কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২
নুজাইফা নূন

-” হোয়াট ইজ দিস?”
-” দিস ইজ প্রেমপত্র।যাকে ইংরেজিতে লাভ লেটার বলা হয়।”
-“জাস্ট শাট আপ। হাউ ডেয়ার ইউ গিভ মি এ লাভ লেটার?”
-” আমি আপনার মতো এতো শিক্ষিত ন‌ই স্যার।দয়া করে বাংলাতে বলুন। তাছাড়া বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষার জন্য রফিক ,শফিক , জব্বার,সহ কতো নিরিহ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অথচ দেখুন বাঙ্গালী জাতি কতো অকৃতজ্ঞ।তারা বাংলা ভাষা ছেড়ে ইংরেজি তে কথা বলছে। সব বেইমানের দল।”

-“মিস স্রোত আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আপনি ঠিক কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন?”
-” না না স্যার। একদম ই ভুলি নি।আর ভোলার কোনো প্রশ্ন‌ই উঠে না। আপনার কথা শুধুমাত্র আমি কেন আমার বাপ ও ভুলতে পারবে না।”
-” বড্ড বাজে বকছেন আপনি।ঐ যাকে বলে শূন্য কলসি বাজে বেশি। সামান্য একটা লাভ লেটার লেখার ও যোগ্যতা নেই আপনার।আমি কাউন্ট করে দেখেছি লাভ লেটারে টোটাল পাঁচশত টা শব্দ লিখেছেন ।যার মধ্যে তিনশত পঞ্চাশ টা বানান ই ভুল।আর হাতের লেখা পুরাই মাশাআল্লাহ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” এটা আর নতুন করে বলতে হবে না স্যার। আমার হাতের লেখার প্রশংসা সবাই করে।”
-“হ্যাঁ করবে‌ই তো । কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং হাতের লেখা বলে কথা। প্রশংসা পাওয়ার ই যোগ্য আপনি।”
-” আপনি আমাকে ভদ্র ভাষায় ইনসাল্ট করলেন স্যার।”
-“আমি বুঝতে পারছি না মিস স্রোত আপনার মতো একটা দু পাশ মহিলা কিভাবে অর্নাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হতে পারে?প্রেমপত্রে নিজের নাম টাও সঠিক করে লিখতে পারেন নি। ভূঁইয়ার ভূঁ এর জায়গায় ভু দিয়েছেন।টু পাশ মহিলা মুনফাসিল আবদ্ধের জন্য প্রেমপত্র লিখেছে।হাউ স্ট্রেঞ্জ?”

-” আবদ্ধ স্যারের কথায় অপমান বোধ হলো স্রোতের।চোখ থেকে আপনা আপনি নোনা জল বেরিয়ে গাল বেয়ে পড়লো। হ্যাঁ সে পড়াশোনায় একটু কাঁচা। পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না তার। কিন্তু এই নিয়ে কখনো তার পাপা মম তাকে কিছু বলে নি। অথচ এই নির্দয় মানুষ টা তাকে কতো সহজ ভাবে টু পাশ মহিলা পদবী দিয়ে দিলো।স্রোত চোখের পানি মুছে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেবিনে আরফা প্রবেশ করে বললো,
-” ভাইয়া! এখানে বাবুই এর কোনো দোষ নেই।আমরা ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে বাবুই কে ডেয়ার দিয়েছিলাম।তার জন্য‌ই বাবু‌ই এটা করতে বাধ্য হয়েছে।”

-” মিস আরফা এটা আপনার বাসা নয়। এটা মুনফাসিল আবদ্ধের কেবিন।এখানে আপনার আমার সম্পর্ক টিচার স্টুডেন্ট। নাউ আ’ম নট ইউর ব্রাদার।সো ডোন্ট কল মি ভাইয়া।কল মি স্যার।”
-” ইয়েস স্যার।আই গট ইট।”
-” আজ আপনারা যেটা করেছেন, খুবই অন্যায় করেছেন।টিচাররা সম্মানীয় ব্যক্তি।তারা আপনাদের বেয়াই লাগে না যে তাদের সাথে ঠাট্টা মশকরা করবেন।”

-” তৎক্ষণাৎ আরফা হাত জোড় করে বললো, স্যার আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে।এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।”
-” নো ওয়ে।ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না।আজ মিস স্রোত ভুল করেছে।কাল তার দেখাদেখি অন্য মেয়েরাও করবে। সুতরাং অন্যায় যখন করেছেন শাস্তি ও পেতে হবে।অন্যায় যে করে আর অন্যায় করতে যারা সাহায্য করে তারা সবাই অপরাধী।সো এই অপকর্মের সাথে যারা যারা যুক্ত আছেন তারা সবাই সৈকত স্যারের ক্লাস টাইম শেষ না হ‌ওয়া পর্যন্ত মাঠের মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন।আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে মিস আরফা আপনি এই টু পাশ মহিলার সঙ্গ ত্যাগ করবেন।কেননা,

