প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২
তানিশা সুলতানা

নতুন পথ চলা সুখকর হবে না সেটা ১৫ বছরের পূর্ণতা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছে। বয়স কম হলেও বাস্তবতা সম্পর্কে তার ধারণা রয়েছে অনেকটা। দুনিয়া চিনে ফেলেছে সে।
বিশাল বড় জমিদার বাড়ি। আনাচে-কানাচে মানুষের সোরগোল। কিন্তু কারো চোখ তুলে তাকানোর সাহস হচ্ছে না পূর্ণতার পানে। অভি এখনো পূর্ণতার নরম তুলতুলে হাত খানা শক্ত করে ধরে আছে।

জমিদার সাহেব গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার অভির মুখের দিকে স্থির৷ তার নাতীর ঘটানো কান্ড তার কানে পৌঁছেছে অনেকখন আগেই। ভীষণ রেগে আছেন তিনি। তার এই বিশাল সাম্রাজ্য একা হাতে সামলাচ্ছেন অভিরাজ চৌধুরী। তিনি কখনোই চায় না অভি বিয়ে করুক।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাহেব এর মতে পুরুষ মানুষ বিয়ে করলে দায়িত্ব ভুলে যায়। লক্ষ্য হতে সরে আসে। বউয়ের কব্জায় চলে যায়।
তাই তিনি চান অভির সংসার না হোক। সে সারাজীবন দায়িত্ব রক্ষা করতেই ব্যস্ত থাকে।
অভি সাহেব এর মুখোমুখি দাঁড়ায়। পূর্ণতার হাত খানা ছাড়ে না সে।পূর্ণতা মাথা নিচু করে ফেলে। জমিদারকে সে দুই বার দেখেছে দূর হতে। কখনো তার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে তা কল্পনাতেও ছিলো না পূর্ণতার।
“সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখে গিয়েছো?

সাহেব গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে অভির দিকে। অভি তার ঝাঁকড়া কাঁধ সমান চুল গুলো হাতের সাহায্যে একটু নেরেচেরে জবাব দেয়
“বয়স পেরিয়েছে ত্রিশ। শিখবো না?
নরেচরে দাঁড়ায় সাহেব। গম্ভীর মুখে এবার চিন্তা ছাপ দেখা যাচ্ছে। নাতি তার বরাবরই বেপারোয়া। তবে নারীর সঙ্গ তার পছন্দ নয়। নারীদের প্রতি তার ঝোঁক নেই।
” বেয়াদবি হয়ে যাচ্ছে না?
“আদব ছিলো কবে আমার?

বাই দ্যা ওয়ে আপনার সাথে আমার হিসাব নিকাশ পরে হবে। আপাতত এর সাথে হিসাবটা বুঝে নেই।
পূর্ণতাকে দেখিয়ে বলে অভি। পূর্ণতা এতোখন মুখ তুলে তাকায়। তার সাথে হিসাব?
অভি কথা শেষ করে আবার পূর্ণতাকে টানতে টানতে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের দিকে এগোতে থাকে। পূর্ণতা বির্বাক। লোকটার প্রতি রাগ ক্ষণে ক্ষণে বেরে যাচ্ছে। এই টুকুও কি বরাদ্দ নেই তার? তার এই বিশাল বড় পায়ের সাথে পূর্ণতা তার ছোট পা দুটো মেলাতে পারছে না৷ হিমশিম খাচ্ছে।

নিজ কামড়ায় প্রবেশ করতেই পূর্ণতার হাত ছাড়ে অভি। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতা। ফর্সা হাত খানা টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মোটা চুড়ির ঘসায় খানিকটা ছিঁলেও গিয়েছে। সেখানে হালকা রক্তেরও দেখা মিলেছে।
অভি খাটের পাশে রাখা টেবিল হতে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে তা পান করতে থাকে। পানি খেয়ে নিজেকে খানিকটা শান্ত করে পূর্ণতার মুখোমুখি দাঁড়ায়।
মুখোমুখি বলা চলে না। কারণ পূর্ণতার উচ্চতা অভির বুকের থেকেও নিচে। পূর্ণতার দিকে তাকাতে হলে অভিকে ঝুঁকতে হবে।

