প্রেম পরিণয় পর্ব ১৪

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৪
রাজশ্রী মজুমদার রাই

অগ্নি সোফায় বসে ফোনে কথা বলছে, অফিসিয়াল কথা বলছে, দিয়া এসে পিছন থেকে অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরলো, অগ্নি একহাতে টেনে ওর সামনে নিয়ে আসলো, হেচকা টানে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো, একহাতে ফোন কানে ধরে রেখেছে আর অন্য হাতে দিয়ার কোমড়ে। অগ্নির কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে ইমপোর্টেন্স কোন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে। দিয়া মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো, আঙ্গুল দিয়ে অগ্নির বুকে খোঁচা দিচ্ছে, অগ্নি ফোনে কথা বলতে বলতেই তাঁকায় দিয়ার দিকে, চোখে ইশারা দিয়ে বুঝায়

অগ্নি – কি??
দিয়া ও মুখ এগিয়ে দেয় ইশারা দিয়ে বুঝায় কপালে কিস করতে, অগ্নি দিয়ার কপালে শব্দহীন চুমু দেয়, এভাবেই দিয়া দুই গালে, নাকে, থুতনি দেখিয়ে দেয়, অগ্নিও হাসি মুখে বউয়ের পাগলামি তে সায় দেয়। এর মধ্যে ফোনে কথা বলা শেষ হয়, এবার দিয়া নিজের ঠোঁট এগিয়ে দেয়, কিস করার জন্য, অগ্নি কিছুখন দিয়ার মুখের দিকে চেয়ে, দিয়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। চোখ বন্ধ করে নেয় দিয়া, অগ্নি ছোট চুমু দিয়েই সরে যায়, দিয়া চোখ খুলেই রাগী চোখে তাঁকায়,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অগ্নি- কি হলো, আরো লাগবে??
দিয়া- আপনাকে আমি লিপ কিস করতে বলেছি।
অগ্নি – করেছি তো।
দিয়া- এভাবে লিপ কিস করে??
অগ্নি – তো কিভাবে করে।
দিয়া- জানেন না আপনি??
অগ্নি – নাহ্

দিয়া কটমট চোখে তাকিয়ে আছে অগ্নির দিকে, মিটমিট করে হাসছে অগ্নি। তা দেখে দিয়া গাল ফুলিয়ে অগ্নির কোলেই বসে আছে।
অগ্নি – আবার কি হলো,,
দিয়া- কোন কথা নেই আপনার সাথে।
অগ্নি – আচ্ছা কথা বলতে হবে না।
বলেই দিয়ার মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে, দিয়া নাক ঘষছে অগ্নির বুকে, অগ্নি বুঝতে পারলো, দিয়া ওকে কিছু বলতে চাই,

অগ্নি – কি সোনা??
দিয়া- আমার কিছু লাগবে??
অগ্নি- কি লাগবে বলো।
দিয়া অগ্নির বুকে থেকে মুখ তুলে বলে
দিয়া- আমার একটা বেবি লাগবে।
এমন কথা শুনে অগ্নি ভ্যাবাচ্যাকা খেলো, দিয়া আবার বললো
দিয়া- মা আজকে জিজ্ঞেস করলো আমার বেবি প্ল্যান করছি কিনা?? এবার জেনো বেবির বিষয় টা নিয়ে ভাবি৷ মা তো আর জানে না দিল্লি এখনো অনেক দূর। এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চা কি আকাশ থেকে পড়বে নাকি আমার কোলে।
দিয়ার এমন কথা শুনে অগ্নি শব্দ করেই হেসে দিলো,

অগ্নি – হা হা হা
দিয়া- হাসছেন কেন, হাসার মতো কি বললাম।
অগ্নি দিয়ার নাক টেনে দিয়ে বলে,
অগ্নি – নিজেই একটা বাচ্চা, তার নাকি আবার বাচ্চা লাগবে।
দিয়া- বাজে কথা বলবেন না, আমি মোটেও বাচ্চা না।
অগ্নি – তাই,
দিয়া- হুম, আমার বয়সী মেয়েরা দুই তিন বাচ্চার মা হয়ে গেছে।

