প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৭

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা

বিয়ের পরে মেয়েদের একমাত্র চাওয়া থাকে “স্বামীর থেকে একটু যত্ন, সময়, ভালো কিছু মুহুর্ত”
পূর্ণতাও তার ব্যতিক্রম নয়৷ তবে পূর্ণতা পূর্ণ। তার স্বামী তাকে যত্ন করে। এই যে ভাত মেখে তুলে দিচ্ছে পূর্ণতার মুখে। পূর্ণতা সুদর্শন পুরুষটিকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে খেয়ে নিচ্ছে ভাত গুলো। পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে নিজেকে। মানুষটার হাতের খাবার এতো মজা কেনো?
শেষ লোকমা ভাত পূর্ণতার মুখে তুলে দিয়ে অভি হাত ধোঁয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

“আমাকে আপনি আগে থেকেই চিনতেন?
হঠাৎ পূর্ণতার এমন প্রশ্নে থমকে যায় অভি। তাকায় পূর্ণতার মুখ পানে। পূর্ণতা তাকিয়েই ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।
” এতো যত্ন করেন আগলে রাখেন শুধুমাত্র বউ বলে? উহু

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এমনটা নয়। আপনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন দেখতেন এমনকি ভালো টালোও বাসতেন। তাই না?
গম্ভীর মুখ খানায় বোধহয় একটুখানি হাসির ঝলক দেখা গেলো? কালচে ওষ্ঠদ্বয় বোধহয় একটু প্রসারিত হলো।
পূর্ণতা নরেচরে বসে। তার আন্দাজে ছোঁড়া ঢিল একদম জায়গা মতো গিয়ে লেগেছে। ঠিকই আন্দাজ করেছিলো।
অভি এঁটো থালাটা রেখে দেয় খাটের পাশে থাকা টেবিলে। গামছায় হাত মুছে বিশাল আয়নার সামনে থেকে চিরুনি খানা এনে বসে পূর্ণতার পাশে। ইশারায় পূর্ণতাকে ঘুরতল বলে। পূর্ণতা বাধ্য মেয়ের মতো ঘুরে বসে।
অভি পূর্ণতার বিশাল চুল গুলোর খোপা খুলে দেয়। মুহুর্তেই বিছানায় এবং অভির কোলে বিছিয়ে পড়ে ঘনো কালো চুল।

অভি যত্ন নিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে।
অভির নিশ্চুপতায় পূর্ণতা ধৈর্য হারা হয়। আবারও প্রশ্ন করে ওঠে
“বললেন না যে? বললে কি হবে? আমি তো আপনার বউ ই। তাই না? আপনি আর আমি কি আলাদা না কি?
” হুমম চিনতাম। দেখেছিলাম।

গম্ভীর স্বরে বলে অভি। খুশিতে পূর্ণতার চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে। ঠোঁটে কোণের হাসি চওড়া হয়।
“তার মানে শুধুমাত্র আমাকে বাঁচাতে বিয়ে করেন নি। আমাকে ভালো লাগতো তাই বিয়ে করেছেন?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অভি। গম্ভীর সুর একটু নরম হয়ে আসে।
” তোমাকে বাঁচাতে বিয়ে করেছিলাম। অভি নিজের পছন্দকে কখনোই স্বইচ্ছায় নরকে নিয়ে আসবে না।
পূর্ণতার হাসি মুখ খানা চুপসে যায়। কালো হয়ে আসে ফর্সা মুখ খানা।

“আম
পূর্ণতা কথা শেষ করার আগে অভি বলে।
” কথা বলিও না পূর্ণতা। আমার ঘুম প্রয়োজন। তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমতে চাই আমি।
পূর্ণতা আর কথা বলে না। অভি বিনুনি গেঁথে দেয় লম্বা চুলে। অতঃপর চিরুনি রেখে এসে বাতি নিভিয়ে দেয়। টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে।

পূর্ণতা অভির গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে।
“তোমার ছোট্ট বুকে মাথা রাখলে তুমি কি কষ্ট পাবে? ব্যাথা লাগবে? আমার ভর নিতে পারবে তুমি?
অদ্ভুত আবদার। পূর্ণতা নিজেও জানে সে অভির ভর নিতে পারবে না। তবুও সাহস দেখায়। অভির বুকে হাত রাখে। মুহুর্তেই অভি পূর্ণতাকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। মাথা রাখে বুকের মধ্য খানে৷ আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে পূর্ণতা।
” আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই পূর্ণতা। তোমাকে নিয়ে সুখের ঘর বাঁধতে চাই। তোমাকে খুব ভালোবাসতে চাই। আমি তোমার হতে চাই।
বিরবির করে বলে অভি। পূর্ণতা চুপচাপ শুনতে থাকে। জবাব দেয় না।

