কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৯

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৯
নুজাইফা নূন

-” কেউ একজন বলেছিলো আমাকে বিয়ে করলে সে নাকি জীবনে মা ডাক শোনা তো দূরের কথা সামান্য চুমু ও পাবে না আমার থেকে।আমার সামান্য স্পর্শেই তার এই অবস্থা।না জানি মা ডাক শোনার প্রসেসিং এ গেলে তার কি অবস্থা হবে?”

-“আবদ্ধের কথা শুনে চমকে উঠলো স্রোত।সে আমতা আমতা করে বললো , এই কথাটা আপনি কিভাবে জানলেন স্যার? নিশ্চয় বাবুই আপনাকে বলেছে?বাবুই কিভাবে পারলো আমার সাথে মীর জাফর গিরী করতে? অবশ্য আপনি বাবুই এর মায়ের পেটের ভাই‌। আপনাদের শরীরে এক‌ই র’ক্ত ব‌ইছে। কিন্তু আমি তো বাবুই এর র’ক্তে’র কেউ না। বোন তার ভাইয়ের পক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বাবুই এর জায়গায় আমি থাকলে ও হয়তো এটাই করতাম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” মেয়ে জাতির একটা দোষ আছে জানো তো? এরা ওভার থিংকিং এ খুব স্মার্ট। সত্য মিথ্যা যাচাই না করে নিজেই নিজের মতো করে কিছু একটা ভেবে বসে। ঠিক যেমন টা তুমি ভেবেছো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমি আরুর ভাই। কিন্তু আরু আমার থেকে ও তোমাকে বেশি ভালোবাসে।আমরা তার কথায় বলতে পছন্দ করি যাকে আমরা ভালোবাসি।আরু যতোটা সময় বাড়িতে থাকে ওর মুখে শুধু তোমার কথায় থাকে।

আরু বড্ড বেশি ভালোবাসে তোমাকে। আরু কখনোই কারো কাছে তোমার বদনাম করবে না।আমার কাছে তো না ই না। কথাটা আরু আমাকে বলে নি।আমি নিজে কানেই শুনেছি। সেদিন তুমি যখন কথাটা বলছিলে আমি ডিপার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছিলাম।তোমরা গল্পে এতোটাই মগ্ন হয়ে ছিলে যে আমাকে তোমাদের নজরে পড়ে নি।”

-” ঐ মজা করে বলেছিলাম স্যার। কিছু মনে করবেন না।”
-“আবদ্ধ স্রোতের শাড়িতে কুচি দিতে দিতে বললো , অন্যায় যখন করেছো শাস্তি তো পেতেই হবে।”
-” এবারের মতো ক্ষমা করে দিন স্যার।আর জীবনেও এমন কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবো না।এই আমার চোখ ছুঁয়ে বললাম।প্রতিত্তরে আবদ্ধ কিছু না বলে স্রোতের হাতের শাড়ির কুচি গুলো দিয়ে বললো,

-” গুঁজে নাও।”
-” কোথায়?”
-” আবদ্ধ নিজের মাথাটা এগিয়ে দিয়ে বললো, আমার মাথায়। নির্বোধ মেয়ে একটা।শাড়ির কুচি কোথায় গুঁজতে হয় সেটাও জানো না?”
-” আপনি একদম ই আমার সাথে খ্যাঁক খ্যাঁক করে কথা বলবেন না স্যার।আমি কি আপনাকে বলেছিলাম আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে? আপনি নিজেই তো মাতব্বরি করলেন।এখন আবার আমাকেই ধমকাচ্ছেন। আমি জানতাম আপনি এমনি করবেন।তাই তো বাবুই কে ডেকে দিতে বলেছিলাম।”

-” একটু চুপ করবে তুমি?”
-” আবদ্ধের ধমকে স্রোত একটা কথাও না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।আবদ্ধ শাড়ির কুঁচি গুলো স্রোতের কোমড়ে গুঁজে দিতেই কেঁপে উঠে স্রোত। সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে যায়।স্রোত দু হাত দিয়ে শাড়ির আঁচল আঁকড়ে ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে।আবদ্ধ শাড়ি পরানো শেষ করে স্রোত কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে একটা টুলের উপর বসিয়ে গলায় হার ,কানে দুল, হাতে চুড়ি , চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে মাথায় আঁচল টেনে দিয়ে বললো,

