প্রেম পরিণয় পর্ব ১৫

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৫
রাজশ্রী মজুমদার রাই

আদিত্য রায় আর দীপক সাহা সামনাসামনি বসে আছে। আদিত্য রায় এমন কিছুই আন্দাজ করেছে, প্রায় দুই বছর হতে চলেছে ছেলে বাসায় আসে না। শান্তি দেবী ও আসতে বলে না। তিনি একবার ভগ্নিপতির দিকে চাইলেন, চোখ মুখ কঠিন করে বসে আছে। নড়েচড়ে বসে আদিত্য রায়,,

আদিত্য রায় – এখন কি করতে চাও তুমি।
দীপক সাহা – আপনি শুধু ওদের এখানে আনার ব্যবস্থা করে দেন,, আমি চাইলেও দিয়াকে আনতে পারবো না, কারণ ওর ১৮ বছর হয়ে গেছে।
আদিত্য রায় – দীপক তুমি যদি চাও, তাহলে ব্যাপার টা আমি মেনে নিতে পারি। যেখানে ওর বিয়ে করে সংসার করছে।
দীপক সাহা- দাদা আপনি কি বলছেন এসব, সমাজের লোক আমাদের ছি ছি করবে৷ আমাদের হিন্দু সমাজে এটা পাপ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদিত্য রায় – তুমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তো। পরে যদি হিতে বিপরীত হয়।
দীপক সাহা – আপনি শুধু ওদের এখানে এনে দেন, আমি সব ঠিক করে রেখেছি, দুই দিন মধ্যেই দিয়াকে বিয়ে দিয়ে দিবো। ওই দুটো দিন আপনি অগ্নির দিকটা দেখবেন।
আদিত্য রায় – ঠিক আছে তুমি যা ভালো বুঝো। তবে মাথা রেখে এসবের মধ্যে আমার বোনের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবে না। আর শুনলাম তনু নাকি বেশ কিছুদিন অসুস্থ। এসব ঝামেলা মিটে গেলে ওকে ভালো ডাঃ দেখাবে।

বর্ষার মাঝামাঝি সময়, ধরনীতে বৃষ্টি নেমেছে। আজ সারাদিন অঝোর ধারায় ধরছে বৃষ্টি। প্রকৃতিতে শীতল বাতাস বইছে, বারান্দার দরজায় দাড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করছে একজোড়া কপোত-কপোতী। দিয়ার ভিজতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু অগ্নি বলার সাহস পাচ্ছে না, কারণ কয়েকদিন আগেই সুপ্তির সাথে বৃষ্টিতে ভিজে দুজনেই জ্বর বাঁধিয়েছে। জ্বর দিয়ার আসলেও বেশি ভুগতে হয়েছে অগ্নিকে। তাই মনের ইচ্ছাকে মনে রেখেই বৃষ্টি দেখছে।হঠাৎ অগ্নির ফোন বেজে উঠলো, কিন্তু অগ্নির কল রিসিভ করার কোন ইচ্ছায় নেই, সে তার প্রেয়সীর সঙ্গ অনুভব করছে, দিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

দিয়া- ফোন বাজছে তো,
অগ্নি – তুলতে ইচ্ছে করছে না।
দিয়া- আবারও বাজছে, হয়তো দরকারি কল হবে, ধরুন না। আপনি কল রিসিভ করে কথা বলুন আমি কফি নিয়ে আসছি।

অগত্যা অগ্নি কল রিসিভ করার জন্য ফোন টা হাতে নেয়, ফোনের স্কিনে আদিত্য রায়ের নাম্বার, ভ্রু কুঁচকে এলো অগ্নির এমন সময় তো বাবা কখনো কল করে না।
দশ মিনিট পর রুমে আসলো দিয়া, অগ্নি বেডে বসে আছে, দিয়া কফির মগ টা এগিয়ে দিলো অগ্নির দিকে, অগ্নি মগটা বেড সাইট টেবিলে রেখে, দিয়ার হাত টেনে পাশে বসালো
অগ্নি – একটা খুশির খবর আছে।
দিয়া- কিহ্

অগ্নি – বাবা কল দিয়েছিলো, তোমার আমার বিয়ের ব্যাপার টা জানতে পেরেছে৷ সব মেনে ও নিয়েছে। মায়ের সাথে ও কথা হয়েছে।
দিয়া একটা ফাঁকা ঢোক গিললো,
দিয়া- মামা জেনে গেছে আর বাবাই??
অগ্নি – পিসেমশাই ও সব মেনে নিয়েছি। উনি নাকি আবার অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিতে চায়। বাবাও রাজি হয়েছে, তাই বললো অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় যেতে।

