কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১০

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১০
নুজাইফা নূন

-“স্রোত বললো ও রুমে কালো ছায়া হেঁটে যেতে দেখেছে।তার মানে কি গতরাতে আরু স্রোত কে ভূতের ভয় দেখিয়েছিলো? কিন্তু কেন?স্রোত কে ভয় দেখানোর পেছনে আরুর কি এমন উদ্দেশ্য থাকতে পারে?আরু তো স্রোত কে অনেক ‌বেশি ভালোবাসে।স্রোত কোনো কারণে কষ্ট পাক এটা আরু কখনোই চাইবে না।এ ব্যাপারে আরুর সাথে কথা বলতে হবে বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

প্রায় পনেরো মিনিট পরে আবদ্ধ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে সারাক্ষণ বকবক করা মেয়েটা সোফায় একদম চুপটি করে বসে রয়েছে। গুরুজনেরা এটা ওটা বলে স্রোত কে লজ্জা দিচ্ছে।স্রোত ও লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে। স্রোতের এমন লাজে রাঙা মুখ দেখতে খারাপ লাগছে না আবদ্ধের।আবদ্ধ কে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবদ্ধের দাদু আবদ্ধের হাত ধরে এনে সোফায় স্রোতের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” মাশাআল্লাহ! দুজনকে খুব ভালো মানিয়েছে। একদম মেইড ফর ইচ আদার। কিন্তু তোমাদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছে।আমি চাই সেই মিসিং জিনিস টা খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের মাঝে আসুক। তোমাদের ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে দিক। আমাদের সংসার পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক।”

-” আঞ্জুম আরা বেগমের কথার আগামাথা স্রোত বুঝতে না পারলেও আবদ্ধ ঠিকই বুঝতে পারলো তার দাদু বাচ্চার কথা বলছে।আবদ্ধ মুচকি হেসে আঞ্জুম আরা বেগমের কানে কানে বললো,
-” আগে শ্বাশুড়ির বাচ্চা কোলে পিঠে করে বড়ো করি। তারপর নাহয় আমার বাচ্চার কথা ভাবা যাবে। দেখেশুনে এমন মেয়ের সাথেই বিয়ে দিলে যে সে আমার খেদমত করবে কি উল্টো আমারি তার খেদমত করতে হয়। তাকে খাইয়ে দিতে হয়।শাড়ি পরিয়ে দিতে হয়।কপাল আমার!”

-” একদিন এই বাচ্চা ব‌উ ই দেখবে তোমাকে একদম কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবে।তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। তোমার খেয়াল রাখবে।”
-” সেদিন আসতে আসতে আমার এক ঠ্যাং কবরে চলে যাবে দাদু।”
-” আলাই বালাই! এসব কি ধরণের কথা দাদুভাই?”
-” আবদ্ধ আঞ্জুম আরা বেগমের দু গাল টেনে দিয়ে বললো জাস্ট কিডিং মাই ডেয়ার সুইটহার্ট।”

-” মেয়েটা তো আর জানে না তাকে বিয়ে করার জন্য মুনফাসিল আবদ্ধ কে কতো কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। যে ছেলেটা কখনো কারো তোয়াক্কা করে নি তাকে সাইফুল ভূঁইয়ার সামনে মাথা নিচু করতে হয়েছে।তার হাতে পায়ে ধরতে হয়েছে।কোথাও একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি আমি। তুমি কি সত্যিই আমার কথায় স্রোত কে বিয়ে করেছো ? নাকি প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে সাঁতার ভুলে গিয়েছিলে দাদুভাই?”

-“আবদ্ধ আঞ্জুম আরা বেগমের দিকে ঘড়ি দেখিয়ে বললো , অলরেডি নয়টা বেজে গিয়েছে। আমার হাতে এখন গল্প করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই দাদু।”
-” মাথার চুল এমনি এমনি সাদা হয় নি দাদুভাই। তুমি না বললেও আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি।মেয়েটা যা মিষ্টি দেখতে‌।যে কোনো পুরুষ তার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে। তুমি ও তো একটা পুরুষ। যাই হোক ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে গিয়েছে।নাত ব‌উ কে নিয়ে টেবিলে আসো।”

-” আবদ্ধ আর স্রোত টেবিলে গিয়ে পাশাপাশি চেয়ারে বসেছে।সালমা বেগম সবাইকে সার্ভ করে দিয়ে স্রোতের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো,
-” আমি হয়তো তোমার মায়ের মতো করে তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না মা। আবার কমতি ও রাখবো না। তুমি যে নিজে হাতে খাও না ।এটা আমাকে বলো নি কেন মা? আরু না বললে এটা তো আমি জানতেই পারতাম না। আরু আর তুমি আমার কাছে আলাদা ন‌ও।তোমার যখন যা প্রয়োজন নিসংকোচে আমাকে বলবে। একদম ই লজ্জা পাবে না।”

-” ঠিক আছে মা।”
-” আবদ্ধের ব্রেকফাস্ট প্রায় শেষের দিকে। এদিকে স্রোতের প্লেট এখনো খাবার দিয়ে পরিপূর্ণ রয়েছে দেখে আবদ্ধ বললো, তোমাকে সেই কখন থেকে বলছি কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে ‌। কিন্তু তোমার তো সেই ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা দেখছি না। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট শেষ করে রেডি হয়ে আরুর সাথে চলে এসো।”
-” আবদ্ধের কথা শুনে তার বাবা আফাজ চৌধুরী বললেন, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আবদ্ধ? গতকাল থেকে মেয়েটার উপর দিয়ে কতো ধকল গিয়েছে। কোথায় ও আজ রেস্ট নিবে।তা নয় তো তুমি ওকে ভার্সিটি তে যেতে বলছো?”

