কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে গল্পের লিংক || নুজাইফা নূন

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ১
নুজাইফা নূন

-” বিয়ের আসরে পাত্রের জায়গায় একাউন্টিং এর প্রফেসর মুনফাসিল আবদ্ধ কে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল স্রোত। সে কখনোই পাত্র হিসেবে এই গম্ভীর, রাগী, বদমেজাজি, অহংকারী মানুষ টাকে আশা করে নি।টিচার ছাড়াও আবদ্ধের সাথে স্রোতের একটা সম্পর্ক রয়েছে।আবদ্ধ স্রোতের বেস্ট ফ্রেন্ড আরফার ভাই। লম্বাটে দেহ ,চ‌ওড়া বুক, ফর্সা মুখশ্রী , শক্ত চোয়ালদ্বয় ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি তার ।

সব মিলিয়ে দেখতে আপেলের মতো।কিন্তু মুখের ভাষা পুরাই করলা।যেনো মনে হয় জন্মের সময় মধুর পরিবর্তে তার মুখে জোরপূর্বক করলার জুস দেওয়া হয়েছিলো। তবুও মুনফাসিল আবদ্ধ মানেই হাজার হাজার মেয়েদের ক্রাশ। তাদের হার্টবিট বেড়ে যাওয়ায় কারণ। যেখানে অন্যান্য স্যারদের ক্লাসে ক্লাস করানোর জন্য স্যারেরা ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে পান না।সেখানে মুনফাসিল আবদ্ধ স্যারের ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের ঢল পড়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মূলত তারা ক্লাস করতে যায় না।তারা ক্লাসে যায় মুনফাসিল আবদ্ধ কে দেখে নিজেদের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে। স্রোত বুঝতে পারে না মুনফাসিল আবদ্ধের মধ্যে কি এমন বাড়তি জিনিস আছে যার জন্য তিনি এমন রুঢ় হবার পরেও সব মেয়েদের তার প্রতি এতো ইন্টারেস্ট। তাদের কে হাজার টা বকা দিলেও সেটা যেনো তাদের গায়ে লাগে না। কিন্তু স্রোত যেন সবার থেকে ব্যতিক্রম। বড়লোক বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে সে। একমাত্র মেয়ে হ‌ওয়ার আদর ভালোবাসার পরিমাণ টাও বেশি তার।

বিশ বছর বয়সে এসেও তার বাবা মা তাকে আঘাত করা তো দূরের কথা তার নাম ধরে ডাকে নি।সবার আদর ভালোবাসা পেয়ে স্রোত অনেক চঞ্চল আর দুষ্টু স্বভাবের হয়ে উঠে। তার এমন চঞ্চলতা আর দুষ্টুমি দেখে সবাই ভালোবাসতে বাধ্য হয় তাকে। অথচ মুনফাসিল আবদ্ধ নামক ব্যক্তিটা তাকে সারাক্ষণ ধমকের উপর রাখে। মোদ্দা কথা মুনফাসিল আবদ্ধ সব মেয়েদের ক্রাশ হলেও তার কাছে সে আইক্বাওয়ালা বাঁশ স্বরুপ।

এই তো মাস তিনেক আগের ঘটনা। স্রোত ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। তাদের টপিক ছিলো ডিপার্টমেন্ট থেকে শিক্ষাসফরে যাওয়া নিয়ে।সবাই শিক্ষাসফরে যেতে আগ্ৰহী হলেও শিক্ষাসফরে যাওয়ার কথা শুনে স্রোতের মুখ কালো হয়ে গেলো। যা দেখে নির্ঝর বললো ,

-” কারেন্ট আপার ধলা মুখ এমন কালা হয়ে গেল ক্যা রে?মনে হচ্ছে মুখের যেন কেউ ঝামা ঘষে দিয়েছে।”
-” সাইক্লোনের বাচ্চা সাইক্লোন তোকে কতোবার বলেছি আমাকে কারেন্ট আপা বলবি না।”
-” আমি আবার ইংলিশ ছাড়া কথা বলতে পারি না।”
-” হু দুই দিনের বৈরাগী ভাতে রে কয় অন্ন।”

