কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১১

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১১
নুজাইফা নূন

-” বাবুই কি সৈকত স্যার কে পছন্দ করে? আমি অনেক দিন থেকেই খেয়াল করছি সৈকত স্যারের ক্লাসে বাবুইয়ের ক্লাসে মনোযোগ থাকে না।বাবুই ক্লাস বাদ দিয়ে সৈকত স্যারের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কোনো কারণ ছাড়াই মুচকি মুচকি হাসে। সারাক্ষণ সৈকত স্যার সৈকত স্যার বলে আমার মাথা খারাপ করে দেয়।তার মানে এটাই সেই কারণ? বাবুইয়ের প্রেমের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। ভালোই হয়েছে বাপু।

সৈকত স্যার দেখতে মাশাআল্লাহ , খুব সুন্দর।তবে আমার এটিটিউডের দোকানদের থেকে কম।সে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ।যদিও সৈকত স্যার তার থেকে কম সুন্দর তবুও বাবুইয়ের সাথে সৈকত স্যার কে খুব ভালো মানাবে।আমি কি এটিটিউডের দোকানদার কে বলবো সৈকত স্যার আর বাবুইয়ের ব্যাপারে?না থাক।এখন বলার দরকার নেই।আগে তাদের মধ্যে সব সেটিং হোক।বাকি টা না হয় ভাবী হিসেবে সেট করে দিবো। অনেক ধুমধাম করে বাবুইয়ের বিয়ে দিবো। আমার বিয়ে তে তো না পেরেছি মজা করতে না পেরেছি মজার মজার খাবার খেতে।বাবুইয়ের বিয়েতে সব উসুল করে নিবো।স্রোত নিজের মতো করে ভাবছে‌।আর এদিকে সৈকত লুকিং গ্লাসে স্রোত কে দেখে মনে মনে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আজ তোমাকে বোধহয় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে স্রোত। অবশ্য তুমি আমার চোখে সবসময় সুন্দর। জানো স্রোত তোমাকে একান্তে নিজের করে পেতে খুব ইচ্ছে হয়? খুব ইচ্ছে হয় কুয়াশায় ঘেরা নির্জন রাতে দুজনে একটা চাদর গায়ে দিয়ে হেঁটে হেঁটে কোনো এক অজানা গন্তব্যে ছুটে যেতে। যেখানে কেউ থাকবে না। শুধু তুমি আমি থাকবো।আর থাকবে আমাদের ভালোবাসা।

আমি জানি আমাদের ভালোবাসার মাঝে আবদ্ধ দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে। আবদ্ধের মতো নির্দয় মানুষের চোখে আমি তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। কিন্তু তোমাকে পেতে আমি আবদ্ধ নামক দেয়াল তুলে ফেলতেও দ্বিধা বোধ করবো না। আবদ্ধের নামে তোমার বাবার কাছে যে বিষ আমি ঢেলেছি ।তাতে তোমার বাবার মনে আবদ্ধের প্রতি শুধু ঘৃণা জন্মেছে , ঘৃণা। তোমার বাবা আবদ্ধ নামক ব্যক্তি টা কে শুধুমাত্র ঘৃণা করে। হা হা হা। সৈকত স্যার আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে ভার্সিটি তে পৌঁছে গেল।স্রোত , আরফা দুজনেই গাড়ি থেকে নামতেই ইশফা ,নির্ঝর এসে তাদের দুজনকে হাগ করে বললো,

-” সেই কখন থেকে তোদের জন্য ওয়েট করছি।আজ তোদের এতো দেরি হলো কেন?আর সৈকত স্যারের গাড়িতে তোরা? কাহিনী কি?”
-” স্রোত নির্ঝরের পিঠে কিল মেরে বললো, কোনো কাহিনী ‌নেই ব্রো।রিক্সা পাচ্ছিলাম না তাই স্যারের গাড়ি করে এসেছি।”

-” ব্যাপার না। শিক্ষক পিতার সমতুল্য।আসতেই পারিস তার গাড়ি করে।”
-“শিক্ষক পিতার সমতুল্য কথাটা শুনতে ভালো লাগলো না স্রোতের।স্রোত মনে মনে বললো সব শিক্ষক পিতার সমতুল্য হয় না গাধা। কিছু কিছু শিক্ষক বরের ও সমতুল্য হয়।”
-” স্রোত কে চুপ থাকতে দেখে নির্ঝর বললো, কি এতো ভাবছিস?”
-” কিছু না ভাই। ক্লাসে চল।আজ প্রথমে ‌কার ক্লাস জানিস তো?”
-” কার ?”