-” বাড়িতে অনেক গুরুজনেরা রয়েছে।নিচে গিয়ে সবার সাথে ভালো করে কথা বলবে। একদম উল্টো পাল্টা কিছু বলবে না।নিচে যাবে । ভদ্র হয়ে সবার সাথে কথা বলে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট শেষ করবে।আজকে যে এডভান্স একাউন্টিং ইনকোর্স পরীক্ষা আছে।সে কথা মনে আছে তোমার?”
-” স্রোত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবদ্ধের দাদু আঞ্জুম আরা বেগম আবদ্ধের রুমে এসে স্রোত কে দেখে বললো,

-” মাশাআল্লাহ। একদম পরীর মতো লাগছে আমার নাত ব‌উ কে।দেখে আমার দুচোখ জুড়িয়ে গেলো। আমি এর আগেও তোমাকে অনেক বার দেখেছি। তবে মনে হচ্ছে আজ তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। এতো রুপের রহস্য কি সুন্দরী?রাতে দাদুভাই অনেক আদর সোহাগ করেছে বুঝি?”
-” স্রোত লজ্জা পেয়ে বললো, তুমি ও না বুড়ি একদম আমার দাদুর মতো।মুখে কোনো পর্দা নেই তোমার।”

-” আঞ্জুম আরা বেগম এক গাল হেসে গহনার বক্স থেকে এক জোড়া বালা বের করে স্রোতের হাতে পরিয়ে দিয়ে বললো, এই বালা জোড়া তোমার দাদা আমাকে ভালোবাসে বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তোমার শ্বাশুড়ি শায়লা ‌ কে দিয়েছিলাম। শায়লা মা’রা যাওয়ার পর আফাজ যখন সালমা কে বিয়ে করে এই‌ বাড়িতে নিয়ে আসে, তার মুখ দেখে এই বালা জোড়া তাকে আমি পরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সালমা বালা জোড়া হাত থেকে খুলে দিয়ে বলেছিলো,

-“এই বালার উপযুক্ত আমি নয় আম্মা‌।আপনি এই বালা আপনার বড়ো নাত ব‌উ কে দিবেন। সেই এই বালার উপযুক্ত। আমি এতো দিন যত্ন করে বালা জোড়া রেখে দিয়েছিলাম। অবশেষে আজ বালা জোড়া উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে গেলো।বালা জোড়া তোমার হাতে খুব ভালো মানিয়েছে। দারুন দেখতে লাগছে তোমাকে।আমি তো চোখ ই ফেরাতে পারছি না।না জানি আমার দাদুভাই এর ভেতরে কি চলছে?”

-” স্রোত‌ আঞ্জুম আরা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বললো ‌, তুমি ও আমার থেকে কম সুন্দরী ন‌ও বুড়ি।বুড়ি বয়সেও তোমার রুপের আগুনে পুড়ে যাচ্ছি আমি।না জানি যুবতী বয়সে কতো ছেলের রাতের ঘুম হারাম করেছো ?”
-” সে গল্প একদিন সময় করে তোমাকে বলবো।এখন নিচে চলো।সবাই নতুন ব‌উ দেখার জন্য বসে আছে।”
-” হ্যাঁ চলো বুড়ি।”
-” স্রোত আঞ্জুম আরা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলে আবদ্ধ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।আর তখনি ওয়াশরুমের এক কোণে একটা কানের দুল দেখতে পায়।আবদ্ধ কানের দুল টা উঠিয়ে ভালো করে দেখে বললো,

-” আরে এটা তো আরুর কানের দুল।যেটা আমি রাতেও আরুর কানে দেখেছিলাম। কিন্তু আরুর কানের দুল আমার রুমে কিভাবে এলো?আমি রাতে যখন অন্য রুমে গিয়েছিলাম তখন ও এখানে এই দুল ছিলো না।তাহলে কি আমি অন্য রুমে যাওয়ার পর আরু আমার রুমে এসেছিলো?

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৮

আবার এদিকে স্রোত বললো ও রুমে কালো ছায়া হেঁটে যেতে দেখেছে।তার মানে কি গতরাতে আরু স্রোত কে ভূতের ভয় দেখিয়েছিলো? কিন্তু কেন? স্রোত কে ভয় দেখানোর পেছনে আরুর কি এমন উদ্দেশ্য থাকতে পারে??”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১০