আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১০

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১০
Raiha Zubair Ripte

-“ দেখলেন তো হলো টা কি? ছুরি টা যদি হাতে না লেগে সোজা পেটে গিয়ে লাগতো তখন কি হতো? আর আপনাকে কে বলছে আমাকে বাঁচাতে? ছুরি টা এসে লাগলে আমার শরীরেই লাগতো, হিরো গিরি করার কি খুব দরকার ছিলো? যদি বড়সড় কিছু হত তখন কি হত?
তুষার হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। চিত্রা একাই বকবক করছে। তুষার সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস চিত্রার সামনে ধরে বলে-

-“ আগে দম নিন,ক্লান্ত হয়ে গেছেন পানি খান।
চিত্রা চুপ হয়ে যায়। পানির গ্লাস টা সাইড টেবিলে রেখে দেয়। তুষার কে ঐ সময় ওমন র’ক্তপাত অবস্থায় দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। বুকের বা পাশটায় কেমন চিনচিনে ব্যথা করছিলো। নিজেকে কোনো রকম সামলে তুষারের কাছে দৌড়ে চলে আসে৷ তুষার হাত থেকে ছুরি টা ফেলে দিয়ে হাত চেপে র’ক্ত বন্ধ করতে ব্যাস্ত। চিত্রা পড়নের ওড়নার শেষ প্রান্ত থেকে অংশ টেনে ছিঁড়ে তুষারের হাত বেঁধে দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অতিরিক্ত ভয়ে চিত্রার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিলো না। শুধু সারা শরীর ভয়ে বারংবার কেঁপে উঠছিলো। ওড়নার অংশ টা তুষারের হাতে বেঁধে দিতেই তুষার চিত্রার ভয়ার্তক কাঁপা শরীর টা দেখে চিত্রার মাথা টা বুকের সাথে চেপে ধরে।
-“ ভয় পাচ্ছেন কেনো মিস চিত্রা? ভয় পাবেন না। আছি তো আমি,কিচ্ছু হবে না আপনার।
চিত্রার এবার ডুকরে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করলো। সে তো নিজেকে নিয়ে কখনও ভয় পায় না। তার নিজের জন্য লোকটা আঘাতপ্রাপ্ত হলো। চিত্রা তুষারের বুক থেকে মাথা সরিয়ে আনে। চোখ থেকে বেয়ে পড়া জল টুকু আড়ালে মুছে নিয়ে বলে-

-“ এখানে আর এক মুহুর্ত ও নয়,চলুন হসপিটালে। ডক্টর দেখাতে হবে। খুব ব্যাথা করছে তাই না? ইশ কতখানি কে’টে গেছে, জ্বলছে খুব?
-“ হ্যাঁ জ্বলছে খুব। তবে হাতে নয় এই যে এইখান টায়।
চিত্রা তুষারের হাত থেকে মুখের দিকে তাকাতেই দেখে তুষার বুকের বা পাশে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। চিত্রা বুকে হাত দিয়ে বলে-

-“ এখানেও কে’টেছে? দেখান না আমায়।
-“ এই কাটা দেখা যাবে না মিস। আপনার চোখের জলের কারনে জ্বলছে এখান টায়।
টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো চিত্রার গাল বেয়ে।
-“ ঐ যে দেখুন আবার টুপ করে পড়ছে আর যন্ত্রণা টা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
চিত্রা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল-

-“ আমার কান্না পাচ্ছে ভীষণ। কি করবো? আপনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার দুনিয়া থমকে গিয়েছিল।
-“ তাই বলে কাঁদবেন মিস চিত্রা? এটা তো সামান্য আঘাত এতেই এমন নেতিয়ে পড়লেন! যদি বড় কিছু হয় তখন নিজেকে সামলাবেন কি করে?
-“ এর জন্যই আমি আপনায় বিয়ে করতে চাই নি। দেখুন প্রথম ঘুরতে এসেই কি হলো। বাকি জীবন কি করে নিশ্চিন্তে থাকবো আমি। আপনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে ম’রেই যাব দেখে নিয়েন।

-“ হুঁশশ, বাজে কথা বলবেন না। আমার আগে আপনার মৃ’ত্যু নেই।
-“ আপনি সব জান্তা নাকি?
-“ উঁহু তবে ভরসা দিতে পারি, আপনার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিব না।
-“ সেজন্যই আজ আমার জন্য নিজের প্রাণ দিতে বসেছিলেন।
তুষার স্মিত হেঁসে শুধালো-
-“ বেশি বুঝেন কেনো চলুন হসপিটালে যাই।

