প্রেম পরিণয় শেষ পর্ব 

প্রেম পরিণয় শেষ পর্ব 
রাজশ্রী মজুমদার রাই

সন্তানের চেয়ে আমরা মাঝে মাঝে সমাজকে বেশি প্রাধান্য দিই। কিন্তু দিনশেষ কি সমাজ বা সমাজের মানুষ আমাদের কষ্টের ভাগিদার হয়?? পরিবার, স্ত্রী, সন্তান ছাড়া দেখবেন দিন শেষে কেউ নেই আপনার পাশে। কিছু কিছু বাবা,মা আছে যারা সন্তান জীবিত থাকতে তাদের মূল্য দেয় না, নিজেরা যেটা ভালো মনে করে সেটাই নিজের সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়, নিজের সন্তানকে আত্মাহত্যার পথে এগিয়ে দেয়।

আর যখন পৃথিবীর থেকে চলে যায়, তখন তারা কাঁদে সে সন্তানের জন্য, হারিয়ে যাওয়ার পর নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। আদৌ কি এ অনুশোচনা করে কোন লাভ হবে?? দীপক সাহা উঠে গেলেন সেখান থেকে, সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পিছন থেকে ডাকলো আদিত্য রায়
আদিত্য রায় – কোথায় যাচ্ছো,
দীপক সাহা – তনুর কাছে। আপনি যাবেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদিত্য রায় – না, আমি সেখানে যেতে চাই না। আমার মনে হয় আমাদের উপস্থিতে ওরা কষ্ট পায়৷
দীপক সাহা – সারাজীবন যখন কষ্ট সহ্য করেছে এখনো করতে পারবে।
বলেই দীপক সাহা হাঁটা দিলো, চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে, দিনের আলোয় এখানে আসতে পারে না দীপক সাহা, অভির কড়া নিষেধ, তার ছায়াও যেনো এখানে না পড়ে।

তারপর ও রাতের আঁধারে আসেন তিনি। চুপ করে তাকিয়ে থাকে। সারি সারি দাড়িয়ে আছে তিনটা মঠ, দুই বছর আগেই শশ্মানে মধ্যে মঠ গুলো তৈরি করে দেয় অভি। তিনজনের তিনটা মঠ, মঠের উপর খুদায় করা নাম, জন্ম তারিখ, মৃত্যু তারিখ। তিনজনের জন্ম তারিখ আলাদা হলেও মৃত্যু তারিখ এক ২৬ শে শ্রাবণ। চলুন ফিরে যায় চার বছর আগের সেই ২৬ শে শ্রাবণে,,,

হিয়া চিঠিটা এগিয়ে দিলো অভির দিকে, অভি হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো,
দিয়া- চিঠিটা যখন তোমরা পড়ছো, তখন আমি আর তোমাদের মাঝে নেই। আমি থাকতে চেয়েছি, বাঁচতে চেয়েছি৷ কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলো না। আমি হাজার বছর বাঁচতে চেয়েছি আমার স্বামীর সাথে, কিন্তু বাবাই তুমি দিলে না। একজন বাবা কিভাবে নিজের মেয়ের সাথে এমন নির্মম ব্যবহার করে??

তোমরা বারবার বলেছো আমি পাপ করেছি, তাহলে একজন স্বামীর কাছ থেকে প্রতারণা করে তার স্ত্রী কে নিয়ে এসে অন্যকারো সাথে বিয়ে দেওয়া বুঝি পুণ্যের মধ্যে পড়ে? তাও কি একটা দুশ্চরিত্র লম্পটের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছো যে বিয়ের আগে আমার ওড়না নিয়ে টানাটানি করেছে, সেদিন হিয়াপাখি ঠিক সময়ে না এলে আমি ওই জানোয়ার লালসার স্বীকার হতাম।

