মেজর পর্ব ৩

মেজর পর্ব ৩
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মুশফিক ফজরের নামায পড়ে এক কাপ চা খেয়ে রেডি হয়ে নেয়, সে কখনোই ভারী নাস্তা করে না,খাবারদাবারের ব্যাপারে সে খুবই সতর্ক।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে ভাবে মেয়েটার বোধহয় নামাজে অনীহা আর নামাযে অনীহা না হলে কেউ আল্লাহর এতো বড়ো নিয়ামত ফজরের সালাত আদায় করতে ভুলে না।ফজরের নামায আমাদের যেমন পরকালে যেমন দরকারী তেমন ইহকালেও প্রয়োজনীয়।

ঘুম থেকে উঠা,সকালের মিষ্টি বাতাস,হাটাহাটি,শরীর সুস্থ আর উৎফুল্ল থাকা,মন ফ্রেশ হয়ে যাওয়া,সারাটাদিন ভালো কাটা সবই যেনো নেয়ামত।মিতুকেও আস্তে আস্তে অভস্থ করে নেবে,আল্লাহ চাইলে তার স্ত্রী তার মতোই আল্লাহর আদেশ মানার চেষ্টা করবে।আয়নায় স্ত্রীকে দেখে বুকে চঞ্চল হরিণ যেনো পুরোদমে দৌড়াতে শুরু করে।মন মুশফিককে সাবধান করে দেয়

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এই যে সুবোধ বালক,ঘমন্ত কোনো নারীর দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকা ঠিক না।”
মুশফিক হাসে মনের সাথে অদৃশ্য মঞ্চে তর্ক করতে দাঁড়িয়ে বললো,
“ঘুমন্ত নারীটা আমার স্ত্রী।কাগজে কলমে,সাক্ষী রেখে তাকে আমি নিজের জন্য হালাল করে নিয়েছি।এখন ঘুমিয়ে জেগে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই তাকে আমি মন ভরে দেখতে পারবো।”
মন পরিহাস করে বললো,

“স্ত্রী!তাহলে হাত ছুঁয়েও দেখলেনা কেনো?আমাকে এ কেমনতর শাস্তি দিচ্ছো?বউকে কি ভালোবাসা যাবে না?”
“সে আমার বউ,এতো জোরজবরদস্তির কি আছে?আগে আমাদের সম্পর্ক
সহয হোক তারপর বাকিসব হয়ে যাবে।”
“চলে যাচ্ছো যে?সম্পর্ক সহয হবে কি করে?”
“সারাজীবনের জন্য তো যাচ্ছি না। আবার আসবো।”

মন বেচারী বোধহয় সুন্দরী রমনীর আদুরে সানিধ্য চাইছিলো তাইতো মুশফিকের কথায় রেগে গেলো।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“বয়স যে ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল কি আছে?”
“আছে।”
“তাও এতো বাহানা?”

মুশফিক আয়না ছেড়ে মিতুর সামনে গিয়ে তাকায়।তার ঘুমন্ত স্ত্রীকে কি স্নিগ্ধ লাগছে।কপালের পাশে ছড়িয়ে থাকা এলোচুলে চেহারায় এক বাচ্চা বাচ্চা ভাব চলে এসেছে।মুশফিকের চোখ এক দৃষ্টিতে মিতুকে দেখে নেয়।তারপর আলতো স্বরে মিতুকে ডাকে।
“মিতুল,এই মিতুল।আমি চলে যাচ্ছি।তুমি উঠবেনা?”

গম্ভীর শক্ত কন্ঠের অধিকারী পুরুষ মানুষের এমন নরম মায়ামায়া ডাক শুনে গভীর ঘুমে নিমজ্জিত মিতু আধোআধো দৃষ্টি মেলে তাকায়।খুব সন্নিকটে মুশফিককে দেখে সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।মুশফিক কাছে আসায় মিতু লক্ষ করে মেজরের ডানপাশের ভ্রুতে একটা বড়ো কাটা দাগ, শুকিয়ে গেছে কিন্তু রেখে গিয়েছে আঘাতের চিহ্ন।

এই কাটা দাগটার জন্যই চোখের তাকানোর ভঙ্গিমা আরো দৃঢ় লাগে,তাকালে মনে হয় চোখের দৃষ্টি খুব প্রখর,যেনো বুকের এফোড় ওফোড় করে দেবে।মুশফিকের কথাগুলো ঘুমন্ত মিতুর মস্তিষ্কে ধরা দিতে কিছুটা সময় লাগলো।যখন বুঝতে পারলো তখন ধরফর করে উঠে বসে। মুশফিকের শরীরের দিকে তাকিয়ে বুঝলো রেডি হয়েই তাকে ডেকেছে।বিয়ের পরের দিন বর চলে যাচ্ছে!কেনো?সে হতবিহ্বল হয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।তুতলে তুতলে বললো,

“চলে যাচ্ছেন!”
মুশফিকের মাঝে মানুষের মন বুঝার এক অসীম গুন রয়েছে।সে মিতুর হতবিহ্বল চেহারার দিকে তাকিয়ে তাকে শান্ত করতে বললো,
“যদিও হাতে আরো পাঁচ দিনের ছুটি ছিলো কিন্তু গতকাল রাতে উপর বিভাগ থেকে ফোন এসেছে তাই হঠাৎ করেই যাওয়া।”
মিতু আস্তে করে বললো,
“যাবেনই?”