অগ্নি – তোমার এ শরীর নিয়ে দুই তিন বাচ্চার মা হবে?? ওজন কতো তোমার ৩৮ হবে?? মনে তো হয় না, জোরে বাতাস দিলে উড়ে চলে যাবে। একটা বাচ্চার জন্য মাকে কতোটা রিস্ক নিতে হয় জানো।
দিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো
দিয়া- আমি চিকন বলে আপনি আমাকে খোঁটা দিলেন??
অগ্নি এবার গলার স্বর নরম করে বললো,

অগ্নি – খোঁটা দিই নি সোনা, শুধু এটাই বুঝাতে চেয়ছি, তুমি এখনো বাচ্চা নেওয়ার জন্য ফিট না, তাছাড়া এখনো বয়স কম তোমার। আর বেশি না বছর দুয়েক অপেক্ষা কর তারপর তোমার মতো একটা কিউট বেবি এনে দিবো।
দিয়া- আরো দুই বছর??
অগ্নি – হুম।
দিয়া- তখন আমার বাচ্চারা আপনাকে বাবা না ঠাকুরদা বলে ডাকবে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন যে, সে খেয়াল আছে। পঁচা লোক ছাড়ুন আমাকে।
অগ্নি আরো শক্ত করে ধরলো দিয়াকে,

অগ্নি – একটুও ছাড়বো না। বউ কি ছেড়ে দেওয়ার জিনিস নাকি।আর শোনো আমি এতো তাড়াতাড়ি তোমাকে কারো সাথে শেয়ার করবো না এমনকি আমার বাচ্চার সাথে ও না। এভাবেই আমার বুকের পাঁজরের সাথে মিশিয়ে রাখবো।
দীপক সাহার সামনে বসে আছে রনিত, কিছুদিন আগে সে ঢাকা গিয়েছিল, সেখানে দেখতে পায় দিয়া আর অগ্নিকে। মন্দির থেকে পূজা দিয়ে বের হয়েছে দুজন একসাথে। রনিতের যা বুঝার সে বুঝে নিয়েছে। দীপক সাহা নিজের মাথা চুল টেনে ধরছে, দিয়া আর অগ্নি বিয়ে করে নিয়েছে, এটা উনি মানতে পারছে না। রনিত বলে

রনিত- আঙ্কেল কি করবেন, কিছু ভেবেছেন?
দীপক সাহা – মাথায় কিছুই আসছে না, ওরা কিভাবে এ কাজ করলো।
রনিত- কিভাবে কি হইছে সেটা বাদ দেন, এখন কি করবেন সেটা ভাবেন। দিয়া অগ্নির বিয়ের কথা জানাজানি হলে আপনি মুখ দেখাতে পারবেন না সমাজে।

দীপক সাহা চুপ করে বসে আছে,,, রনিত আবারও বললো
রনিত- আঙ্কেল আপনি যদি চান, তাহলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। কেউ কিছুই জানবে আর দিয়াকে ও আবার বিয়ে দিতে পারবেন।
দীপক সাহা- কিভাবে সম্ভব?? বিবাহিত মেয়েকে কে বিয়ে করবে।
রনিত দীপক সাহার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো।
মুখ গোমড়া করে বসে আছে সুপ্তি, দিয়া অনেকখন পর্যন্ত ওকে লক্ষ করেছে তার চকলেট খাচ্ছে। চকলেট খাওয়া শেষে সুপ্তিকে বলে

দিয়া- কি রে মুখটা এমন বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখেছিস কেন??
সুপ্তি- তো কি করবো। তোর ভাইয়ের মন বুঝি না ছাত্রার মাথা।
দিয়া- আমার ভাই আবার কি করলো।
সুপ্তি- পাঁচ মিনিট কথা বললে, চার মিনিটই ধমকের উপর রাখে।শালা পুরাই অনরোমান্টিক।
দিয়া রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, তা দেখে সুপ্তি বোকা হেসে বলে
সুপ্তি- না মানে খুব রাগি, খুব বকে আমাকে।
দিয়া- তুই তো বলেছিস তোর লুতুপুতু ছেলে ভালো লাগে না, রাগী ছেলে ভালো লাগে, এখন ভালো লাগছে না সোনা???

