প্রিয় পূর্ণতা গল্পের লিংক || তানিশা সুলতানা

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

জমিদার গিন্নি গা ভর্তি গহনা দিয়ে সাজিয়েছে পূর্ণতাকে। গহনা দিয়ে যেনো মুরিয়ে ফেলেছে। টকটকে লাল শাড়ি, গা ভর্তি সোনার গহনাতে পূর্ণতার রূপ যেনো দ্বিগু বেড়ে গিয়েছে। জমিদার গিন্নি মমতা বেগম পূর্ণতার রূপে মুগ্ধ।
মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে বেশ কয়েকবার মাশাআল্লাহ আওড়িয়েছে।
এমন মেয়ে তাদের ঘরে যাচ্ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোণের হাসি চওরা হয়ে উঠছে।
এই মেয়ের রূপে তাদের ব্যবসায় রমরমা হয়ে উঠবে।

উঠোনে মানুষ গিজগিজ করছে, ঘরে বসানোর মুরোদ সালাম এর নেই। একখানা চেয়ার দেওয়ারও সামর্থ্য নেই৷ তাই খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে দিয়েছেন। জমিদার আরমান আসেন নি নাতীর বিয়েতে৷ এই ছোট পরিবারে নাতীর বিয়ে দিতে তিনি রাজী ছিলেন না। দশ গ্রামের তাদের সুনাম রয়েছে। শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। আর তারই নাতী কি না ছোট ঘর হতে মেয়ে নিচ্ছে?
মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে গিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইফাদ খেজুরের পাতার পাটিতে বসে পড়েছে সবার আগে। মাথায় তার টুপি, পড়নে সাদা পানজাবি। মূলত বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছে সে। আপাতত তার মাথায় পূর্ণতার রূপ ছাড়া অন্য কিছু চলছে না। মনে মনে সে ছক কষে ফেলেছে। এক সপ্তাহ নিজের সাথে রাখবে পূর্ণকে। ইচ্ছে মতো ভোগ করবে। তারপর পাঠিয়ে দিবে পতিতালয়ে। রূপের যে বাহার খদ্দের শুধু আসতেই থাকবে। এক পূর্ণতাকে দিয়েই তাদের ব্যবসায় রমরমা করে ফেলবে৷
জমিদার বাড়ির বড় বউ শিউলি বেগম মাথায় ঘোমটা টেনে বসে আছে পূর্ণতার পাশে। ছলছল দৃষ্টিতে মেয়েটাকে দেখছে। মনে মনে আফসোস করছে মেয়েটার রূপের জন্য। “ইসস তোমার সৌন্দর্যই তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিলো”

বলতে ইচ্ছে করলেও বলতে পারছেন না তিনি শাশুড়ীর ভয়ে।
মেঝো বউ রেশমা পান চিবুচ্ছে জানালার কাছে বসে। এসবে তার নজর নেই৷ যা হচ্ছে হোক। এতে তার জায় আসে না। ছেলে তো তার না। তার ছেলে হলে অবশ্য সে রুখে দাঁড়াতো৷ শাশুড়ীর সাথে গলা বাড়িয়ে ঝগড়া করতো। তার ছেলের জন্য তিনি শহুরে বড় ঘর হতে মেয়ে আনবে।

ছোট বউ রিমা শাশুড়ীকে সাহায্য করছে। মনে মনে সেও বেশ খুশি। তার অসভ্য বেয়াদব ছেলের জন্য এতো সুন্দর বউ পাবে এটা তার ধারণাতেই ছিলো না। এবার সে গর্ব করতে পারবে বউমার রূপ নিয়ে।
সব কিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিলো। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করবে ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হয় জমিদার বাড়ির বড় নাতী অভিরাজ। বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে। গম্ভীর রগচটা অভিকে ভয় পায় গোটা জমিদার বাড়ির প্রতিটা সদস্য। তার সাথে অভি নামটা শুনলেই কেঁপে ওঠে দশ গ্রামের সাধারণ মানুষজন।

অভি ইফাদ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইফাদ ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। শুকনো ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে পড়ে ইফাদ।
অভি তার বড়বড় ঝাঁকড়া চুল গুলো পেছনে ঢেলে গম্ভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে নেয় ইফাদকে।
তারপর শক্ত গলায় শুধায়
“বিয়ে করার বয়স হয়েছে তোর?
ছাব্বিশ বছরের ইফাদ বড় ভাইয়ের প্রশ্নে কাঁপতে থাকে। অভির সামনে সে সচারাচর আসে না। মুখ দেখেই ইফাদ এর মনোভাব বলে দিতে পারে অভি।
ইফাদ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে কিছু বলতে যায়