-“ ব্রো বাসায় চলো। আর ভাবি চলুন আপনায় বাসা ছেড়ে আসি।
রাফির কথা শুনে ঘোর ভাঙে চিত্রার। হসপিটালে এসে তুষার রাফিকে কল করেছিল।
-“ আপনি উনাকে ঠিকমতো বাসায় নিয়ে যাবেন। গাড়ি চালাতে দিবেন না। আর আমি অটো করে বাসায় চলে যেতে পারবো।
তুষার রুষ্ট হলো চিত্রার কথা শুনে।

-“ একদম না। আপনি আমাদের সাথেই যাবেন। অসুস্থ দেখতেই পাচ্ছেন। কথা বাড়াবেন না।
চিত্রা চুপ হয়ে যায়। রাফি আগে আগে হাটে আর পিছনে চিত্রা তুষার। চিত্রা বারবার আড়চোখে তুষারকে দেখে চলছে।
-“ এভাবে আড়চোখে বারবার কেনো দেখছেন? সামনে তাকিয়ে হাঁটুন তা না হলে পড়ে যাবেন তো।
চিত্রা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। গাড়ির কাছে আসতেই চিত্রা পেছনের সিটে বসে পড়লো। তুষার রাফিকে ইশারায় গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে নিজেও পেছনের সিটে বসলো। চিত্রার বাসার সামনে আসতেই চিত্রা গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ির জানালা দিয়ে তুষারকে বলে-

-“ বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবেন। ডক্টরের দেওয়া মেডিসিন টাইম টু খাবেন। আর পৌঁছে আমাকে কল দিবেন। আমার ফোন নম্বর আছে? না থাকলে নোট করুন ০১৯৫০০*****। আর এই যে ড্রাইভার দেখেশুনে গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাবেন। ভাইয়ের খেয়াল রাখবেন।
রাফি মাথা নাড়ায়। চিত্রা আরেকবার তুষারের দিকে চেয়ে বাসায় চলে যায়। তুষার গাড়ি থেকে নেমে রাফিকে নামতে বলে। রাফি গাড়ি থেকে নামতেই তুষার ড্রাইভিং সিটে বসে। ইশারায় পাশে বসতে বলে রাফিকে। রাফি বিনাবাক্যে পাশে বসতেই তুষার গাড়ি স্টার্ট দেয়।

ভার্সিটি থেকে ফিরেই থম মে’রে আছে সোফায়। মনে তার বিষাদের হাওয়া কোনো কিছুতেই মন বসছে না। বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরতেই দেখে সদর দরজা দিয়ে রাফি আসছে আর পেছন পেছন তুষার। রাফিকে দেখেই বিষাদরা আরো প্রকোপ হয়ে জেঁকে বসলো। পরক্ষনেই তুষারের দিকে তাকিয়ে ব্যান্ডেজ করা হাতে চোখ পড়তেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। বসা থেকে উঠে ভাইয়ের কাছে হন্তদন্ত হয়ে যায়।
-“ ভাই হাতে ব্যাথা পেলে কি করে?

তৃষ্ণার কথা শুনে রান্না ঘর থেকে তানিয়া বেগম বের হয়ে আসে। ছেলের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে থমকে যায়।
খুন্তি সমেত তুষারের দিকে এগিয়ে এসে বলে-
-” হাতে চোট পেলি কি করে তুষার?
মা বোন কে অস্থির হতে দেখে আস্বস্ত করে বলে-
-“ ঐ একটু অসাবধানতার জন্য কে’টে গেছে।
তানিয়া বেগম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে বলে-

-“ মিথ্যা বলছিস না তো? ব্যান্ডিস খোল আমি দেখবো।
-“ আহ চাচি তুমিও না। ব্যান্ডেজ যদি খোলারই হতো তাহলে ব্যান্ডেজ কেনো করা হয়েছে?
-“ ব্যান্ডিজ যখন করা হয়েছে তারমানে আঘাত টা ঘুরতরই রাফি ভাইয়া। মা কে হযবরল বুঝিয়ো না। ভাই খুব লেগেছে?
তুষার তৃষ্ণার মাথায় হাত রেখে মৃদু হেসে বলে-

