আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১১

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১১
Raiha Zubair Ripte

অন্ধকার রুমে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে ২২ বছরের এক যুবক কে। শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ফুটে আছে। যার দরুন ব্যাথায় শরীর নাড়াতে পারছে না। দরজা ঠেলে ব্যাথার্তক হাত নিয়ে প্রবেশ করে তুষার। পড়নে তার ব্লাক কালারের হুডি,মুখে রয়েছে পৃথিবীর সমস্ত রাগ,চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে সামনে নেতিয়ে পড়ে থাকা আগন্তুক কে।

তুষার ইশারা কিছু বললো,সাথে সাথে এক লোক ছোট বলতিতে রাখা ঠান্ডা জল লোকটার গায়ের উপর ছুড়ে মারলো। লোকটা ধরফরিয়ে উঠলো সাথে সাথে শরীরে ব্যাথার টান অনুভব করলো। মুখ দিয়ে আহ নামক শব্দ বের হলো। তুষার এগিয়ে গিয়ে আগন্তুক লোকটার চুল গুলো টেনে ধরলো। লোকটা ব্যাথা সইতে না পেরে চোখ মেলে তাকালো। হাত পা বাঁধা যার জন্য ইচ্ছে থাকলেও নিজেকে তুষারের থেকে ছাড়াতে পারলো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ তোর কলিজাটা আজ আমি দেখতে চাই ফারহান। কি ভেবেছিস আমি তোকে ধরতে পারবো না? তুষারের বা হাতের খেল তোকে খুঁজে বের করা মুর্খ ছেলে।
ফারহান ব্যাথার্তক শরীর নিয়েই বহুত কষ্টে মুখ থেকে আওয়াজ বের করে বলল-
-“ ভুল হয়ে গেছে আমার।
ফারহানের চুল ছেলে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে

-“ ভুল! এটাকে ভুল বলে? তোকে আমি লাস্ট একবার চান্স দিয়েছিলাম ভুলে গেছিস? মানুষ বারবার ভুল করে না, জেনেশুনে অন্যায় করে। আর তুই তো পাপ করেছিস। চিত্রা কে মা’রতে চেয়েছিস, আমার কলিজা আমার থেকে দূরে করতে চেয়েছিলি, আমি তোর কলিজা আজ তোর থেকে দূরে সরাবো।
কথাটা বলে পকেট থেকে ব্লে’ট বের ফারহানের হাতে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। ফারহান গলা কা’টা মুরগির মত ছটফট করতে থাকে। চেয়ার থেকে এখন র’ক্ত গুলো ফ্লোরে টপটপ করে পড়তে শুরু করেছে।তুষারকে থামতে না দেখে রাতুল এগিয়ে আসে। তুষারের হাত ধরে টেনে সরিয়ে বলে-

-“ ম”রে যাবে তো ছেলেটা, ছেড়ে দে। আর তোর শরীর ও তো ভালো না।
তুষার ফারহানের দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে চিৎকার করে বলে-
-“ বন্ধুর জন্য প্রাণ উতলে উঠছে তোর? ও বিশ্বাস ঘাতক ভুলে যাস না।
রাতুল একবার ফারহানের দিকে তাকিয়ে নম্রস্বরে বলে-
-“ আমি কিচ্ছু ভুলি নি তুষার। সব মনে আছে।

তুষার মাথা ঘুরে একবার তাকালো ফারহানের দিকে । ব্লে’টের পোস দেওয়ার ফলে হাতের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে পরছে। রুমের মধ্যে থাকা লিমন নামের এক ছেলের গা গুলিয়ে উঠলো। মুখ চেপে ওয়াও বলতেই তুষার সেদিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। ছেলেটা ভয়ে চুপসে গেলো।
এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ও তুষারের শরীর বেয়ে ঘাম বের হচ্ছে। প্রচন্ড আকারে খেপেছে এ ছেলে আজ। শান্তশিষ্ট থেকে সোজা সাইকো তে পরিনত হলো। তুষার এগিয়ে এসে চেয়ার টায় সজোরে লা’ত্থি মারে। চেয়ার সমেত ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে যায় ফারহান।