” আ…আসলে ভা…..ভাই আ..
বাকিটা শেষ করার আগেই অভি তার শক্তপোক্ত হাত দিয়ে থা*প্প*ড় মেরে দেয় ইফাদ এর চোয়ালে। দু পা পিছিয়ে যায় ইফাদ। স্তব্ধ সকল মানুষ। জমিদারের বড় ছেলে মনোয়ার এগিয়ে আসে।
“অভি কি হচ্ছে?

অভি তার রক্তাক্ত চোখে বাবার দিকে তাকায়। দমে যায় মনোয়ার।
” ইফাদ বিয়ে করবে না। বিয়েটা হবে আমার সাথে।
মমতা বেগম অভির গলার স্বর শুনে এগিয়ে আসে। এবং অভির এমন সিদ্ধান্ত শুনে ভ্রু কুচকে ফেলে। চোখের চশমা ঠিক করে বলে ওঠে
“সিদ্ধান্ত তুমি নিবে?
অভি ইফাদের থেকে টুপিখানা নিয়ে তা নিজের মাথায় চাপিয়ে দাদির দিকে তাকায়।
“ইয়েসসস

ব্যাস এখানে আর কারো কোনো কথা বলার সাহস নেই। ইফাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে অভি বসে পড়ে। কাজিকে ইশারা করে বিয়ে পড়াতে। কাজি দেরি না করে শুরু করে দেয়।
সালাম কোনো কথা বলার সুযোগ পায় না। তবে তার মনোক্ষুণ্ণ হয়েছে। এভাবে একজনের সাথে বিয়ের কথা বলে আরেকজনের সাথে বিয়ে? ব্যাপারটা তার মানতে অসুবিধা হচ্ছে।
তবে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে। জমিদার বাড়ির একটা মানুষও এক ফোঁটা পানি মুখে তুলে নি। আর তারা তুলবেও না।

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়। শিউলির মনটা হালকা হয়েছে। নিঃসন্দেহে তার ছেলে একজন ভালো মানুষ। হ্যাঁ অনেকটা রাগী এবং শক্তপোক্ত তবে মনটা পরিষ্কার।
বদমাইশি নেই তার মনে। তবে পূর্ণতার মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়ে যাবে।
বিয়ে শেষ হতেই মমতা বেগম দাঁড়িয়ে যায়। এবং সবাইকে চলে যেতে বলে তিনিও হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। তার পেছনে যায় রেশমা এবং রিমা। পূর্ণতা অবাক হয়। মানুষ গুলো কিছুই খাবে না? তার মা এবং বাবা কতো কষ্ট করে রান্না করেছে তারা খাবে বলে।

গরীব বলে তারা অপমান করছে। ঘৃণা করে কিছু খাচ্ছে না।
শিউলি পূর্ণতার হাত ধরে
” চলো মা
পূর্ণতা উঠে না। মাথা নিচু করে বলে
“আপনারা না খেয়ে চলে গেলে আমি যাবো না আপনাদের সাথে।
দরজার পাশেই ছিলো অভি। পূর্ণতার কথা শুনতে পায় সে। এবং সাথে সাথেই হুঙ্কার ছেড়ে বলে ওঠে
” না খেয়ে কেউ এক পা নড়লে পা ভেঙে দিবো আমি।

সাথে সাথে থেমে যায় সবাই। থামে মমতা বেগমও। ইফাদ এক পাশে বসে রাগে ফুঁসছে। পূর্ণা কেঁপে ওঠে।
অভি নিজের বক্তব্য শেষ করে রুমে ঢুকে পড়ে। শিউলিকে বলে
“আপনি খাইয়ে নিয়ে আসুন সবাইকে
আমি এই মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি।

বলেই পূর্ণতার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। ভাড়ি শাড়ি গহনা পড়ে লোকটার পায়ের সাথে পা মেলাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে পূর্ণতার। হোঁচট খেতে খেতে নিজেকে সামলে নিয়েছে কয়েকবার। এক বার পেছন ফিরেও তাকিয়েছিলো। দেখতে পেয়েছে ভাই বোন দুটোকে। কিন্তু মা বাবাকে শেষ বার দেখতে পায় নি।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২