কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১২

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১২
নুজাইফা নূন

-” আমি রোমান্টিক হলে সহ্য করতে পারবেন তো?”
-” মানে?”
-” মানে এটাই যে আপনার ফোন এখন আমার কাছে থাকবে।বাসায় ফেরার আগে আমার কেবিন থেকে ফোন নিয়ে যাবেন মিস টু পাশ মহিলা।”

-“এটা অন্যায় স্যার।”
-” কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সেটা আপনার থেকে আমার শিখতে হবে না মিস।এখনো সময় আছে পরীক্ষায় মনোযোগ দিন।প্রশ্ন দেখে বোঝার চেষ্টা করুন।আমি জানি আপনি চেষ্টা করলে এই ম্যাথ টা পারবেন।এটা চার চ্যাপ্টারের লিজের ম্যাথ।যেটা আমি ক্লাসে একবার নয় বার বার করিয়েছি।লিজ থেকে পরীক্ষায় ১০ নাম্বারের একটা ম্যাথ থাকবে।আবার বেশি ও থাকতে পারে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সো পড়াশোনায় মনোযোগী হন বলে আবদ্ধ স্রোতের ফোন পকেটে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।আবদ্ধ যেতেই স্রোত ভেংচি কেটে বললো, হুঁ পড়াশোনায় মনোযোগী হন বললেই হয়ে গেলো।নিজে তো আর পড়ছেন না।নিজে যদি পড়তেন তাহলে বুঝতে পারতেন পড়াশোনা করা কতো কঠিন।”
-” স্রোত কে বকবক করতে দেখে আরফা স্রোতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, কিরে বাবুই লেখা বাদ দিয়ে কি এতো বকবক করছিস?”

-“আমার বকবক করাটা তোর চোখে পড়ছে।আর তোর ভাই যে এতোক্ষণ ভাষণ দিয়ে গেলো সেটা দেখলি না?”
-” ভাইয়া নিশ্চয় তোর সাথে প্রেম করতে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো না? যা বলেছে তোর ভালোর জন্যই বলেছে । তুই খুব ভালো করে জানিস ভাইয়ার জন্য কতো সুন্দরী , শিক্ষিতা , চাকরিজীবী মেয়েরা পাগল। যাদের দিকে ভাইয়া ফিরেও তাকায় না। সেখানে তুই না চাইতেও ভাইয়া কে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিস। তুই একজন প্রফেসর এর ওয়াইফ বাবুই। নিজের অবস্থান টা একবার বোঝার চেষ্টা কর।

একজন প্রফেসর এর ওয়াইফ হয়ে পড়াশোনায় এমন ফাঁকি বাজি মানায় না বাবুই।তোর ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের রেজাল্ট তেমন ভালো নয়। টেনেটুনে ইমপ্রুভমেন্ট দিয়ে সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছিস। এই দুই টা ইয়ার যদি ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়িস। তুই চাইলেই ভালো রেজাল্ট করতে পারবি বাবুই। তুই গর্ব করে বলতে পারবি তুই প্রফেসর মুনফাসিল আবদ্ধের স্ত্রী।”

-” পড়াশোনা করতে ভাল্লাগে না আমার।এটা কি আমার দোষ বল? ভেবেছিলাম বিয়ে হলে পড়াশোনা করা লাগবে না। কিন্তু দ্যাখ কি কপাল আমার? এমন মানুষের সাথেই পাপা আমার বিয়ে দিলো যে আমার বাসর রাতেও আমাকে পড়ানোর হু’ম’কি দেন।যেখানে বিয়ের পরের দিন মেয়েরা সুন্দর করে সেজেগুজে ব‌উ হয়ে বসে থাকে।সেখানে আমাকে বিয়ের পরেও দিন ও ভার্সিটি আসতে হয়েছে।ক্লাস করতে হচ্ছে। এমন দুঃখের কথা আমি কার কাছে বলবো?”

-” তুই আজ থেকে আমার সাথে ভাইয়ার কাছে পড়বি।”
-” আমি তো বাইরের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি। সেখানে যে ম্যাথ করতে দেয় সেগুলোই করে শেষ করতে পারি না।আবার তোর ভাইয়ার কাছে পড়বো? আমি এতো প্যারা নিতে পারবো না ভাই।”
-” বাইরের স্যারের কাছে আর পড়তে হবে না তোর। তুই আমার সাথে ভাইয়ার কাছে পড়বি।এটাই ফাইনাল। অবশ্য আমি না বললেও ভাইয়া তোকে এই ব্যাপারে বলতো।”

-” স্রোত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবদ্ধ গম্ভীর কণ্ঠে বললো, মিস আরফা এটা আপনার গল্প করার জায়গা নয়। আপনাদের যদি গল্প করার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনার বান্ধবী কে নিজেদের বাড়ি ইনভাইট করুন। তারপর ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াতে খাওয়াতে দুজনে মনের সুখে গল্প করুন।সেখানে আপনাদের কেউ বিরক্ত করবে না।আর যদি আপনাদের আমার ক্লাস ভালো না লাগে দরজা খোলা আছে আপনারা বেরিয়ে যেতে পারেন।”

-” সরি স্যার।সাচ এ মিস্টেক উইল নেভার হ্যাপেন এগেইন।”
-” আর ইউ শিওর?”
-” ইয়েস স্যার।”
-” আই ফরগিভ লাইক দিস টাইম।নেভার মেইক দি সেইম মিস্টেক নেক্সট টাইম।উইল ইউ রিমেম্বার?”
-” ইয়েস স্যার।”
-” গুড ।ক্যারি অন।”

