমাকে খাওয়ানোর? যে কয় লোকমা খাবার আমি মুখে তুলেছি সেই কয় আঘাত তোর পিঠে পড়বে।

জাফররর (জমিদার গিন্নির দেখাশোনার দায়িত্বে যিনি রয়েছে) আমার চাবুক নিয়ে আয়।
জাফর দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। হুকুম পেতেই দৌড়ে যায়।
মিষ্টি চুপ থাকতে পারে না
” দাদিমা পূর্ণকে মারবে না তুমি।
জমিদার গিন্নি মিষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ছিটকে গিয়ে মিষ্টি ফ্লোরে পড়ে যায়। রেশমা খুশি হয়। মিষ্টি মরলেও সে খুশি।

পূর্ণতা মাথা নিচু করে কাঁন্না করছে। থাপ্পড়টা বেশ জোরে লেগেছে। ব্যাথায় গাল অবশ হয়ে আসছে। গরম হয়ে গিয়েছে বোধহয় গালটা।
ইফতি এগিয়ে আসে। দাঁড়ায় পূর্ণতার পাশে। চোখ রাখে মমতা বেগমের চোখে।
“তোমার সমস্যাটা আমাকে বলো৷

মমতা চোখ নামিয়ে নেয়। ইফতির চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস তার নেই। দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” পাঁচ ভাই ভাগে ভোগ করবি না কি এই ছোটলোকটাকে? এক রাত করে একেকজন?
ঘৃণায় গা রিনরিন করে ওঠে পূর্ণতার। ইফতি হাত মুষ্টিবন্ধ করে ফেলে। ইমন আর ইশান মাথা নিচু করে ফেলে।
মমতা থামে না আবার সুর তুলে বলে

“কচি মেয়ের দিকে চোখ আটকালো কেনো সবার? না কি এর তে.
বাকিটা শেষ করার আগেই জাফর চাবুক নিয়ে হাজির। মমতা চাবুক হাতে তুলে নেয়। আর তখনই অভি এসে দাঁড়ায় দরজায়। মিষ্টি অভিকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে
” দাভাই পূর্ণকে মারবে।

অভি মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে তাকায় মমতা বেগমের দিকে। মমতা বেগম চুপসে যায়। হাতের চাবুক আড়াল করার প্রয়াস চালায়।
অভিকে দেখে পূর্ণতা একটু সাহস পায়। সে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে ওঠে

“আমি ইচ্ছে করে জমিদার বাড়ির বউ হই নি। আমাকে জোর করে বউ বানানো হয়েছে। জমিদার বাড়ির চেয়ে আমাদের কুড়ো ঘরে সুখ বেশি। জমিদার বাড়ির কর্তার মুখের ভাষার ঠিক নেই, কথার ঠিক নেই। ছিহহহহ
মমতা বেগম চোয়াল শক্ত করে ফেলে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে আরও একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে৷ কিন্তু অভির জন্য পারছে না।
অভি গম্ভীর দৃষ্টিতে এক নজর দেখে নেয় পূর্ণতাকে। জমিদার সাহেব এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়।
অভি বলে ওঠে

” দাদাজান আপনার বউকে আপনারা পাঁচ ভাই মিলে ভোগ করেছেন?
একেকরাত একেক ভাই? আপনার তিনটে ছেলে এবং দুটো মেয়ে কি আপনারই? না কি পাঁচ ভাই মিলে পাঁচটা বাচ্চা দিয়েছেন?
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে মমতা। সাহেব শুকনো ঢোক গিলে বউয়ের দিকে তাকায়। বাকিরা মাথা নিচু করে ফেলেছে।

“যার চরিত্র যেমন তার চিন্তা ভাবনাও তেমন। দাদিজানকে সামলান। এটাই তার লাস্ট ওয়ার্নিং। নেক্সট টাইম এমন কিছু তার মুখ থেকে বের হলে বা আমি শুনলে তাকে তার চার দেবরের সাথে বেঁধে পাড়ার জমিদার বাড়ির মূল ফটকে বসিয়ে রাখবো। মাইন্ড ইট
সাহেব চলে যায়। রেশমাও কেটে পড়ে। মমতা এক পলক তাকায় পূর্ণতার দিকে। তারপর বড়বড় পা ফেলে চলে যায়।

দরজার আড়ালে ছিলো ইফাদ। সে বাঁকা হাসে
” তোর বউকে যদি আমি না ছুঁয়েছি তো আমার নামও ইফাদ নয়।
একে একে সকলেই রুম হতে বেরিয়ে যায়। অভি শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। পূর্ণতা কেঁপে ওঠে। বিরক্ত হয় অভি।
তেড়ে আসে পূর্ণতার দিকে। আঙুল তুলে বলে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২

“কাঁপা-কাঁপি করবে আমার সামনে একদম।
পূর্ণতা এক লাফে চেয়ারের ওপরে উঠে পড়ে। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে
” আমি তো কাঁপি নি। নিশ্চয় আপনার চোখ কেঁপেছে। তাই মনে হয়েছে আমি কাঁপছি।
আগে চোখ ঠিক করুন এবং ৩০ বছরের বুড়ো বর।
অভি ভ্রু কুচকে ফেলে। মেয়েটা কি বললো?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৪