“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
-” টু পাশ মহিলার সাথে থাকতে থাকতে আপনি ও টু পাশ মহিলার পদবী পেয়ে যাবেন।সে নিজে যে পথে হাঁটছে ,আপনাকেও সেই পথেই হাঁটানোর চেষ্টা করবে।”

-“স্রোতের মাঠের মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কথা শুনে যতোটা না খারাপ লাগলো, তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগলো বাবুই কে আবদ্ধ স্যার তার সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেছে এটা শুনে।আরফার সাথে তার সেই মাধ্যমিক থেকে বন্ধুত্ব। শুধুমাত্র একটা ভুলের জন্য তাদের এতো বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে ভাবতেই বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠলো স্রোতের।স্রোত দৌড়ে আবদ্ধ স্যারের কেবিন থেকে বেরিয়ে মাঠের মধ্যে এসে কান ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো। স্রোতের দেখাদেখি আরফা , ইশফা, নির্ঝর সহ প্রায় ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রী মাঠের মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো।যা দেখে নির্ঝর বললো,

-” একসাথে মিলে ধরি কান ,তাতে যাবে না
আমাদের কারো মান”
-” নির্ঝরের কথা শুনে স্রোত কষ্টের মাঝে ও হো হো করে হেসে উঠলো বললো, খচ্চর বেডা তোর ধলা মুখ ঝলসে যাক।তোর মাথার সব চুল পড়ে যাক। তুই টাকলা হয়ে যা।টাকলা আবদ্ধের দিকে মেয়েরা ভুলেও তাকিয়ে দেখবে না।তখন তোর এটিটিউড এর দোকান নিলামে উঠবে।তোর কোষ্টকাঠিন্য হোক। বাথরুমে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকবি কিন্তু যখন তোর পেট ক্লিয়ার হবে না,তখন বুঝতে পারবি আমার মতো নিষ্পাপ বাচ্চাদের সাথে খ্যাক খ্যাক করার মজা।”

-” স্রোতের অভিশাপ শুনে আরফার কাশি উঠে গেল।আরফা কাঁশতে কাঁশতে বললো ,
-” এবার একটু থাম বাবুই। হাজার হোক মানুষ টা আমার মায়ের পেটের ভাই। বাই এনি চান্স তোর অভিশাপ যদি আমার ভাইয়ার উপর লেগে যায়?”
-” তাহলে আমি শুক্রবারে মসজিদে পাঁচ টাকা দিয়ে দিবো।”
-” আরফা প্রতিত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৈকত স্যার মাঠের মধ্যে উপস্থিত হয়। অনেকক্ষণ যাবত রোদে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে স্রোতের ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।যা দেখে বুক ধুক করে উঠলো সৈকতের। সৈকতের আবদ্ধের প্রতি রাগ ক্ষোভ তৈরি হলো। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো তার। তৎক্ষণাৎ সৈকত স্রোতের কাছে গিয়ে বললো,

-” তোমরা সবাই ক্লাসে যাও।আমি আবদ্ধের কাছে সুপারিশ করে তোমাদের পানিশমেন্ট কমিয়ে নিয়েছি।এখন সবাই ক্লাসে যেতে পারো‌।সৈকত স্যারের কথা শুনে একে একে সবাই মাঠ ছেড়ে ক্লাস রুমে চলে এলো। কিন্তু স্রোত ঠাঁই সেখানেই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।যা দেখে সৈকত বললো,

-” কি হলো? তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছো কেন? ক্লাসে যেতে বলেছি তো আমি?”
-“অন্যায় যখন আমি করেছি, তখন শাস্তি টাও আমি মাথা পেতে নিবো। আবদ্ধ স্যার আপনার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে কান ধরে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে। আপনি পঁয়তাল্লিশ মিনিট আমাদের ক্লাস নেন। সেখানে মাত্র বিশ মিনিট হয়েছে। পঁয়তাল্লিশ মিনিট না হ‌ওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে এক পা ও নড়বো না।”
-” এতো জেদ ভালো নয় স্রোত। মাত্র বিশ মিনিট রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থেকে তোমার মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আরো পঁচিশ মিনিট এভাবে থাকলে তুমি অসুস্থ্য হয়ে পড়বে। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”

-” আমি কিছু বুঝতে চাই না স্যার।আমি আরো পঁচিশ মিনিট এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো।ব্যাস। পঁয়তাল্লিশ মিনিট হ‌ওয়ার আগে স্বয়ং আমার পাপা সাইফুল ভূঁইয়া এসেও আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে না।”
-” সৈকত অনেক অনুনয় বিনয় করার পরেও স্রোত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো‌। অবশেষে সৈকত স্রোতের জেদের কাছে হার মেনে চলে গেলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১

-” সৈকত স্যার যাওয়ার প্রায় দশ মিনিট পর স্রোতের মাথা চক্কর দিতে লাগলো। চোখে মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। তার মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ল। নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে স্রোত মাঠের মধ্যে ঢলে পড়ার আগেই পুরুষালি একটা হাত এসে স্রোত কে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে আবদ্ধ করে নিলো।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ৩