দিয়া- মেনে নিয়েছে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আবার অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়ার কি দরকার।
অগ্নি – তুমি উনার বড় মেয়ে, সব বাবা- মার ছেলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন থাকে আশা থাকে। আমরা তো সেটা থেকে বঞ্চিত করতে পারি না তাদের। এমনিতেই তাদের মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমরা।
এখন ওনাদের ইচ্ছে টা কে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ।
কেন জানি দিয়ার মন সায় দিচ্ছে না, তারপর ও অগ্নি কথা শুনে আর কিছুই বললো না। দিয়াকে চুপ থাকতে দেখে অগ্নি আবারও বললো

অগ্নি – কি হলো, তুমি খুশি হও নি।
দিয়া- হুম। কবে যাচ্ছি আমরা?
অগ্নি – কালকে ছুটির জন্য এপ্লাই করবো, ছুটি ফেলেই যাবো।
দিয়া- আচ্ছা।

দিয়া কল দিয়ে অভিকে সব জানালো, অভি ও মায়ের সাথে কথা বলে সবটা শিওর হয়ে নিয়েছে। বিয়ের তারিখ ও ঠিক করা হয়েছে, অগ্নি অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে। দিয়া প্যাকিং করছে, দুজনের দুটো ব্যাগ। দিয়ার মন টা ভীষণ খারাপ কারণ বিয়ের আগে ওদের আলাদা থাকতে হবে। ২৮ শে শ্রাবণ বিয়ের ডেট ফিক্স করা হয়েছে। এখান থেকে যাওয়ার চার দিন পর বিয়ে, মানে গোটা চারটে দিন অগ্নিকে ছাড়া থাকতে হবে।

অগ্নির দৃষ্টি পশ্চিম পাশের দেওয়ালে যেখানে আগে দিয়ার ছবি ছিলো, এখন দিয়ার ছবির পাশাপাশি স্থান পেয়েছে ওদের দুজনের ভালোবাসা কিছু রঙিন মূহুর্ত। সবচেয়ে বড় করে বাঁধানো ছবি টা সুপ্তি তুলে দেওয়া সে ছবি যেখানে দিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে অগ্নি। সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিয়ার দিকে চেয়ে রইলো, গাল ফুলিয়ে রেখেছে।
অগ্নি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,

অগ্নি – মাত্র তো চারটা দিন। তারপরে তো আবার আমরা একসাথে থাকবো।
দিয়া- আপনার কাছে তো মাত্রই হবে, এই চার দিন আপনাকে না দেখে থাকবো কিভাবে আমি। রাতে ঘুমাবো কিভাবে??

অগ্নি – ভিডিও কলে দেখবে, রাতে ঘুম না আসা পর্যন্ত ফোনে কথা বলবো। দেখবে কিভাবে তিনদিন চলে যাবে তুমি বুঝতেই পারবে না। প্লিজ এবার একটু হাসো, তখন থেকে মুখটা কালো করে রেখেছো। প্লিজ,
দিয়া মলিন হাসলো,
সুপ্তি কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে দিয়া, দুজনের যতোই ক্যাট ফাইট করুক না কেন, একজন আরেকজন কে ছাড়া কিছুই বুঝে না। সুপ্তি বুঝতে পারছে দিয়ার মন টা ভীষণ খারাপ,

সুপ্তি- হুদাই মন খারাপ করে আছিস, বিয়ের পর তো আবার চলেই আসবি। কি নিয়ে এতো মন খারাপ বল আমাকে।
দিয়া- আমি নিজেও জানি না, কেমন একটা লাগছে। সব ঠিক হবে তো?
সুপ্তি- সব ঠিকই হবে, তুই এসব বাদ দে তো। কখন বের হবি?
দিয়া- সন্ধ্যায় বের হবো। শুন না তুই আমার বারান্দার গাছ গুলো তে জল দিস।
সুপ্তি- তুই চিন্তা করিস না, তুই না আসা পর্যন্ত আমি প্রতিদিন জল দিবো।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দিয়া অগ্নি বের হবে, এখন ঘড়িতে পাঁচটা পয়তাল্লিশ বাজে, দিয়া রেডি হয়ে বেডের উপর বসে আছে, অগ্নি দিয়ার ব্যাগের মধ্যে হিয়ার জন্য আনা গিফট গুলো গুছিয়ে রাখছে। দিয়ার ব্যাগে নিজের একটা ট্রি-শার্ট দেখে বলে
অগ্নি – আমার ট্রি-শার্ট টা ভুলে রেখেছো তোমার ব্যাগে।
দিয়া- ওটা যেখানে ছিলো, সেখানেই রেখে দিন। আমি নিয়েছি ওটা।
অগ্নি – কেন??