-” স্রোত আর নির্ঝরের ঝগড়া দেখে আরফা বললো,কাম অন গাইস।তোরা এখন ভার্সিটি তে পড়িস। সুতরাং বাচ্চাদের মতো কথায় কথায় ঝগড়া মারামারি করার অভ্যাস বাদ দে। এইখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।আর তোরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু করে দিলি? কোথায় ভাবলাম শিক্ষা সফরে গিয়ে কি কি করবো সেসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবো।তা নয় তো…

-” আমার বোধহয় যাওয়া হবে না রে। তোরা সবাই যা শিক্ষা সফরে।”
-” কথাটা শোনা মাত্রই ইশফা বলে উঠলো, তুই যাবি না মানে কি হ্যাঁ? তুই আমাদের দলের লিডার।তোর থেকে আমরা খারাপ হবার উৎসাহ পাই। এখন তুই যদি আমাদের সাথে না যাস ,আমরা শিক্ষাসফরে গিয়ে কোনো শিক্ষা নিয়ে আসতে পারবো না দোস্ত।

-” আমার ও তো ইচ্ছে করছে শিক্ষাসফরে যাওয়ার। কিন্তু আমার পাপা মম আমাকে যেতে দিবে না।”
-“আমরা সবাই মিলে আঙ্কেল আন্টি কে রাজি করাতে পারি। কিন্তু আমাদের একটা শর্ত আছে ।”
-” কি শর্ত বল।আমি সব শর্ত মানতে রাজি আছি।”
-” পাক্কা?”
-” আবদ্ধ স্যারের ব‌উয়ের কসম পাক্বা। এখন যদি আমার কথার কোনো হেরফের হয়, তাহলে আবদ্ধ স্যারের বিয়ের রাতে লুজ ইমোশন হবে।যার ফলস্বরূপ বাসর রাতে স্যার ব‌উয়ের সাথে রোমান্স করার পরিবর্তে বাথরুম যাপন করবে।আমি তার বাধ্যগত ছাত্রী হয়ে কখনোই এমন টা চাইবো না।সো কথার মধ্যে কোনো ভেজাল নেই। একদম ক্লিয়ার।কি করতে হবে শুধু তাই বল।”

-” ডেয়ার নিয়ে আবদ্ধ স্যার কে প্রেমপত্র লিখতে হবে।”
-” কথাটা শুনে চোখ বড়বড় হয়ে গেল স্রোতের। স্রোতের বেশ জোরালো কণ্ঠে বললো, আসতাগফিরুল্লাহ , নাউযুবিল্লাল। এমন পাপ কাজ আমি করতে পারবো‌ না ।”
-” হুঁ! এমন ভাব করছে যেন সে সাধু সন্ন্যাসী।এ পর্যন্ত কয়টা স্যার কে প্রপোজ করেছিস , সে কথা মনে আছে তোর?”

-” সব স্যার আর আবদ্ধ স্যার এক না নির্ঝর।”
-” কেনো কারেন্ট আপা সব স্যারের এক টা করে টুনটুনি আছে। আর আবদ্ধ স্যারের দুইটা টুনটুনি আছে বুঝি? বলেই হো হো করে হেসে উঠলো নির্ঝর। নির্ঝর কে হাসতে দেখে স্রোত আরফা কে বললো,
-” তোর ভাইয়ার নামে কি সব বলে যাচ্ছে। তুই বোন হয়ে কিছু বলবি না বাবুই?”

-“আরফা স্রোতের কানে কানে বললো, তুই আমার ভাবী হলে কিন্তু মন্দ হবে না বাবুই।একটা চান্স নিতেই পারিস।ভাইয়া রাজি হলে হবে।আর না হলে বলবি এটা ডেয়ার ছিলো।ব্যাস প্রবলেম সলভ।”
-” তোর ভাইয়ের ব‌উ হবো আমি? ইমপসিবল। এমন এটিটিউড এর দোকানদার কে বিয়ে করলে জীবনে মা ডাক শোনা তো দূরের কথা, সামান্য চুমু ও পাবো না তার থেকে।আর তুই না পারবি জীবনে ফুপি হতে।আর না পারবি ভাতিজির থেকে চিপস , চকলেট , আইসক্রিম হাতিয়ে নিয়ে খেতে।”

