কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৩

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৩
নুজাইফা নূন

-” হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে নক না করে আবদ্ধ স্যারের কেবিনে প্রবেশ করার?কোনো স্যার বা ম্যাডামের কেবিনে প্রবেশ করতে গেলে তার থেকে অনুমতি নিতে হয়। এই সামান্য সেন্স টুকু ও নেই তোমার? কেমন নির্লজ্জ মেয়ে তুমি হ্যাঁ?”

-” সরি ম্যাম।আমি জানতাম এটা আবদ্ধ স্যারের কেবিন। কিন্তু কেবিনে যে বেডরুমের কাজ চলছে এটা আমি বুঝতে পারি নি ম্যাম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ইউ ব্লাডি গার্ল !ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হু ইউ আর টকিং টু? তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো বলেই প্রকৃতি ম্যাডাম স্রোতের গালে থা’প্প’ড় মা’রা’র জন্য হাত তুললে আবদ্ধ এসে প্রকৃতি ম্যাডামের হাত ধরে বললো,
-“প্লিজ কুল ডাউন ম্যাম। মেয়েটা ঠিক বুঝতে পারে নি। কিন্তু আপনি তো অবুঝ নন। মেয়েটা আপনার ছাত্রী‌।আপনার উচিত ছিলো তাকে বুঝিয়ে বলা। কিন্তু আপনি সেটা না করে তার গায়ে হাত তুলছেন? আই ডিড নট এক্সপেক্ট দ্যাট ফর্ম ইউ।

-” আপনি ঐ থার্ড ক্লাস মেয়ের জন্য আমাকে ইনসাল্ট করছেন স্যার?আই কান্ট বিলিভ দিস।”
-” আ’ম নট ইনসাল্টিং ইউ ম্যাম।ইউ আর থিংকিং রং।”
-” বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা যে কোনো পারমিশন ছাড়া আপনার কেবিনে প্রবেশ করেছে।এর জন্য তাকে আপনি কি শাস্তি দিবেন স্যার?”

-” স্রোত কে আমি ডেকে পাঠিয়েছি।সো তাকে শাস্তি দেওয়ার কোনো প্রশ্নেই আসে না। আপনি এখন আসতে পারেন ম্যাম‌।আবদ্ধ বলার পরেও প্রকৃতি ম্যাডাম ঠাঁই সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে আবদ্ধ বললো,ইউ নো ভেরি ওয়েল দ্যাট আই ডু নট লাইক টু রিপিট দ্যা সেইম থিং।”

-” আবদ্ধের কথায় অপমান বোধ করলো প্রকৃতি ম্যাডাম।সে রক্তচক্ষু নিয়ে স্রোতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,যতোই তোমার এই সুন্দর চেহারা দেখিয়ে আমার আবদ্ধ কে ঘায়েল করতে চাও। কোন লাভ হবে না মাই ডেয়ার স্টুডেন্ট।আবদ্ধ আমার । শুধু মাত্র আমার।আজ চার চার টা বছর আমি আবদ্ধ কে আমার কলিজার ভেতর গেঁথে রেখেছি।

শুধু মাত্র আবদ্ধের জন্য এতো ভালো ভালো কোটিপতি ছেলে হাতছাড়া করেছি। আর তুমি কিনা চার আঙ্গুলে একটা মেয়ে হয়ে আমার আবদ্ধের দিকে হাত বাড়িয়েছো? এটা তো আমি হতে দিবো না বলে প্রকৃতি ম্যাডাম আবদ্ধের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। তার পিছু পিছু স্রোত ও আবদ্ধ কে কিছু না বলে তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো।স্রোত কে বাইরে দেখা মাত্রই আরফা এগিয়ে এসে স্রোতের দুই বাহু ধরে বললো,

-” বাবুই কি হয়েছে তোর? তোর চোখে পানি কেন? প্রকৃতি ম্যাম কে রাগান্বিত হয়ে ভাইয়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম। আবার তুই কাঁদছিস।কি হয়েছে বল না বাবুই?”
-” কিছু না।”
-” তুই তো ভাইয়ার কেবিনে তোর ফোন আনতে গিয়েছিলি। কিন্তু তুই ফোন না এনে কাঁদতে কাঁদতে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলি। ভাইয়া কিছু বলেছে তোকে?”

-” না।”
-” তাহলে নিশ্চয় প্রকৃতি ম্যাম তোকে অপমান করেছে? আচ্ছা তুই এটা বল ম্যাম ভাইয়ার কেবিনে এতোক্ষণ যাবত কি করছিলো ?”
-“প্রকৃতি ম্যাডামের কথা শুনে স্রোত অনেক টা চিৎকার করে বললো, এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না বাবুই।আমি তো বলছি কেউ কিছু বলে নি।শুনতে পারছিস না তুই?”
-” তোকে আজ বড্ড অচেনা লাগছে রে বাবুই।মনে হচ্ছে আমি এই বাবুই কে চিনি না। তুই আমার সাথে এমন আচরন করছিস কেন বাবুই? আমি তো তোকে খারাপ কিছু বলি নি।জাস্ট জানতে চেয়েছি তোর কি হয়েছে ? তুই ঠিক আছিস কি না?”