মুশফিক নিবিড়ভাবে মিতুর দিকে তাকায়।চোখ দিয়ে যেনো আসস্ত করতে চায়।মুখে বলে,
“হুম।যেতেই হবে।”
সাহেরা খাতুন রুমের বাহির থেকে ছেলেকে ডাকে।মুশফিক মিতুর দিকে তাকায়,তারপর ব্যাগ হাতে উঠে দাঁড়ায় দরজার কাছে গিয়ে পিছু ফিরে আরেকবার মিতুর দিকে তাকায়।মিতু তখন মুশফিকের দিকে তাকিয়ে ছিলো,মিতুকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে মুশফিকের খারাপ লাগলো।মুশফিক মূলফটক দিয়ে বেরোনোর সময় সবার থেকে বিদায় নিয়ে তার রুমের দিকে তাকায়ে। অল্প চেনা এক রমনী দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছে,ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুশফিক দাঁড়ায়,হাতের ব্যাগ সাইড টেবিলে রেখে বললো,

“একটু আসছি।”
হনহন পায়ে সে হেটে রুমের দিকে যায়।
মূলত মুশফিকের সাথে মিতুর তেমন একটা ভাব বিনিময় হয়নি তারপরেও হঠাৎ করে তার চলে যাওয়া যেনো মিতুকে কষ্ট দিচ্ছে।বিষন্ন অন্তরে কেমন ব্যথা অনুভব হয়।মুশফিককে বেরিয়ে যেতে দেখে মূহুর্তেই মিতুর চোখ ছলছল করে উঠে,তখন মুশফিক পেছনে ফিরে তাকায়,তারপর ফিরে আসে।

মিতু দরজার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।মুশফিক তার কাছে এসে দাঁড়ায়।তার জন্যই যে রুমে এসেছে তা বুঝতে পারে।
মেয়েটার সাথে তার এখন অবধি ভালো করে কথা বলাও হয়নি,না কাছে আসা হয়েছে তাহলে চোখের এমন ছলছল হওয়ার কারণ কি?মুশফিক বললো,
“কি হয়েছে?”

বুঝধার জ্ঞানসম্পন্ন মেয়ে মুশফিকের সামান্য কথায় নিশ্চুপভাবে কেঁদে ফেলে।তার বারবার মনে হচ্ছে মুশফিক চলে গেলে তার কি হবে?মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“কাঁদছো কেনো?আব্বুর বাসায় যাবে?আমি আম্মুকে বলে গিয়েছি যেনো আজকে বিকালে তোমাকে পাঠায়।”
মিতু মাথা নাড়ে।মেজর!এই হাদারাম নাকি মেজর।উনি চলে যাওয়ার বিরহেই তো সে কাঁদছে আর উনি কিনা বলে আব্বুর বাসায় যাবে?সে বললো,

“আপনি কবে আসবেন?”
বালিকা যে তার চলে যাওয়াতেই কষ্ট পাচ্ছে তা মুশফিক বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে কিন্তু ওর মুখ দিয়ে এই কথাটা বের করার জন্যই আব্বুর বাসায় যাওয়ার কথা বলেছে।মিতুর কথা শুনে মুশফিক মিতুর আরেকটু কাছে এসে বললো,

“তুমি কি চাচ্ছো আমি না যাই।”
“হুম।”
“সত্যি চাও।”
মিতু তাকিয়ে থাকে।মুশফিক মিষ্টি করে হাসে।মিতু খেয়াল করে মুশফিকের হাসি খুব সুন্দর।মুশফিক বললো,
“নিয়মিত নামায পরবে।ভালো থেকো,মিতুল।”

মুশফিক চলে যায়।মিতু ফ্রেশ হয়ে আসে,ফ্রেশ হয়ে আসার পরেও মুশফিকের কথাটার রেশ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে।সারা বাসায় সবাই আছে অথচ মিতুর কাছে সব খালি খালি লাগে।সাহেরা বেগম তাকে হেটে হেটে সব দেখায় কিন্তু মিতুর যেনো কোনোকিছুতেই মন নেই।সাহেরা বেগম তা লক্ষ করে বললো,
“মিতু!তোমার কি মন খারাপ?”

মিতু মাথা নাড়ে।সাহেরা বেগম মিতুর মন খারাপের কারণ বুঝতে পারে।তারপর বিকালেই মিতুকে তার বাবার বাসায় দিয়ে আসা হয়।সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মুশফিক বাড়ি আসলেই আবার মিতুকে নেয়া হবে।
সবার সাথে হাসিখুশি কথা বলে মিতু তার রুমে আসে।রুমে এসেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে।নিভু নিভু কন্ঠে বলে,
“মেজর!মেজর!আমি কষ্ট পেয়েছি।খুউব।”

মেজর পর্ব ২

আরেক গম্ভীর পুরুষ খাগড়াছড়ির নির্দিষ্ট চেয়ারে ল্যাপটপের সামনে বসে আছে।এই প্রথমবারের মতো তার কাজে মন বসছে না,কোমল এক তরুনী তার হৃদয় দখল নিয়ে ফেলেছে।সে ল্যাপটপ অফ করে বাহিরে যায়।মুক্ত বাতাস যেনো তার কানে কানে বলে যায়,
“মেজর!মেজর!”

মেজর পর্ব ৪