-“ না টুনুই বেশি লাগে নি। চিন্তা করিস না। আর মা তুমি রান্না চুলায় রেখে এসেছো বোধহয়। আমি ঠিক আছি,আমার জন্য এক কাপ কফি পাঠিয়ো।
কথাটা বলে তুষার আর রাফি উপরে চলে যায়।
-“ ব্রো অঘটন টা ঘটলো কি করে?
তুষারের সোজাসাপটা জবাব-

-“ জানি না।
-“ জানবে না? যতদূর চোখ যায় ততদূরই তো খোলা মাঠ ছিলো তাহলে ছুরি টা আসলো কোথায় থেকে? চিন্তার বিষয় তো।
-“ হুমম।
-“ তোমার অনুমতি ছাড়া তো ওখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না তাহলে কেউ ঢুকলো কি করে?

-“ দেখ ভাই রাফি এসব প্রশ্ন করে আর জ্বালাস না আমায়,প্রথমবার তোর ভাবি কে নিয়ে ঘুরতে গেছি আর কোথাকার কোন গোলামের পুত এসে আমার রোমান্টিক শীতল পরিবেশ টাকে গরম করে দিলো!
তুষারের রাগান্বিত কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে যায় রাফি। রোমান্টিক মুহূর্ত নষ্ট হওয়ায় সে রেগে আছে। অথচ একটুর জন্য যে প্রান যেতে বসেছিল সেটার জন্য ভাবছে না! ভালোবাসা এতো টা অন্ধ করে দিতে পারে?

-“ ব্রো পরিবেশ গরম হবার জন্য এতো রাগ করছো? অথচ প্রান টাই তো খোয়াতে বসেছিলে।
-“ তুই বুঝবি না এমন মুহুর্ত কারো জন্য নষ্ট হলে কতটা রাগ লাগে। আগে কাউকে ভালোবাস ভাই তারপর দেখিস কেমন লাগে।
-“ এই নাকি তুমি আমাদের ভাবি এমপি ব্রো? এমপিদের এতো ফিলিংস থাকতে নেই শুনেছি।
তুষার রাগী চোখে তাকালো।

-“ এমপিরা কি রক্তে মাংসে মানুষ না নাকি? ওদের ফিলিংস থাকতে মানা কে বলছে? যে বলছে তাকে সামনে আন।
-“ আরে ব্রো চেইতো না চেইতো না। মুড ঠিক করো,আমি বরং আসি।
রাফি যেতেই তুষার পকেট থেকে ফোন বের করে। একটা নম্বরে কল লাগিয়ে বলে-
-“ লাফাঙ্গার টার এ টু যেট হিস্ট্রি আমার চাই। ওর কলিজা টা জাস্ট দেখতে চাই কত বড় হয়েছে। ও চিনতে ভুল করেছে তুষার খাঁন কে। ওর মৃ’ত্যু অনিবার্য।

———– আমার গ্রুপে জয়েন হয়ে গল্প বিষয়ক নিজস্ব মতামত জানান গ্রুপ রাইহার গল্প ঝুঁড়ি ——-
-“ মা ঠিক আছিস তো তুই?
কথাটা বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে মেয়ের রুমে ঢুকে সাহেল আহমেদ। চিত্রা তুষারের একটা ফোন কলের অপেক্ষায় বসে ছিলো। সাহেল আহমেদের কথা শুনে বসা থেকে উঠে বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে-
-“ আমি একদম ঠিক আছি বাবা অস্থির হয়ো না।
সাহেল আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে-

-“ তামিমের থেকে শুনলাম তোদের উপর কেউ আক্রমণ করেছিলো।
-“ হ্যাঁ।
-“ কে দেখেছিস তাকে?
-“ না বাবা। কোথা থেকে যেনো ছুরি টা চলে আসলো। এমন খোলামেলা জায়গায় এটা ঘটলো বিষয় টা কত অদ্ভুত তাই না?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৯

-“ হুম। বিরোধী দলেরই কাজ এটা। ওদের একটা শিক্ষা না দিলেই চলবে না। তুই বরং রেস্ট নে আমি আসছি।
চিত্রা ফোন হাতে নিয়েই অপেক্ষা করে। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে নিজের নম্বর না দিয়ে লোকটার নম্বর আনলে তাকে এমন গলা কা’টা মুরগির মতো ছটফট করতে হতো না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১১