দিয়া- জানতে হবে না।
হাসলো অগ্নি, ট্রি-শার্ট টা আবারও দিয়ার ব্যাগে রেখে দিলো, ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ার পাশে গিয়ে বসলো, বুকে টেনে নিলো প্রিয়তমা কে,
অগ্নি – ভালোবাসি
এ একটা কথায় অশান্ত মন টা শান্ত হয়ে যায় দিয়ার, অগ্নিকে শক্ত করে ধরলো
দিয়া- ভালোবাসি প্রিয়।

অগ্নি দিয়ার মুখ টা তুলে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। দিয়া নরম স্বরে বলে
দিয়া- আপনি কি আমাকে মামনির কাছে রেখে আসবেন??
অগ্নি – পাগল নাকি, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো নাকি। তোমাকে আমার সাথেই নিয়ে আসবো। চারটা দিন তোমাকে ছাড়া থাকতেই অনেক কষ্ট হবে আমার।
দিয়া- কচু, তাহলে বলেন না কেন, এসব অনুষ্ঠানে কোন দরকার নেই।

অগ্নি – কারণ দুটো,, প্রথম কারণ আমার দিয়ার যে খুব ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো সেটা আমি জানি। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, বাবা আর পিসেমশাই কে কষ্ট দিতে চাই নি। আমি বারণ করলে তারা কষ্ট পেতো।
দিয়া আর কিছুই বললো না, ও মাঝে মধ্যেই ফোনে বিয়ের বিভিন্ন ভিডিও দেখতো, আর মনে মনে আফসোস করতো, যদি ওদের বিয়েটা টা এভাবে ধুমধাম করে হতো৷ এখন যখন ওর সে ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে তখন কেন মন থেকে খুশি হতে পাচ্ছে না।

ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়ার আগে।বার কয়েক দেখে নিলো ওর আর অগ্নির সাজানো সংসার। অগ্নি দরজা লক করে, হাত বুলিয়ে দিলো ফ্ল্যাটের দরজায়, ও বুকের ভেতর টা কেমন একটা করে উঠলে, কিন্তু দিয়াকে বুঝতে দিলো না, কারণ দিয়া এমনিতে আপসেট হয়ে আছে। সুপ্তির হাতে চাবিটা দিয়ে এলো। রাত আটটায় বাসে উঠলো, রাত ১২ টায় বাস থেকে নামলো ওরা, বাস স্টেপে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য রায় আর দীপক সাহা। অগ্নির হাতে মুঠোয় দিয়ার হাত দেখে ভিতরে রেগে ফেটে পড়লো দীপক সাহা। তবে মুখে কিছুই বললো না।

কুশল বিনিময় করার পর, একটা রিকশা ঠিক করে দিয়াকে নিয়ে দীপক সাহা চলে গেলে।
এতোদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে কেঁদে দিলো তনুশ্রী দেবী, বুকে জড়িয়ে ধরলো মেয়েকে। রাতের খাওয়া শেষ করে মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প জুড়ে দিলে দিয়া, অগ্নিকে কলে রেখেই মা, বোনের সাথেই কথা বলছে অগ্নি তার তোতাপাখির কথা শুনছে আর হাসছে,

দিয়া- জানো মা, উনি আমাকে কোন কাজই করতে দিতে চায় না, রান্না তো উনি আমার থেকেও ভালো করে৷ ঘরের প্রত্যেকটা কাজে উনি আমাকে হেল্প করে।
হিয়া- দিদিয়া দাদাই অনেক ভালোবাসে তোমাকে।
দিয়া হাসলো, বোনকে উদ্দেশ্য করে বললো
দিয়া- ওনার মতো একজনকে তোর জন্য ও খুঁজে আনবো যে তোকেও খুব যত্ন করে ভালোবেসে আগলে রাখবে।
তনুশ্রী দেবী মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো, মেয়ে ভীষণ সুখে আছে। অগ্নির হাতে দিয়াকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত টা সঠিক ছিলো। নিজের জীবনে যা পায় নি, মেয়ে সেটা পাচ্ছে। দিয়া মায়ের দিকে চেয়ে বললো