তুষার রুমের মধ্যে থাকা লিমন রাতুলের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে-
-“ মরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মিক্সড করবি। একফোঁটা জল খাবার কিছু যেনো না পায়। আর ঐ হালিম সরকার কে খবর পাঠাবি তুষার একবার ওর দিকে তাকালে ওর কিন্তু বাঁচা বড় দায় হয়ে যাবে।
রাতুল তপ্ত শ্বাস ফেলে তুষারের যাওয়ার পানে তাকিয়ে। লিমনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে তুষার যা বললো তা করতে। লিমন এক ঢোক গিললো,হাতের অবস্থা দেখেই পেট মোচড় দিয়ে উঠছে আর তারা কি না ঐ হাতে মরিচের গুঁড়ো মেশাতে বলছে! কি মারাত্মক এরা।

লিমন কে এখনও নড়তে না দেখে রাতুল ফের তাড়া দিয়ে বলে-
-“ কি বলা হয়েছে কানে যায় নি? তাড়াতাড়ি কর।
লিমন ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বলে-
-” ভাই কাজ টা কি আমাকেই করতে হবে? আমার কেমন যেনো লাগছে,দেখেন গা শিউরে উঠছে। হাতের দিকে তাকাতেই পেট মোচড় দিচ্ছে। অন্য কাউকে বলুন না।
তুহিন ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ মরিচের গুঁড়ো টা তো আনতে পারবে? নাকি সেটাও অন্য কাউকে দিয়ে আনাতে হবে?
লিমন তার হলদেটে দাঁত গুলো বের করে হেঁসে বলে-
-“ না ভাই আমিই আনতেছি।
লিমন মরিচের গুঁড়োর প্যাকেট এনে রাতুলের হাতে দেয়। রাতুল কেঁচি দিয়ে প্যাকেট টা কে’টে উপর থেকে ফারহানের মাংস খসে পড়া হাতে ঢালতে থাকে।

ফারহান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। আকুতি মিনতি করে মরিচের গুঁড়ো না ঢালতে। বারবার বলে-
-“ বন্ধুত্বের দোহাই লাগে এবারের মতো ছেড়ে দে রাতুল।
ফারহানের সম্পূর্ণ কথাকে অগ্রাহ্য করে মরিচের গুঁড়ো ঢালতে থাকে রাতুল। বন্ধুত্বের থেকেও কর্তব্য দামি রাতুলের কাছে। গুঁড়ো টা ঢালা শেষ হতেই রাতুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। লিমন এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে রাতুলের দিকে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না বন্ধুর সাথে কেউ কি করে এমন অমানবিক নিষ্ঠুর অত্যা”চার করতে পারে? লিমন আর কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে-

-“ ভাই ও আপনার ফ্রেন্ড? স্যার এসব করতে বললো আর আপনি করলেন?
রাতুল একবার ফারহানের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে কাটকাট গলায় বলে-
-“ বিশ্বাসঘাতক রা কখনও বন্ধু হয় না। বন্ধুত্বের শব্দ ওদের জন্য না।
-“ মানে?
-“ মানে টানে কিছু না। নতুন এসেছো এ জগতে এসব নিজ চোখে দেখার সহ্যক্ষমতা তৈরি কর ছেলে। আর ভুলেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না তাহলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না।

-“ রেগে আছেন মিস চিত্রা? ভীষণ ভীষণ সরি বাসায় এসেই কল দিতে না পারায়।
ফোনের ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসলো না। প্রিয়তমা যে ভীষণ অভিমান করে কথা বলছে না এটা বুঝতে সময় লাগলো না।
-“ কথা বলবেন না মিস চিত্রা? খুব কি অভিমান হয়েছে আমার উপর? একটু কি দয়া বর্ষণ করা যায় না এই অধমের উপর? আপনার নিরবতা যে ভিষণ পিড়া দিচ্ছে।