-” আবদ্ধের কথায় বেশ ‌অপমাপ বোধ করলো স্রোত।সে চুপচাপ প্রশ্ন দেখতে লাগলো।প্রশ্ন টা ভালো করে পড়ে বুঝতে পারলো সে ম্যাথ টা পারবে। কিন্তু ওয়ার্কিং শেষ করতে করতেই টাইম শেষ হয়ে যায়। দপ্তর এসে সবার খাতা জমা নিয়ে নেয়। স্রোতের মন খারাপ হয়ে যায়। কেন সে ম্যাথ টা আগে থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়লো না এটা ভেবে।আবদ্ধ স্যার যাওয়ার পর সৈকত স্যার ক্লাসে আসে।তিনি কস্ট একাউন্টিং ক্লাস নেন।সৈকত এসে স্রোতের মন খারাপ দেখে বুঝতে পারে আবদ্ধের ক্লাসে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে।সৈকত এসে স্রোত কে বললো,

-” কি হয়েছে স্রোত? আবদ্ধ আবারো তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছে? আমি বলি কি তুমি আবদ্ধের নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে কমপ্লেইন করো। তারপর বাকি টা আমার হাতে ছেড়ে দাও।দেখো আমি ঐ মুনফাসিল আবদ্ধের কি হাল করি।মুনফাসিল আবদ্ধের হিরোগিরি এক তুড়িতেই উড়িয়ে দিবো আমি।”
-” এসব আপনি কি বলছেন স্যার? আবদ্ধ স্যার এ পর্যন্ত আমার সাথে যা করেছে আমার ভালোর জন্যই করেছে।আমি তার বিরুদ্ধে কেন মিথ্যা অভিযোগ দিবো?”

-” সৈকত মনে মনে বললো,তুমি অত্যন্ত বোকা স্রোত। তুমি বুঝতে পারছো না আবদ্ধ আমার পথের কাঁটা। আমি তোমার মাধ্যমে সেই কাঁটা উপ্রে ফেলতে চাইছি।আবদ্ধ আমার চরম শত্রু। কিন্তু সবাই জানে আবদ্ধ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ছোটবেলা থেকেই আবদ্ধ কে হিংসা করি আমি‌।ওর জন্য শুধু মাত্র ওর জন্য ক্লাসে কখনো‌ আমি প্রথম হতে পারি নি।

স্যার ম্যাডাম থেকে শুরু করে ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রী শুধু আবদ্ধ আবদ্ধ বলে মুখে ফেনা তুলে দিয়েছে।সেসব অপমানের কথা আমি ভুলি নি।এখন আবার আমার মনের মানুষের দিকে হাত বাড়িয়েছে। এটা তো আমি হতে দিবো না আবদ্ধ।স্রোত তুমি যতোই আবদ্ধ কে বাঁচাতে চাও না কেন ? আবদ্ধ কে আমি এই ভার্সিটি তে শিক্ষকতা করতে দিবো না। কিছুতেই না।আবদ্ধ আমাকে ততোটা ভালো মনে করে আমি ততোটাই শয়তান।আবদ্ধ এতো দিন আমার ভালো মানুষী দেখে এসেছে।এখন আমার খারাপ টাও দেখতে পারে।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

-” ক্লাস শেষ করে স্রোত , আরফা , ইশফা , নির্ঝর কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর স্রোতের তার ফোনের কথা মনে পড়লো।স্রোত আরফা কে টানতে টানতে আবদ্ধের কেবিনের সামনে নিয়ে এসে বললো, তুই ও ভেতরে চল না বাবুই।আমার খুব ভয় করছে।এটিটিউড এর দোকানদার এর যা রাগ।আমাকে যদি ঠাঁটিয়ে চড় মে’রে দেয়।চল না বাবুই। তুই তো স্যারের বোন লাগিস । তুই থাকলে স্যার আমাকে কিছু বলতে পারবে না।”

-” ভার্সিটি তে ভাইয়া বোন চিনে না।হয়তো ব‌উ কে চিনলেও চিনতে পারবে। তুই যা বাবুই। তুই ভাইয়ার ব‌উ।বোনের থেকে ব‌উয়ের পাওয়ার বেশি। তখন দেখলি না ক্লাসে কতো বাজে ভাবে আমাকে ইনসাল্ট করলো?দেখা গেল এখন আমি তোর সাথে ভাইয়ার কেবিনে গেলে ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বললো,

-” মিস আরফা আমি কি আপনাকে আমার কেবিনে ডেকেছি? ডাকি নি তো? আপনি কেন বিনা অনুমতিতে আমার কেবিনে প্রবেশ করেছেন? আমি শুধু মাত্র স্রোত কে ডেকেছি। সো আপনি এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমার কেবিন থেকে বেরিয়ে যান।এসব কথা আমি শুনতে পারবো না বাপু।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১১

তার থেকে বরং তুই যা বলে আরফা স্রোত কে ধাক্কা দিয়ে আবদ্ধের কেবিনে পাঠিয়ে দিলো।স্রোত কেবিনে প্রবেশ করে তার চোখ কে যেন বিশ্বাস করতে পারলো না।সে ভাবতেও পারে নি সে আবদ্ধের কেবিনে এসে এমন দৃশ্য দেখতে পাবে।এমন দৃশ্য দেখে তার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১৩