কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৮

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৮
নুজাইফা নূন

-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল আবদ্ধের।ঘুম ভাঙ্গতেই আবদ্ধ বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করলো। তৎক্ষণাৎ আবদ্ধের স্রোতের কথা মনে পড়ে গেল।স্রোত তখনো আবদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। স্রোতের পরনে থাকা প্লাজু হাঁটু পর্যন্ত উঠে গেছে, টপস এলোমেলো হয়ে আছে।যার দরুন স্রোতের ফর্সা পেট স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।রাতে কান্না করার ফলে চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এই রুপেও মেয়েটা কে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে আবদ্ধের।আবদ্ধ সন্তপর্ণে‌ স্রোতের মুখের উপর থেকে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,

-” গতরাতে মেয়েটা আমার সামনে আসতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছিলো।আর এখন এলোমেলো হয়ে আমারি বুক কে নিজের বালিশ মনে করে কি সুন্দর ঘুমিয়ে রয়েছে। মেয়েটার ঘুম ভাঙ্গার পর একবার যদি নিজেকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে হয়তো লজ্জায় আর কখনো আমার মুখোমুখি হবে না। এদিকে অনেক্ষণ হলো আযান হয়েছে।জামাত শুরু হয়ে যাবে। মেয়েটা কে কি ডাকবো নামাজ পড়ার জন্য? না আজকের মতো থাক। ঘুমোচ্ছে ঘুমোক বলে আবদ্ধ স্রোত কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে স্রোত আরো শক্ত করে আবদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আহ্ মম! উঠছো কেন? আর একটু থাকো না মম।তোমার বুকে এভাবে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে আমার বেশ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন কতো দিন পর এতো ভালো ঘুম হয়েছে আমার।আর একটু থাকো প্লিজ।”
-” আবদ্ধ স্রোতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,আমি তোমার মম নয় স্রোত।আমি আবদ্ধ।”
-” আবদ্ধ কথাটা শোনা মাত্রই স্রোত চোখ খুলে নিজেকে আবদ্ধের এতো কাছাকাছি দেখে চমকে উঠলো।স্রোত তড়িঘড়ি করে উঠে নিজের কাপড় ঠিক করে বললো, আপনি এখানে কেন? আমার কাছে কেনো এসেছেন আপনি? নিশ্চয় সুযোগ নিতে এসেছিলেন?আপনি আসলেই ‌খুব খারাপ একটা মানুষ।”

-” জাস্ট শাট আপ।বাজে বকা বন্ধ করো। আমি তোমার কাছে না। বরং তুমি আমার কাছে এসেছো।ভালো করে তাকিয়ে দেখো এটা সেই রুম নয় ,যে রুমে তুমি ছিলে। তুমি নিজেই ঐ রুমে ভূত দেখেছো , অদ্ভুত আওয়াজ শুনেছো বলে এই রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলো।এখন আবার আমাকেই দোষারোপ করছো।মেয়ে মানুষ বলে কথা।নিজে অন্যায় করবে আবার নিজেই অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দিবে।”

-” সরি স্যার।আমার ভুল হয়েছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
-” ইটস্ ওকে বলে আবদ্ধ ওয়াশরুমে চলে গেল।আবদ্ধ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে এসে সাদা পাঞ্জাবি পরে মসজিদে চলে গেল।”

-” সালমা বেগম ফজরের নামাজ পড়ে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে আলমারি থেকে শাড়ি গয়না বের করে তাতে হাত বুলিয়ে বললো, এই শাড়ি , গয়না কতো শখ করে আমার ছেলের ব‌উয়ের জন্য কিনে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম নিজে হাতে তাকে শাড়ি গয়না পরিয়ে সাজিয়ে দিবো।আমি নিজে তার হাত ধরে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবো।সমস্ত নিয়ম নীতি পালন করে ঘরে তুলবো।

কিন্তু আমার যে কপাল খারাপ। আমার ছেলে আজো আমাকে তার মা বলে মানতে পারলো না।সে বিয়ে করলো। অথচ একটা বার আমাকে বলার প্রয়োজন ও মনে করলো না।জানি না ছেলেটার এতো কিসের রাগ ক্ষোভ আমার উপর?হয়তো তার মুখ থেকে কোনোদিন মা ডাক শোনার সৌভাগ্য আমার হবে না।যাই হয়ে যাক।আমি হাল ছাড়বো না।

আমি সারাজীবন মায়ের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যাবো।সালমা বেগম শাড়ি গয়না নিয়ে আবদ্ধের রুমে এসে দেখে স্রোত রুমে নেই।সালমা বেগম শাড়ি গয়না বিছানার উপর রেখে ওয়াশরুম বেলকনি সব জায়গায় খুঁজে দেখে। কিন্তু স্রোত কে কোথাও না পেয়ে পাশের রুমে এসে দেখে স্রোত গুটিসুটি হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।সালমা বেগম বিছানায় স্রোতের পাশে বসে স্রোতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, উঠবে না মা? সকাল হয়ে গেছে তো?”