-” সরি বাবুই।আমি তোকে আঘাত দিয়ে কথা বলতে চাই নি। আমার ভালো লাগছে না বাবুই।আমি বাসায় যাবো।”
-” ঠিক আছে চল।”
-” স্রোত বাসায় ফিরে কারো সাথে কথা না বলে চুপচাপ আবদ্ধের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ না করেই বালিশে মাথা গুঁজে দিয়ে কান্না করতে লাগলো। বারবার তার সামনে আবদ্ধ স্যারের কেবিনের দৃশ্য ভেসে উঠছে।সে স্পষ্ট দেখেছে প্রকৃতি ম্যাম আবদ্ধ স্যারের দিকে ঝুঁকে তাকে কিস করছে।

যদিও আবদ্ধের স্রোতের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি। তবু ও স্রোত এই দৃশ্য দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নি।তার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিলো।স্রোত ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না যে মানুষ টাকে তাকে সারাক্ষণ অপমান অপদস্থ করে তার সাথে অন্য একটা মেয়েকে চুম্বনরত অবস্থায় দেখে তার কেন এতো কষ্ট হচ্ছিলো? কেনো নিজেকে পাগল পাগল লাগছিলো

?স্রোত ভুলতে চাইলেও বারবার সেই দৃশ্য ‌স্রোতের চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।স্রোত কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।আরফা ফ্রেশ হয়ে এসে স্রোত কে লাঞ্চ করার জন্য ডাকতে এসে দেখে স্রোত ঘুমিয়ে রয়েছে। কাঁচা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালে যদি স্রোতের মাথা ব্যথা করে ভেবে আরফা স্রোতের মাথায় হাত বুলিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে যায়।স্রোত কতোক্ষণ ঘুমিয়েছে সে হিসেব নেই তার।তার ঘুম ভাঙ্গে আবদ্ধের ডাকে।আবদ্ধ স্রোতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আবদ্ধ কে দেখা মাত্রই স্রোত আবদ্ধের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,

-” আপনি কখন এসেছেন স্যার?”
-” যখন তুমি ঘুমোচ্ছিলে। কি হয়েছে তোমার?এখনো ড্রেস চেঞ্জ করো নি, ফ্রেশ হ‌ও নি।আবার শুনলাম দুপুরে লাঞ্চ ও করো নি।হোয়াই?”
-” ঐ একটু মাথা ব্যথা করছিলো ।তাই কলেজ থেকে ফিরে শুয়ে ছিলাম। কিন্তু কখন যে চোখ লেগে এসেছে বুঝতে পারি নি।সরি স্যার।”

-” অযথা কান্না করলে মাথা ব্যথা তো করবেই।কান্না করেছো কেন?চোখ মুখের কি বাজে অবস্থা হয়েছে।দেখতে একদম ই ভালো লাগছে না। শোনো মেয়ে আমি তোমার পাপার থেকে শুনেছি তুমি নাকি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো না। ঠিক টাইমে গোসল করো না। আমার বাড়িতে এসব একদম ই চলবে না।সময়ের কাজ সময়ে করবে।”
-” আবদ্ধের সামনে স্রোত কিছুতেই নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইছে না। কিন্তু আবদ্ধের এমন দরদ মাখা কথা শুনে স্রোতের যেন ভেতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসতে লাগলো। আবদ্ধ আরফার থেকে সবটাই শুনেছে।আবদ্ধ বুঝতে পারছে স্রোতের মনে প্রকৃতি ম্যাডাম কে নিয়ে বাজে ধারণা তৈরি হয়েছে।আবদ্ধ স্রোতের ধারণা পাল্টে দিতে স্রোতের হাত ধরে বললো,

-” দেখো স্রোত আমি জানি তুমি তখনকার ঘটনা সিরিয়াস ভাবে নিয়েছো। কিন্তু তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছু হয় নি। তুমি ভুল ভাবছো স্রোত। না প্রকৃতি ম্যাডামের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে ।আর না তার সাথে আজ আমার কিছু হয়েছে। স্রোত তৎক্ষণাৎ এক ঝটকায় নিজের ‌হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
-” আপনি ছুঁবেন না আমাকে।আমি স্পষ্ট দেখেছি প্রকৃতি ম্যাম আপনাকে কিস করছিলো।আর আপনি ও চুপচাপ বসে মজা নিচ্ছিলেন।”

-” আরে বাবা তুমি ভুল দেখেছো।প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড । এরকম কিছুই হয় নি।”
-” স্রোত আবদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো, আমার যা বোঝার সবটা বোঝা হয়ে গিয়েছে।আমি আর কিছু বুঝতে চাই না।আমি থাকবো না এখানে।আমি এক্ষুনি পাপা কে কল করে বলবো আমাকে নিয়ে যেতে।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১২

আপনি আসলেই খুব খারাপ।আপনি সবার সামনে নিজেকে যতটা ভদ্র দেখান ।ততোটা ভদ্র আপনি নন।আমি এক্ষুনি এই মূহুর্তে এই বাড়ি থেকে চলে যাবো বলে স্রোত সাইফুল ভূঁইয়া কে কল দেওয়ার আগেই আবদ্ধ স্রোত কে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৪