বিরক্ত অভি৷ আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজে। অতঃপর চেয়ার চোখে পড়ে। সেটা টেনে পূর্ণতার সামনে রাখে এবং গম্ভীর গলায় বলে
” এটার ওপর দাঁড়াও।
বুদ্ধিমতি পূর্ণতার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে লোকটা মুখোমুখি হওয়ার জন্যই চেয়ার এনেছে। তাই কথা না বাড়িয়ে জুতো খুলে দাঁড়িয়ে যায় চেয়ারের ওপর।
এবার পূর্ণতা কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছে অভির থেকে। এবার অভিকে মাথা উঁচু করতে হবে।

“বয়স কতো তোমার?
পূর্ণতার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অভি।
” পনেরো।
কপালে ভাজ পড়ে অভির। সাথে বিরক্ত বেড়ে যায়৷ নিজের অর্ধেক বয়সী মেয়েই ছিলো কপালে?
“ইফাদ তোমায় টাচ করতো। তুমি তোমার বাবাকে বলতে পারো নি?
” না

পারি নি। কি বলতাম? জমিদার বাড়ির ছোট ছেলে আমার কোম
বাকিটা বলে না পূর্ণতা। থেমে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“আব্বা চিন্তা করতো। সমাধান বের করতে পারতো না।
অভি কিছু বলতে যাবে তার আগেই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে ৩ জন ছেলে এবং একজন মেয়ে।
মেয়েটা এক দৌড়ে অভির কাছে আসে। অভির হাত জড়িয়ে মন খারাপ করে বলে
” দাভাই তুই আমাকে ছাড়া বিয়ে করলি কিভাবে?
এই মেয়েটি হচ্ছে অভির বোন মিষ্টি। আর ছেলে তিনটে হচ্ছে অভির চাচাতো ভাই ইফতি, ইশান এবং ইমন।
ইমন বলে

“ভাবি দেখে মাথা ঘুরে গিয়েছিলো তাই আমাদের বলার সুযোগ পায় নি৷
ইয়েস ওকে মেনে নিলাম।
তবে বাসর সাজাতে দিতে হবে।
বলতে বলতে ইমনের চোখ পড়ে পূর্ণতার দিকে।
ইশান বলে

” একি
তুমি চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে কেনো?
পূর্ণতা তাকায় অভির মুখের দিকে। কেনো দাঁড়িয়েছে বলে দিবে কি?
ইফতি বলে ওঠে
“সিম্পল
হাইট এ মিলছিলো না৷
সকলেই মুখ টিপে হাসে।

“বাসর সাজানোর পারমিশন দিবে দাভাই? নতুন ভাবিকে একটু সুন্দর করে ওয়েলকাম করতে চাচ্ছি।
বোনের কথা অভি কখনোই ফেলতে পারে না। তাই আজকেও পারলো না।
” যা করার করো।
আমি আসছি
বলেই সে বেরিয়ে যায়। মিষ্টি লাফিয়ে ওঠে। পূর্ণতাকে টেনে চেয়ার হতে নামায়। ইমন ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পূর্ণতার দিকে
ইমনকে এভাবে তাকাতে দেখে ইশান বলে

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
” ভাবছি?
“কি?
“হাতি আর পিঁপড়ে বাসর করবে কেমনে? না মানে পিঁপড়ে বাঁচবে তো?
ফিসফিসিয়ে বলে ইমন।
ইশান থা প্প ড় বসিয়ে দেয় ইমনের মাথায়।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১

” ভাবি হয় শা লা
ইমন মুখ বাঁকিয়ে বলে
“আমি কখন বললাম বোন হয়? এক লাইন বেশি বুঝিস তুই।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