-” সব ছেলেদের ক্রাশ প্রকৃতি ম্যাডামের।”
-“ভুল বললি তুই। হ্যাঁ মানছি ম্যাডাম দেখতে নজরকাড়া সুন্দরী। প্রথম প্রথম ডিপার্টমেন্টে এসে অনেক ছেলেরাই ম্যাডাম কে ক্লাসমেট ভেবে প্রপোজ করেছে।এমনকি কয়েক টা নিজেদের হাত পর্যন্ত কে’টে’ছে ম্যাডামের জন্য। কয়েকজন কে কলেজ থেকে বের ও করে দেওয়া হয়েছে। ম্যাডাম অন্য ছেলেদের ক্রাশ হতে পারে। কিন্তু এই নির্ঝরের না।”

-” বয়ান বাদ দে ভাই।ক্লাসে চল।”
-” হুঁ চল।”
-” প্রকৃতি ম্যাডাম নিরীক্ষা ও নিশ্চয়তা ক্লাস নিচ্ছেন।তিনি খুব ভালো করে সবাইকে নিরীক্ষা প্রতিবেদন চ্যাপ্টার টা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সবাই ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে তার কথা বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু নির্ঝর স্রোতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেখে স্রোত নির্ঝরের দিকে কলম ছুড়ে দিয়ে বললো,

-” কিরে সাইক্লোন ক্লাস বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখিস?”
-” আমি নষ্ট মনে নষ্ট চোখে দেখি তোমাকে, মন আমার কি চায় বোঝায় কেমনে?”
-” লা’থি খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে‌ তোর তাই না?”
-” জাস্ট কিডিং ইয়ার।এই দেখ আমি ভদ্র বাচ্চা হয়ে ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছি।”
-” গুড।”

-” টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ক্লাস নিয়ে প্রকৃতি ম্যাডাম রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।তিনি যাওয়ার পর আবদ্ধ স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলো।তাকে দেখে স্রোতের হার্টবিট বেড়ে গেলো। কেনো জানি তার দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে‌ স্রোতের।যেটা আগে কখনো হয় নি।আবদ্ধের সাথে একবার চোখাচোখি হতেই স্রোত‌ চোখ নামিয়ে নিলো। যথারীতি এডভান্স একাউন্টিং ইনকোর্স পরীক্ষা শুরু হলো ।প্রশ্ন অনেক সহজ হয়েছে।আবদ্ধ স্যার ক্লাসে যে ম্যাথ করেছিলেন তার মধ্যে থেকেই প্রশ্ন এসেছে।সব ছাত্র-ছাত্রী বেশ মনোযোগ সহকারে খাতায় লিখছে। আবদ্ধের কড়া নির্দেশ কেউ কারো খাতা দেখে কপি করতে পারবে না।আবদ্ধ রুমে পায়চারি করছে। হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো স্রোত খাতায় কিছু না লিখে নিচের দিকে ঝুঁকে কিছু একটা করছে।আবদ্ধ স্রোতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-” আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?”
-” সরি স্যার।বাংলায় বলুন।”
-” পরীক্ষার টাইম শেষ হতে আর মাত্র বিশ মিনিট আছে।আর আপনি লেখা বাদ দিয়ে ফোনে কি করছেন?খাতায় তো একটা অক্ষর ও লেখেন নি। আপনি জানেন না আমার ক্লাসে ফোন এলাও না?”
-” জানি স্যার।”
-” জানেন তাহলে ফোন বের করেছেন কেন?”
-” ব‌ই পড়ছি স্যার।”
-” ফোনে ব‌ই পড়ছেন মানে?”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১০

-” ই-ব‌ই স্যার। নুজাইফা নূন আপুর লেখা সূরা শাফায়াত জুটির রোমান্টিক ইব‌ই পাগল তোর জন্য‌ সেটাই পড়ছি স্যার।
-” হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ? এটা আপনার ইব‌ই পড়ার জায়গা?”
-” পাগল তোর_জন্য , এই মন তোমারি রোমান্টিক এই বই গুলো আপনার পড়া উচিত স্যার।তাহলে হয়তো আনরোমান্টিক থেকে একটু রোমান্টিক হতে পারবেন।”
-” আবদ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে স্রোতের দিকে এগিয়ে ফিসফিস করে বললো, আমি রোমান্টিক হলে সহ্য করতে পারবেন তো?”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১২