অথচ দেখো আমি দুটো বছর আমার স্বামী কাছে ছিলাম, বৈধ অধিকার থাকার স্বত্বেও উনি কখনো স্বামীর অধিকার আদায় করে নি, আমি ছোট আমার বয়স কম বলে, উনি বুকে আগলে রেখেছে, কতোটা ভাগ্য করে এমন স্বামী পাওয়া যায় বলতে পারো? উনি আর আমি মিলে আমাদের সুখের নীড় সাজিয়েছি। অফুরন্ত ভালোবাসা ছিলো আমার সংসারে। তুমি আর ফিরতে দিলে না আমার ভালোবাসার নীড়ে। শুনেছি বাবার কাঁধে সন্তানের মৃতদেহ নাকি খুব ভারি হয়, আমি তোমাকে সেই ভার থেকে মুক্ত করে দিলাম, প্লিজ আমাকে স্পর্শ করো না তুমি।

মা, আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার কোন উপায় ছিলো না। ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা মৃত্যুর চেয়েও বেশি ভয়ংকর। তাই আমি সহজ পথ টা বেছে নিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। তোমাকে আমার সুখের অরণ্যে দেখাতে পারলাম না।

হিয়াপাখি তুই আমার খুব আদরের। ভালো থাকিস বোন।এই স্বার্থপর পৃথিবীর কাছে হেরে গেছি আমি।
আজকে আমি আমার ম্যাজিশিয়ান কে খুব মিস করছি। দাদাভাই কই তুমি? আজ তুমি থাকলে হয়তো এ দিনটায় আসতো না। দাদাভাই তুমি সবসময় আমার সব আবদার, ইচ্ছে পূরণ করেছো। আজ শেষ বারের মতো আমার দুটো কথা রেখো, আমি জানি, তুমি যখন শুনবে আমি আর নেই,তখন তোমার খুব রাগ হবে কিন্তু রাগের মাথায় কোন ভুল করো না দাদাভাই, কাউকে তুমি শাস্তি দিও না,ওদের শাস্তি ঈশ্বর দিবে।

আর ওনাকে দেখে রেখো, সামলে নিয়ো। আমার সব কাছের মানুষকে গুলো কে দেখার দায়িত্ব তোমার দাদাভাই, সুপ্তিও কিন্তু আমার খুব কাছের একজন ছিলো, ওই শাঁকচুন্নি কে বলো, সবাইকে দেখা রাখার দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলেও আমার দাদাভাই কে দেখার রাখার দায়িত্ব টা ওকে দিলাম।
সবশেষে,

আমার প্রিয়,, আপনাকে বলছি, খুব ভালোবাসি আমি আপনাকে, আপনি যতোটা জানতেন তার চেয়ে ও বেশি ভালোবাসি আপনাকে। আমি ছেড়ে যেতে চাই নি আপনাকে, থাকতে চেয়ছি আপনার সাথে, কিন্তু নিয়তি তার নির্মমতা দেখিয়ে দিলো। আপনাকে দেখার একবুক তৃষ্ণা নিয়ে পৃথিবীর ছেড়েছি আমি। আমার প্রার্থনা হয়তো কোন কমতি ছিলো তাই তো আপনাকে পেয়েও হারিয়েছি।

পূর্ণ হয়েও পূর্ণতা পেলো না আমাদের ভালোবাসা। আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,, আর সহ্য করতে পারছি না। সিলিং এর সাথে শাড়িটা জড়িয়ে ও আমি বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুতি জানিয়েছি শেষ একবার আপনাকে দেখার,যদি একবার আপনাকে দেখতে পেতাম তাহলে আমার আত্না শান্তি পেতো, আপনি যে আমার আত্নার শান্তি ছিলেন। আমার শেষ নিঃশ্বাস শুধু আপনাকেই খুঁজছে। পেয়ে হারানোর এ তীব্র শোক, আর কারো না হোক।।
চিঠি পড়া শেষ করে অগ্নির দিকে তাকায় অভি।

আত্মহত্যা কখনোই সমাধান হতে পারে না, কিন্তু একটা মানুষ কতোটা অসহায় হলে এ পথ বেছে নেই সেটা সেই জানে। ঠান্ডা মাথায় নিজেকে শেষ করে দেওয়া ব্যাপার হয়তো আর পাঁচ জনের কাছে খুব সহজ মনে হলেও, কিন্তু যে সুইসাইড করে সেই জানে কতোটা কঠিন।
দিয়ার কষ্টে জর্জরিত মলিন মুখ টার দিকে অপলক চেয়ে আছে অগ্নি। দিয়া যে কতোটা কষ্ট নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে, তা চিঠিতে প্রকাশ পেয়েছে।