জমিদার বাড়ির আনাচে কানাচে চলছে কানাঘুষা। পূর্ণতা রাতে ঘুমিয়েছিলো অভিকে জড়িয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অভিকে পায় নি৷ মনটা ভীষণ খারাপ হয় পূর্ণতার। না বলে লোকটা কোথায় চলে গেলো?
শাড়ি সামলে চলাফেরা করতে বেশ কষ্ট হয় পূর্ণতার। তবুও মুখ ফুটে বলে না। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আজকেও সকাল বেলা রান্না ঘরে উঁকি মারে পূর্ণতা। কিন্তু আজকে কোথাও কমলা নেই। অথচ রান্নার দায়িত্ব থাকে কমলার ওপরে।

কমলার বদলে নতুন একটা মুখ দেখা যাচ্ছে আজকে। কমলাকে কি তাহলে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দিলো?
রিমা মন মরা হয়ে বসে আছে৷ অথচ সে সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকে। সাজগোজ করতে থাকে। শাশুড়ীর পাশে পাশে থাকে
বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে পূর্ণতা ঠিক বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কি হয়েছে ধরতে পারছে না।

মমতা বেগম খাচ্ছেন। পূর্ণতা এক পলক তাকে দেখে মিষ্টির কামড়ার দিকে তাকায়। কাল থেকে মিষ্টি পূর্ণতার সাথে কথা বলছে না। তেমন মিশতেও আসছে না। তাকে কেউ না করেছে বোধহয়।
কিন্তু পূর্ণতা তো না শুনবে না। তাই সে পা বাড়ায় মিষ্টির কামড়ার দিকে৷ তখনই কানে আসে দুজন কাজের লোকের কানাঘুষা।

“সালাম আছে না? রিকশা চালায়? তার যে ছোট মাইয়া ছিলো। সেই মাইয়ার লাশ পাওয়া গেছে স্কুলের পেছনে। কারা জানি ধ র্ষ ণ করে ফেলে রেখে গেছিলো৷
পা থেমে যায় পূর্ণতার। বুকের ভেতর ধরফর করতে থাকে। ভয়ে হাত পা সিঁটিয়ে আসছে। গ্রামে অনেক সালাম নামের মানুষ থাকলেও তাদের মধ্যে তার বাবাও রয়েছে। রয়েছে ছোট বোন।
পাখি ঠিক আছে তো?
পূর্ণতা মনে মনে বলে

” আল্লাহ আমার পাখিরে ঠিক রাইখো। আমার পাখির যেনো কিছু না হয়। আল্লাহ পাখির সব কষ্ট আমাকে দিও। তবুও আমার পাখিকে ভালো রাইখো। এই সমাজ ভীষণ খারাপ। এখানে মানুষরূপী অনেক জা নো য়া র রয়েছে। তাদের নজর থেকে আমার পাখিকে দূরে রাইখো। পাখির কিছু হলে আমি বাঁচবো না আল্লাহ। আমি আমার পাখিকে তোমার ভরসায় রেখে দিলাম”

নিজেকে স্বাভাবিক করে পূর্ণতা মিষ্টির রুমে যায়। মিষ্টি মন মরা হয়ে বসে ছিলো।
“মিষ্টি মন খারাপ কেনো তোমার?
মিষ্টি পূর্ণতাকে দেখে কান্না আটকে রাখতে পারে না। দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
পূর্ণতা মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
” কি হয়েছে মিষ্টি আমাকে বলো?
মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়

“দাদাভাই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। কালকেই আমার বিয়ে দিয়ে দিবে
কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে পূর্ণতার। তার বাবার টাকা নেই খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই তাই বিয়ে দিয়েছে
ছোট বয়সে। কিন্তু জমিদার বাড়ির একমাত্র মেয়ে। টাকা পয়সার অভাব নেই। তাকে কেনো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে?

” তোমাকে তো তোমার দাদাভাই ভীষণ ভালোবাসে। তাকে বলো তুমি বিয়ে করবে না। তাহলেই তো হয়।
মিষ্টি পূর্ণতাকে ছেড়ে আবারও বসে পড়ে খাটে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে
“দাদাভাই আমার কথা শুনছে না। সে বিয়ে দিবেই।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতা। কিছু বলতে যাবে তখনই হাঁপাতে হাঁপাতে মিষ্টির রুমে প্রবেশ করে ইফতি।
” পূর্ণতা আমার সাথে এসো।
বলেই পূর্ণতার হাত ধরে।

“কোথায় যাবো?
“আমি যেখানে নিয়ে যাবো।
পূর্ণতা ইফতির হাত ছাড়িয়ে দেয়।
” উনি না আসা পর্যন্ত আমি কোথাও যাবো না। উনি আমাকে আজকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবে। বোনুকে দেখবো, আব্বাকে দেখবো, মাকে জড়িয়ে ধরবো।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৬

এখন আমি কোথাও যাবো না ভাইয়া।
ইফতি হতাশার দৃষ্টিতে তাকায় পূর্ণতার দিকে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে জবাব দেয়
“তোমার উনি আর ফিরবে না।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৮