সুপ্তি- ধুর এতো রাগী ভালো লাগে নাকি, সবসময় নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘুরে।
দিয়া- তো এখন কি করবি,
সুপ্তি- তোর ভাইকে একটা শিক্ষা দিবো, শুধু ধমকায় আমাকে। তুই একটা বুদ্ধি দে না প্লিজ।
দিয়া- বুদ্ধি একটা দিতে পারি কিন্তু পরে যদি বেশি রেগে যায়, তখন আমাকে দোষ দিবি না।
সুপ্তি- আচ্ছা দিবো না।

কেটে গেলো এক সপ্তাহ দিয়ার কথা মতোই চলছে সুপ্তি। সুপ্তির ফোন টা বাজছে, হাত টা নিশপিশ করেছে কল টা ধরার জন্য, কিন্তু দিয়ার কড়া চাহনি দেখে চুপ করে আছে।
সুপ্তি- দিয়া,,,
দিয়া- কি,
সুপ্তি- একবার কল টা রিসিভ করবো,
দিয়া- আমি বারণ করেছি।

সুপ্তি তাড়াহুড়ো করে ফোন হাতে নেয়, সাথে সাথেই দিয়া বলে
দিয়া- এরপর কিন্তু আর হেল্প চাইতে আসবি না। আবার যদি প্যানপ্যান করেছিস, তখন কানের নিচে দিবো।
সুপ্তি মুখটা কালো করে ফোন টা রেখে দিলো, আর বিড়বিড় করে বললো
সুপ্তি- যেমন ভাই তার তেমন বোন, দুইটাই হিটলার।
সুপ্তি কল রিসিভ করছে না দেখে রাগে অভির মাথা আগুন হয়ে আছে সামনে ফেলে তুলে একটা আচাড় দিতো, এতো দিন সময় অসময়ে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করতো, আর এখন কলই ধরছে না। অভি হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় আছে।

কিছু একটা ভেবে দিয়ার নাম্বারে কল দিলো। দিয়ার ফোনে কল আসতেই হাসলো দিয়া, ফোনটা স্পিকারে দিলো
দিয়া- হ্যালো দাদাভাই।
অভি- কেমন আছিস বোনু।
দিয়া- ভালো আছি, তুমি কেমন আছো।
অভি- এইতো আছি। আচ্ছা বোনু তোদের পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটা কই।
দিয়া না বোঝার বান করে বললো,
দিয়া- কার কথা বলছো দাদাভাই??
অভি- আরে ওই মেয়েটা?
দিয়া- কোন মেয়ে।
অভি- সুপ্তি।

দিয়া অনেক কষ্টে হাসি আঁটকে রেখেছে,
দিয়া- সুপ্তি কই থাকবে, বাসায় আছে। কেন কি হইছে।
অভি- না এমনিতেই, অসুস্থ নাকি??
দিয়া- না তো একদমই সুস্থ আছে।
একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো অভি, পরক্ষণেই রাগ টা বেড়ে গেলো সুস্থ থেকেও তাকে ইগনোর করছে, এতো সাহস পায় কোথা থেকে। অভিকে চুপ থাকতে দেখে দিয়া বললো
দিয়া- কি হলো চুপ করে আছো কেন, কি হয়েছে সেটা তো বলবে।
অভি রেগেমেগে বলে

অভি- অসভ্য একটা মেয়ে, আমার সাথে বেয়াদবি করে, দেখা হলে বলিস আমার সামনে পড়লে চড়িয়ে কানের দাঁত ফেলে দিবো।
দিয়া সুপ্তির দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে, কোন রকম বললো
দিয়া- সামনে কেমন্নে পড়বে তোমার, ও থাকে ঢাকায় আর তুমি থাকো চট্টগ্রাম। সামনে পড়ায় তো চান্স নাই দাদাভাই।

অভির আর কিছু না বলেই কল কেটে দেয়, সুপ্তি কানে হাত দিয়ে বসে আছে, তা দেখে দিয়া বলে
দিয়া- কি রে চড় খাওয়ার আগেই কানে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন??
সুপ্তি- আরে কানের দাঁত খোঁজার চেষ্টা করছি। কানের দাঁত আছে আজকে জানলাম।
বলেই দুজনে খিলখিল করে হেসে উঠলো,, অভি রাগের মাথায় কি বললো নিজেই জানে না। হাসি থামিয়ে দিয়া বললো