চিত্রা তুষারের এমন আকুতি ভরা কথা শুনে অভিমান গুলো কে সযত্নে তুলে এক সাইডে রাখলো। সেই কখন থেকে ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলে তুষারের ফোনের। পাক্কা চারঘণ্টা পয়তাল্লিশ মিনিট তেরো সেকেন্ড পর ফোন করলো। প্রথম রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করে, মন বলছিলো এটা তুষারের ফোন। ইচ্ছে ছিলো খুব বকে দিবে কিন্তু তুষারের ভয়েস শুনতেই মাথায় পাকিয়ে রাখা সব শব্দ রা নিখোঁজ হয়ে যায়

-“ আপনার কি উচিত ছিলো না আমাকে পৌঁছে জানানোর? আমি যে অপেক্ষা নিয়ে বসে আছি আপনার কলের।
অতিরিক্ত রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তুষার। একটু ও মনে ছিলো না চিত্রা কে ফোন করার। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলে ফারহান কে হাতে পাওয়ার। তাই তো দুই ঘন্টার মধ্যে লোক দিয়ে ফারহান কে তুলে এনেছে। রাগ টা ফারহানের উপর ঝেড়ে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হতেই মনে পড়ে প্রিয়তমা তার ফোন কলের অপেক্ষায় আছে। তাই তো তড়িঘড়ি করে ফোন করলো।

-“ সেজন্য বিগ সরি,প্লিজ রাগ করবেন না। আসলে বাসায় এসে একটু ঘুম পেয়েছিল (ডাহা মিথ্যে কথা) ঘুমানোর ফলে আপনায় ফোন করতে পারি নি।
চিত্রা বিষয় টা ভেবে দেখলো। সত্যিই তো তার শরীর অসুস্থ, তার বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন বেশি ফোনের থেকে।
-“ এখন শরীরের অবস্থা কেমন?
তুষার কে’টে যাওয়ার হাতের দিকে তাকালো। বা হাতের ব্যাথাটা আগের তুলনায় বেড়েছে। চিত্রা চিন্তিত হবে বলে শুধায়-

-“ আগের থেকে কিছুটা বেটার ফিল করছি। ডিনার করেছেন রাতে?
-“ না আপনি?
-“ তাড়াতাড়ি ডিনার করুন, রাত প্রায় অনেক হলো তো।
-“ দশ টা পনেরো বাজে মাত্র।
-“ এটা মাত্র না,,তাড়াতাড়ি ডিনার করে শুয়ে পড়ুন।
চিত্রা কথা বাড়াল না, বুঝে নিল তুষার অসুস্থ তাই আর কথা বলার চেষ্টা করলো না।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে রাফি। আড়চোখে তৃষ্ণা কে দেখে চলছে।মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। পাশে যে কেউ তাকে বারংবার দেখছে সেটা যেনো তার মাথার আশেপাশে ও ভিড়ছে না। রাফি টিভির দিকে দৃষ্টি নিয়ে দেখলো মেয়েটা আমাদের রাণী নামের একটা নাটক দেখছে,স্টার জলসা নামের চ্যানেলে। রাফি এসবের দিকে চোখ বুলিয়ে তৃষ্ণার হাত থেকে টান মেরে রিমোট নিয়ে নেয়।

তৃষ্ণার ব্যাঘাত ঘটে। বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রাফি ভীষণ অবাক হলো। সে ভেবেছিল রিমোট কেড়ে নেওয়ায় তৃষ্ণা রিয়াক্ট করবে। কিন্তু পুরোপুরি ধারনা বদলে দিয়ে নিরবে চলে গেলো। অধরাকে আসতে দেখে রাফি প্রশ্ন করে বসলো-
-“ তৃষ্ণার কি কিছু হয়েছে অধরা?
অধরা পানির জগটা নিয়ে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১০

-“ মনে তো হলো কিছু হয়েছে। দুপুরে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে। চোখ মুখ ফুলো ছিলো। মামি কারন জিজ্ঞেস করলে বলে নি।
অধরার কথা শুনে রাফির ভ্রু জোড়া আপনা-আপনি কুঁচকে এলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১২