দীপক সাহা ধপ করে বসে পড়লো, রনিত এমন ঘৃণ্য কাজ করবে দিয়ার সাথে তিনি ভাবতেও পারে নি। কাঁপা গলায় হিয়ার উদ্দেশ্য বললো
দীপক সাহা – রনিত দিয়ার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করছে হিয়া তোমরা আমাকে বলো নি কেন??
হিয়ার ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো

হিয়া- কি বলতাম আপনাকে?? বললে বিশ্বাস করতেন? কখনো বিশ্বাস করেছেন আমাদের?? আপনার বোনেদের কথা শুনে ঠিক ভুল বিচার না করেই শাসন করেছেন। কখনো সত্যিটা জানতে চেয়েছেন??আপনি বাবা হয়ে শুধু আমাদের শাসনই করেছেন, কখনো ভালোবাসেন নি। কখনো ভালো রাখতে পারেন নি আমার মাকে, ওই দেখুন দাদাই কে, তার থেকে শিখে নিই কিভাবে ভালোবাসতে হয়। কতোটা ভালোবাসতো আমার দিদিয়াকে, কিন্তু আপনার জন্য আজ আমার দিদিয়া নেই। আমার দিদিয়ার মৃত্যুর জন্য আপনি দায়, আপনি ওকে মেরে ফেলেছেন, আমি কখনো ক্ষমা করবো না আপনাকে।

দীপক সাহা হিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, হিয়ার বলা প্রত্যেকটা কথায় সত্যি,তখন বললে উনি সত্যি বিশ্বাস করতো না রনিত এমন করেছে। ওনার মেয়েরা ওনাকে ভয় পেলেও সবসময় তুমি করেই সম্বোধন করতো কিন্তু আজ হিয়া আপনি করে বলছে। তিনি আজ বুঝতে পারলো, এতোগুলা বছর উনি বোনদের কথা শুনে অনেক ভুল করেছে।
অগ্নি দিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

অগ্নি – আরেকটি বার জন্ম নিয়ো প্রিয়তমা,, সেইবার ও আমাকে এভাবে ভালোবেসো। মানুষ না হয়ে, নীলতিমি হয়ে জন্ম নিয়ো, প্রার্থনা করি আমি জেনো তাই হই, বিশাল সমুদ্রের সাঁতরে বেড়াবো দুজন, তুমি আমি খুব কাছাকাছি থাকবো। তুমি হারিয়ে গেলে,আমিও তীরে গিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করবো। ভালোবাসি প্রিয়তমা,,

কথা শেষ করে আবারও দিয়ার মুখের দিকে চেয়ে রইলো অগ্নি।অভি ঘৃন্যায় মুখ ফিরিয়ে নিলো দীপক সাহা দিক থেকে। ওর ইচ্ছা করছে দীপক সাহাকে কয়েক টুকরো করে ফেলতে কিন্তু দিয়ার শেষ কথা গুলো রাখবে সে। অগ্নিকে সামলাতে হবে তাই নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে অগ্নির পাশে গিয়ে বসলো অভি, কান্না গিলো অগ্নিকে বললো
অভি- দাদাই, দিয়ার ভালোবাসা তুমি,

গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না অভির তাও টেনে বলার চেষ্টা করেছে,
অভি- তু-মি ভালো থাকলে আমার বোনটার আত্মা শান্তি পাবে। ভালো থাকতে হবে তোমাকে,, নিজেকে শক্ত করে, দিয়ার শেষকৃত্য করতে হ- বে।