দিয়া- দাদাভাই কিন্তু খুব রেগে আছে, আর রাগানো উচিত হবে না, দেখবি সত্যি সত্যি চলে আসবে তোকে চড় মারার জন্য।
সুপ্তি- তাহলে তো ভালোই হবে, উনার দেখা পেয়ে যাবো। আহ্ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়,
দিয়া- চোখের সাথে সাথে গালও জুড়িয়ে যাবে।

সন্ধ্যা সাতটা, ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে দিয়া আর সুপ্তি। অগ্নি দিয়ার পাশেই বসে আছে। অপলক তাকিয়ে আছে তার তোতাপাখির দিকে। একটা সময় ছিলো যখন দিয়াকে একবার দেখার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে যেতো, সবার আড়ালে লুকিয়ে দেখতো প্রেয়সীকে। আর এখন ও চোখের সামনে থাকে, দুচোখ ভরে দেখেও জেনো তৃষ্ণা মিটে না।

একটাবার কথা বলার জন্য বুকের ভেতর হাহাকার করতো আর এখন ইচ্ছে হলেই কথার ঝুলি খুলে বসে। সে শীতের রাতে প্রথম হাত ধরেছিলো, প্রথম স্পর্শে অগ্নির ভেতরের উত্তাল ঢেউ কাউকে বুঝতে দেয় নি, আর এখন শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে। আদুরে বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমায় অগ্নির বুকে। স্বপ্নও মনে হয় এতোটা সুন্দর না, দিয়ার আসার পর অগ্নির জীবন টা যতোটা সুন্দর হয়েছে। এসব ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠে। অগ্নি ভ্রু কুঁচকে দরজার দিকে তাকায়, দিয়া যেতে নিলে হাত ধরে থামায়,

অগ্নি – তুমি বসো, আমি দেখছি।
দরজা ও পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে একগাল হাসে অগ্নি
অগ্নি- তুই, হঠাৎ করে না বলে চলে আসলি।
অভি- তোমাদের দেখতে ইচ্ছে হয়েছে তাই চলে এসেছি, সর তো সামনে থেকে।

অগ্নি সরে দাঁড়াতেই অভি ভিতরে ঢুকে।, দরজা বন্ধ করে অগ্নিও আসে, হঠাৎ করে অভিকে দেখেই উঠে দাঁড়ায় দিয়া আর সুপ্তি। দিয়া অভির দিকে তাকিয়ে একটা ফাঁকা ঢোক গিলে, সুপ্তি তো বেক্কেলে মতো তাকিয়ে আছে অভির দিকে। অগ্নি এসে দিয়ার পাশে দাঁড়ায়, অভি কে সুপ্তির দিকে এগিয়ে যেতে দেখে দিয়া অগ্নির ট্রি-শার্টে খামচে ধরে, অগ্নি দিয়ার দিকে তাকাতেই, ঠাস করে একটা শব্দ হয়। হঠাৎ কি হলো বুঝতে না পেরে একবার দিয়ার দিকে আবার সামনের দিকে চেয়ে রইলো, ঘটনা বুঝতে পেরেই চিল্লিয়ে উঠলো

অগ্নি – অভি,, এটা কি করলি তুই।
উত্তর না দিয়ে অভি এখনো সুপ্তির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, আর বেচারা সুপ্তি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে,
অগ্নি – অভি তুই ওকে মারলি কেন??
অভি অগ্নির চেয়ে ও জোরে চিল্লিয়ে বলে

অভি- মার খাওয়ার মতো কাজ করছে তাই মেরেছি দাদাই, অসভ্য মেয়ে, ইচ্ছে তো করছে আরো কয়েক টা দি,
বলেই হাত তুলতে গেলেই অগ্নি বলে,
অগ্নি – আর একবার যদি ওর গায়ে হাত তুলেছিস তাহলে কিন্তু খারাপ হবে।
অগ্নি দিয়ার জন্য এগিয়ে যেতেও পারছে না, দিয়া ট্রি-শার্ট খামচে ধরে ওর সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে। অভি একবার দিয়া আর অগ্নিকে চেয়ে সুপ্তির হাত ধরে পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
অভি সুপ্তিকে নিয়ে যাওয়ার পর দিয়া খিলখিল করে হেসে দেয়, প্রেয়সীর হাসি দেখলে অগ্নির মন প্রশান্তিতে ভরে উঠে। দিয়া অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে

দিয়া- ঘটনা বুঝতে পেরেছেন।
অগ্নি – নাহ্ ও হঠাৎ করে এতো রেগে গেলো কেন??
দিয়া সবটা অগ্নিকে খুলে বললো, পুরো কাহিনী শুনে অগ্নি বলে
অগ্নি – এসব দুষ্ট বুদ্ধি দেওয়ার দরকার ছিলো।
দিয়া- হুম ছিলো তো। দেখলেন না দাদাভাই কিভাবে ছুটে এলো।
অগ্নি- তাই বলে গায়ে হাত তুলবে এটা একদম ঠিক করে নি অভি।

দিয়া- ঠিকই করছে, আপনার পাতানো বোন বলে না ঝগড়া করলে ভালোবাসা বাড়ে, এখন দাদাভাই এমন ডোজ দিয়েছে, দেখুন এবার ভালোবাসা একবারে উতলে উতলে পড়বে।
সুপ্তির গালে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে দিয়া, ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে আছে, রুম থেকে বের হওয়ার পর থেকে সুপ্তি চুপ করে বসে আছে। দিয়া সুপ্তিকে একটু খোঁচা মেরেই বলে

দিয়া- কি রে, গাল জুড়িয়েছে তোর??
সুপ্তি কটমট করে দিয়ার দিকে তাঁকায়,,
দিয়া- আরে এমন ভাবে তাকানোর কি আছে, আমি বলতে চেয়েছি চোখ জুড়িয়েছে তোর? আচ্ছা এমন দাবাং মার্কা চড় খাওয়ার পর তো ফিলিংস টা কেমন একটু শেয়ার কর।
বলেই ফিক করে হেসে দিলো,

সুপ্তি- দুঃখে আমার কলিজা ফেটে কিডনিতে তে লাগছে, আর তুই মজা নিচ্ছিস।
দিয়া- মজা নিলাম কই?? আচ্ছা রুমে দরজা বন্ধ করে কি করলি এতোখন।
সুপ্তি- ঘোড়ার ডিম।
দিয়া- সেটা কি??
সুপ্তি- রুমে নিয়ে তোর ভাই আমাকে আদর করছে, এখন লাগবে তোর।
দিয়া- আয় হায় বিয়ের আগেই আদর।

সুপ্তি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে, দিয়া আবারও কিছু বলতে নিবে তখনি অভি আসে ওদের সামনে। দিয়ার দিকে একটা মলম এগিয়ে দিয়ে বলে,
অভি- এটা লাগিয়ে দে। না হলে দাগ পড়ে যাবে।
দিয়া কিছু একটা ভেবে বলে,

দিয়া- দাদাভাই, আমার তরকারি চুলায় বসানো, মনে পুড়ে যাচ্ছে। তুমি একটু মলম টা লাগিয়ে দাও।
বলেই সেখান থেকে কেটে পড়ছে, অভি ওর যাওয়ার দিকে একপলক চেয়ে , তারপর সুপ্তির দিকে চেয়ে রইলো কিছুখন, এখন রাগ টা একটু কমে এসেছে মেয়েটার গাল টা লাল হয়ে গেছে।

খারাপ লাগছে অভির।ওকে অশান্তি তে রেখে দিয়ার সাথে হেসেহেসে কথা বলছে, দেখেই মাথা গরম হয়ে গেছে, তাই তো পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিয়েছে। এ মেয়েটার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ছুটে এসেছে। সুপ্তি যে অভির অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, এই এক সপ্তাহ কতোটা ছটপট করেছে সে কি এ মেয়ে বুঝবে। সুপ্তির পাশে এসে বসে অভি, অন্যদিকে মুখ ঘুরায় সুপ্তি।

অভি সুপ্তির মুখ টা ওর দিকে ঘুরায়, তারপর আলতো হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে,
সুপ্তি- আহ্ জ্বলছে।
অভি- একটু জ্বলবে তারপর ঠান্ডা লাগবে।
বলেই ফুঁ দিতে লাগলো সুপ্তির মুখে, আবাক হয়ে চেয়ে আছে সুপ্তি। অভি ও তাঁকায় ওর চোখের দিকে, সরি বলতেই যাবে তার আগেই সুপ্তি বলে
সুপ্তি- একদম বকা দিবেন না, অনেক বকেছেন আজকে, আমাকে মেরেছেন ও। দুটো দাঁত নড়ে গেছে আমার, খুব ব্যাথা করছে। শয়তান লোক আপনাকে আমি বিয়ে করবো না, বিয়ের আগেই মারধর শুরু করছেন, পরে কি করবেন ঈশ্বরই জানে।