দিয়া- মা আমি তোমাকে আর হিয়াকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। আমার সুখের অরণ্য দেখাবো।
নানারকমের কথা বলতে বলতে প্রায় ভোর রাতের দিকে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়লো দিয়া। পাশেই ঘুমিয়ে আছে হিয়া। তনুশ্রী দেবী মেয়েদের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইলো, দুই মেয়ে তার বেঁচে থাকার কারণ। বড় মেয়েটা সুখে আছে, ছোট মেয়েটাকে ও সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলে তিনি খুশি। দিয়ার ফোনটা কানে নিয়ে বললো
তনুশ্রী দেবী- বাবু, দিয়া ঘুমিয়ে গেছে। এবার তুইও ঘুমিয়ে যা।

অগ্নি – পিসিমনি,,
তনুশ্রী দেবী – তোকে কলে রেখেই যে পাগলিটা বকবক করছিলো, তা আমি আগেই বুঝতে পেরেছি।
অগ্নি – কেমন আছো তুমি পিসিমনি??
তনুশ্রী দেবী – ভালো আছি আমি। তুই কেমন আছিস বাবু, দিয়া কি খুব জ্বালায় তোকে??
অগ্নি – না পিসিমনি, তোমার মেয়েটা যে ভীষণ লক্ষ্মী, আমার জীবন আর সংসার দুটোর সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। তোমাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো ঢাকায়,দেখবে তখন তোমার মেয়ে কতোটা সংসারী।

আনন্দে তনুশ্রী দেবী চোখ ভিজে উঠলো, এ যুগে যেখানে স্বামী স্ত্রী একে অন্যের দোষ ধরতে ব্যস্ত, সেখানে ওরা একে অপরের গুণ গুলো তুলে ধরছে। অগ্নি দিয়া যে একে অপরের পরিপূরক। স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক টা এমনি হওয়া উচিৎ।
সকালে দেরিতেই ঘুম ভাঙ্গলো দিয়ার, পাশে এখনো ঘুমাছে হিয়া। ফোন হাতে নিয়ে ভাবলো অগ্নির নাম্বারে কল দিবে কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর কল দিলো না, ছোট একটা এসএমএস দিলো,
দিয়া- ভালোবাসি প্রিয়,

হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটা বানী আছে, যেখানে লেখা ছিলো, তোমার কাউকে মনে পড়ছে তাকে ফোন করো, কাউকে দেখতে ইচ্ছে করছে, তাকে জানাও, কাউকে ভালোবাসা, তাকে বলে দাও, আগামী পাঁচ মিনিট, বেঁচে থাকবে কি না জানো না। অপূর্ণতা নিয়ে দুনিয়া ছাড়তে নেই। আমারা কখনো কখনো মনের ইচ্ছে টা মনেই রেখে দিই, প্রকাশ করার সুযোগ থাকলেও তা করি না, যার জন্য পরে আফসোস করতে হয়।

সাড়ে এগারোটায় সকালে জলখাবার খেয়ে উঠলো, ফোন হাতে নিলো অগ্নিকে কল দেওয়ার জন্য, হঠাৎ দীপক সাহা কোথা থেকে এসে, দিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে এক আছাড় দিলো,, মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা ফোনের দিকে একবার চেয়ে আবার দীপক সাহা দিকে তাকালো, অজানা আশংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো দিয়ার। তনুশ্রী দেবী আর হিয়া ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ এমন করার কোন কারণ খুঁজে পেলো না কেউ। হিয়া খুব সাহস নিয়ে মৃদুস্বরে বললো

হিয়া- বাবাই, দিদিয়ার ফোন
পুরো কথা শেষ করার আগেই দীপক সাহা চিল্লিয়ে বললো
দীপক সাহা – চুপ, একটা কথা ও শুনতে চাই না অনেক বেশি সাহস হয়েছে তোমাদের। আমার মানসম্মান নিয়ে খেলার সাহস তোমাদের কে দিয়েছে, এমন দিন দেখার জন্য তোমাদের বড় করেছি।
দীপক সাহার কথার মাঝেই সেখানে আভা দেবী আর বিভা দেবী আগমন হয়।বোনেদের উস্কানিমূলক কথা শুনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে দীপক সাহা, রাগে তার শরীর কাঁপছে,