-” ওকে ডান। শিক্ষাসফরে যাওয়া ক্যান্সেল।”
-” ঠিকাছে ঠিকাছে।আমি লিখবো প্রেমপত্র। কিন্তু এরপর যা হবে এর জন্য কিন্তু তোরা সব কয়টা ‌দায়ী থাকবি।”
-” কিচ্ছু হবে না বাবুই।নো‌ টেনশন ডু ফুর্তি।এবারে বাড়ি যা বাবুই। আগামীকাল আবদ্ধ স্যার ক্লাস টাইমে ইনকোর্স পরীক্ষা নিবে।যা গিয়ে পড়তে বস।”

-” তুই ও তোর ভাইয়ের মতো হয়েছিস। সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া।ধুর বা’ল ভাল্লাগে না আমার পড়াশোনা।আজ যদি পড়াশোনা না থাকতো তাহলে এতো দিনে পাপা আমার বিয়ে দিয়ে দিতো। সারাক্ষণ বরের সাথে রোমান্স করতাম।তার জন্য ভালো ভালো খাবার রান্না করতাম।সে বসে খাবার খেতো আর আমি তাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতাম।ঘুমোতে গেলে তার হাত পা টিপে দিতাম। আহা পড়াশোনা না থাকলে জীবন ডা কতোই না সুখের হতো?”

-“পরের দিন যথা সময়ে আবদ্ধ ক্লাসে খাতা , প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছে। দপ্তর এসে সব ছাত্র-ছাত্রীদের খাতা , প্রশ্ন দিয়ে দেয়। পাঁচ মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হয়।সবাই বেশ মনোযোগ সহকারে খাতায় লিখছে। কিন্তু স্রোত কি লিখবে বুঝতে না পেরে সম্পূর্ণ খাতায় পেন্সিল দিয়ে ছক টানছে। কোনো ম্যাথ ই করতে পারছে না।আর করবেই না কিভাবে?সে যে রাতে পড়া বাদ দিয়ে প্রেমপত্র লিখেছে। ইতিমধ্যে পরীক্ষার টাইম ওভার হয়ে গিয়েছে। দপ্তর এসে সবার খাতা জমা নিচ্ছে।

স্রোত তৎক্ষণাৎ তার ব্যাগে থাকা প্রেমপত্র খাতার মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে সোজা বাড়ি চলে এলো।সে রাতে টেনশনে ঘুম হলো না তার।আবদ্ধ প্রেমপত্র দেখার পর তাকে কি শাস্তি দিবে ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল স্রোতের।সারা রাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিলো।পরের দিন স্রোত ক্লাসে গিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসলো।যাতে তার দিকে আবদ্ধের নজর না পড়ে।পুরো ক্লাসে স্রোত ভদ্র বাচ্চার মতো ব‌ইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো।মনে মনে দোয়া করছিলো যেন তাড়াতাড়ি আবদ্ধ স্যারের ক্লাস টাইম শেষ হয়। অবশেষে আবদ্ধ ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে যায়।যা দেখে স্রোত যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।আবদ্ধ স্যার তাকে কিছু বলে নি এই খুশি তে স্রোত ক্লাসের মধ্যেই মাথায় উপর বোতল নিয়ে নাচতে নাচতে নিজেই গান গাইতে শুরু করলো।”

-” ওই মিয়া ওটা কি?
দেলোয়ারের পুত।
ওই বেডা কি ক‌ইছস
আমার জামাইয়ের পুত।
ওই মিয়া ওটা কি?
দেলোয়ারের পুত।
ওই বেডা কি ক‌ইছস
আমার জামাইয়ের পুত।
জামাইয়ের জামা নাই
জামালের ভাই পুত।টুটুক টুটুক।
জামাইয়ের জামা নাই।
জামালের ভাই পুত।টুটুক টুটুক।”

-” স্রোতের সাথে ক্লাসরুমের সবাই তাল মিলিয়ে নাচতে শুরু করলো। আর তখনি দপ্তর ক্লাস রুমে এসে বললো,
-” আপনাদের মধ্যে স্রোত ভূঁইয়া কে আছেন? স্রোত ভূঁইয়া কে আবদ্ধ স্যার এক্ষুনি তার কেবিনে ডেকেছেন।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২