অভি- আমি বকবো, আমি মারবো আবার মলমও আমি লাগিয়ে দিবো। আর বিয়ে আমাকে করতেই হবে। বিয়ের আগে মেরেছি, বিয়ের পরেও মারবো। মাথা গরম করলে কেন?? একদম মাথা গরম করিয়ো না আমার। মেয়ে তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। তাই তোমাকে আমি ছাড়ছি না।

বলেই সুপ্তির গালে ছোট চুমু দিয়ে উঠে গেলো, সুপ্তি এখনো থম মেরে বসে আছে, ও চিন্তা করছে এ ছিলো অভির কথায়, ভালোবাসা নাকি থ্রেড। দিয়া পাশে এসে বসে, সুপ্তির কাঁধে হাত রেখে বলে
দিয়া- পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা ভালোবাসে অনেক বেশি, কিন্তু প্রকাশ করে কম। আমার দাদাভাই ও তাদের মধ্যেই পড়ে, তোকে ভীষণ ভালোবাসে, কিন্তু প্রকাশ করার মাধ্যম টা ভিন্ন।
সুপ্তি দিয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো, ও নিজেও বুঝতে পেরেছে অভি ওকে ভালোবাসে হয়তো মুখে বলে নি, কিন্তু ও ব্যবহারে ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে।

পাহাড়ের গাঁ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে দিয়া, পরনে তার লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, অগ্নি মুগ্ধ হয়ে দেখছে প্রিয়তমা স্ত্রীর সৌন্দর্য। হঠাৎ করে দিয়া ও দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো, অগ্নি হাত ধরার আগেই দিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। অগ্নি এক পা সামনে গেলে, দিয়া দু পা পিছিয়ে যাচ্ছে, অগ্নি বারবার বারণ করছে কিন্তু দিয়া শুনছে না।
অগ্নি – দিয়া প্লিজ আর পিছিয়ো না, পড়ে যাবে। প্লিজ দিয়া,

কিন্তু দিয়া অগ্নির কথা শুনছে না। মুখে হাসি রেখেই পিছিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে হাত দুটো মেলে দিয়ে পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছে। মুখে এখনে হাসি, অগ্নি চিল্লিয়ে উঠলো
অগ্নি – দিয়াাাাা
অগ্নি পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে,থরথর করে কাঁপছে তার শরীর৷ এটা কেমন স্বপ্ন ছিলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভোর সাড়ে চারটা, জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে অগ্নি। পাশে দিয়াকে না পেয়ে আরো বেশি অস্থির হয়ে পড়ে,
অগ্নি – দিয়া,,, দিয়া,,

রিনঝিন শব্দ কানে আসছে,দিয়ার নূপুরের শব্দ, অগ্নি বেড থেকে উঠে দাঁড়াতেই দিয়া সামনে এসে দাঁড়ায়।
দিয়া- কি হয়েছে, আপনি এমন করছেন কেন।
সাথে সাথেই অগ্নি নিজের সাথে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে, খুব শক্ত করে ধরেছে, ব্যাথা পাচ্ছে দিয়া, কোন শব্দ না করেই ঠোঁট চেপে সহ্য করছে।

অগ্নি – কোথায় গিয়েছো তুমি?? আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তুমি।
দিয়া এবার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, এতোই শক্ত করে ধরেছে পারলে নিজের বুকের ভেতর ঢুকিয়ে পেলে। দিয়া অগ্নির পিঠে হাত বুলিয়ে, খুব আস্তে বলে

দিয়া- জল খেতে গিয়েছে, গ্লাসের জল ছিলো না তাই। আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি। প্লিজ শান্ত হোক।
অগ্নি কিছুটা শান্ত হয় কিন্তু দিয়াকে ছাড়ে না, সেভাবেই ধরে রাখে, হাঁসফাঁস করে দিয়া,,,
দিয়া- একটু ছাড়ুন, আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
অগ্নি ছেড়ে দেয়, কিছুখন চেয়ে থেকে আবারও বলে,