আভা দেবী – কিভাবে পারলো এ মেয়ে মামাতো ভাইকে বিয়ে করতে, এ মেয়ের পাপের ভাগিদার হতে হবে আমাদের পূর্বপুরুষদের। ব্যভিচারী মেয়ে।
দীপক সাহা – এক্ষুনি ওর শাঁখা-পলা ভেঙে ফেলো। আর সিঁদুর মুছে দাও।
দিয়া এসব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে, আর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে, কোন শব্দ না করেই অপলক চাহনিতে তাকিয়ে আছে বাবা নামক মানুষটির পানে।
বিভা দেবী এগিয়ে গেলো দিয়ার দিকে, হাত বাড়িয়ে সিঁদুর মুছে দিতে গেলে, ওনার হাত ধরে ফেলে দিয়া, বাবার দিকে তাকিয়ে বলে

দিয়া- খবরদার, এরকম দুঃসাহস দেখালে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
বলেই হাত ঝাঁড়া দিয়ে ফেলে দিলো,
আভা দেবী – দেখেছিস, এতো বড় পাপ করে এসে কতো বড় বড় কথা বলছে এ মেয়ে। এ মেয়েকে কেন বাসায় এনেছিস, কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া উচিৎ। ভাই তুই আবার এ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করবি।

এবার জেনো দিয়ার পুরো মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেলো, বিবাহিত মেয়ের আবার বিয়ে দিবে। এসব কি বলছে ওরা। দীপক সাহা তেতে উঠে আভা দেবীকে উদ্দেশ্য করে বললো
দীপক সাহা – তুমি কেন দাঁড়িয়ে আছো দিদি, এক্ষুনি ওর সিঁদুর মুছে, কিছুখন পরেই রনিত আসবে ওর সাথে দেখা করতে।

দু-বোন মিলে একপ্রকার দিয়ার উপর ঝাপিয়ে পড়লো, দিয়া ওনাদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তনুশ্রী দেবী ওর দিকে যেতে চাইলে ওনার হাত ধরে আঁটকে দিলো দীপক সাহা,, চোখ গরম করে তাকালো

তনুশ্রী দেবী – ছাড়ুন আমার হাত, এতো বড় অন্যায় করবেন না, ওর স্বামী জীবিত থাকতে ওর সিঁদুর মুছবেন না। আমার বাবুর যে অমঙ্গল হবে।
ওনার কথা শুনে দীপক সাহা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো,, বোনদের তাড়া দিয়ে বললো
দীপক সাহা – তাড়াতাড়ি করো তোমারা, এটুকু মেয়ের সাথে পারছো না।
তনুশ্রী দেবী ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকায় দীপক সাহার দিকে, তাতেও উনার কোন ভাবাবেগ হলো না, দুই ননদের উদ্দেশ্য বললো

তনুশ্রী দেবী – তোমরা এতো বড় পাপ করো না, সধবা মেয়ের সিঁদুর মুছতেই নেই। ছেড়ে দাও ওকে। এমন অন্যায় করো না আমার মেয়ের সাথে।
বিভা দেবী – পাপ তোমার মেয়ে করছে, আমরা শুধু ওর প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ করে দিচ্ছি। মামাতো ভাইকে বিয়ে করে পাপ করছে তোমার মেয়ে।

দিয়া- আমি উনাকে কখনো ভাইয়ের চোখে দেখি নি। উনি আমার ভাই না। প্লিজ ছাড়ো তোমরা আমাকে,
হিয়া চেয়ে ও বোনকে ওদের থেকে ছাড়াতে পারলো না, এক সময়ে দীপক সাহা পা জড়িয়ে ধরে বললো,
হিয়া- প্লিজ বাবাই, ছেড়ে দিতে বলো দিদিয়া কে৷ এমন করো না,

কিন্তু কোন লাভ হলো না, হিয়ার আকুতি মিনতি, তনুশ্রী দেবীর আহাজারি, দিয়ার আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠলো পরিবেশ কিন্তু দীপক সাহা কিংবা পিসিদের মন গলাতে পারে নি। হাতে রেখেই ভেঙে দেওয়া হলো দিয়ার শাঁখা পলা বিভা দেবী খাবারের টেবিল থেকে জলের জগ নিয়ে সেটা দিয়ার মাথায় ঢেলে দিলো, আভা দেবী ঘসে ঘসে ওর সিঁথি থেকে সিঁদুর মুছে দিলো। জোর জবরদস্তি করেই মুছে দেওয়া হলো দিয়ার সিঁদুর, ভেঙে দিলো শাঁখা,পলা। চিৎকার করে কাঁদছে দিয়া৷

ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলো অগ্নি, হঠাৎ করেই কেমন অস্থির লাগছে, বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা করছে, এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না অগ্নি। ফোনটা হাতে নিলো দিয়াকে কল দেওয়া জন্য, তখনি দেখতে ফেলো, দিয়ার এসএমএস, নিজেই আপন মনে বলে
অগ্নি – ভালোবাসি প্রিয়তমা

দিয়ার নাম্বারে কল দিবে তখনি রুমে প্রবেশ করলো শান্তি দেবী,
শান্তি দেবী – উঠেছিস বাবা, আরো আগেও দুই বার এসে দেখে গিয়েছি। তুই ঘুমাছিস দেখে ডাকি নি।
অগ্নি ভিতরে অস্থিরতা চেপেই হাসি মুখে বললো
অগ্নি – কিছু বলবে মা,,
শান্তি দেবী- হুম,
অগ্নি – বলো।

শান্তি দেবী – বাড়িটা বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে না, কোন আত্মীয় স্বজন নেই, কোন আয়োজন নেই। তোর বাবাকে বললে উনি বলে সময় মতো সব হয়ে যাবে৷ অভি টা কে বললাম সুপ্তিকে নিয়ে আসতে, তাও রাজি হলো না। মেয়েটা আসলে তো বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো।

অগ্নি – সুপ্তির পরীক্ষা চলছে মা, না হলে তো আমরাই সাথে করে নিয়ে আসতাম। আর তুমি টেনশন করো না, বাবা যখন বলেছে সব টা সময় মতোই হয়ে যাবে ।
শান্তি দেবী – আচ্ছা, ফ্রেশ হয়ে আয় তাড়াতাড়ি একসাথে নাস্তা করবো।
অগ্নি – তুমি এখনো খাও নি কেন?
শান্তি দেবী – তোর জন্যই অপেক্ষা করছি।

অগ্নি মায়ের কথা শুনে ফোন রেখে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো৷ যার ফলে আর কল দেওয়া হলো না দিয়াকে।
দুপুর গড়িয়ে গেলে, অগ্নি কোনভাবেই দিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না, সবার ফোনই বন্ধ পাচ্ছে, মনের অস্থিরতা নিয়ে রুম জুড়ে পায়চারি করছে, তারপর ঠিক করলো একবার পিসিমনির বাসায় যাবে, রুম থেকে বের হতেই বাবার মুখোমুখি অগ্নি।
আদিত্য রায় – কোথাও যাচ্ছো?

অগ্নি – হুম
আদিত্য রায় – কোথায়?
অগ্নি – আসলে বাবা, একবার পিসিমনির বাসায় যাবো।
আদিত্য রায় কিছুখন চুপ করে থেকে বললো,
আদিত্য রায় – একটু পরে যাও, তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে।
অগ্নি – এক্ষুনি বলতে হবে, পরে বললে হয় না?
আদিত্য রায় – না, একটু আর্জেন্ট।
অগ্নি – আচ্ছা বলো।
আদিত্য রায় – চলো আমার সাথে।

আদিত্য রায় দ্রুত হেঁটে অগ্নির রুমে এলো, চারপাশে চোখে বুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটা পেয়েই পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো, অগ্নি রুমে আসতেই উনি বেডে বসতে ইশারা দিলো, অগ্নি বসতেই উনি আবারও দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে, দরজা লক করে দিলো। আকস্মিক ঘটনায় অগ্নি হতবিহ্বল হয়ে গেলো, নিজেকে ধাতস্থ করে বড় বড় পা ফেলে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বললো
অগ্নি – দরজা খুলো বাবা?? কি করছো তুমি এসব??
গলায় স্বর উঁচিয়ে আদিত্য রায় বললো