অভির কথা শুনো অগ্নির কোন প্রতিক্রিয়া হলো না সেভাবেই বসে আছে, অভি নিজের হাত টা অগ্নির কাঁধে রাখতেই ধপ করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে অগ্নির শরীর, অভির মাথায় জেনো আকাশ ভেঙে পড়লো, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো লুটিয়ে পড়া অগ্নির দিকে। কবির আর জুবায়ের ছুটে অগ্নিকে ঝাঁকাতে লাগলো, কবির হাতের পালস্ চেক করে, অসহায় চোখে অভির দিকে তাকালো, জুবায়ের ইশারা দিতেই না সূচক মাথা নাড়ায়। জুবায়ের অগ্নির খোলা চোখ জোড়া হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো। অগ্নির এমন আকস্মিক মৃত্যুতে উপস্থিত সবাই স্তব্ধে বিমূঢ় হয়ে গেলো, কিয়ৎকাল চেয়ে থেকে চিৎকার করে উঠলো অভি।

অভি- দাদাইইইই,
উঠে দাড়ানো শক্তি পেলো না অভি, হামাগুড়ি দিয়ে অগ্নির মাথার কাছে এলো, সযত্নে অগ্নির মাথা টা নিজের কোলে নিলো,
অভি- দাদাই তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না, তোমাকে দেখে রাখার দায়িত্ব তো দিয়া আমাকে দিয়ে গেছে। এই দাদাই উঠো,,

আলো ঝলমলে বিয়ে বাড়ি মৃত্যুপুরীতে রুপ নিলো, অগ্নি দিয়ার শোকে যখন পাগলপ্রায় অভি, তখন ওর শোকের মাত্রা আরেক ধাপ বাড়িয়ে সেখানেই অসুস্থ হয়ে যায়,তনুশ্রী দেবী। হাসপাতালে নেওয়া পথেই পরলোক গমন করেন তিনি।একেক পর এক ধাক্কা সামলাতে পারলো না,হার্ট এ্যাটাক করেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি, তার উপর একদিকে নিজের সন্তান মৃত্যু অন্যদিকে আদরের ভাইপোর মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি।

প্রিয়জনদের হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যায় অভি। সেদিনের পর থেকে হিয়া আর কথা বলেনি দীপক সাহার সাথে, অভি সাথে নিয়ে গেছে হিয়াকে, স্ত্রী সন্তানদের হারিয়ে অনুশোচনায় দগ্ধ দীপক সাহা। বেঁচে থাকতে মূল্য দিতে হয়, মরে গেলে হাজারো কেঁদে লাভ নেই। দীপক সাহা তার স্ত্রী আর মেয়েদের ভীষণ ভালোবাসতেন কিন্তু সে তার অনুভূতি প্রকাশের ব্যর্থ ছিলেন। বোনদের প্ররোচনায় তনুশ্রী দেবী সাথে খারাপ আচারণ করতেন।

বর্তমানে দীপক সাহা শশ্মানে বসে আছে, নিঃশব্দে কাঁদছেন তিনি, নিজ মনেই বিড়বিড় করে বলেন,
দীপক সাহা – তনু, তোমার মেয়ের বলা কথাটা সত্যি হয়ে গেলো, আমি নিজের ভুলের জন্য সবাইকে হারিয়েছি। দেখো কেউ নেই আমার কাছে, আমি একা। আমি ভালোবেসে ও তোমাকে ভালো রাখতে পারি নি, নিজের সন্তানের ভালো বাবা হতে পারি নি।

সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না, কিছু কিছু মানুষের পাপের শাস্তি ইহকালে দিয়ে দেয়, সেদিনের করা অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকা প্রত্যকে শাস্তি পেয়েছে। আদিত্য রায় আর দীপক সাহা নিঃসঙ্গ জীবন কাটাছে। শান্তি দেবী ত্যাগ করেছেন আদিত্য রায় কে৷ যে আভা দেবী দিয়ার সিঁদুর মুছে দিয়েছিলো, দিয়ার মৃত্যুর মাস চার পর সৃষ্টিকর্তায় ওনার সিঁদুর মুছে দিয়েছে।

সব জানার পর বিভা দেবীকে ও তার স্বামী ত্যাগ করেছে, এক ছাদের নিচে থাকলেও কথা বলেন না ওনার সাথে। আর রনিত বাইক এক্সিডেন্ট করে পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছে।
হিয়া দাড়িয়ে আছে, অগ্নি-দিয়ার ছবির সামনে, দেয়াল জুড়ে কতো স্মৃতি, কতো ভালোবাসা ময় মূহুর্ত। এ ফ্ল্যাটে আসলেই পশ্চিম পাশের দেয়ালের সামনে দাড়িয়ে সময় পার করে হিয়া। নিঃশব্দে কাঁদছে, ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ হয়ে চোখের জল মুছে নেই,