অগ্নি – তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, আমি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।
দিয়া হাত ধরে অগ্নিকে বেডে নিয়ে বসায়, ওড়না দিয়ে মুখের, গলার ঘাম মুছে দেয়, পাতলা ট্রি-শার্ট টা ঘামে ভিজে গেছে, দিয়া খুলে দেয় ট্রি-শার্ট টা। ভালো করে ঘাম মুছিয়ে দেয়। তারপর যেতে নিলে অগ্নি হাত ধরে থামিয়ে দেয়
অগ্নি – কোথায় যাচ্ছো
দিয়া- এক মিনিট, আসছি।

বলেই দৌড় দেয়, এক মিনিট শেষ হওয়ার আগেই হাতে জলের গ্লাস নিয়ে ফিরে আসে৷ অগ্নির সামনে ধরে, জল খেয়ে নিজেকে অনেকটায় শান্ত করে অগ্নি। দিয়া এবার অগ্নির কোলের উপরে বসে, দুহাতে জড়িয়ে ধরে অগ্নির গলা। চোখে চোখ রেখে বলে
দিয়া- এবার বলুন তো কি হয়েছে??কেন এমন করলেন। খারাপ কোন স্বপ্ন দেখেছেন।
মাথা নাড়ায় অগ্নি,

দিয়া- স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়,, সেটা কখনো সত্যি হয় না।
অগ্নি – ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়।
দিয়া- ধুর, কে বলছে আপনাকে। তো কি দেখেছেন?? আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি।

অগ্নি দিয়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে, কতোটা আদর আদর লাগছে মেয়েটা, ফোলা ফোলা চেহারা, এলোমেলো চুল, মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে আছে অগ্নির উওরের আশায়।
অগ্নি – আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
দিয়া- আমি তো আপনাকে ছাড়া মরেই যাবো।

অগ্নি দিয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে দিলো। দিয়া ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে দেয়।
অগ্নি – এসব কথা মুখে ও আনবে না, তোমাকে ছাড়া আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাবো।
দিয়া- শুনুন না, আপনি ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না, আর আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, তাই আমরা দুজন একদিনেই মরে যাবো তাহলে আর কারোই কষ্ট হবে না।
অগ্নি এখনো তাকিয়ে আছে আদুরে মুখ টার দিকে।

দিয়া- কি হলো কথা বলছেন না কেন??
অগ্নি – তোমাকে নিয়ে আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই। তোমাকে ছাড়া এক সেকেন্ড ও নিঃশ্বাস নিতে চাই না।
দিয়া- তাহলে তো হয়েই গেলো, আমার একসাথে বাঁচবো আর মরলে,,,,
অগ্নি আবারও দিয়ার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়৷
অগ্নি – আর কোন কথা না।
দিয়া আঙুল সরিয়ে দিয়ে আবারও বললো

দিয়া- ভয় কেন পাচ্ছেন, আমি আবার জন্ম নিলো ও আপনাকেই ভালোবাসবো, প্রত্যেক টা প্রার্থনায় আপনাকে চাইবো। আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো সেটা শুধু আপনার সাথে। আপনি যে আমার মায়ায় জরানো ভালোবাসা।
অগ্নি – দিয়া আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমার এ গভীর ভালোবাসা কাছে আমার ভালোবাসা ফিকে হয়ে যাচ্ছে?? তোমার আকাশ সম ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা কম পড়ে যাচ্ছে??

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৩

দিয়া- আপনার ভালোবাসায় দিন দিন রঙিন হয়ে যাচ্ছি আমি, আপনার দেওয়া সিঁদুরে রাঙিয়েছি আমার ভালোবাসা, যা কখনো ফিকে হবে না।আমার ভালোবাসা যদি আকাশে মতো বিশাল হয়, তাহলে আপনার ভালোবাসা সাগরের মতো গভীর। আমি ভালোবাসা শিখেছি আমার শখের পুরুষের কাছে, আর যার কাছ থেকে শিখেছি তার ভালোবাসা কি কম হতে পারে কখনো।
অগ্নি দিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো, আদুরে মুখ টা তে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিলো,

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৫