আদিত্য রায় – দিয়ার বিয়ের আগ পর্যন্ত এ রুমে বন্ধ থাকবে তুমি।
বাবার কথা শুনে অগ্নির পুরো পৃথিবী নড়ে উঠলো, এমন নিকৃষ্ট পরিকল্পনা করবে সেটা কখনোই ভাবতে পারে নি অগ্নি। জোরে জোরে দরজায় লাথি দিতে লাগলো,
আদিত্য রায় -তুমি কেন তোমার মতো আরো দুই চারজন চেষ্টা করলেও এ দরজা ভাঙ্গতে পারবে না।
অগ্নি চিৎকার করা শুরু করলো,

অগ্নি- বাবা, দরজা খোলে,, আমি দিয়ার কাছে যাবো।
আদিত্য রায় – আর কখনোই তুমি দিয়ার কাছে যেতে পারবে না।
অগ্নি হাঁটুমোড়ে দরজার সামনেই বসে পরে, খামচে ধরে নিজের চুল, কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
অগ্নি – আমি মরে যাবো বাবা, দিয়াকে ছাড়া মরে যাবো আমি।
আদিত্য রায় – পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছাড়া মেরে না।
অগ্নির বুকে অসহ্য ব্যাথা জানিয়ে দিচ্ছে বিচ্ছেদের করুণ হাহাকার। অতিরিক্ত সরল হওয়ার কারণে কি এইভাবে ঠকালো সবাই। নিজের বাবা এভাবে কপটতা করবে তা কখনোই ভাবে নি অগ্নি। বাইরে থেকে শান্তি দেবী আর আদিত্য রায়ের কথা কাটাকাটি হচ্ছে।

শান্তি দেবী – কেউ নিজের শত্রুর সাথে ও এমন আচারণ করে না। দিয়া ওর স্ত্রী, কিভাবে ওর বিয়ে অন্য কোথাও দিচ্ছেন আপনারা। এক্ষুনি খুলে দেন, বলছি।
আদিত্য রায় – দিয়ার বিয়ে হওয়ার পরই এ দরজা খুলবে তার আগে না।
শান্তি দেবী- ছি কেমন বাবা আপনি?
আদিত্য রায় – একদম চুপ, বেশি কথা বললে তোমাকেও ঘরে বন্ধ করে রাখবো।
বলেই আদিত্য রায় হনহন করে চলে গেলে, শান্তি দেবী ও দরজার পাশে বসে পড়লেন, ওপাশ থেকে ছেলের হাহাকার শুনা যাচ্ছে

শান্তি দেবী – অগ্নি
অগ্নি – মা, দরজা খুলে দাও মা,আমার দিয়াকে ওরা আমার থেকে দূরে করে দিচ্ছে,মা দিয়া ভালো নেই। আমাকে ছাড়া ও থাকতে পারবো না। মা, আমাকে যেতে দাও,
ছেলের এমন কান্না মিশ্রিত কথা শান্তি দেবীর বুকে তীব্র ভাবে আঘাত করছে। তিনি যদি এ ঘৃন্য পরিকল্পনা কিছুটাও আঁচ করতে পারতো,তাহলে কখনোই ছেলেকে আাসতে বলতো না।

নিজের রুমে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে দিয়া,চোখ দুটো রক্তজবার মতো লাল হয়ে আছে, হঠাৎ করে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। দিয়ার চিন্তা শুধু অগ্নিকে নিয়ে, কি করে থাকবে অগ্নি ওকে ছাড়া, অগ্নিকে ও কি ওর মতোই ঘরে আটকে রাখা হয়েছে, মানুষ টা কি জানে কি ওর বাবাইয়ের এই নোংরা পরিকল্পনার কথা। এসব চিন্তার মাঝেই দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাঁকায় দিয়া, অপরিচিত একজনকে নিজের রুমে প্রবেশ করতে দেখে উঠে দাঁড়ালো দিয়া
দিয়া- কে আপনি?

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৪

রনিত- আমি রনিত, তোমার হবু স্বামী।
দিয়া রনিতের কথা শুনে তেতে উঠে বলে
দিয়া- কিসের হবু স্বামী?আমি বিবাহিত। একজন বিবাহিত মেয়েকে বলছেন আপনি তার হবু স্বামী? আমার সম্পর্কে না জেনেই বিয়ে করতে চলে এসেছেন?কান খুলে শুনে রাখুন, আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি,আমারা দুই বছরের একসাথে সংসার করেছি।
দিয়ার কথা শুনে রনিত শব্দ করেই হেসে দিলো, দিয়া ভড়কে গেলো, রনিতে হাসি দেখে,,,

প্রেম পরিণয় পর্ব ১৬