-” হ্যাঁ বলছি বাবা।কারণ আজ আমার ক্লাস টাইমে এডভান্স একাউন্টিং ইনকোর্স পরীক্ষা আছে।”
-” তুমি যাচ্ছো যাও।স্রোত মা আজ যাবে না।একটা ইনকোর্স পরীক্ষা না দিলে কিছু হবে না।”
-” ভুল বললে বাবা।বোর্ড পরীক্ষা যেমন ইম্পর্ট্যান্ট।ইনকোর্স পরীক্ষা ও তেমন ইম্পর্ট্যান্ট।ইনকোর্স পরীক্ষার নাম্বার বোর্ড পরীক্ষার নাম্বারের সাথে যুক্ত হয়।”
-” তুমি চাইলেই স্রোত মা কে নাম্বার দিয়ে দিতে পারো।”

-” এটা আমি কখনোই করবো না বাবা।আমার কাছে সব ছাত্র-ছাত্রী সমান।সে আমার ঘরের ব‌উ হোক বা বোন হোক ভার্সিটি তে তার আমার সম্পর্ক শুধুমাত্র টিচার স্টুডেন্টের।এর বেশি কিছুই না।”
-” ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো । তবে আরু আর স্রোত মা কে তোমার সাথে করে গাড়ি তে নিয়ে যাও। এতো দিন তো আরু তোমার সাথে করেই গিয়েছে।তাহলে আজ আরু আলাদা করে যাবে কেন? ”
-” কারণ আজ আরু একা নয়‌।আরুর সাথে স্রোত ও আছে। আমি যতটুকু জানি আরু স্রোত কে রেখে আমার সাথে কখনোই যাবে না।”

-” বুঝতে পারছি না স্রোত কে তোমার গাড়ি তে করে নিয়ে যেতে কিসের এতো সমস্যা হচ্ছে তোমার?”
-” আমি এই মূহুর্তে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কাউকে জানাতে চাইছি না বাবা।স্রোত কে আমার সাথে দেখলেই অনেকেই সন্দেহ করবে।আমি চাই না কারো মনে আমাদের প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি হোক।”
-” তুমি গাড়ি নিয়ে যাবে।আমার ও এক্ষুনি বেরোতে হবে।তাহলে আরু আর স্রোত মা যাবে কিসে?”
-“আফাজের কথায় আরফা বললো , তুমি টেনশন করো না বাবা।ভাইয়া ভাইয়ার মতো করে যাক। আমি আর বাবুই ঠিক সময়ে ভার্সিটি তে পৌঁছে যাবো।”

-” ঠিক আছে।আমি আসছি তাহলে বলে আবদ্ধ গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”
-” আবদ্ধ যাওয়ার পর আরফা স্রোত রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু অটো বা রিক্সার দেখা মিলছে না। এদিকে হাতেও বেশি সময় নেই তাদের।প্রায় দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর একটা রিক্সার দেখা মেলে।তারা রিক্সায় উঠতে যাবে তার আগেই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়।আরফা দেখলো গাড়িতে আর কেউ নয় স্বয়ং তার শখের পুরুষ সৈকত স্যার বসে আছে।সৈকত স্যার আরফা , স্রোত কে দেখে বললো, কি ব্যাপার তোমরা এখনো এইখানে দাঁড়িয়ে রয়েছো কেন? তোমাদের তো ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে।”

-” স্রোত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরফা বললো ঐ রিক্সা পাচ্ছিলাম না স্যার ।তাই দেরি হয়ে গিয়েছে।”
-” ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি ও ভার্সিটি তে যাচ্ছি। তোমরা গাড়িতে বসো।আমি তোমাদের পৌঁছে দিচ্ছি।”
-” ঠিক আছে স্যার বলে আরফা সৈকতের পাশের সিটে বসতে গেলে সৈকত তাকে বাধা দিয়ে বললো, স্রোত এখানে বসুক।

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৯

তুমি না হয় পেছনের সিটে গিয়ে বসো। সৈকতের কথায় বেশ অপমানে চোখের কোণায় পানি জমে উঠলো আরফার।যা দেখে স্রোত বললো, না না স্যার ।আমি এখানেই ঠিক আছি।আমি সামনের সিটে বসতে পারি না। বাবুই বসেছে বসুক।”
-” স্রোতের কথায় আরফা কেমন এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে স্রোতের দিকে তাকিয়ে ‌র‌ইলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১১