সুপ্তি- হিয়াপাখি,
হিয়া- এ নামে ডেকো না, বৌদি। ভীষণ কষ্ট হয়।
সুপ্তি- ওদের খুব আদরের ছিলে তুমি,
হিয়া- হুম, মায়ের ও ভীষণ আদরের ছিলাম, খুব বেশি আদর করতো তাই তো সবাই একসাথে ছেড়ে চলে গেছে। আমার কথা কেউ ভাবলো না।

কাঁদছে হিয়া, সুপ্তি নিজের চোখের জলটা শাড়ির আঁচলে মুছে নিলো,
সুপ্তি- আমরা কি আদর করি না তোমাকে?
হিয়া- তুমি আর দাদাভাই আছো দেখেই তো বেঁচে আছি না হলে তো কবেই ম,,,,
সুপ্তি হিয়ার মুখ চেপে ধরলো,,
সুপ্তি- এ কথা বলো না হিয়া, তুমি তো জানো তোমার মুখ চেয়ে তোমার দাদাভাই স্বাভাবিক আছে। তুমি না থাকলে এ মানুষটা কে আমি স্বাভাবিক জীবনে আনতে পারতাম না। অগ্নিদা আর দিয়ার মৃত্যুতে মানুষ টা কতোটা ভেঙে পড়েছে। এখনো কাঁদে।

হিয়া- জানি বৌদি, দাদাভাই-য়ের প্রাণ ছিলো ওরা। তাই তো ওদের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখেছে। কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না, এ ফ্ল্যাটে চার বছর কেউ থাকে না,
সুপ্তি- তোমায় কে বললো এই ফ্ল্যাটে কেউ থাকে না।
হিয়া প্রশ্নসূচক চোখে তাকায়, সুপ্তি বলে

সুপ্তি- অগ্নিদা আর দিয়া থাকে, আমি এ ফ্ল্যাটে ওদের অনুভব করি, মাঝে মাঝেই মনে হয়, ওই তো দুজন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে গল্প করছে, কিচেনে একসাথে রান্না করছে। অগ্নিদা খাবারের প্লেট হাতে দিয়ার পিছনে ছুটছে, আর ও খিলখিল করে হাসছে। আমি আর তোমার দাদাভাই ফিল করি ওদের। ওরা এখানেই আছে। জানো হিয়া, ওদের কতো সুন্দর মূহুর্তের স্বাক্ষী আমি, বারান্দায় বসে যখন ওরা দুজন গল্প করতো, তখন আমি আমার বারান্দা থেকে লুকিয়ে শুনতাম ওদের কথা, ওদের পবিত্র ভালোবাসা দেখে চোখ জুড়িয়ে যেতো।

অগ্নি দিয়ার মৃত্যুর পর ওদের সাজানো সংসার টাকে আগলে রেখেছে, অভি আর সুপ্তি। বছর দেড়েক আগে এ ফ্ল্যাট টা কিনে নিয়েছে অভি। হিয়া আবার বললো,
হিয়া- ওদের ভালোবাসার পরিমাণ এতো ভয়াবহ কেন হলো বৌদি?? কেন পূর্ণতা পেলো না ওদের ভালোবাসা। ওদের প্রেম পরিণয় হলো না কেন??

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৬

সুপ্তি- কোথাও না কোথাও ঠিকই পূর্ণতা পেয়েছে ওদের ভালোবাসা।
হয়তো এ গল্পে মিল হয় নি অগ্নি দিয়ার, ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি। ওদের প্রেম পরিণয় হয় নি। কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে অন্য কোন অগ্নি দিয়ার প্রেম পরিণয় হবে, পূর্ণতা পাবো তাদের ভালোবাসা।
(ভালোবাসা সুন্দর, ভয়ংকর রকমের সুন্দর)