-” উঠতে মন চাচ্ছে না আন্টি।”
-” আন্টি? আমার ছেলের মতো তুমি ও আমাকে মা বলে মানতে পারছো না?”
-” স্রোত তৎক্ষণাৎ সালমা বেগমের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, এতো দিন তোমাকে আন্টি বলে ডেকে এসেছি।তাই তো হুট করে মা বলতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।”
-“মা কে মা বলে ডাকবে এতে লজ্জা কিসের ? জানো তো মা ডাক শুনতে বড্ড ভালো লাগে আমার।আরফা যখন আমাকে মা বলে ডাকে আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তুমি ও তো আমার আর একটা মেয়ে । মেয়ে হয়ে মাকে মা বলে ডাকবে না?”

-” ডাকবো তো মা।”
-” সালমা বেগম স্রোত কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,এই তো লক্ষী মেয়ে আমার।আমি আব্বার রুমে বিছানার উপর শাড়ি আর কিছু গয়না রেখে এসেছি। এগুলো পরে নিচে এসো মা।বাড়িতে আত্মীয় স্বজন রয়েছে।সবাই নতুন ব‌উ দেখবে বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”
-” ঠিক আছে মা।”

-“স্রোত শাওয়ার নিয়ে ব্লাউজ পেটিকোট পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সে বুঝতে পারছে না শাড়ি কিভাবে পরবে?।কোথা থেকে শুরু করবে ? কাউকে যে ফোন করে ডাকবে বা ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে শাড়ি পরা শিখবে সে উপায় ও নেই।তার ফোন টা অন্য রুমে রেখে এসেছে।স্রোত সবে শাড়ি হাতে নিয়েছে তখনি দরজা খুলে আবদ্ধ ভেতরে প্রবেশ করে।আবদ্ধ কে দেখে স্রোত উল্টো দিকে ঘুরে শাড়ি ওড়নার মতো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।স্রোত কে এই অবস্থায় দেখে আবদ্ধ ঢোঁক গিলে বললো ,

-” তোমার কোনো কমনসেন্স নেই? চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুম রয়েছে।আমি তোমাকে যতো দেখছি ততোই অবাক হয়ে যাচ্ছি। তুমি ঘুমিয়ে থাকো ওয়াশরুমে আর চেঞ্জ করো বেডরুমে। বেডরুমে চেঞ্জ করছো ভালো করা দরজা তো লক করে রাখতে পারতে তাই না? এখন যদি আমার জায়গায় বাবা বা অন্য কেউ আসতো। তাহলে কি হতো শুনি?”
-” আমার কমনসেন্স না থাকলে আপনার ও কমনসেন্স নাই।আপনার ও উচিত ছিল নক করে আসার। কিন্তু আপনি ও তো নক করে আসেন নি। যাই হোক এসেই যখন পড়েছেন বাবুই কে একটু ডেকে দিন। বাবুই আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে।স্রোতের কথা শুনে আবদ্ধ দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে বললো ,দেখি আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াও।আমি শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।আরু বিজি আছে।”

-” আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?”
-” না পারার কি আছে?”
-” হায় আল্লাহ! তার মানে এর আগে আপনি আরো একটা বিয়ে করেছিলেন? আপনার আগে একটা ব‌উ ছিলো? শেষমেষ পাপা আমাকে একটা বিবাহিত ব্যাডার সাথে বিয়ে দিলো?”
-” আবদ্ধ স্রোত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শাড়ির একটা কোনা স্রোতের কোমরে গুঁজে দিয়ে বললো,
-” একটা নয় , তিন তিনটা বিয়ে করেছিলাম।তোমাকে দিয়ে চতুর্থ বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৭

-” কোমরে আবদ্ধের হাতের স্পর্শ পেয়ে স্রোতের সর্বাঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টি হলো।সারা শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেলো তার।কথা বলতে ভুলে গেলো স্রোত। সে চোখ মুখ খিচে বদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। স্রোতের মুখের দিকে তাকিয়ে আবদ্ধ মুচকি হেসে বললো, কেউ একজন বলেছিলো আমাকে বিয়ে করলে সে নাকি জীবনে মা ডাক শোনা তো দূরের কথা সামান্য চুমু ও পাবে না আমার থেকে।আমার সামান্য স্পর্শেই তার এই অবস্থা। না জানি মা ডাক শোনার প্রসেসিং এ গেলে তার কি অবস্থা হবে?”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৯